নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীতির খোঁজে রাজনীতি

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৪

যতদিন না রাজনীতি নিজের পায়ে দাঁড়াতে না পারছে, ততদিন আমাদের ভয় যাবে না। খেয়াল করুন, বায়ান্ন থেকে একাত্তর পর্যন্ত রাজনীতি নিজের মতো করে চলত বলেই আমাদের অর্জনগুলো ছিল গগনস্পর্শী। একাত্তর আসলেই একটি অগ্নিগর্ভ সুবর্ণ সময়। আমাদের বিপরীতে ছিল তখনকার দুনিয়ার সেরা দুই পরাশক্তি।
মার্কিনি ও চিনাদের মোকাবিলা করেই স্বাধীন হয়েছিলাম আমরা। আজ যখন পেছন ফিরে তাকাই, তখন বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়ি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন আহমেদ, প্রবীণ নেতাদের নিষ্ঠা ও ত্যাগেই আমরা এমন পরাশক্তিকে কাঁচকলা দেখিয়ে মুক্ত হয়েছিলাম। এর নামই দেশপ্রেম। তখন আমাদের না ছিল চাল, না চুলো। আমাদের দেশটিও আমাদের ছিল না। চারদিকে শয়তান, বর্বর পাকির দল ও শত্রু। ওই বাস্তবতা রুখেই আমাদের জন্ম। আজ আমাদের অবস্থান যখন অনেক পোক্ত, উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বাংলাদেশ একটু করে পরিচিত হয়ে উঠছে, তার সুনাম বাড়ছে এবং মেধা ও শ্রমে বিশ্বে নিজের জায়গা করে নিচ্ছে তখন কি আমাদের দুর্বলতা মানায়? অথচ ওই পরাশক্তি নামক বায়বীয় দুর্বলতাই যেন রাজনীতিকে এগোতে দিচ্ছে না।
আগেই বলে নিই, বড় বিচিত্র আর অদ্ভুত জাতি আমরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের রাজনীতিতে জামায়াত-বিএনপির আদর্শের ঘোর শত্রু হওয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্র। তাদের সম্প্রদায়গত মায়াকান্না যদি সত্য হতো, তাহলে মুসলিম নিপীড়ন ও নির্যাতনে আগ্রহী মার্কিন রাজনীতিই তাদের প্রধান বৈরী হওয়ার কথা। জামায়াতের তো এর বিরুদ্ধেই জিহাদ করার কথা। অথচ আমরা কী দেখছি? জন কেরি ফোন করে প্রাণদ- লাঘবের অনুরোধ জানাচ্ছেন। মার্কিন লবিং সুযোগ পেলেই বলছে, মৃত্যুদ- মূলত এখন বাতিল একটি পন্থা। অথচ যারা খবর রাখেন, তাদের অজানা নয় সে দেশেও মৃত্যুদ- আছে। কয়েকদিন আগেও দেখলাম, ইউরোপে যুদ্ধাপরাধী এক নাৎসিকে খুঁজে পেয়ে তার বিচার করা হচ্ছে। তার বয়স কম করে হলেও আশির কোঠায়। তাদের বেলায় তারা কাউকে ছাড় দেয় না। ইতিহাস ও জাতির জঞ্জাল সাফ করার বেলায় একবিন্দুও ছাড় নেই। উন্নয়নশীল দেশগুলোর বেলায় যত উপদেশ ও আদেশ। বলছিলাম চিনের কথাও। সে দেশে মানুষের ধর্ম পালনের অধিকার খুব গোলমেলে। নেই বললেই চলে। চিনের এক প্রদেশে মুসলমানদের নির্যাতন ও নিপীড়ন খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। সে দেশের মুসলমানদের জন্য জামায়াতিদের প্রাণ কাঁদে না। প্রাণ কাঁদে না যুক্তরাষ্ট্রের অশুভ চালে সর্বস্ব খোয়ানো প্রাণ হারানো ফিলিস্তিনিদের জন্য। আর যুক্তরাষ্ট্রও পারে বটে! দেশে দেশে তার কাজ নাকি মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ হটানো। ধর্মের নামে গজিয়ে ওঠা জঙ্গিবাদের এই নির্মূলকারী কোন কারণে আমাদের দেশের রাজাকারদের সমর্থক? কোন আনন্দে তার এই অন্যায় আবদার? এটা কি একাত্তরের পরাজয়ের রাগ বা প্রতিশোধ স্পৃহা, না পরাজিত মিত্রের প্রতি সহমর্মিতা?
যেটিই হোক, ওই ফাঁদে পা দেওয়া অনুচিত। দিন যত যাচ্ছে, যত সময় আধুনিক ও হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছে- বিশ্ব ততই মোড়লদের মুখোশ খুলে পড়তে দেখছে। তারা কেউই আর আগের অবস্থানে নেই। তাদের অর্থনীতি সমাজ ও বাস্তবতা, বহুবিধ সুযোগ এবং অতীতের সাফল্যে ঠেস দিয়ে না দাঁড়াতে পারলে খবর ছিল। এটি অনেকটা চলন্ত গাড়ির মতো। ধাবমান গাড়ির তেল ফুরিয়ে গেলে, গ্যাস শেষ হয়ে গেলে, এমনকি চালক না থাকলেও অনেক দূর যায়। পরে কোথায় গিয়ে থামবে বা কোথায় ধাক্কা দেবে, সেটি যদিও জানা যায় না তবুও এটি ঠিক, বেশ কিছুদূর যাবেই। আপাতত তারাও চলছেন। এখনো তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বা পাওয়ার আছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তারা যা বলবেন বা বলছেন সেটিই শতভাগ মানতে হবে। মানলে কী হয় মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোই এর জ্বলন্ত উদাহরণ। যুক্তরাষ্ট্র ও এর দোসরদের কথা না শুনলে বড় ধরনের বিপদে পড়ার দুর্ভাবনা যেমন থাকে, তেমনি শুনলেও নিস্তার নেই। এ কারণে যতটা না শোনা সম্ভব, ততটাই মঙ্গল। আজকাল আমাদের দেশের রাজনীতি, বিশেষত যারা গদিতে নেই- তারা এদের হাতে-পায়ে ধরে নিজের কাজ করিয়ে নিতে লাগামহীন হয়ে উঠেছেন। এর প্রভাব বা কুফল এখন স্পষ্ট। আমাদের দেশের প্রচলিত আইন, বিচার, এমনকি শাস্তির ব্যাপারেও তারা নাক গলাচ্ছেন। খেয়াল করুন, আমাদের মতো দেশের সমাজ ও সামাজিক বাস্তবতায় কত ধরনের অসঙ্গতি। তারা যদি সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্র এবং সমাজ উন্নয়নে আধুনিক বাংলাদেশের জন্য চিন্তিত হতো, তাহলে কল্যাণ ও মানবিক দিক থেকে আমাদের অসঙ্গতি দূর করার জন্য চাপ দিতেন। তা না করে তাদের যাবতীয় উদ্বেগের মূল বিষয়টি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কেন ঘনীভূত হলো, সেটিই আসলে ভাবনার বিষয় এবং সেখানেই এর জবাব আছে।
আমাদের সরকার যখন এই বিচারে হাত দেয়, তখন নিশ্চয়ই আশা করেনি- পৃথিবীর সব দেশ ও জাতি এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দেবে বা শক্তি জোগাতে এগিয়ে আসবে। বরং আমরা আগে থেকেই ধরে নিয়েছিলাম, পাকিদের কূটচাল ও জামায়াতের লবিংয়ে বহু চেনামুখও রঙ বদলাবে। এ প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার শক্তি আমাদের যে আছে, সেটিও জানান দেওয়া হয়েছিল। শাহবাগের গণজাগরণের ঢেউ দেখে মীর জাফরদের পাশাপাশি মোজীনারও বুকের জল হিম হয়ে যাওয়ার কথা। এরপরও তারা থেমে নেই। থাক বা না থাক, বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। এই সেদিনও আমরা পর পর ফাঁসির রায় পেয়েছি। কিন্তু আমদের কনফিডেন্স বা আত্মবিশ্বাসের জায়গাটি কি কোনো কারণে টাল খাচ্ছে? এ কথা মানতেই হবে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ছাড়া কোনোদিনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা সম্ভব হতো না। তার দৃঢ়তা ও সাহসেই ওই প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেছে। জনগণ, বিশেষত তারুণ্যের ম্যান্ডেট নিয়ে আসা শেখ হাসিনার সরকার কিঞ্চিৎ বিলম্বে হলেও এ কাজে হাত দিয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে। কিন্তু গোলাম আযমের প্রতি জামাই আদর ও ফাঁসির আদেশ বদলে যাবজ্জীবন দেওয়ার পর অনেক কিছু যেন আগের মতো আর সাহস বা বল পাচ্ছে না।
সম্প্রতি শেখ হাসিনা আরব আমিরাত সফরে গিয়ে বলেছেন, দেশের নিরাপত্তা ও শান্তির ব্যাপারে জামায়াত নাকি হুমকি নয়। তার এই বক্তব্যের পেছনে যে কৌশলই লুকিয়ে থাকুক, এটি আমাদের বিশ্বাসে আঘাত করেছিল, বিশেষত আমাদের মতো যারা তার নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন- তাদের মনে এক ধরনের নেগেটিভ দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে এই বক্তব্য। মাত্র কয়েকদিন আগে আমরা প্রতিবেশী দেশে জামায়াতিদের দোসর হুজিদের বোমা ফাটানোর ঘটনা দেখলাম। দুনিয়ার সব দেশে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ওপর হামলা পরিকল্পনা নিয়ে খবর বেরিয়েছে। কে না জানে এর পেছনে কাদের অর্থ ও লবিং কাজ করছে? এ বাস্তবতায় তার মুখ থেকে এমন কথা শুনতে চাইনি আমরা।
আমাদের দেশে একদা সাহসী মানুষ ও বীরের ছড়াছড়ি থাকলেও এখন আর নেই। কয়েকদিন আগে তারুণ্যকে উদ্দেশ করে একটি লেখায় বলেছিলাম, তারা যেন সততা ও দেশপ্রেমে সাহসী হয়ে উঠলে তাদের জানা উচিত- কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না, বা আ স ম রবরা যৌবনে স্বদেশ ও স্বজাতির উপকারে লেগেছিলেন বলেই এখনো মানুষ তাদের কথা শুনছে বা না শুনলেও শোনার ভান করছে। যারা দেশবিরোধী কিংবা দেশের ভালো-মন্দের পরিবর্তে নিজেদের আখেরাত ও দুনিয়াদারি নিয়ে ব্যস্ত, তাদের থোড়াই মনে রাখে। বিদেশি মিডিয়ায় কামারুজ্জামান বা কাশেম আলী যতই কোলাব্যাঙের মতো গলা ফোলাক না, দেশে তাদের কথা কেউ আসলে ভাবে না। জোরজবরদস্তির যে হরতাল, তাও আসলে মানুষকে ভয় পাইয়ে দেওয়া, সরকারকে চাপের মুখে রাখার পুরনো কৌশল। এত জানার পরও আমাদের বিদেশিপ্রীতি বা ভয়ের কারণ নিজের ওপর ভরসা ও আস্থার সংকটে তৈরি এক মানসিক চাপ। স্বাবলম্বী হওয়ার পথে যতদিন বাধা থাকবে, যতদিন আমরা রাজনীতির হানাহানি পেরিয়ে দেশের কল্যাণে এক হতে না পারব, ততদিন তারা এই চাপ বজায় রাখবে। ভারতের কথা ভাবুন, এখন আর তাকে বাগে আনতে পারে না পশ্চিমারা। উল্টো কিছু ঘটলে লাইন দিয়ে ভারত সফরে ছোটেন তারা। পাছে বাজার ও জনশক্তি- দুই-ই হারায়। আমাদের জনসংখ্যা যখন জনশক্তিতে পরিণত হচ্ছে, তখন জাতীয় ঐক্য ও বিভ্রান্তি যেন বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে। প্রধানমন্ত্রী কৌশলগত কারণে হয়তো ঠিক কথাই বলেছেন। কিন্তু এটিও মানতে হবে, আগাছা পরিষ্কারের এই দুঃসময়ে শাক দিয়ে মাছ না ঢাকাই শ্রেয়। কারণ জামায়াতিরা কখনো আমাদের বন্ধু হবে না। আমরা যাদের বিচার করছি বা আইন যাদের শাস্তি দিচ্ছে, তারা স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র করেছে। মার্জনা পেয়ে তাকে দ্বিতীয় জনক বলে ঘোষণা দেওয়ার পরও রেহাই দেয়নি। ফলে সত্যকে সত্য বলে প্রচার করাই জরুরি। তাছাড়া এতে বিভ্রান্ত বিদেশিরা পাল্টা প্রশ্ন তুলতে পারেন, তারা যদি হুমকি না হবে- তাহলে তাদের বিরুদ্ধে এত আইন, বিচার ও নিষিদ্ধ করার তোড়জোড় চলছে কোন কারণে? তখন তো তারা বলবেন, এভাবেই গণতন্ত্রের টুঁটি চিপে ধরছে সরকার।
শুরুতেই বলেছি, দেশ ও জনগণের প্রত্যাশা- অকুতোভয় নেতৃত্ব ও সাচ্ছা দেশপ্রেমের রাজনীতি। কোনো পরাশক্তির সাহস নেই- এ দুই বলে বলীয়ান জাতিকে ভয় দেখায়। মহাত্মা গান্ধী থেকে নেলসন মান্ডেলা এরই উজ্জ্বল উদাহরণ। আমাদের একদিকে যেমন শান্তি ও প্রগতি প্রয়োজন, আরেকদিকে তেমন চাই কঠোরভাবে ইতিহাসের আগাছা ও জঞ্জাল সাফ করা। সাপের লেজে পা দিয়ে তাকে আস্ত রাখার মানে বেহুলার পথ বেছে নেওয়া। সে সাপ একদিন না একদিন দংশন করবেই। আমরা এখন আগের চেয়ে বেশি আত্মনির্ভরশীল ও বলিষ্ঠ এক জাতি। আমাদের কথাবার্তা ও কাজে এর প্রতিফলন ঘটলে মুরুব্বিরাও নিজেদের মতো বদলাতে শুরু করবেন। অন্যথায় একের পর এক চাপ ও অজুহাতে আমাদের দমিয়ে রাখতে চাইবেন তারা। বাংলাদেশ এখন আর দমা বা ভয় পাওয়ার জায়গায় নেই। রাজনীতি তা বুঝলেই জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের মতো দৈত্যকে বোতলবন্দি করা যাবে। আশা করি- কথা, কাজ ও চিন্তায় আমাদের সততা এবং দৃঢ়তাই দেশ ও জাতিকে পথ দেখাবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩০

খেলাঘর বলেছেন:

আমরিকান নীতি সম্পর্কে আপনার ধারণা সঠিক নয়।

রাজনীতি 'নিজ পায়ে দাঁড়ানো' বলতে কিছু নেই; রাজনীতি নির্ভর করে মানুষের জীবনের মানের উপর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.