নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মামলার জালে বিএনপি

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:২০

মামলার জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি। শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়াসহ দলটির সিনিয়র কয়েক নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে ডজনেরও বেশি করে মামলা। মামলার ভারে জর্জরিত নেতাদের আন্দোলন ও সংগঠনের পেছনে সময় দেয়ার চেয়ে আদালতপাড়া ও আইনজীবীদের চেম্বারে সময় কাটাতে হচ্ছে বেশি। ফলে কাক্সিক্ষত সময়ে আন্দোলনে নামার যে ঘোষণা দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দিয়েছেন তার সাফল্য নিয়ে সংশয়ে আছেন খোদ বিএনপির নেতাকর্মীরাই। তাদের আশঙ্কা, আন্দোলনে নামলে চলমান মামলার পাশাপাশি আরো মামলা ও গ্রেপ্তারির শিকার হতে পারেন। এমনকি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলার বিচার কাজ শেষের পথে। এতে সাজা হলে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতই অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

খালেদা জিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মোট ৩২টি মামলা বিভিন্ন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে ৯টি বর্তমান সরকারের আমলে করা। বাকিগুলো বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৬টি, তার বড় ছেলে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ১৮টি, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে ৭টি এবং তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়েদা রহমানের বিরুদ্ধে ১টি মামলা রয়েছে।

এসব মামলার ২টিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার ২ ছেলেকে এবং ১টিতে তারেক ও কোকোকে আসামি করা হয়েছে। এই হিসাবে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মোট মামলা রয়েছে ৩২টি। যদিও মামলাগুলোর মধ্যে বেশিরভাগের কার্যক্রমই উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত রয়েছে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলাটি হয় গত ২১ অক্টোবর। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে এ মামলাটি দায়ের করা হয় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে। মামলার বাদী সরকার সমর্থক সংগঠন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। গত ১৪ অক্টোবর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের এক অনুষ্ঠানে দেয়া খালেদা জিয়ার বক্তব্যই এ মামলার কারণ। এছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৫টি দুর্নীতি মামলা চলমান রয়েছে। এর মধ্যে দুটি মামলার বিচারকাজ জোরেশোরে শুরু হয়েছে। মামলা দুটি বিচারিক আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।

গত বুধবার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ঢাকার একটি আদালতে সর্বশেষ মামলাটি হয়। আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছেন তার বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধুকে পাকবন্ধু বলায় এ মামলা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলাগুলোর মধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, দুর্নীতি ও মানিলন্ডারিং মামলা অন্যতম।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির জীবিত ১৮ জন সদস্যের মধ্যে ২ জন বাদে সবার বিরুদ্ধেই রয়েছে মামলা। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন ট্রাইব্যুনাল। আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও দুর্নীতির মামলায় কয়েক মাস ধরে কারাগারে। একাধিকবার জামিন নিয়েও মুক্তি মেলেনি তার। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ২০টির বেশি। ১৮টি মামলা রয়েছে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একটি মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ ১৬ মামলার আসামি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে ২৩ মামলা, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪১টি মামলা। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪৭টি। এছাড়া বেশ কিছু নেতার বিরুদ্ধে রয়েছে শতাধিক করে মামলা। এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে রয়েছে ৯টি মামলা।

ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১০-এর অধিক। সম্প্রতি ১টি মামলায় তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, রুহুল কবির রিজভী, অন্যতম নেতা জয়নুল আবদিন ফারুক, এহছানুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরফত আলী সপুসহ অনেক নেতাই একাধিক মামলার আসামি। কারো কারো বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ডজনেরও বেশি। গাড়ি পোড়ানো, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, নাশকতা সৃষ্টি বা চেষ্টার অভিযোগে গত এক বছরে অর্ধশতাধিক মামলা হয়েছে।

একইভাবে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দেয়া হচ্ছে একের পর এক নতুন মামলাও। এ ছাড়া পুরনো মামলাগুলোও সচল হচ্ছে একের পর এক।

গত ৫ জানুয়ারির আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি জোটের আন্দোলনের সময় তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হত্যা, বোমা হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে পুলিশ অসংখ্য মামলা করে। সেসব মামলায় চার্জশিট দাখিল ও বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ সারা দেশে দায়ের হওয়া এসব মামলায় আদালতে ধারাবাহিকভাবে অভিযোগপত্র জমা দিচ্ছে পুলিশ। এসবের ওপর ভিত্তি করে শুরু হচ্ছে বিচারকাজও।

বিএনপির আইনজীবী ও দলীয় নেতারা মনে করছেন, সরকার কয়েকটির মামলার বিচারকাজ দ্রুত শেষ করার তৎপরতা চালাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে দূরে রাখার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কয়েকটি মামলা বর্তমানে গতি পাচ্ছে। পাশাপাশি শিগগিরই সরকারবিরোধী আন্দোলনে যাবেন বলে খালেদা জিয়া ঘোষণা দেয়ার পর দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও ধরপাকড় বেড়ে গেছে। আগামী ১৮ ডিসেম্বর ছাত্র কনভেনশনকে কেন্দ্র করেও চলছে ধরপাকড়।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে ৩২ হাজার মামলায় প্রায় ৩ লাখ নেতাকর্মী আসামি রয়েছেন। এসব মামলায় অজ্ঞাত হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করেছে পুলিশ। ২০ দলীয় জোটের শরিক দলের অনেক নেতাও মামলার আসামি রয়েছেন। রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিএনপিসহ ২০ দলীয় নেতাকর্মীরা এখন নতুন করে আন্দোলনের চেয়ে মামলা সামলাতেই হিমশিম খাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ভিন্ন মত একদমই সহ্য করতে পারছে না। অবস্থাটা এমন পর্যায় গেছে, এই সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই মামলা দেয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, স্পষ্ট হয়ে গেছে যখন গণতান্ত্রিক আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে, ঠিক তখনই সরকার এভাবে মামলা দেয়ার পাঁয়তারা শুরু করে। তবে এতে শেষ রক্ষা হবে না। তিনি আরো বলেন, জনগণ হামলা-মামলা প্রতিরোধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি আদায় করবেই।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সীমাহীন মামলা দায়ের আন্দোলন দমনের অংশ। এই দমন-পীড়নের ফলে আওয়ামী লীগকে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক দল যাতে আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে, সে লক্ষ্যেই নেতাদের মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় এসেছে বলেই টিকে থাকা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। তারা মনে করছে, বিএনপি নেতাদের মামলা দিয়ে কারারুদ্ধ করতে পারলে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যাবে। এ কারণে দেশব্যাপী নেতাদের পাইকারি মামলায় জড়ানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বছরের যে কয়টি দিন আদালত খোলা থাকে, প্রতিদিনই হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হাজিরা দিতে হচ্ছে। প্রায় প্রতি জেলা, উপজেলা ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অগণিত নেতাকর্মী এখন মামলার আসামি।

তবে অনেকে মনে করেন, বিএনপি নেতৃত্বের অপরিণামদর্শীতার কারণেই সরকার তাদের মামলার জালে ফাঁসাতে পেরেছে। জামাতের ফাঁদে পড়ে বিএনপির মতো একটি গণতান্ত্রিক দল যেভাবে আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে তা নজীরবিহীন। এর ফলতো তাদের পেতেই হবে। আর আমাদের দেশের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি- বিরোধী দল দমনে সরকার এই সুযোগটিই নিচ্ছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.