![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঘোষিত নতুন কমিটি নিয়ে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের অব্যাহত বিক্ষোভ অবশেষে সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। নতুন কমিটি ভেঙে দেয়ার দাবিতে পদবঞ্চিতদের টানা পাঁচদিনের বিক্ষোভের মধ্যে গতকাল রোববার নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। সংঘর্ষের ঘটনায় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দিনভর ছাত্রদলের উভয়পক্ষের কয়েক শ’ নেতাকর্মী লাঠিসোটা নিয়ে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিষ্ক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের এমন মারমুখী মুখোমুখি অবস্থানে গোটা পল্টন এলাকায় দিনভর ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করে। সংঘর্ষের সূত্রপাত: গত ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১ সদস্যবিশিষ্ট ছাত্রদলের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে পদবঞ্চিত ছাত্রদলের একটি অংশ ঘোষিত নতুন কমিটি ভেঙে দেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছে। পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ঘোষিত ছাত্রদলের নতুন কমিটিকে বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর পকেট কমিটি বলে আখ্যায়িত করে। নতুন ঘোষিত কমিটি ভেঙে দেয়ার দাবিতে গত শনিবার নয়াপল্টনের চারতলায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয় পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। পদবঞ্চিতদের ঝুলিয়ে দেয়া তালা ভেঙে গতকাল সকালের দিকে নতুন কমিটির সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসানের নেতৃত্বে কয়েকশ’ নেতাকর্মী তাদের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে বেলা ১২টার দিকে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচে অবস্থান নেয় আরো কয়েকশ’ পদবঞ্চিত নেতাকর্মী।
এরপর উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা পরস্পরবিরোধী নানা ধরনের সেøাগান দিতে থাকে। ওই সময় নয়াপল্টন কার্যালয়ের ভেতরেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল ও সাবেক ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা অবস্থান করছিলেন।
থমথমে অবস্থার মধ্যে রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ উভয়পক্ষের নেতাকর্মীদের শান্ত হয়ে নয়াপল্টন এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতে কেউ কর্ণপাত করেননি। এর মধ্যেই বেলা ২টার দিকে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে পরস্পরের ওপর হামলা চালায়।
এ সময় পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা পর পর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। ককটেলের আঘাতে রয়েল নামের ছাত্রদল নেতা গুরুতর আহত হন। তাকে পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পদবঞ্চিতরা এ সময় নয়াপল্টন কার্যালয়ের নিচের প্রবেশ পথে থাকা জিনিসপত্র ও ছাত্রদল মহানগরের কার্যালয়েও ভাঙচুর করে। ককটেল বিস্ফোরণের পরপরই নতুন কমিটির শতাধিক নেতাকর্মী নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও মহানগর বিএনপি অফিসের ভেতরে অবস্থান নেয়। আর বাইরে অবস্থান করে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। হামলার ঘটনায় অন্যান্য আহতরা হলেন শফিক, রফিক, বাবু, মাসুম, পলাশসহ ১৩ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়।
বিকেল পাঁচটার দিকে অবশেষে পদবঞ্চিত নয়জন নেতাকে নিয়ে তৃতীয় তলায় নিজের কক্ষে বৈঠকে বসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় মির্জা আলমগীরের সঙ্গে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ, হাবিব-উন নবী খান সোহেল ও যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও উপস্থিত ছিলেন। তবে ছাত্রদলের নতুন কমিটির কোনো কেন্দ্রীয় নেতা সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ অন্য নেতারা চারতলায় অবস্থান করছিলেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকের পর বিক্ষুব্ধদের পক্ষ থেকে গাজী রিয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, তারা তাদের ক্ষোভের কথা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে জানিয়েছেন। তিনি বিষয়টি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে তাদের আশ্বস্ত করেছেন। আলোচনার ফলাফল পদবঞ্চিতদের অবহিত করা হবে। খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার ফলাফল না আসা পর্যন্ত পদবঞ্চিতদের বিক্ষোভ স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠকে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ছাত্রদলের ঘোষিত নতুন কমিটি ভেঙে দেয়া ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর অব্যাহতির দাবি তুলে ধরে।
হামলাকারীরা সরকারের এজেন্ট ছাত্রদল সভাপতি: এদিকে হামলার সময় নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয়া ছাত্রদলের নতুন সভাপতি রাজিব আহসান সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশের প্রত্যক্ষ পাহারায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগ হেলমেট পরে বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীদের সঙ্গে ছাত্রদলের অল্প ক’জন নেতাকর্মীও ছিল। যারা হামলা চালিয়েছে তাদের সরকারি এজেন্ট বলেও অভিহিত করেন তিনি।
ছাত্রদল সভাপতি আরো বলেন, ছাত্রসমাজ ও জনগণের কাছে এই কমিটির ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য সরকার যে অপকৌশল করছে, এটা তারই অংশ। এর মাধ্যমে তারা একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছে। আমরা রাজনৈতিকভাবে এর মোকাবেলা করব। কারণ আমরা সশস্ত্র সংগঠন নই। নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান জানান, হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে ছাত্রদলের যেসব নেতাকর্মী জড়িত তাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নেবে।
প্রসঙ্গত, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন জাতীয় নির্বাচন আদায়ের আন্দোলনকে সামনে রেখে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে তিন দফায় তিনি ছাত্রদলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের মতামত নেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গত ১৪ অক্টোবর রাতে ২০১ সদস্যর মধ্যে ১৫৩ জন নেতার নাম উল্লেখ করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা দেয়া হয়। নতুন কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করে। তারা খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনেও বিক্ষোভ করে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। - See more at: Click This Link
©somewhere in net ltd.