![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যে সময়ে বাংলাদেশ সার্বিকভাবে মানব উন্নয়ন সূচকে একধাপ এগিয়েছে, সারা বিশ্বের ইকোনমিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও এ উন্নয়ন সূচক অবশ্যই দেশের জনগণের জন্য একটি সুখবর বটে । এ ছাড়া কয়েকটি সূচকে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও অগ্রগতি ভাল। ইউএনডিপির হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট ২০১৪ তে এ বিষয়গুলো প্রকাশ করা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যম মানের মানব উন্নয়ন ইনডেস্কের ১৪২তম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ, যা এর আগে ছিল ১৪৩তম অবস্থানে। সেক্ষেত্রে এক ধাপ উন্নতি হয়েছে। বাংলাদেশের পরে নিম্নমানব উন্নয়ন ইনডেস্ককে অবস্থান করছে নেপাল, দেশটির অবস্থান ১৪৫। এর পরেই ১৪৬তম অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান।
এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অগ্রগতি ব্যাপক। শান্তিমিশনের বাংলাদেশের সুনাম রয়েছে। প্রতিবছর উল্লেখসংখ্যক শান্তিসেনা বাংলাদেশ থেকে ইউএন মিশনে অংশগ্রহণ করে থাকে। এটা সরকারের একটি বিশেষ সাফল্যও বটে। কিন্তু কতিপয় বুদ্ধিজীবী এ সুফলের বিপক্ষে। তারা বিভিন্ন ভাবে দেশের অপপ্রচারে লিপ্ত। তারা চায় না দেশের এই অগ্রগতি। কেন চায় না তা একটু গভীরভাবে ভাবলেই স্পষ্ট প্রতীয়মান। সম্প্রতি "বাংলাদেশ সেন্ডিং ইটস ডেথ স্কোয়াডস ফর দ্যা ইউএন পিস কিপিং মিশনস", নামে একটি প্রেসরিলিজ করেছে এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস নামের ইন্ডিয়া ভিত্তিক একটি তথা কথিত মানবাধিকার সংগঠন। যাদের ইন্ডিয়া থেকে বাংলাদেশ এবং এর পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে চুলকানি বেশি। মজার বিষয় হলো, এদের বেশিরভাগ তথ্যের উৎস হলো ডেইলি স্টার, প্রথমআলো এবং বাংলাদেশি এনজিও অধিকার। গত জুনে একটি প্রতিবেদন তারা প্রকাশ করে যেখানে হাস্যকরভাবে বাংলাদেশে সেনাবাহিনী ইউএন মিশনে আত্মঘাতি সেনাসদস্য পাঠাচ্ছে বলে প্রোপাগান্ডা চালায়।
তাদের এই প্রোপাগান্ডা চালানোর মূল উদ্দেশ্য হলো, জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনসের (ডিপিকেও) প্রধান হার্ভে লাডসুসের বাংলাদেশ সফর। যেখানে সফরকালে ডিপিকেও বাংলাদেশ পুলিশের সক্ষমতা, পেশাদারি, নিষ্ঠা ও সাহসিকতার ভূয়সী প্রশংসা করছেন। যেখানে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ২০১৪ সালের যে মানবউন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে। যেখানে হার্ভে লাডসুস বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্বের সুনাম করেছে এবং অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ থেকে আরও অধিকসংখ্যক শান্তি কর্মী নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সেখানে আমাদের দেশের কতিপয় সাংবাদিক এবং কথিত বুদ্ধিজীবি দেশ ও সশস্ত্রবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডায় লিপ্ত হয়েছেন। তারা জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনসের প্রধানের সাথে ১ ঘন্টার একান্ত বৈঠকের আয়োজন করে সেখানে বাংলাদেশ থেকে শান্তিরক্ষী না নেয়ার অনুরোধ জানান। ঐ মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলো বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। পৃথক বৈঠকে একই অভিমত ব্যক্ত করেন আইনজীবী শাহদিন মালিক এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এর উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মান্না।
এই কুচক্রি মহলের মূল অভিসন্ধী হলো, বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর শান্তিরক্ষী মিশন বন্ধ করা। যার ফলে, বাংলাদেশ বিপুল পরিমানে বৈদেশিক মূদ্রা আয়ের একটা সুযোগ হারাবে। সশস্ত্রবাহিনীতে অসন্তোষ দেখা দিবে। সেই সুযোগে তারা চক্রান্তের মাধ্যমে অবৈধ ক্ষমতা দখলের সুযোগ খুঁজবে। আশার কথা হলো, সফররত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ও ডিপার্টমেন্ট অব পিস কিপিং অপারেশনসের (ডিপিকেও) প্রধান হার্ভে লাডসুস তাদের এসব বক্তব্যকে কৌতুক বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেছেন, এসব বাংলাদেশের আভ্যন্তরিন রাজনৈতিক বিষয়। জাতিসংঘের এসব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোন ইচ্ছে নেই। তবে, তিনি বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে শান্তিরক্ষী বৃদ্ধির বিষয়টি পুনঃব্যক্ত করেছেন। এক ফ্রেমে কতগুলো দেশ বিরোধী কুচক্রী! ২১ জুলাই এরা রাজধানী ঢাকার সেগুন বাগিচার, সেগুন রেস্টুরেন্টে মিলিত হয়েছিলো। সেখানেই পরিকল্পনা করা হয় যে তারা জাতিসংঘের কাছে বাংলাদেশ থেকে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের না নিতে অনুরোধ জানাবে। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার অংশ হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের সেনা সদস্যদের না নেয়ার আহবান জানিয়েছেন শাহদীন মালিক।
এদিকে ওয়েস্টিনে কূটনৈতিকদের জন্য আয়োজিত খালেদা জিয়ার ইফতারে উপস্থিত ছিলেন কথিত বিশেষজ্ঞ জনাব শাহদীন মালিক। সংবাদপত্র থেকে কোট করছি, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, শাহদীন মালিক, ড. মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ। এসময় মোনাজাত পরিচালনা করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা এম এ মালেক।"
নয়াদিল্লি ভিত্তিক ‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’ নামক তথাকথিত সংগঠন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে অবতীর্ণ হয়েছে। তাদের প্রকাশিত Bangladesh: Sending Death Squads to Keep the UN’s Peace শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় চলতি বছরের(২০১৪) জুন মাসে। ৬৬ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনটি ৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত। এর সঙ্গে রয়েছে ১৩টি পরিশিষ্ট। পরিশিষ্টগুলো গুম-খুন-ক্রসফায়ারের তথ্য দিয়ে পূর্ণ। রিপোর্টটির প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় ‘RABর আলোকচিত্র সংযুক্ত হয়েছে। জুন মাসে প্রকাশিত রিপোর্টটি সম্ভবত ২০১৩ সালের শেষভাগে তৈরি করা। এই রিপোর্টে উপস্থাপিত অধিকাংশ তথ্যাদি ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে সংগৃহীত হয়েছে। ওই একইসময়ে আদিলুর রহমান ‘র্যাবে’র বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রকাশনা বের করেন এবং বেগম খালেদা জিয়াও ‘RAB’ বাতিলের দাবি তোলেন। সে সময়ে প্রস্তুত রিপোর্টই বাংলাদেশের সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য প্রেরণ করা হয় এ মাসে। অর্থাৎ ২৪ জুলাই যখন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও শান্তি রক্ষা মিশনের দায়িত্বে থাকা হার্ভে ল্যাডসাউ বাংলাদেশে সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন ঠিক তখন প্রেস-রিলিজ প্রেরণ করা হয় প্রতিবেদনটিসহ। যদি রিপোর্টটির উদ্দেশ্য হয়ে থাকে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা নিয়ে পর্যালোচনা তাহলে র্যাবের ছবি দিয়ে প্রচ্ছদ ছাপানোর কী প্রয়োজন ছিল তা আমাদের বোধগম্য নয়। অর্থাৎ এটি বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণা। কারণ শান্তি মিশনে সেনাবাহিনী কিংবা অন্য যে কোনো সংস্থার সদস্যদের সম্পৃক্ততা কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে নয় বরং তার সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িত থাকে। শান্তি রÿী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যে অর্থ উপার্জন হয় তা রেমিটেন্স হিসেবে গণ্য হয়। আর রাষ্ট্রের সশস্ত্রবাহিনীর সরঞ্জাম অন্য দেশে নিয়ে ব্যবহারের ভাড়া বাবদ বিপুল অর্থ প্রাপ্তি ঘটে। রাষ্ট্রের এই উপার্জন অন্য কোনো দেশের কাছে চলে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে দেশকে গভীর সংকটে ফেলা। এজন্য কেবল ‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’ নামক অপশক্তি নয় এর পিছনে অন্য কোনো দেশের ইন্ধন থাকাটা স্বাভাবিক। বলা যায় এদেশের রাজনৈতিক দল, স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত সংস্থা, বৈদেশিক সরকার এবং নানারকম আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই ষড়যন্ত্রে সংযুক্ত হয়েছেন এদেশের কতিপয় অশিষ্টজন যারা ‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’কে সমর্থন দিয়ে টিভি পর্দায় কথা বলছেন; আর পত্রিকায় মতামত ব্যক্ত করছেন।
‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’ ভেবেছিল প্রতিবেদনটি প্রচারিত হলে হার্ভে ল্যাডসাউ তাঁর সফর বাতিল করবেন। কিন্তু তাদের প্রেসরিলিজে কাজ হয়নি। বরং গত ২৪ জুলাই(২০১৪) হার্ভে ল্যাডসাউ-এর সাÿাতের সময় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় সৈন্য সরবরাহকারী রাষ্ট্র। এজন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হলে শান্তিরক্ষা মিশনে মাঠ পর্যায় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর্যায়ের মধ্যে সমন্বয় নিবিড় হবে। তাছাড়া জাতিসংঘ মিশন থেকে ফেরা বাংলাদেশি কর্মকর্তারাও মাঠ পর্যায়ের চাহিদাগুলোর বিষয়ে ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন। উলেøখ্য, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ শক্তিশালী অংশীদার হিসেবে নারী-পুরুষ নির্বিশেষ শান্তিরক্ষী সততা, শৃঙ্খলা ও সাহস নিয়ে প্রশংশনীয় ভূমিকা রেখে চলেছেন। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়া সৈন্যদের প্রশিক্ষণে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ পিস সাপোর্ট ট্রেইনিং’ (বিপসট) প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। গোত্রে গোত্রে সংঘাত নিরসন, যুদ্ধাঞ্চলে মানবিক সাহায্য সামগ্রীর কনভয় এবং জাতিসংঘ শরণার্থী শিবিরে আক্রান্তদের উদ্ধারে শান্তিরক্ষা বাহিনী জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষিরা এসব কর্মযজ্ঞে নিবেদিত প্রাণ কর্মী।
‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’-এর প্রতিবেদন জুড়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর কিলিং সম্পর্কে বিচিত্র বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। এ সংস্থাটির অফিস দিলিøতে। সেক্ষেত্রে এদেশের সরকার বিরোধী সংবাদপত্র কিংবা ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করা হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। পরিশিষ্টের দীর্ঘ তালিকার দিকে লÿ রেখেই বলা চলে, হত্যাকাÐ কেবল পুলিশ কিংবা র্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে হয় না বরং পারিবারিক, ব্যক্তিগত ঘটনা জড়িত থাকে হত্যাকাÐ সংঘটনে। বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটের ক্রাইম রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত নথিভুক্ত খুনের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। বিএনপি-জামাত জোট আমলে খুন হয়েছে ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষ। ২০০৭-০৮-এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১৩ হাজার। মহাজোট সরকারের পাঁচ বছরে চৌদ্দ হাজার খুন হয়েছে।(যঃঃঢ়://িি.িঢ়ড়ষরপব.মড়া.নফ/ঈৎরসব-ঝঃধঃরংঃরপং-ুবধৎষু) অর্থাৎ ‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’-এর প্রতিবেদনে দেখানো ‘র্যাব’ কর্তৃক ৭৫৩ জন(২০০১-২০১৩) ক্রসফায়ারে হত্যার সংখ্যার সঙ্গে এ পরিসংখ্যানের অনেক পার্থক্য রয়েছে। বিভিন্ন সরকারের সময় খুনের পরিসংখ্যান থেকে আমরা কি দেখতে পাই? কারা মারা পড়েছে? এরা কি রাজনৈতিক কারণে প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হয়েছে? নাকি ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে হত্যাকান্ড ঘটেছে। হিংসা-দ্বেষ, ভূমি সংক্রান্ত দ্ব›দ্ব-বিবাদ থেকে খুন হলে সেটা ব্যক্তি পর্যায়ের বিষয়। তার জন্য সরকার, বিরোধী দল, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ কেউ-ই দায়ী নন। এর প্রধান কারণ নৈতিক অবক্ষয়; মানুষের সামাজিক মূল্যবোধের অবনতি। অথচ বাইরের রাষ্ট্রের মানবাধিকার সংস্থা ‘র্যাব’ বিলুপ্ত করার দাবি জানাচ্ছে; আমাদের কাছে আশ্চর্যের বিষয় এটি! বর্তমান সরকার কি গণ-বিরোধী শাসক? র্যাবের কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে জনগণের মঙ্গলের জন্য। সন্ত্রাসীদের গুলিতে আমার আপনজন নিহত হলে আমরা কি বলব? প্রতিটি ব্যক্তির বেডরুম পাহারা দিতে সরকার পারবে না এটা আমরা জেনে গেছি; জনে জনে মানুষের নিরাপত্তা দিতেও সরকারকে বেগ পেতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের হাত থেকে দেশের মানুষকে মুক্ত করার প্রচেষ্টা গ্রহণ অন্যতম উপায় হতে পারে। জঙ্গিদের আইনের হাতে সমর্পণ করে শা¯িÍ নিশ্চিত করলে ব্যক্তি পর্যায়ে নিরাপত্তা সম্ভব হবে বলে আমরা মনে করি। অপরাধীরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে বের হয়ে এসে পুনরায় অপরাধে যুক্ত হতে যেন না পারে; সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি দেওয়া দরকার। বিএনপি-জামাত জোট আমলে গুপ্ত ঘাতকরা দিনের পর দিন সন্ত্রাসী কর্মকাÐ চালিয়েছে; এমনকি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জামিনে ছাড়া পেয়েছে। এ ধরনের অপরাধী ছাড়া পায় বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে। এসব পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ‘র্যাবে’র মতো এলিট ফোর্সের প্রয়োজন রয়েছে। অর্থাৎ এ ধরনের ফোর্স সামাজিক অবক্ষয় ও বিচার ব্যবস্থার ত্রæটির কারণে আরো বেশি আস্থাশীল সংস্থায় পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশে বিরোধী গোষ্ঠীর নানা অপতৎপরতা সত্তে¡ও র্যাবের প্রতি মানুষের আস্থার জায়গাটি তৈরি হয়েছে। কারণ ‘র্যাব’ বাংলাদেশের অন্যতম ‘এলিট ফোর্স’। বিশ্বের অনেক দেশে এলিট ফোর্সের অ¯িÍত্ব রয়েছে।
অর্থাৎ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শক্তিশালী চক্রান্তকারী গোষ্ঠী অপপ্রচার শুরু করেছে। নিউইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ গত ২১ জুলাই(২০১৪) র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর পুনর্গঠনের পরিবর্তে যত দ্রুত সম্ভব এ বাহিনীকে বিলুপ্ত করার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠিয়েছে। ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ সংস্থাটি প্রচার করছে যে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনায় র্যাব কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার ঘটনা প্রমাণ করে র্যাব ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে কাজ করছে। অথচ সকলেই জানেন বর্তমান সরকার র্যাব পুনর্গঠন ও একে জবাবদিহির আওতায় এনেছে। এ সংস্থার দোষী ব্যক্তিদের বিচারের সম্মুখীন করা হয়েছে। অর্থাৎ র্যাবের জবাবদিহিতা ছাড়াই কার্যক্রম পরিচালনার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে তাও ভিত্তিহীন অপপ্রচার। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলের মন্ত্রী পরিষদ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল; তাদের হাওয়া ভবনের নেতা তারেক জিয়া ২১ আগস্ট জঙ্গিদের দিয়ে গ্রেনেড হামলা করিয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চেয়েছিল; তখন এই ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ কোথায় ছিল? তখন তারা সেই সরকারের পদত্যাগ দাবি করেনি কেন? ২০০১ সালের নির্বাচন-উত্তর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ হিন্দু-খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর ওপর নির্মম নির্যাতন করেছিল জামাত-বিএনপি; হত্যা-ধর্ষণে মেতে উঠেছিল তারা। তখন এই ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ কোথায় ছিল? ৫ জানুয়ারি(২০১৪) নির্বাচনের আগে জামাত-বিএনপি প্রায় প্রতিদিন বোমা মেরে, আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে; তখন এই ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর কোনো মাথা ব্যথা ছিল না কেন? আসলে এই সংগঠনটি বাংলাদেশের বাইরে থেকে এদেশের পরিস্থিতি পর্যবেÿণ করে। ফলে তাতে ভ্রান্তি থেকেই যায়। তাছাড়া রয়েছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিরোধী গোষ্ঠীর প্রচারণা। সেই অপপ্রচারের উপর ভর করে তারা সাহস দেখায় ‘র্যাব’কে নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানিয়ে; পত্র প্রেরণ করে। একটি জনপ্রিয় সংস্থার প্রয়োজনীয়তা তাদের কাছে না থাকলেও আমাদের মিডিয়া এবং জনমানুষের কাছে তার নির্ভরতা খুব বেশি। ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’-এর পত্র প্রেরণ ও মাথা ব্যথার ঘটনার পর কোনো সংবাদপত্র সেই ইস্যুতে সম্পাদকীয় লেখেনি। এমনকি গুরুত্ব দিয়ে সেই সংবাদটি পরিবেশনও করেনি। কারণ ‘র্যাব’ এখনো জনগণের কাছে আস্থার প্রতীক; জননিরাপত্তার অন্যতম অবলম্বন। অনুরূপ ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে ‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’-এর রিপোর্ট সম্পর্কে। বিষয়টি দেশের কোনো জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি। বরং বিডিনিউজ২৪ডটকম ২৪ জুলাই খবরটি প্রকাশ করেছে ওই সংগঠনের অপপ্রচার ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিষ্কার করার জন্য।
‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’-এর রিপোর্টের রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ঢাকার সিংহাসনের মূল চালিকা শক্তি বলা হয়েছে। অন্যান্য বাহিনীর উপর সেনাবাহিনীর সর্বময় কর্তৃত্ব সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ পরিবেশন করে আরো বলা হয়েছে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন যাবৎ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সৈন্য প্রেরণকারী দেশের অবস্থান দখল করে থাকলেও এদেশের সেনাবাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরÿা কার্যক্রমে নিয়োগের ÿেত্রে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ বি¯Íার করেছে। ফলে বঞ্চিত বিডিআর বাহিনীর সদস্যরা ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রæয়ারি বিদ্রোহ করে সেনা কর্মকর্তা নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। কারণ ওই ঘটনার বিচার কার্য সমাপ্ত হয়েছে এবং বিদ্রোহের নেপথ্যের অনেক প্রসঙ্গই উদ্ঘাটিত হয়েছে। অন্যদিকে যুদ্ধ বিধ্ব¯Í ও বিপন্ন দেশে বাংলাদেশের শান্তিরÿীদের কদাচার নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, যা জাতিসংঘের কর্তা ব্যক্তিদের করা প্রশংসার বিপরীত মন্তব্য। এদেশ থেকে আরো বেশি সৈন্য প্রেরণে গত বছরে(২০১৩) উপস্থাপিত জাতিসংঘের প্র¯Íাবের বিপÿেও এ অভিমত। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে সামরিক শাসনের অত্যাচারী ও দখলদার হিসেবে সেনাবাহিনীকে চিহ্নিত করাও অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়। কারণ সেখানে পার্বত্য শান্তিচুক্তি অনুসারে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাÐ পরিচালিত হচ্ছে। উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এই মর্মে আঘাত করা হয়েছে যে, এই বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরÿা কার্যক্রমে মূলত ‘উবধঃয ঝয়ঁধফং’ প্রেরণ করছে। এ পরিপ্রেÿিতে ‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’-এর পরিচালক সুহাস চাকমা(চট্টগ্রামের ভূতপূর্ব বাসিন্দা) দাবি জানিয়েছে জাতিসংঘ যেন কোনো ক্রমেই বাংলাদেশ থেকে শান্তিরÿী সদস্য গ্রহণ না করে। কারণ বাংলাদেশ সরকার তাদের ‘ডেথ স্কোয়াড’সমূহকে জাতিসংঘে প্রেরণ করে থাকে।
এভাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে অবমূল্যায়ন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমÐলে একটি সুশৃঙ্খল ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে এর সুনাম নষ্ট ও ভাবমূর্তি ÿুণœ করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে ‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’। একইভাবে ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ এবং আদিলুর রহমানের ‘অধিকারে’র মতো সংগঠনগুলো ‘র্যাব’কে ‘ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রচার চালাচ্ছে। উলেøখ্য, র্যাবে’র শতকরা ৪৪ ভাগ সদস্য সশস্ত্র বাহিনী থেকে নেয়া। ফলে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জাতিসংঘের শান্তিরÿা কার্যক্রমে অংশগ্রহণে ব্যাঘাত সৃষ্টি করাই তাদের রিপোর্টগুলোর উদ্দেশ্য বলে প্রকাশ পাচ্ছে। অথচ এদেশের সেনাবাহিনীর রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শান্তিরক্ষিরা তাদের বিচরণ সমুন্নত রয়েছে এখনো। ১৯৭১ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী সম্মিলিত হয়েছিল জনতার সঙ্গে। সেই ঐতিহাসিক সম্পর্ক অর্থাৎ জনতা ও সশস্ত্র বাহিনীর পারস্পরিক সুসম্পর্ক আমাদের বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটি উদ্দীপক বিভাব। জাতির প্রয়োজনে অর্পণ করা কঠিন দায়িত্ব পালনে সশস্ত্র বাহিনীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা অনন্য। দেশের প্রতিরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ আর জনগণের জন্য ভালোবাসা এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর দেশপ্রেম। অনুরূপভাবে বর্তমান বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী একটি পরিচিত ও আস্থার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর যুদ্ধবিধ্ব¯Í ও দুর্যোগময় পরিবেশে শান্তি স্থাপন করে অপরিচিত দেশের অচেনা মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
জাতিসংঘ সনদের ষষ্ঠ অধ্যায়ে আন্তর্জাতিক শান্তিরÿা এবং সপ্তম অধ্যায়ে শান্তি প্রয়োগের বিধান রয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরÿা কার্যক্রম সংঘর্ষে লিপ্ত দুপÿের সম্মতি এবং মতৈক্যের উপর ভিত্তি করে শুরু হয়। শান্তিরÿা বাহিনীকে সংশিøষ্ট পÿসমূহ কর্তৃক অনুমোদিত একটি শান্তি চুক্তি বা শান্তি ব্যবস্থা বা¯Íবায়নের উদ্দেশ্যে মোতায়েন করা হয়। এ পর্যন্ত জাতিসংঘের ৬৮টি মিশনের মধ্যে ৫৪টিতে ১,১৮,৯৮৫ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষি সদস্য অংশগ্রহণ করেছে। শান্তিরক্ষি কার্যক্রমে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সদস্যসংখ্যা ৮,৯৩৬ জন যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। ১৯৮৮ সালে ইরাক-ইরান শান্তি মিশনে যোগদানের মধ্য দিয়ে এদেশের সেনাবাহিনীর ১৫ জন সদস্য জাতিসংঘের পতাকাতলে একত্রিত হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনী শান্তি মিশনে যোগ দেয় ১৯৯৩ সালে। বাংলাদেশ পুলিশ ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ পরিবারের সদস্য হয় নামিবিয়া মিশনের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরÿীরা মিশন এলাকায় বিবাদমান দলকে নিরস্ত্রীকরণ, মাইন অপসারণ, সুষ্ঠু নির্বাচনে সহায়তা প্রদান, সড়ক ও জনপথ এবং স্থাপনা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। কঙ্গো, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা/রুয়ান্ডা, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্থান, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর প্রভৃতি স্থানে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল নাম। উলেøখ্য, জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সেনা, নৌ, বিমান বাহিনীর মোট ৯৬ জন সদস্য শহীদ হয়েছেন; পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন ১৪জন। অন্যদিকে ২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১২ বছরে শান্তিরÿা মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আয় হয়েছে ১১ হাজার ৪৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। স্মরণীয়, মহাজোট সরকারের আমলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০১৩ সালে ছিল ১৬.৩ বিলিয়ন ডলার। শান্তি মিশন থেকে আয় এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। মূলত বিশ্বের বিভিন্ন যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে জাতিসংঘের বিশ্বে পরীক্ষিত বন্ধু হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। কারণ বিশ্বে সকল প্রান্তের দুর্গত, নিপীড়িত ও নিরীহ মানুষের সেবায় এ শান্তি রক্ষা সর্বদা প্রসারিত। সংঘাতপূর্ণ ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজের জীবনের চরম ঝুঁকি নিয়েও তারা আর্তমানবতার সেবা করে চলেছে।
শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেবে আমাদের পররাষ্ট্র নীতি হচ্ছে-‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কার সাথে বৈরিতা নয়।’ বিশ্বের বিরোধপূর্ণ স্থানে জাতিসংঘের ডাকে শান্তি স্থাপন করা এজন্য আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর জরুরি দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হচ্ছে। জাতিসংঘকে শান্তি স্থাপনে সহায়তা দেয়া এবং পাশাপাশি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের সুশিক্ষিত ও পেশাদার সশস্ত্র বাহিনী থাকাটা অন্যতম শর্ত। আজকের পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তিন বাহিনীর ধ্যান ধারণা, চিন্তা-চেতনার আধুনিকায়ন করে যেতে হচ্ছে। কারণ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিচিত্ররকম আবহাওয়ায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করছে। হাইতি থেকে পূর্ব তিমুর, লেবানন থেকে কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ এলাকায় তাদের পদচারণা। বসনিয়ার তীব্র শীত, সাহারা মরুভূমির দুঃসহনীয় গরম ও পূর্ব এশিয়ার ক্লান্তিকর আর্দ্রতার সাথে মানিয়ে নিয়ে রাত-দিনের দায়িত্ব পালনে নিষ্ঠার পরিচয় দিয়ে চলেছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী। বিশ্ব মানবতা প্রতিষ্ঠায় আমাদের শান্তিরÿী বাহিনীর রয়েছে অসামান্য অবদান। কারণ ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, জাতি, গোষ্ঠী রয়েছে; রয়েছে বিচিত্র রাজনৈতিক মতাদর্শ। এসব সামাজিক ভেদাভেদ ও অর্থনৈতিক বৈষম্যকে পিছনে ফেলে সকলকে নিয়ে সহাবস্থান নিশ্চিত করছে শান্তিরÿীরা। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রায় দুশত আর্মার্ড পারসোনাল ক্যারিয়ার, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং উলেøখযোগ্য সংখ্যক যানবাহন নিয়ে তাদের অপারেশন পরিচালনা করছে। বাংলাদেশ নৌ বাহিনী দুটি যুদ্ধ জাহাজ ওসমান ও মধুমতি লেবানন এবং ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় সর্বদা টহলের কাজে মোতায়েন রয়েছে। মিশন এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অভ্যন্তরীণ নদীপথগুলোতেও তাদের সতর্ক প্রহরা দেখা যায়। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বিআর-১৩০ এয়ারক্রাফট, এমআই-১৭ ও বেল হেলিকপ্টারের মাধ্যমে কঙ্গো ও আইভরিকোস্টে জরুরি সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন, উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণ তৎপরতায় দায়িত্ব পালন করছে। বাংলাদেশ পুলিশের অনেক সদস্য মিশন এলাকার স্থানীয় প্রশাসনকে দাঙ্গা দমনে সহায়তা দিচ্ছে। বিশ্বের বিশৃঙ্খল এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রÿা করে শান্তি স্থাপনে সাফল্য অর্জন করাও বাংলাদেশ মিশনের শান্তি প্রকল্পের অন্যতম কাজ। শান্তিরÿী হিসেবে বাংলাদেশী নারী সদস্যদের অংশগ্রহণ সশস্ত্র বাহিনীর ইতিহাসে একটি মাইলফলক। শান্তি রক্ষা মিশনের দায়িত্বে থাকা হার্ভে ল্যাডসাউ এদেশের নারী শান্তিরÿীদের অবদানের ব্যাপক প্রশংসা করেছেন।
মূলত দুই দশকের বেশি সময় ধরে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ উৎসাহব্যঞ্জক। শান্তিরÿা মিশনে সেনা মোতায়েনের সংখ্যার বিচারেও অনেক দিন ধরে শীর্ষ স্থান দখল করে আছে আমাদের দেশ। এই ধারা অব্যাহত রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমুন্নতি বিধানের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর বিশ্ব শান্তি স্থাপনের ভূমিকাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করা দরকার। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব ও শান্তি রক্ষা মিশনের দায়িত্বে থাকা হার্ভে ল্যাডসাউ-এর বাংলাদেশ সফর সেই কথাই স্মরণ করিয়ে দিল আরো একবার। অন্যদিকে ‘এশিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’সহ বাংলাদেশ বিরোধী সংস্থাগুলো যে অপতৎপরতায় যুক্ত তা জনগণের কাছে স্পষ্ট হয়েছে। তারা বর্তমান সরকারের প্রতি সেনাবাহিনীর আনুগত্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে। বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে; শান্তিরক্ষী প্রেরণে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে। অথচ এদেশের বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে বৈরি সম্পর্ক অনুপস্থিত। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে এ ধরনের সংগঠনের উস্কানি কোনো কাজে লাগছে না। কারণ প্রতিটি বাহিনীর রয়েছে পেশাদারী আচরণ। তাছাড়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মান্য করার সংস্কৃতি চালু হয়েছে। তবু বিভিন্ন অপপ্রচার থেকে রাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য, রাষ্ট্রের অনিবার্য অঙ্গ সেনাবাহিনীকে বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে অপপ্রচার মোকাবেলায় মিডিয়ার কার্যকর অবদান রাখা জরুরি। ২৬ জুলাই ঢাকাস্থ প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শাহদীন মালিক বাংলাদেশ থেকে শান্তির নিয়োগ না দেয়ার জন্য বর্তমান বাংলাদেশ সফরকারী হার্ভে ল্যাডসাউ বরাবর দাবি উত্থাপন করেছেন। অন্যদিকে ২৫ জুলাই(২০১৪) আদিলুর রহমান বিডিনিউজ২৪ডটকম-এ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে একটি মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশ করেন আর ২৬ জুলাইয়ের ওই সংবাদ সম্মেলনে ৩০ আগস্ট(২০১৪)-এর পর কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেন। এসব ব্যক্তিরা বিএনপি নেতৃবৃন্দের মতোই কথা বলেছেন এবং বাংলাদেশ বিরোধী প্রকাশনা ও মন্তব্য করে আমাদের শঙ্কিত করেছেন। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে মিডিয়া ও সমাজের বিশিষ্টজনদের। কারণ ষড়যন্ত্রকারীরা অনেক বেশি তৎপর রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণায়। জরুরিভিত্তিতে তাকে মোকাবেলা না করলে জনগণের আস্থা হারাবে সরকার। ত্বরিত রাষ্ট্রবিরোধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণই হবে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক।
( ড. মিল্টন বিশ্বাস, সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
২| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:০৬
মতিউর রহমান মিঠু বলেছেন: ''রিয়াজ রহমান, নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী। পৃথক বৈঠকে একই অভিমত ব্যক্ত করেন আইনজীবী শাহদিন মালিক এবং চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এর উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান মান্না। ''
সব নব্য রাজাকার!! আর দেশপ্রেমিক হলো এই লেখক, পোষ্টদাতা আর যারা আওয়ামী লীগ করে।
অবশ্য আমার মনে হয় যারা আওয়ামী লীগ নাকরে তারা সবাই নব্য রাজাকার। আপনার কি মনে হয়?////
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪৮
শফিক আলম বলেছেন: সহমত। ওরা জনগনকে নিজেদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। নেগেটিভ রাজনীতির সংগে দিনের মত স্বচ্ছ সত্যকে মিথ্যায় রূপান্তরিত করতে যেয়ে ব্যর্থ হয়েছে যেমন, তেমনি পাশাপাশি নানা ষড়যন্ত্র করেও সফল হয় নি। কিন্তু ষড়যন্ত্র থেমে থাকে নি। থেমে থাকবেও না। কারন তারা এখন নিজেদের অস্তিত্বের সম্মুখিন হয়ে পড়েছে। দেশে ৫ই জানুয়ারীর যে একচেটিয়া নির্বাচন হয়েছিল তার জন্য সরকার নয়, বিএনপি-ই দায়ী। কারন তারা রাজনীতির সঠিক রাস্তায় হাঁটতে পারেনি। আন্দোলন করতে যেয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে, ধন-সম্পদ নষ্ট করেছে, মানুষের জীবনকে অতিষ্ট করে ফেলেছিল, আর এ কারনেই তারা জনগনের সমর্থন আদায় করতে পারেনি। আর ঐ নির্বাচের ব্যাপারটি ছাড়া অন্যান্য জায়গায় সরকারের ব্যর্থতা তেমন একটা ছিল না বলেই জনগন সরকারকে পরিত্যাগ করেনি। দেশে কিছু কিছু সমস্যা আছে বটে কিন্তু তাতে জনগনকে খুব একটা নাড়ায় না। দুর্নীতি আছে, তবে দেশের উন্নয়ন আছে অনেক জায়গাতেই। অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও অনেক উন্নয়নের কাজ করতে হচ্ছে। মোট কথা জনগন মোটামুটি সুখেই আছে, শুধু বিরোধীদের কিছু অন্ধ সমর্থক ছাড়া। খবরের কাগজে বা ব্লগে যে সব সরকারবিরোধী চোখ বন্ধ করা মন্তব্য দেখা যায় তার বেশীর ভাগই তারাই।