![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার ছিটমহল বিনিময়ের সিদ্ধান্তটি শেষ পর্যন্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে। এ ইস্যুতে এতদিনকার বিরোধিতাকারী বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাম্প্রতিক অবস্থান পরিবর্তনেই এ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ১৬২টি ছিটমহলের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দার ৬৭ বছরের অধিকারবঞ্চিত অমানবিক জীবন-যাপনের অবসান হবে শিগগিরই। একই সঙ্গে দুই দেশের সম্পর্কেও বড় ধরনের অগ্রগতি হবে। ভারতের বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগী ভূমিকায় এবং তৃণমূল-নেত্রী মমতা ব্যানার্জির সমর্থন নিয়ে এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনের বিলটি ভারতের পার্লামেন্টে অনুমোদনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে। আমরা এ অগ্রগতিকে স্বাগত জানাই। উল্লেখ্য, বর্তমানে ভারতের ভূখণ্ড-পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল এবং বাংলাদেশের ভূখণ্ড-পরিবেষ্টিত ভারতের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে এ ছিটমহলগুলোর প্রায় ৫২ হাজার মানুষ বলতে গেলে দেশপরিচয় ও নাগরিকত্বহীন; স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ইত্যাদি নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত। আইন-আদালতের সুরক্ষাহীন মানবেতর জীবন-যাপন করে আসছেন তারা। এ মানুষগুলোকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য দুই দেশের মধ্যে এ ছিটমহলগুলো বিনিময়ই সহজ এবং প্রায় অবিকল্প সমাধান। কিন্তু এ ইস্যুতে ভারতে কখনো রাজনৈতিক ঐকমত্যের অভাবে, আবার কখনো রাজনৈতিক নেতৃত্বের সদিচ্ছা থাকলেও আমলাতন্ত্রের বাধায় বিষয়টি সুরাহা হচ্ছিল না। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে ছিটমহলগুলো হস্তান্তরের প্রস্তাব গৃহীত হলেও বিগত চার দশক যাবৎ তা অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সে সময়ে ইউপিএ জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় এ বিষয়টি নিষ্পত্তির সম্ভাবনা জোরালো হয়েছিল। ওই সফরে দুদেশের স্থলসীমান্ত চুক্তির ওই প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট সরকারের সময় স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকরে সই হওয়া প্রটোকলটি বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগে বিরোধিতা করেছিল মোদির দল বিজেপি। সঙ্গে ছিল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস। এখন দেখা যাচ্ছে বিজেপি নেতা মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকরে উদ্যোগী। স¤প্রতি কাঠমান্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নরেন্দ্র মোদি স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকরে তার সরকারের জোর প্রচেষ্টার কথা জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। এরপরই বিষয়টিতে গতি আসে। আর এরই মধ্যে স্থলসীমান্ত চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময়ে সরাসরি সমর্থন জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকরে ইউপিএ সরকারের সময় বিলটির বিরোধিতা করে আন্দোলন-বিক্ষোভ করা বিজেপির আসাম ইউনিটও এবার কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে নেমেছে। ভারতে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতার অবসানে অনুক‚ল বাতাবরণ সৃষ্টি এবং সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ার অগ্রগতির খবরে স্বাভাবিকভাবেই উল্লসিত ছিটমহলবাসী। আমরাও চাই ভারতের এ সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া দ্রুতই সম্পন্ন হোক এবং ছিটমহলবাসী মানবিক জীবনের নিশ্চয়তা পাক।
ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা এ সংকটের সমাধান একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হয়ে থাকবে। ছিটমহল সমস্যার সমাধান নিশ্চিতভাবেই উভয় দেশের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত মজবুত করবে। একইভাবে দুদেশের মধ্যকার বিবদমান অন্য ইস্যুগুলোর নিষ্পত্তিতেও ভারতের বর্তমান সরকার সদিচ্ছা দেখাবে, উদ্যোগী হবে- এ প্রত্যাশা আমাদের।
©somewhere in net ltd.