নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সন্ত্রাস, অর্থনীতি ও উন্নয়নের সূচক

২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:২১



বাংলাদেশ সম্প্রতি সন্ত্রাসের ভয়াবহতম রূপগুলো দেখছে- ভবিষ্যতে আরও দেখতে হবে কি না তা অবশ্য এখনো অজানা। সবার আন্তরিক আকাক্সক্ষা- যা ঘটেছে সেখানেই সমাপ্তি ঘটুক আর যেন কদাপি এমন ভয়াবহ সন্ত্রাসী ঘটনার মুখোমুখি হতে না হয়। সে কামনাটা আমারও।

একটি জাতীয় সংবাদপত্রের প্রধান খবরে গত শুক্রবারে (২০.৬.২০১৪) বলা হয়েছিল- গুম, খুন, অপহরণ জুন মাসে অনেক কমেছে। পুলিশ বলেছে, হ্যাঁ, কমেছে কারণ যারা গুম, খুন, অপহরণ ঘটায় ইদানীং তাদের কেউ আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতে চাইছে না। পুলিশের মন্তব্যটা বেশ মন্থরই বলতে হয় কারণ তারা একথা বলেননি যে, পুলিশি কঠোরতার ফলেই ওই ঘটনাগুলো কমেছে। তারা যে আজতক (২২.৬.১৪) নারায়ণগঞ্জের সাত খুন বা ঢাকার মিরপুরের ১০ খুনের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেননি, পরোক্ষ হলেও তার একটা স্বীকৃতি মিলল। আর এর ফলে সন্ত্রাসীদের দাপট আবার বাড়ে কি না তা অবশ্য দেখার বিষয়। তৎকালীন বিশ্বরাজনীতির নিরিখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে ভূমিকাই পালন করে থাকুক- এশিয়া তথা বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি চীনের সঙ্গে নিশ্চিতভাবেই অত্যন্ত বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। আবার শুধু আমাদের নয়- চীনেরও স্বার্থ রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে। এ প্রক্রিয়া বহুদূর যে এগিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর থেকে আমরা তা ধরে নিতে পারি। তেমনিভাবে ভারতের নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রথম বিদেশ সফরে বাংলাদেশে আসা এবং আলাপ-আলোচনা পরিপূর্ণ সাফল্যম-িত হবে এমন আশাও উভয় দেশের কোটি কোটি মানুষ পোষণ করেন।

জাপান বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বন্ধু। দেশটি উন্নত অর্থনীতির কারিগরি জ্ঞানসমৃদ্ধও বটে। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তীকালে পুঁজিবাদী যে কটি দেশ আমাদের দেশের প্রতি সহযোগিতার হাত এগিয়ে দেয়, জাপান তার মধ্যে অন্যতম। তবে জাপান বা চীন যেই হোক, আবার হোক না ইউরোপীয় কোনো দেশ- সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, অপহরণ প্রভৃতি অব্যাহত থাকলে ও জঙ্গিবাদ দমনে বিন্দুমাত্র শৈথিল্য দেখলে কোনো দেশই এ দেশে বিনিয়োগ করতে আসবে না- এ কথা জোর দিয়েই বলা যায়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হয়েছে। এর পেছনে বহু কারণও আছে, যার সবগুলো কারণ হয়তো আমার জানাও নেই। তবুও সাদা চোখে দেখা থেকে যা উপলব্ধি করি তা হলো, আমাদের দেশের মতো দৈনন্দিন সন্ত্রাসের অনুপস্থিতি, যথেষ্ট পরিমাণে জীবন ও স¤পদের নিরাপত্তা, সামাজিক শান্তি, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতি যথেষ্ট বড় কারণ যার জন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ যথেষ্ট পরিমাণে ঘটেছে। সেখানে কদাপি সামরিক শাসন আসেনি রাজনৈতিক কোন্দল-কলহ, পারস্পরিক অশ্রদ্ধা, অবিশ্বাস রাজনৈতিক অঙ্গনকে গ্রাস করেনি- সংগঠিত ও শক্তিশালী আন্দোলনের অস্তিত্ব থাকলেও তা বরং পুঁজির নিরাপত্তাই সূচিত করেছে- শ্রমিকদেরও বেতন-কাজের নিরাপত্তা যথেষ্ট পরিমাণে নিশ্চিত করে শিল্প উৎপাদনে এক ধরনের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হওয়ায় তা বৈদেশিক বাজারকেও আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে। তদুপরি তারা পেয়েছে ইংরেজ আমলে সৃষ্ট রাজপথ-রেলপথ-নদী ও সমুদ্রপথ এবং তার সঙ্গে আকাশপথ ও যানবাহনের মাধ্যমে বিশাল অবকাঠামোগত সুবিধা, যাকে তারা সযতনে লালন ও উন্নয়ন করেছে ক্রমাগতভাবে। তাই ভারত এশিয়ায় অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হতে সক্ষম হয়েছে, যদিও প্রকৃত অর্থে এবং বাস্তব ক্ষেত্রে একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে ভারতকে এখনো বহুদূর হাঁটতে হবে। বহু পথও অতিক্রম করতে হবে। তবুও নির্দ্ধিধায় মানতেই হবে, ভারত ইতোমধ্যেই এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। তাই প্রতিবেশী হওয়ায়, সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারলে ভারতের বিস্তর সহায়তা বাংলাদেশ পেতে পারে এবং আনন্দের বিষয়, বিগত কয়েক বছরে, নানা প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও, দুদেশের মধ্যকার সম্পর্কের যথেষ্ট উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ভারতের কাছ থেকে উদারতর সহযোগিতা পেলে এ সম্পর্ক সত্বরই আরও উন্নত হওয়া সম্ভব। এ ব্যাপারে ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সদ্য-সমাপ্ত বাংলাদেশ সফরে কিছুটা আশার বাণী শুনিয়েছেন। অপেক্ষা করে দেখতে হবে- আগামী মাসকয়েকের মধ্যে সম্ভাবনাময় নতুন কিছু ঘটে কি না। ঘটলে বিস্তর লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে উভয় দেশেরই। তবে তার জন্যও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ অবশ্যই প্রয়োজন হবে। জঙ্গিবাদ বা ভারতবিরোধী দেশি-বিদেশি সন্ত্রাসী কার্যকলাপও কঠোর হস্তে দমন করতে হবে, আইনের শাসনও প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

চীন ও ভিয়েতনাম আমাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধান অর্থনৈতিক মিত্র হতে পারে। উভয় দেশ এশিয়ারই শুধু নয়- বিশ্বের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃত।

কি দেশি, কি বিদেশি পুঁজি বিনিয়োগকারীদের আরও বেশ কয়েকটা গুরুতর অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশে তাদের পুঁজি বিনিয়োগের এবং ব্যবসায় বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে। তা হলো-

এক. আমলাতন্ত্র ও দুর্নীতি। তাদের সবারই অভিযোগ- সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো শিল্পবাণিজ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দিতে ভয়াবহ আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা ঘটিয়ে থাকে। ফলে কাজের অগ্রগতি মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে- অনেক ক্ষেত্রে কাজ শুরু করাও কঠিন হয়ে পড়ে। আবার তাদের দুর্নীতি, ঘুষ প্রভৃতি এগুলোকে আরও জটিল করে তোলে। এ ব্যাপারে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অবশ্যই দৃঢ়ভাবে অগ্রসর হয়ে বিদ্যমান বাধাগুলো অপসারণ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, অবকাঠামোগত সমস্যা। এ ক্ষেত্রে প্রধানতম সমস্যাই হলো জ¦ালানি খাতের। তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রয়োজনীয় সরবরাহ নিশ্চিত করা না গেলে শিল্প বিকাশ ও শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হতে বাধ্য এবং তা হচ্ছেও বটে। তাই নানামুখী উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা নিয়ে বিদ্যমান মূল্যের চেয়ে যথেষ্ট কম মূল্যে সব ধরনের জ্বালানি প্রয়োজনানুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের নিজেদের উৎস থেকে তেল, গ্যাস ও কয়লা উত্তোলনের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

এছাড়া রয়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। এই অবকাঠামো বিশেষ করে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার কাহিল চিত্র অনেককেই নিরুৎসাহিত করে। কারণ আমাদের দেশে সর্বাপেক্ষা সস্তা হতে পারত নদী ও সমুদ্রপথ। কিন্তু সেগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় (ড্রেজিং বা খননের অভাবে) এবং নদীগুলোর উৎসমুখও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীপথ চালু হওয়ার সহসা কোনো সম্ভাবনা নেই। কিন্তু রেলপথের ক্ষেত্রে তো এমন কোনো যুক্তি আদৌ টেকে না। ১৯৪৭-এর পর থেকে কত কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে, কতগুলো বগি ও ইঞ্জিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে কোনো সংসদ সদস্যই (যারা বিরোধীদলীয় সংগঠন তারাসহ) প্রশ্নোত্তরের সুযোগ নিয়েও দেশবাসীকে কেন যে তা অবহিত করেন না, তা বোধগম্য নয়। কিন্তু কেউ যদি তা করেন তার উত্তর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী সংসদে দিলে যে তথ্য পাওয়া যাবে তাতে সবাই যে আঁতকে উঠবেন তা জোর দিয়েই বলা যায়। যা হোক অবিলম্বে রেলওয়ের পূর্ব ও পশ্চিম উভয় অঞ্চলেই হাজার হাজার কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ, ব্রিজ নির্মাণ, বগি ও ইঞ্জিন প্রয়োজনমতো সংগ্রহের ওপর অত্যধিক গুরুত্ব দেওয়ার জন্য যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে ও রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব। সব স্থবিরতা, নিস্পৃহতা, বাধা-বিপত্তি এড়িয়ে এ পথে আমাদের অগ্রসর হতেই হবে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে। এগুলোর অভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অসম্ভব।

সমুদ্র খাতকে অধিকতর কর্মক্ষম করতে হলে এবং তা থেকে প্রয়োজনীয় কাজ পেতে হলে মংলা সমুদ্রবন্দরকে দ্রুত একটি আধুনিক সমুদ্রবন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে হবে এবং একই সঙ্গে সম্প্রতি জাহাজ শিল্প উন্নয়নের যে সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে তাকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে আমাদের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যে নতুন গতি সঞ্চার করতে হবে। নতুবা ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্য আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে যেসব বক্তৃতা-ভাষণ অহরহ করা হচ্ছে কাজে তা অর্থহীন প্রলাপে পরিণত হবে, যা কারও কাছেই কাম্য নয়। বিশাল বিশাল বাজেট আসে- জাতি বছরান্তে উন্নয়নের পরিমাপ করে ওই বাজেটের সঙ্গে তার বিন্দুমাত্র সঙ্গতিও খুঁজে পায় না।

আমি কোনো অর্থনীতিবিদ নই। তবে একজন প্রবীণ প্রগতিশীল চিন্তায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিক হিসেবে অর্থনীতির ক্ষেত্রে আমার ভাবনার আংশিক এখানে তুলে ধরলাম এই বিশ্বাস থেকে যে, সরকার এই পথ ধরে বা এর চেয়ে উন্নত ও আধুনিক চিন্তায় সমৃদ্ধ হয়ে বাস্তবে দেশকে একটি অগ্রসরমান বাংলাদেশে পরিণত করতে এগিয়ে আসবে।

কিন্তু আবারও বলি, তার জন্যও সর্বাগ্রে প্রয়োজন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ। এ কথা যেন ভুলে না যাই।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৪৪

আহমেদ রশীদ বলেছেন: সত্যিই এদেশ মধ্য আয়ের দেশে দিন দিন ধাবিত হচ্ছে। একথা নি:সন্দেহ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.