![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা লাগাতার অবরোধ কর্মসূচির ১৩ দিন অতিবাহিত হচ্ছে আজ। এর সঙ্গে আবার প্রতিদিনই দেশের কোনো কোনো জেলায় হরতাল ডাকছে বিএনপি ও তার জোট শরিকরা। আর এই ১৩ দিনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে কৃষিপণ্য পরিবহন, পর্যটন, শিল্প-বাণিজ্য, আমদানি-রপ্তানি, ব্যাংকিং, ক্ষুদ্র ব্যবসা, গার্মেন্ট এবং রেমিটেন্স খাত। সব মিলিয়ে প্রতিদিনই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকা। কৃষিপণ্য উৎপাদন করলেও সেগুলো সময়মতো বাজারজাত করতে না পারায় ক্ষতি গুনতে হচ্ছে মাঠ পর্যায়ের প্রান্তিক কৃষককে। সার ব্যবসায়ীরাও প্রতিদিন লোকসান গুনছেন ১০ লাখ টাকা। লাগাতার অবরোধে পর্যটন খাতে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। গত ১৩ দিনে এ খাতে কয়েক হাজার পর্যটকের ভ্রমণ বাতিল করেছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। ফলে ভরা মৌসুমে পর্যটন শহরগুলোতে হোটেল ব্যবসায় ধস নেমেছে। ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা। পরিবহন খাতে লোকসান হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায় বিপর্যয়ের কারণে প্রতিদিন লোকসান হচ্ছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। ক্ষতি হচ্ছে শিল্প ও বাণিজ্য খাতেও। উৎপাদন কমে গেছে শিল্প-কারখানায়। কমে গেছে আমদানি-রপ্তানি। বড় ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে পারছেন না রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে। গার্মেন্ট শিল্পেও পড়েছে অবরোধের বিরূপ প্রভাব; প্রতিদিন এ খাতে ক্ষতি ৭০০ কোটি টাকা। হুমকির মুখে রেমিটেন্স খাতও।কৃষক ও কৃষিএখন সবজির ভরা মৌসুম। দেশে শীতকালেই সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয়। প্রান্তিক কৃষকরা বোরো ও আমনের পর সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেন সবজি উৎপাদন ও বিক্রিতে। এখান থেকে বড় ধরনের আয়ও হয় কৃষকের। কিন্তু উৎপাদিত সবজি তারা ১৩ দিন ধরে বাজারজাত করতে পারছেন না। ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রতিদিনই কৃষককে চোখের পানি ফেলতে হচ্ছে। কারণ তারা সবজি বিক্রি করতে পারছেন না। সবজির বড় মার্কেট রাজধানী ঢাকাসহ বড় শহরগুলো। স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন যেখানে অর্ধলক্ষাধিক ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান সারা দেশে পণ্য পরিবহন করে, সেখানে এখন প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে কিছু ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করছে। ভাড়াও বেশি নিচ্ছে। এতে পণ্য পরিবহন বিশেষ করে কাঁচামাল পরিবহন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এফবিসিসিআইর তথ্য অনুযায়ী এ খাতে প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ২৮৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত ১৩ দিনে এ খাতে ক্ষতির আর্থিক পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা।কৃষির অন্যতম উপকরণ সার পরিবহন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। চলমান অস্থিরতা চলতে থাকলে খুব শীঘ্রই সারা দেশে সারের সংকট দেখা দিতে পারে। তখন কৃষি উৎপাদনও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান কামরুল আশরাফ খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ মুহূর্তে কোথাও সারের সংকট নেই। মাঠ পর্যায়ে ডিলারদের কাছে যে মজুদ আছে তা দিয়েই কাজ চলছে। কিন্তু মজুদ শেষ হয়ে গেলে সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করবে। তিনি জানান, বন্দর থেকে সার গুদামজাত করতে না পারা এবং বিভিন্ন ডিলারের কাছে পৌঁছাতে না পারার কারণে প্রতিদিন তাদের ১০ লাখ টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। ব্যাংকের সুদ গুনতে হচ্ছে। এর প্রভাব কৃষকের ওপর পড়বে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। পর্যটন : দেশের পর্যটনের ভরা মৌসুম হচ্ছে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত। এ সময়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি, কুয়াকাটা, সিলেট, মৌলভীবাজার, শ্রীমঙ্গল, সুন্দরবন, হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ, মনপুরা ইত্যাদি এলাকা ভ্রমণ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে এ খাতে এক রকম সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। পর্যটনশিল্পে জড়িতরা বলছেন, গত কয়েক দিনে তাদের ক্ষতির পরিমাণ সব মিলিয়ে হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। আর এ অবস্থা আরও কিছু দিন চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে বাড়ি যেতে হবে। বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড ও বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে প্রায় ছয় লাখ বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। আর অভ্যন্তরীণ পর্যটকের সংখ্যা বছরে প্রায় ১৫ লাখ। কিন্তু গত ১৩ দিনের অবরোধের কারণে ইতিমধ্যে বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ বাতিল করেছে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠান। রিভার অ্যান্ড গ্রিন ট্যুরস পরিচালক ও বাংলাদেশ ডেভলপার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, শুধু তার প্রতিষ্ঠান থেকে গত ১৩ দিনে এক হাজারেরও বেশি পর্যটকের ভ্রমণ বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৩০০ হোটেল আছে। যার সবই এখন পর্যটকশূন্য। একইভাবে সেন্টমার্টিন, স্টেট ওয়ে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক ও সিলেট, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, শ্রীমঙ্গল, সুন্দরবন ও কুয়াকাটার হোটেলগুলোও পর্যটনশূন্য। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) প্রথম সভাপতি এবং স্টেটওয়ে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক মো. রাফিউজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশিরা ইতিমধ্যে তাদের বাংলাদেশ ভ্রমণ বাতিল করেছেন। পর্যটক আসে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, যুক্তরাজ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে। তিনি জানান, এখন সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজমে। দেশি পর্যটকের সংখ্যা প্রতি বছর কমবেশি ১৫ লাখ। কিন্তু এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ও অস্থিরতার কারণে ট্যুরিস্টরা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। অথচ ২০১২ সালে দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পর্যটন খাতের অবদান ছিল ২ দশমিক ১০ শতাংশ। আর আগামী এক দশকে পর্যটন খাতে যে ১২টি দেশ দীর্ঘ মেয়াদে প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কথা তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।পরিবহন : একদিন হরতাল বা অবরোধ হলেই পরিবহন খাতে বিশেষ করে বাস-মিনিবাস চলাচল বন্ধ থাকলে গড়ে প্রায় ৪৮ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হন পরিবহন মালিকরা। সারা দেশে প্রায় সোয়া লাখ ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান রয়েছে। যেগুলোর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজারের বেশি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। অবরোধের কারণে এ সংখ্যা কমে এসেছে অস্বাভাবিকভাবে। এতে আয় কমে গেছে। বেড়েছে ব্যয়ের পরিমাণ। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরতাল-অবরোধের কারণে এ খাতে পরিবহন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা, ব্যাংকের সুদ আর ঝুঁকি নিয়ে চলাচলকারী গাড়ি পুড়ে যাওয়ার কারণে সব মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। গত কয়েক দিনে ঝুঁকি নিয়ে চলতে গিয়ে অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। আর ভাঙচুর হয়েছে তিন শতাধিক। একইভাবে যাত্রী পরিবহন বা বাস পুড়েছে ২৫ থেকে ৩০টি। আর ভাঙচুরও হয়েছে প্রায় অর্ধশত। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী : টানা অবরোধ-হরতালের কারণে পথে বসার উপক্রম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ফুটপাতে ব্যবসা করেন তারা দোকান খুলতে না পারায় প্রায় নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। এফবিসিসিআই মনে করে, একদিনের হরতালে ফুটপাতের দোকান ও পাইকারি বাজার, শপিং মল, শোরুমের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৬০০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের কিরণ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে তাদের সমিতিভুক্ত ২৫ লাখ ব্যবসায়ী। হরতাল-অবরোধে বেশির ভাগ দোকান খোলা থাকলেও কোনো বিক্রি হয় না। এসব দোকানের গড় বিক্রি ১২ হাজার টাকা ধরলে ২৫ লাখ দোকানের বিক্রি দাঁড়ায় ৩০০ কোটি টাকা। আর এসব দোকান পরিচালনায় ও ব্যাংক ঋণের সুদ হার বাবদ খরচ হয় প্রতিদিন ১৫০ কোটি টাকা। এর পুরোটাই পকেট থেকে গচ্চা দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন ৫৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। দোকান মালিক সমিতির সভাপতি প্রধান দুই দলকে নমনীয় হয়ে আলোচনায় বসে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া দোকান মালিক সমিতির নিবন্ধনের বাইরে যারা ফুটপাতে ব্যবসা করেন তাদের সংখ্যাও কম নয়। প্রতিদিন তাদের ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।ব্যাংক ও আর্থিক খাত : ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রেমিটেন্স আহরণেও প্রভাব পড়ছে ব্যাংকগুলোর। চলতি মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত রেমিটেন্স এসেছে ৪০ কোটি ডলার। আর ডিসেম্বর মাসে রেমিটেন্স এসেছিল ১২৬ কোটি ডলার। সে হিসাবে ডিসেম্বরের অর্ধেক সময়ে রেমিটেন্স আসে ৬৩ কোটি ডলার। যা জানুয়ারি মাসের একই সময়ের তুলনায় ২৩ কোটি ডলার কম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে গ্রাহকরা সময়মতো কাজ করতে পারেন না। এক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানিসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।তৈরি পোশাকশিল্প : তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) তথ্যমতে, এক দিনের হরতালে শুধু এ খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় কমপক্ষে ১০৮ কোটি টাকা। হরতালের কারণে ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত ১০ বছরে পোশাক খাতের ক্ষতি হয়েছে ৮০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। শুধু ১৯৯৯ সালেই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ২ হাজার ১৩৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতি বছরে ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৩৮ কোটি টাকা। বর্তমান সময়ে হরতালে প্রতিদিন ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০০০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ।বিজিএমইএর তথ্যমতে, চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিতে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা টাকার অংকে প্রায় ২ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে এক দিন অবরোধ-হরতাল থাকলে ৬৯৫ কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়। আর প্রতিদিন এই শিল্পে প্রকৃত উৎপাদনের মূল্যমান হচ্ছে প্রায় ৪৩০ কোটি টাকা। যদি উৎপাদন ৫০ শতাংশও বিঘ্নিত হয়, তাহলে প্রতিদিন উৎপাদন ব্যাহত হয় অন্তত ২১৫ কোটি টাকার। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এস এম মান্নান কচি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত দুই সপ্তাহের অবরোধে পোশাক খাতে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমে গেছে। হরতাল-অবরোধের নামে রাজনৈতিক সহিংসতা ও নাশকতায় পোশাকশিল্পে ভয়াবহ ক্ষতি হচ্ছে। ২০১৪ সালে পোশাকশিল্প যখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তখন ২০১৫ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতা আবার এ খাতে আঘাত করছে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে পণ্য পরিবহন তো দূরের কথা, পণ্যের নিরাপত্তাও নেই। আমরা ব্যবসা করতে পারছি না। ক্রেতারা বিকল্প রপ্তানিকারক দেশ খুঁজছে।আমদানি-রপ্তানি : লাগাতার অবরোধে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করতে না পারায় চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্র বন্দরসহ দেশের সব স্থলবন্দরে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। নিরাপত্তাহীনতার কারণে সময়মতো আমদানি-রপ্তানির এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, অবরোধ-হরতালের কারণে গত দুই সপ্তাহে ব্যাংকগুলোতে এলসি খোলার হার প্রায় তলানিতে ঠেকেছে। বন্দরে আটকে আছে শত শত পণ্যবাহী জাহাজ। স্থলবন্দরগুলোতে কনটেইনারের জট বাড়ছে প্রতিনিয়ত। এতে জাহাজ ও কনটেইনারের জট সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক সময়ে পণ্য খালাস না হওয়ায় অতিরিক্ত চার্জ গুনতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।রপ্তানিকারক ৩০টি সংগঠনের জোট এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রপ্তানিকারকদের চাপাকান্না কেউ দেখছে না। আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। তার মতে, ব্যবসা-বাণিজ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সময়মতো পণ্য সরবরাহ দিতে না পারায় ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যা সামগ্রিক রপ্তানি খাতকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, গত দুই সপ্তাহের হরতাল ও লাগাতার অবরোধের কারণে প্লাস্টিক শিল্পে ২৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।শিল্প-কারখানা : উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ীদের মতে, টানা অবরোধে দেশের শিল্প-কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বস্ত্রশিল্প থেকে সিমেন্ট শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা থেকে ওষুধ কারখানা সব ধরনের শিল্প-কারখানাতেই রাজনৈতিক অচলাবস্থার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পরিচালনা খরচও বেড়ে গেছে। এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ড্রাস্টিজের (বিসিআই) সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, অবরোধের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে আমাদের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায়। ট্রাকে মাল আনা-নেওয়া করা যাচ্ছে না। আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে, পেট্রলবোমা ছুড়ছে। বেশি খরচ দিয়েও পরিবহন পাওয়া যায় না। আবার বিদেশি ক্রেতাদের কাছেও ভুল বার্তা যাচ্ছে। এদিকে ব্যাংক ঋণে গড়ে তোলা শিল্পের উৎপাদন সক্ষমতা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারায় কেবল বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা-ই নয়, বাড়ছে ঋণের বোঝা।এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হরতাল-অবরোধে দেশের সামগ্রিক শিল্প-কারখানার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমদানিকৃত কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল বেশির ভাগ কারখানার চাকা ঘুরছে না প্রয়োজনীয় উপকরণের অভাবে। আবার দেশে উৎপাদিত পণ্যও বৈদেশিক বা অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহ করা যাচ্ছে না পরিবহন বন্ধ থাকায়। এর ফলে উভয় সংকটে পড়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। উপরন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে বিনিয়োগ ঝুঁকি বাড়ায় শিল্প-কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের এই অর্থনীতিবিদ।শিক্ষাব্যবস্থা : টানা অবরোধে ভেঙে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সেশনজটে পড়ার আশঙ্কা শিক্ষার্থীদের। নতুন বই পাওয়ার পরে স্কুলে যেতে পারছে না শিক্ষার্থীরা। স্কুলে যাওয়ার পথে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী আহত হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আসন্ন এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে পরীক্ষার্থীরা। দেশজুড়ে বই উৎসবের আয়োজন হলেও অনেকে নিতে পারেনি বই। মধ্যরাতে রাত জেগে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে এ লেভেল এবং ও লেভেল শিক্ষার্থীদের। এই প্রতিবেদন তৈরি করেছেন সিনিয়র রিপোর্টার নিজামুল হক বিপুল, রুকনুজ্জামান অঞ্জন, মানিক মুনতাসির ও রুহুল আমিন রাসেল
©somewhere in net ltd.