![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দল গুছিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু সে ঘোষণা কার্যত কোনো কাজে আসছে না বলে অভিমত দলের নেতাকর্মীদের। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দলেই নাকাল দলটি। জানা গেছে, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে সহসাই সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেতে পারছে না দলটি।
গত ১৮ জুলাই ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণার পরপরই আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এছাড়া ১৪ অক্টোবর দলটির আন্দোলনের ভ্যানগার্ড হিসেবে খ্যাত ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পদবঞ্চিতরা প্রকাশ্যে বিক্ষোভ প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছেন। এমনকি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভকারীদের মিছিল থেকে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটেছে। এদিকে ২১ থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা সফর করেও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করতে পারেননি বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে সরকারবিরোধী আন্দোলন প্রশ্নে ধীরে চলো নীতিতে এগোচ্ছেন খালেদা জিয়া। অক্টোবর সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা শেষে তিনি বলেন, দিনক্ষণ দিয়ে আন্দোলন হয় না। সময় হলেই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। এদিকে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এক অনুষ্ঠানে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ব্যাপারে ধীরে চলো নীতির ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি স্পষ্ট করেই বলেন, বিএনপিতে অনেক দুলর্বতা আছে। আগে সেগুলো দূর করতে হবে, তারপর আন্দোলন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী সফর করেও তৃণমূলের দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসনে ব্যর্থ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। এক্ষেত্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তৎপরতাহীনতাকেই দায়ী করেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, শুধু ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখার মধ্য দিয়েই গণসংযোগ কর্মসূচি শেষ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া বিগত আন্দোলনে রাজপথে নিষ্ক্রিয় নেতাদের নেতৃত্বে দেশব্যাপী গণসংযোগ করারও সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠে তৃণমূল বিএনপি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকটি জেলা বিএনপির নেতা আমাদের সময়কে জানান, নিষ্ক্রিয় নেতাদের দিয়ে তৃণমূলে গণসংযোগ কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের আগ্রহ ছিল কম। কারণ বিগত আন্দোলন তৃণমূলে সফল হলেও ব্যর্থ হয় ঢাকা মহানগরে। কারণ কেন্দ্রীয় নেতারা কোনো আন্দোলনেই সক্রিয় ভূমিকা রাখেননি।
সূত্রমতে, ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রতিহতের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে জেলা, মহানগর, উপজেলা, থানা ও পৌরসভার বর্তমান কমিটি নিয়ে আন্দোলনে নামতে নারাজ খালেদা জিয়া। তাই আগামী আন্দোলনে দলের তৃণমূলের ওপর আস্থা ও ভরসা রাখতে চান তিনি। এরই অংশ হিসেবে গত ১০ এপ্রিল পঞ্চগড় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে দল পুনর্গঠন কার্যক্রম শুরু করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। এরপর ১৬টি জেলার আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করেন তিনি। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সময়সীমাও বেঁধেও দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু এসব কমিটি ঘোষণার পরপরই সংশ্লিষ্ট জেলার পদবঞ্চিতরা প্রকাশ্যে বিক্ষোভ করেন। পঞ্চগড় ও রংপুর জেলা বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণার পর থেকে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। কোন্দলের কারণে ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ১৬ জেলার আহ্বায়ক কমিটির নেতারা।
এদিকে বেঁধে দেওয়া সময়সীমা পার হলেও রাজধানীর থানা এবং ওয়ার্ড কমিটি গঠন করতে পারেনি ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। ১৮ জুলাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ৫৬ সদস্যের মহানগরের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। সে সময় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য ১ মাস সময় বেঁধে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। অথচ ৩ মাস পার হলেও থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ ধীরগতিতে চলছে বলে অভিযোগ নেতাকর্মীদের। দ্বন্দ্ব-কোন্দলের কারণে অনেক জায়গায় পুরনো কমিটি বহাল রাখা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কবে নাগাদ মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ দেখবে, তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। জানা গেছে, রাজধানীর ১৫টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১০টির থানা এবং ওয়ার্ড কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে বলা হলেও বাকি ৫টি আসনে অগ্রগতি নেই বললেই চলে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের আশঙ্কায় আগের কমিটি বহাল রাখার অভিযোগও উঠেছে। এদিকে রাজধানীর ১০০টি ওয়ার্ড ও ৪৯টি থানা কমিটি গঠনের জন্য মহানগর কমিটির নেতাদের সমন্বয়ে ১৫টি টিম করা হয়। কিন্তু দ্বন্দ্ব থাকায় এ বিষয়ক প্রস্তুতি সভা করতে পারেননি দায়িত্বপ্রাপ্ত মহানগরের অনেক নেতা।
জানা গেছে, ঢাকা মহানগরে বিদ্যমান আব্বাস-খোকার বলয় এখনো ভাঙতে পারেননি বিএনপির হাইকমান্ড। এ কারণেও কমিটি গঠনে বিলম্ব হচ্ছে বলে মনে করেন দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা। সংঘাত এড়াতে কাফরুল থানার পুরনো কমিটিকে আবার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একইভাবে গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুর, রমনা, চকবাজার, লালবাগ, হাজারীবাগ, আদাবর, ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান, খিলতে, রামপুরা, বাড্ডা, ভাটারায় আগের কমিটি বহাল রাখার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। কারণ হিসেবে নেতারা বলছেন, থানা এবং ওয়ার্ড নেতাদের দ্বন্দ্ব ও কোন্দল স্থায়ী রূপ পেয়ে গেছে। অনেক ওয়ার্ডে এ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। একেকটি ওয়ার্ডে সক্রিয় রয়েছে ৪-৫টি গ্রুপ। তাদের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে কমিটি গঠন সত্যিই কঠিন। এছাড়া দায়িত¦প্রাপ্ত নেতারাও তাদের অনুসারীদের হাতে নেতৃত্ব দিতে চান বলেও অভিযোগ স্থানীয় নেতাকর্মীদের। দ্বন্দ্ব-কোন্দলে কদমতলী, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।
তবে ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বলেন, আমরা বসে নেই। কাজ করছি। অল্প সময়ের মধ্যে কাজের অগ্রগতি প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, যেসব স্থানে পুরনো কমিটির নেতাদের পারফরম্যান্স ভালো, সেখানকার কমিটি বহাল রাখার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। - See more at: Click This Link
©somewhere in net ltd.