নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেনা সম্পর্কিত কতকথা

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০০

সেনা স্থাপনা বা সেনানিবাস সম্পর্কে কথা বলা শুরু হয়েছে। মত প্রকাশের স্বাধীনতার এটি একটি উদাহরণ। বৃহস্পতিবার একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকে ‘পদ্মা সেতুর পাশে নতুন সেনানিবাস’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। পরের দিন শুক্রবার একটি বাংলা জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে কৃষি জমি ও বনভূমিতে সেনানিবাস বা অন্য কোনো স্থাপনা না করার জন্য ৮টি সংগঠনের দাবির সংবাদও প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। এ দুটি সংবাদপত্র একে অপরের ব্যবসায়িক পার্টনার। সঠিক তথ্যকে ইচ্ছেমতো চটকদার করে পরিবেশনার মাধ্যমে বিতর্ক সৃষ্টি করে ইমপ্যাক্ট অর্জনের শিল্পকলা এদের আয়ত্তে। এ ধরনের পরিবেশনা মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ও কখনো কখনো প্রবল অসন্তোষের জন্ম দেয়। সংবাদ সম্মেলনের উক্তি উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘দেশের দুজন সাবেক রাষ্ট্রপতিকে সেনা সদস্যরা হত্যা করেছে। তারা বারবার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আর তারা আমাদের সুরক্ষার নামে জনগণের জমি, বনভূমি ও জলাভূমি দখল করছে।’ এভাবে ঢালাওভাবে সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করা ঠিক নয়। গুটিকয়েক লোক অন্যায় করলে তার জন্য সমগ্র সমাজ বা প্রতিষ্ঠানকে দোষারোপ করা উচিত নয়। এ প্রসঙ্গে দুটি সঙ্গত প্রশ্ন উত্থাপন করা যেতে পারে। সা¤প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে জর্জরিত হয়ে ১৯৪৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ক্রমাগতভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশান্তরী হয়ে যাচ্ছে তাই বলে কি বাংলাদেশকে একটি সা¤প্রদায়িক রাষ্ট্র বা তালেবানি রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যায়িত করা যাবে? দৃশ্যত একটি বিশেষ ধর্মের লোকজন জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে তাই বলে কি সেই পবিত্র ধর্মটির সবাইকে জঙ্গি বলা সমীচীন হবে? নিশ্চয়ই নয়। একইভাবে সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা হীন কর্মকাণ্ড করেছে সে কারণে পুরো সেনাবাহিনীকে দোষারোপ করা যাবে না। তাই এভাবে উত্তেজিত করে সংবাদ পরিবেশন করার প্রবণতা দেখে একটি প্রশ্ন জাগে, সংবাদ পরিবেশনের স্বাধীনতা ভোগের কোনো নিয়মকানুন থাকা কী উচিত নয়?

দৃশ্যত ইংরেজি দৈনিকটির সংবাদের সঙ্গে বাংলা দৈনিকটির পরিবেশিত সংবাদের একটি যোগসূত্র একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে। উভয় সংবাদই সেনানিবাস বা সেনা স্থাপনা নির্মাণ সংক্রান্ত। ইংরেজি সংবাদে বলা হয়েছিল, চার বছরে ১ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতুর পাশে সেনানিবাস গড়ে তোলার জন্য সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। সরকার শ্লথ গতিসম্পন্ন এবং নিম্ন অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রকল্প থেকে অর্থ ডাইভার্ট করে তা নতুন এই সেনানিবাস নির্মাণ ব্যয় নির্বাহের জন্য কাজে লাগাবে। ইংরেজি দৈনিকটি কর্তৃক পরিবেশিত সংবাদে বলা হয়েছিল, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সেতু বিভাগ ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে একটি সভা করেছেন। এই সভায় তহবিল সংগ্রহের জন্য একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটিতে থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, পদ্মা সেতু বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তারা। যে সব প্রকল্প থেকে তহবিল ডাইভার্ট করা যেতে পারে তা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সেনানিবাস নির্মাণে তহবিল সংগ্রহের অন্যান্য উপায় খুঁজে বের করবে এই কমিটি। তহবিলের পাশাপাশি এই সংবাদে সেনানিবাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে সেনাবাহিনী কর্তৃক সরকারের কাছে ৩২৬ একর জমি চাওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে জাজিরায় ২৫০ একর এবং মাওয়ায় ৭৬ একর। এতে আরো বলা হয়েছে বাংলাদেশে আটটি ডিভিশন সক্ষমতার সেনানিবাস এবং ২০টি ছোট ছোট সেনানিবাস আছে। এই ছোট ছোট সেনানিবাসগুলোকে সেনাবাহিনীতে বলা হয় ব্রিগেড, ব্যাটালিয়ন বা ইউনিট। তবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এগুলোকে সেনানিবাসই বলছে। পদ্মা সেতুর পাশে এরকম একটি ছোট সেনানিবাস স্থাপিত হবে। এই সেনানিবাসে (গত বছরে গঠিত) ৯৯-কম্পোজিট ব্রিগেড সঙ্কুলায়িত হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানের জন্য এই ব্রিগেডের আছে একটি প্রকৌশল স্থাপনা ব্যাটালিয়ন এবং প্রকল্পের জিনিসপত্র ও প্রকল্প স্থানের নিরাপত্তা বিধানের জন্য দুটি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন।

এই সংবাদে বলা হয়েছিল সরকার গত বছর দক্ষিণ অঞ্চলে একটি সেনানিবাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং রামুর বনাঞ্চলে ১৮০০ একর জায়গায় একটি সেনানিবাস নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে রামু, রুমা, চাটমোহর, হাতিয়া-স›দ্বীপ এবং গাজীপুরে সেনা স্থাপনার জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান থাকার কথা বলা হয়েছে।

স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সেনাবাহিনী দেশ ও জাতির সম্পদ। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালিদের ওপর যে গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করেছিল তা থেকে মুক্ত স্বাধীন স্বদেশভূমি ছিনিয়ে আনার লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গড়ে ওঠা সেনাবাহিনী এ দেশের গর্ব। মুক্তিযুদ্ধে রক্তঝরা সেই দিনগুলোতে দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে আপামর বাঙালি জনসাধারণের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। জাতির যে কোনো দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী সদাপ্রস্তুত থাকেন। শুধু দেশে নয়, আমাদের সেনাবাহিনী বহির্বিশ্ব থেকেও দেশের জন্য সম্মান ও মর্যাদা বয়ে আনছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসিত ভূমিকা পালন করার কারণে কিছুদিন আগে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত ধন্যবাদ দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশে এসেছিলেন।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৪নং অনুচ্ছেদে ‘প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী কর্তৃত্বে সম্পত্তি গ্রহণের…’ অধিকার সরকারকে দেয়া হয়েছে। তবে গণতান্ত্রিক বিধি মোতাবেক এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ বা গ্রহণ থেকে বিরত থাকতেও সরকার পারেন। আটটি সংগঠন থেকে যে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে তাতে সেনা স্থাপনা নির্মাণকে ‘অন্যায়’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যে মুহ‚র্তে সমগ্র বিশ্বব্যাপী উগ্রধর্মীয় জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড চলছে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশে আলকায়েদার শাখা খোলার ঘোষণা আয়মেন আল জাওয়াহিরির ভিডিও বার্তার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ যখন যে কোনো মুহ‚র্তে যে কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটাতে পারে। সে সময় আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করছেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রতি অনুগত বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের গর্ব। তবে সেনাবাহিনীকে জনগণের বা সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করার ব্যাপারে একটি পক্ষ সব সময়ই সচেষ্ট থাকে। স¤প্রতি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিউইয়র্ক সফরের সময় বাংলাদেশের শুভাকাক্সক্ষীদের পক্ষ থেকে তাকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ ধরনের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল। ৩ নভেম্বর জেলখানায় ৪ জাতীয় নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপরও এরকম চেষ্টা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। একটি ইংরেজি ও বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদ সেনাবাহিনীর প্রতি এ ধরনের কোনো উসকানি কিনা তা একটি প্রশ্ন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.