নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির অপরাজনীতি

২৮ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:০০

আগস্ট মাসেই বড় ধরনের নাশকতার দুটি ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে। ১৫ আগস্ট জাতির জনক হত্যা এবং ২১ আগস্ট শেখ হাসিনা হত্যা। সবাই বলবে কথাটা মিছে কথা। কেননা দিব্যচোখে দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনা জীবিত এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তাহলে প্রশ্ন হতে পারে, কথাটা কেন বললাম? গ্রেনেড হত্যায় বহুলোক মারা গিয়েছিল। আইভি রহমান মৃত্যুবরণ করেছিলেন যেভাবে তার চেয়েও করুণভাবে সেদিন শেখ হাসিনার মৃত্যুবরণ করার কথা। কিন্তু আল্লাহতায়ালাই তাকে সেদিন রক্ষা করেছিলেন বলেই হয়তো আজ তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। বিষয়টি পুনঃ অবতারণা করলাম এ জন্য যে, খুনিরা আবার বড় নাশকতার পরিকল্পনা করেছে। তারা আবার মাইনাস ওয়ান ফর্মুলা কার্যকর করতে চাচ্ছে।

দেশব্যাপী আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে অবশেষে বিএনপি আপাতত ঢাকাকেন্দ্রিক তার আন্দোলনের ভূগোল সংহত করেছে। এটি একটি বড় ধরনের ধাপ্পাবাজি। দেশব্যাপী কালো শক্তির নাশকতা চলছেই। আওয়ামী লীগ এবং প্রগতিশীলদের মাথা মাথাদের হত্যার নীলনকশা কার্যকর করা হচ্ছে। তারা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের আগে প্রত্যন্তের মাথাগুলো কেটে ফেলতে চায়। তাদের ধারণা হয়েছে, প্রগতিশীল এবং আওয়ামীপন্থীদের মাথাগুলো কেটে ফেললেই শেখ হাসিনা প্রমাদ গুনতে শুরু করবেন। তাকে ভীতসন্ত্রস্ত করতে পারলেই তিনি ভুল করবেন। আর ভুলের সুযোগ নিয়ে তাকে হত্যা করতে হবে।

বিএনপি এবং জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে এক ধরনের কথাবার্তা বাজারে চলছে। সাধারণ দৃষ্টিতে অনেকেরই এমন ধারণা হতে পারে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা অন্যরকম। বিএনপি চাচ্ছে উগ্র মৌলবাদীরা আওয়ামী লীগের মধ্যমসারির নেতাদের হত্যা করুক। তাহলে তারা যে গণআন্দোলনের পরিকল্পনা করেছে, তা সার্থক হবে। কেননা, রাস্তা দখলের লড়াইয়ে ব্রিটিশ মডেলের আওয়ামী নেতারা রাস্তায় নামবেন না। সরকারকে পুলিশনির্ভর হতেই হবে। পুলিশনির্ভর হলেই দেশে-বিদেশে সরকার নিন্দিত হবে। সরকারকে নিন্দিত না করতে পারলে তাদের অন্তরের আকাঙ্ক্ষা_ সংলাপে বসবেন না শেখ হাসিনা। কেন যেন তাদের উৎকটদের ধারণা হয়েছে_ সংলাপে বসাতে পারলেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আবার আসবে এবং ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছত্রছায়ায় তারা ষড়যন্ত্র করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করবে। ইতোমধ্যে তাদের বিদেশের লবিস্টরা তৎপরতা শুরু করেছেন এবং বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরাও তাদের শেখানো বুলি বলছেন।

নতুন একটা ইস্যু বাজারে এসেছে। গণপ্রচারণাবিষয়ক। সরকার মানেই সমালোচনার যোগ্য যারা মনে করেন তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার বিপর্যয় আসছে বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াত বাকশালি আমলে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করার কৌশলের মতো এবারকার প্রস্তাব নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। সমাবেশ করে এসব কথাই তারা বলেছে। যদিও এটি কোনো কাজের কথা নয়। যার যা মুখে আসবে তাই বলবে_ এটি বাকস্বাধীনতা হতে পারে না। রাষ্ট্রস্বার্থ সবার ওপরে। যার প্রচারণায় রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়, তা প্রতিরোধ করার ইচ্ছা ও ক্ষমতা দুটোই রাষ্ট্রের থাকতে হবে। একটি নীতিমালা থাকা দরকার। যে জাতির মধ্যে দেশপ্রেম আছে, তাদের বলে দিতে হয় না যে কোনটা দেশের স্বার্থ পরিপন্থী আর কোনটা দেশের পক্ষে যাবে। কিন্তু যাদের মধ্যে দেশপ্রেম নেই তাদের জন্য সুব্যবস্থা থাকতেই হবে। যারা দেশের ভালোমন্দ বোঝে না তাদের নিয়মনীতি শেখাতে হয়। বর্তমানে যে সম্প্রচার নীতিমালা হয়েছে তা অনেকটা এরকম। এটি এখনো আইনে পরিণত হয়নি। তবে নীতিমালাভিত্তিক আইন প্রণীত হওয়া উচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো গণতান্ত্রিক দেশেও নীতিমালা আছে, আইন আছে। গণচীনে সম্প্রচার নীতিমালা আছে। রাশিয়ায়ও আছে। কোন দেশে নেই? শুধু বাংলাদেশে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। ব্রিটিশের আইনই গোলেমালে চলছে। একটি বস্তুনিষ্ঠ ও আধুনিক নীতিমালা খুবই প্রয়োজন।

বিচারপতিদের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি সংসদে যাচ্ছে। এটি স্বৈরতান্ত্রিক জিয়া সরকার প্রেসিডেন্টের হাতে তুলে দিয়েছিল। নামকাওয়াস্তে একটা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় বিচারপতিদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের সংবিধানের আদিরূপে ফিরে গেলে দোষ কী? যখন এটি রাষ্ট্রপতির হাতে যায় তখন বড় বড় পন্ডিতরা বলেছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চলে গেল। তারা সে সময় সংসদের হাতেই ক্ষমতা রাখার পক্ষে ছিলেন। এখন তারাই আবার বলছেন, সংসদে ক্ষমতা ফিরে পেলে বিচারপতিদের স্বাধীনতা থাকবে না। বলিহারি বাঙালি। এক মুখে কত কথা কয়।

সংবিধানের আদিরূপই শ্রেষ্ঠ। যত পরিবর্তন হয়েছে সবই বিতর্কিত। এখন যদি সুযোগ পাওয়া যায় যে সেই আদিরূপে ফিরে যাওয়া যাবে, তখন যাওয়াই ভালো।

বর্তমান সরকার নানামুখী ষড়যন্ত্রের মধ্যে আছে। ভালো কাজ করলেও তথাকথিত সমালোচকরা সমালোচনা করবেনই। আমার মনে হয়, বিরোধীদলীয় রাজনীতিকরা সরকারকে কোণঠাসা করার কোনো সুযোগ না পেয়ে স্রোতধারায় ভেসে যাচ্ছে এবং খড়কুটো ধরছে। বাকস্বাধীনতা থাকবে এবং নীতিমালাও থাকবে। এ দুটির দ্বন্দ্বও থাকবে। আপনারা তো জানেনই যে, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব শাশ্বত। এ দ্বন্দ্ব থাকতেই হবে, নইলে রাষ্ট্রই থাকবে না। রাষ্ট্র উবে যাবে, এ তত্ত্বের অনুশাসন কেবল কমিউনিজমেই সম্ভব, অন্য কোনো সিস্টেমে সম্ভব নয়। ধনতন্ত্রেই রাষ্ট্র সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী হয়। যে কারণে মানবাত্মা পীড়িত হয়। কিন্তু এর কোনো বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি। হয় ধনতন্ত্র, বাজার অর্থনীতি ত্যাগ করতে হবে নতুবা এই পীড়া সহ্য করতে হবে। বাকস্বাধীনতার নামে নৈরাজ্য রাষ্ট্রস্বার্থবিরোধী। রাষ্ট্র নৈরাজ্য প্রতিহত করবেই।

সরকারকে চাপে ফেলে আদায় করার মনমানসিকতাই যদি বিরোধী দলের কৌশল হয় তবে তাদের আশাহত হতেই হবে। চাপে ফেলে সরকারের কাছ থেকে কিছুই পাওয়া যাবে না। যৌক্তিক দাবি-দাওয়া গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু বিএনপি যত দিন মৌলবাদের সঙ্গে সখ্য রাখবে তত দিন তাদের কোনো দাবিই পূরণ হবে না। তারা হৈচৈ ও নাশকতা করে কেবল রাষ্ট্রস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত করবে। রাষ্ট্রস্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের ওপর দমন-নিপীড়ন নেমে আসবে। ফলে তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা যে নাশকতার লাইনে যাচ্ছে, এটি সরকারের জানা হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ দুর্বল এটি মনে করা কোনো বুদ্ধিমান লোকের কাজ নয়।

মৌলবাদীরা বাংলাদেশকে ঘাঁটি বানাতে চায়। তারা বিরোধী দলকে মদদ দিচ্ছে এ কারণে যেন, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ধ্বংস হয়। এটি সাম্রাজ্যবাদেরও কাম্য। মধ্যপ্রাচ্যের সব কটি রাষ্ট্রকেই তারা জঙ্গি বানাতে চায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান জঙ্গিরাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বেশ কয়েক দিন আফগানিস্তানকে তারা জঙ্গিমুক্ত করার কাজ করেছে, এখন আবার কৌশল পরিবর্তন করে জঙ্গিদেরই প্রশ্রয় দিচ্ছে রাশিয়াকে কোণঠাসা করার জন্য। এখন বাংলাদেশ তাদের টার্গেট। বিএনপি সাম্রাজ্যবাদের ওই কূটপরিকল্পনার এজেন্ট হয়েছে। জিয়ার সময় থেকেই বিএনপি সাম্রাজ্যবাদের খপ্পরে পড়েছে। মনে করা হয় যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াকে ক্ষমতায় বসানোর মূল পরিকল্পনা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদেরই। পাকিস্তান জিয়াকেই পছন্দ করেছিল কোনো এক গোপন রহস্যের কারণে। জেনারেল ওসমানী যে জিয়াকে সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কার করতে চেয়েছিলেন তাও হয়তো ওই গোপন রহস্যের কারণে। পত্রপত্রিকায় খবর হয়েছে যে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়টি জিয়াকে তার অধস্তনরা জানিয়েছিলেন। খুনিদের স্বতঃস্ফূর্ত স্বীকারোক্তিতে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এটি কখনোই সত্য হতে পারে না। মোশতাক, জিয়া এবং কতিপয় আমলা যে ষড়যন্ত্রের নীলনকশা তৈরি করেছিলেন তা গোপন করার জন্যই স্বঘোষিত খুনিরা এমন ধরনের ধামাচাপা দেয়া বক্তব্য দিয়েছেন। আমার মনে হয়, ফেলুদাকে দিয়ে গোয়েন্দাগিরি করিয়ে সব গোপন তথ্য সংগ্রহ করে প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত করে আবার বঙ্গবন্ধু হত্যার সম্প্রসারিত বিচার করা উচিত। অনেক রুই-কাতলা ধরা পড়বে এবং সাম্রাজ্যবাদী চক্রের মুখোশও উন্মোচন হবে।

শেখ হাসিনার প্রাণনাশের যে সম্ভাবনা নতুন করে দেখা দিয়েছে তা সম্ভবত বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত সবাইকে শনাক্ত না করার কারণেই। যত দূর জানা যায়, ইয়ার্কি মারতে মারতে অকস্মাৎ বড় ধরনের হামলা হবে। হয়তো এমনো হতে পারে যে, খুবই ছোটখাটো মডেলের হামলায় শেখ হাসিনাকে হত্যা করা হতে পারে। মৌলবাদীরা ধরেই নিয়েছে, সব যুদ্ধাপরাধীর জীবন রক্ষার একটাই উপায়। শেখ হাসিনাকে হত্যা করা। এ ধারণা তত দিন থাকবে যত দিন তাদের ফাঁসি না হবে। বিএনপির ধারণা হয়েছে, শেখ হাসিনা বেঁচে থাকলে তাকে নির্বাচনে পরাজিত করে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে না। তাই তারা শেখ হাসিনার মৃত্যু কামনা করে। বিএনপি পরিবেশ তৈরি করবে আর মৌলবাদীরা হত্যা করবে_ এমন গুজবও বাজারে আছে।

রাজনৈতিক তৎপরতাই একমাত্র বিকল্প। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক তৎপরতাই তাকে বাঁচাতে পারে। যেভাবে মধ্যমসারির নেতাকর্মীরা খুন হচ্ছেন তাতে ভয় হয়, মাঠপর্যায়ে আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে পারবে কি না। রাজনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি পেলে নেতাকর্মীদের মধ্যে সংহতি বাড়বে। জনসাধারণের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বিচ্ছিন্নতাও কমে আসবে।

স্বতঃস্ফূর্ত গণআওয়াজই খুনিদের অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেবে। কিন্তু এটিই সব নয়। বিএনপি-জামায়াতের প্রতিটি পদক্ষেপই সন্দেহজনক। সাবধান হতে দোষ কী?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.