![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০১৪ সালের ২৭ ডিসেম্বর তারিখে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে 'কেমন ছিল ৫ জানুয়ারি নির্বাচনকালীন সময়' শিরোনামে আমার একটি লেখায় উল্লেখ করেছিলাম ২০১৩ সালের শেষ এবং '১৪ সালের শুরুর সময়টাতে বাংলাদেশের মানুষকে এক অস্থির সময় পার করতে হয়েছিল। সে সময়ের পত্রপত্রিকায় চোখ বুলালে দেখা যায় বিএনপি তথা বিএনপির নেতৃত্বে ১৮ দলের রাজনৈতিক জোটের সহিংস কর্মকাণ্ডের ওপর ঢাকা থেকে প্রকাশিত আটটি জাতীয় দৈনিক (১৫ ডিসেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি সময়ে) প্রায় ১১ হাজার কলাম-ইঞ্চি খবর ছেপেছিল। এ ছাড়াও ছিল এই জোটের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার ছবিসহ বিবরণ। সে সময়ে সম্মিলিতভাবে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় একশ্রেণির লোক দেশজুড়ে ব্লকেড তৈরি, ভায়োলেন্স, দশম জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে ভয়ভীতি প্রদর্শন, কোথাও কোথাও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ-নির্যাতন প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিল। সারা দেশে সে সময় তারা যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রায় অচল করে দিয়েছিল, মাইলের পর মাইল রেললাইন উপড়ে ফেলেছিল, ট্রেন লাইনের ফিশপ্লেট তুলে ফেলেছিল। সে সময় বাসযাত্রী, রিকশাওয়ালা, ঠেলাওয়ালা ও বাসের ড্রাইভার মেরে ফেলা; হাজার হাজার বৃক্ষ নিধন; গরুবাহী ট্রাকে আগুন লাগানো; আগুন লাগিয়ে ও পেট্রলবোমা ছুড়ে পথচারী মেরে ফেলা; ১০ জানুয়ারি নির্বাচনের আগের রাতে এবং ভোটের দিন শত শত স্কুলগৃহে আগুন লাগিয়ে তা ভস্মীভূত করে দেওয়া প্রভৃতি সে সব ঘটনা এখনো এ দেশের মানুষকে ভয়ে শিহরিত করে তোলে।
২০১৫ সালের শুরুতে আবারও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে এক অস্থির সময় এবং অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। নতুন বছরের প্রথম দিনটি সারা দেশের স্কুলের শিশুরা বই দিবস হিসেবে পালন করবে বলে কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ দেখা গেল একজন যুদ্ধাপরাধীর ব্যাপারে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের একটি রায়কে গ্রহণ না করে বরং এই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত-শিবির ৩১ ডিসেম্বর (২০১৪) এবং ১ জানুয়ারি (২০১৫) সারা দেশে হরতাল ডেকে বসল। দেশবাসীকে তারা একটি বছরের শেষ এবং নতুন বছরের শুরুর দিনটি নির্বিঘ্নভাবে উপযাপন কিংবা অতিবাহিত করতে দিল না। এর মধ্যে শিশুরা ১ তারিখ স্কুলে গিয়ে উৎসব করে নতুন বই নিয়ে এলো ঠিকই কিন্তু তারপর থেকে গোল বাঁধালো ৪ জানুয়ারি থেকে বিএনপি তথা ২০-দলীয় জোটের ডাকা একটানা অবরোধ।
এই অবরোধকালে ৪ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন সহিংসতায় সারা দেশে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৮৭ জন মানুষ। আমরা ১৯৯৬ সালেও ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে আন্দোলন-সহিংসতা দেখেছিলাম। সে সময় ৮২ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল, যার মধ্যে ৩৬ জন ছিল রাজনৈতিক বা দলীয় কর্মী। তখন পেট্রলবোমায় কেউ মারা যায়নি। ২০০১ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরে অষ্টম সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মৃত্যু ঘটেছিল ৯৬ জন মানুষের- এর মধ্যে ৭৯ জন ছিলেন রাজনৈতিক বা দলীয় নেতা-কর্মী। একইভাবে ২০০৬ সালে অক্টোবর-ডিসেম্বরে নবম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও প্রাণ যায় ৩২ জন মানুষের- সেখানেও অন্তত ২৮ জন ছিলেন দলীয় নেতা-কর্মী। ২০১৩ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে ৫৯ জন মানুষের প্রাণ গিয়েছিল; এদের মধ্যে ১৯ জন ছিলেন দলীয় নেতা-কর্মী এবং ৪০ জন সাধারণ মানুষ। কিন্তু ২০১৫ সালের এ সময়ের সহিংসতায় কেবল সাধারণ মানুষকে যেন টার্গেট করে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। দলীয় নেতা-কর্মী কিংবা তাদের সঙ্গে সাধারণ মানুষকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু কেন এ অবস্থা? আমরা বুঝতে পারি বিএনপি নেতৃত্ব বলতে চাচ্ছেন যে বর্তমান সরকার কোনো জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার নয়। তাদের মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটি ছিল 'অবৈধ'। কিন্তু আসলে কী তাই? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের গুণগত দিক নিয়ে বহু সমালোচনা করা যায় কিন্তু এই নির্বাচনের সাংবিধানিক কিংবা আইনি ভিত্তি অস্বীকার করা কঠিন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি জোটসহ অনেকেই দাবি তুলেছিলেন যে দশম জাতীয় সংসদের এ নির্বাচনটি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। আওয়ামী লীগ তথা ওই সময়ের ১৪-দলীয় জোট সরকার ঘোষণা দিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণা সংবিধানে নেই- কাজেই তারা সংবিধানের বাইরে গিয়ে অন্য কোনোভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন না। উল্লেখ্য, দেশের সুপ্রিমকোর্টের এক রায়ের নির্দেশনার কারণে সে সময়ে শেখ হাসিনার সরকার সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারণা উঠিয়ে দিয়েছিলেন। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধান থেকে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিকভাবে শেখ হাসিনার তৎকালীন সরকার বা আওয়ামী লীগকে অ্যাবসোলুটলি দায়ী করাও কতটা উচিত তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। আদালতের নির্দেশনা না মানলে অনেক সময় সরকারকেও বেকায়দায় পড়ে যেতে হয়, এমনকি একটি সরকার ক্ষমতাচ্যুতও হতে পারে। যাই হোক ওই সময়ে নির্বাচনকালে শেখ হাসিনা বিএনপি জোটকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়ে নির্বাচনের সময় প্রয়োজনে একটি অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির প্রতিনিধি রাখা, এমনকি সেই সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পর্যন্ত বিএনপিকে দিতে চেয়েছিলেন। বিএনপি সেদিন কোনোক্রমেই নির্বাচনে যেতে রাজি হয়নি। তাদের বক্তব্য ছিল শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনে তারা যাবেন না। কারণ শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কারচুপি করে যে কোনোভাবে বিএনপি জোটকে হারিয়ে দিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসবে। আমার মনে হয় বিএনপির এ ধারণাটিই ছিল ভুল।
১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধু সামরিক শাসনের মধ্যেই নির্বাচন করেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তানে ওই সময় ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ মাত্র দুটি আসন পেয়েছিল; আর আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৯৮টি আসন। জনগণ সঙ্গে না থাকলে ক্ষমতায় থেকেও নির্বাচন করে যে জয়লাভ করা যায় না এর বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে? ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি এমনকি শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও অনেকেই ধারণা করেন যে ওই নির্বাচনে বিএনপি জোট সরকার গঠন করলেও করতে পারত; আজকের মতো সংসদে তাদের অন্তত অস্তিত্বহীন হতে হতো না।
যাই হোক ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে বিএনপি এক পর্যায়ে অবরোধ, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াওয়ের পথ থেকে সরে এসে ২০১৪ সালে ৮/১০ মাস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিয়েছিল বলে মনে হয়েছিল। এতে জনগণের সাড়াও মিলছিল। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ওই সময়ে ঢাকার বাইরে যে কয়েকটি জনসভা করেছিলেন সেসব সভায় লোকসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। হঠাৎ করে এ বছর ৫ জানুয়ারি অর্থাৎ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এক বছর বা সরকারের এক বছর পূর্তির কিছুদিন আগে থেকে বিএনপির কিছু নেতা বলতে শুরু করলেন ৫ জানুয়ারি তারা ঢাকায় সমাবেশ করবেন এবং ওইদিনই হবে সরকারের সঙ্গে 'শেষ খেলা'। শেষ খেলা কী তা আমরা জানি না। তবে ১৩ জানুয়ারি দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় সৈয়দ বোরহান কবীর 'একটি নীলনকশার অপমৃত্যু...' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এখানে লেখক কিছু তথ্য-বিশ্লেষণ দিয়েছেন। সৈয়দ বোরহানের বিশ্লেষণকে উড়িয়ে দেওয়া কঠিন।
বিএনপির এই জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির বিরুদ্ধে সরকার এখন যে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেছে তার বীজ বিএনপির ভুল রাজনীতির মধ্যেই নিহিত। আমার মনে হয় ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে খালেদা জিয়া একটি বড় ভুল করেছিলেন, তিনি ক্ষমতার লঞ্চে চড়ার একটি সুযোগ হারিয়েছিলেন। এরপরও বিএনপি সংগঠন গড়ে তোলার দিকে মনোযোগ দিয়ে জনসম্পৃক্তি বাড়িয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ধাপে ধাপে আন্দোলনকে পরিণতির দিকে নিয়ে গেলে কিংবা প্রয়োজনে আরও কয়েক বছর অপেক্ষা করে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা মাথায় রাখলে তারা ভালো করতেন। আওয়ামী লীগও কিন্তু একটানা ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকেছে। তারা তখন সংগঠন, আন্দোলন, জনসম্পৃক্তি, কৌশল- এগুলো নিয়েই মাঠে থেকেছে এবং এক পর্যায়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে এসেছে। আমার ধারণা, বিএনপি চলছে উল্টা পথে। জনগণকে কষ্ট দিয়ে কিংবা জিম্মি করে ক্ষমতায় যাওয়ার বিষয়টি আগের মতো এখন আর সহজ বলে মনে হয় না। এসব করলে জনগণ থেকে দলটি হয়তো আরও বিচ্ছিন্ন হয়েই পড়বে। ফলে তাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার নিশানাটিও আরও দূরে সরে যাবে।
একটি গল্প বলে লেখাটি শেষ করি। কয়েক দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুবর বিএনপির বর্তমান কর্মকাণ্ডে হতাশা প্রকাশ করে একটি গল্প এভাবেই বলছিলেন যে, বরিশাল এলাকার এক যাত্রী একবার ঢাকায় আসার জন্য লঞ্চে চড়ার চেষ্টা করেও লঞ্চে উঠতে পারেননি। লঞ্চটি যখন অন্য যাত্রী উঠিয়ে নদীর তীর ছেড়ে যাত্রা করার জন্য দূরে সরে যাচ্ছে তখন ওই যাত্রী তাড়াহুড়া করে লঞ্চে ওঠার জন্য তার পায়ের স্যান্ডেল (পঞ্চ)সহ কাদায় নেমে পড়েছেন। ফলে একসময় কাদায় তার পঞ্চটি আলগাভাবে আটকে গেছে। লঞ্চটি ইতিমধ্যে মাঝনদীর দিকে সরে গিয়ে তার গন্তব্যে চলতে আরম্ভ করেছে। ভদ্রলোক সে সময় ফ্যাল ফ্যাল করে লঞ্চটির দিকে তাকিয়ে আছেন আর ভাবছেন লঞ্চটি একটুর জন্য ফেল করলাম। এর মধ্যে জোয়ারে পানি বেড়ে তার পায়ের পঞ্চটিও ভেসে উঠেছে এবং জোয়ারের পানি তা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভদ্রলোক এক পর্যায়ে সম্বিত ফিরে জোয়ারে ভেসে যাওয়া পঞ্চের দিকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে বলছেন, হায়রে মোর লঞ্চও গেল পঞ্চও গেল।
অনেকের মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার বা ক্ষমতার একটি বড় অংশী বা অনুঘটক থাকার একটি বিশাল সুযোগ হারিয়েছে। আবারও বিএনপি যদি একইভাবে জনবিচ্ছিন্ন এবং জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে এমন সব সমন্বয়হীন, অপরিকল্পিত, জনঅতিষ্ঠ কর্মসূচি দিতে থাকে তাহলে দল হিসেবেও ভবিষ্যতে বিএনপির জনভিত্তি এবং জনপ্রিয়তা একসময় কমে আসবে; একসময় হয়তো তা একবারেই উবে যাবে। বিএনপিকে তখন যেন বলতে না হয়, হায়রে আমার 'লঞ্চও গেল সঙ্গে পঞ্চও গেল'। বিএনপির মতো এত বড় একটি দল তারা যেন ভুলে না যায় যে, রাজনীতি হচ্ছে মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষকে পুুুড়িয়ে মেরে এবং কষ্ট দিয়ে মহৎ কোনো উদ্দেশ্য সাধন করা যায় না। (কলাম লেখক: ড. শেখ আবদুস সালাম, বাংলাদেশ প্রতিদিন)
২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০৯
মঞ্জু রানী সরকার বলেছেন: পুুুড়িয়ে মেরে এবং কষ্ট দিয়ে মহৎ কোনো উদ্দেশ্য সাধন করা যায় না--এ বিষয়ে নেত্রী এবং তার পুত্রের পড়ালেখা করা নেই
৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৩০
শেখ মফিজ বলেছেন: সে সময় মনে হয় এসে গেছে
এখনই সিন্ধান্ত নিতে হবে
জনগণকে সাথে নিয়ে চলবে
নাকি জনগণকে কষ্ট দিয়ে , জিম্মি করে
ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করবে,
শেষে না বলতে হয়
হায়রে মোর লঞ্চও গেল পঞ্চও গেল।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৫৪
বিদগ্ধ বলেছেন: //মোর লঞ্চও গেল পঞ্চও গেল//