![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের চলাচল কোথাও কম কোথাও বেশি। আবার হঠাৎ ককটেল বিস্ফোরণে জনশূন্য, পর মুহূর্তে স্বাভাবিক কর্মচাঞ্চল্য। কখনো যানজট, কখনো ফাঁকা।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের হরতালে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে রাজধানী ঢাকায়। কেবল রাস্তা নয়, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান—সবই খোলা। কিন্তু কোথায় যেন একটা আতঙ্ক। যে দোকানে দুটি ঝাঁপ রয়েছে, সেখানে একটি খোলা, অন্যটা বন্ধ। পেট্রলবোমার ভয়ে অনেক বাসে স্থান পেয়েছে বালুর বস্তা, জানালাও বন্ধ। অনেকটাই বন্ধ মানুষের কেনাকাটা, বেড়ানো। কেবল একান্ত প্রয়োজনেই ঘরের বাইরে পা রাখছেন মানুষ।
গতকাল সোমবার মিরপুর, গাবতলী, মিরপুর রোড, মতিঝিল, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকায় ঘুরে জানা গেল হরতালের বাস্তব চিত্র। আতঙ্ক নিয়ে পথচলার কথা জানালেন অনেকেই। তাঁরা বলেছেন, ‘ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ’ হরতাল। অকার্যকর হরতালে আছে বোমাতঙ্ক।
তবে দূরপাল্লার পথে যান চলাচল কম বলে ঢাকায় প্রতিদিন যে ভাসমান মানুষের আগমন ঘটে, তা কম ছিল। রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও ছিল তুলনামূলক কম। স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ মানুষের যাতায়াত, কেনাকাটা, পারিবারিক ভ্রমণ হওয়ার কথা, তা ছিল না। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবহনমালিক-শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফুটপাতের দোকানিদের ওপর।
পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, রাজধানী ও এর আশপাশে স্বাভাবিক সময়ে প্রায় পাঁচ হাজার বাস-মিনিবাস চলাচল করে। হরতালের দিনে এর অন্তত ৭০ শতাংশই চলাচল করছে। তবে সন্ধ্যার পর বাস-মিনিবাস চলাচল ৪০ শতাংশে নেমে আসে। তখন ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও একেবারেই কমে যায়। সবচেয়ে বেশি বাস-মিনিবাস চলাচল করছে মিরপুর-গুলিস্তান ও মিরপুর-মতিঝিল পথে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, যেসব বাসের গ্লাস ভাঙা, সেগুলো মেরামত করে এবং জানালা বন্ধ রেখে চালানো এবং কোনো স্ট্যান্ডে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে যাত্রী না তুলতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেসব বাসে সামনে-পেছনে দরজা রয়েছে, তা খোলা রাখতে বলেছে পুলিশ।
রাজধানীর গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ আন্তজেলা বাস টার্মিনালগুলো থেকে দূরের পথে বাস ও যাত্রী—দুটোই কম। গড়ে প্রতিটি বাসে ১২-১৫ জনের বেশি যাত্রী দেখা যায়নি। অনেক পরিবহন কোম্পানির কাউন্টার শূন্য, কর্মীরা বন্ধ করে চলে গেছেন।
গাবতলীতে সকালে বাগেরহাটের উদ্দেশে ছাড়ার অপেক্ষায় ছিল ঈগল পরিবহনের একটি বাস। বাসটির শ্রমিক আবদুর রহিম যাত্রীর জন্য হাঁকডাক দিলেও তেমন সাড়া পাচ্ছিলেন না। বললেন, ‘গত মাসের বাসা ভাড়া দিয়েছি হাওলাতু (ধার) করে। এই মাসের কী হইবো বুঝতাছি না। আগে মালিক দৈনিক ৪০০ টাকা দিত, এখন ২০০ দিতাছে।’
দুপুরে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ৩০ থেকে ৪০টি লঞ্চ অবস্থান করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ঢাকা নদীবন্দরের ট্রাফিক বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মো. জয়নাল আবেদিন জানালেন, স্বাভাবিক সময়ের মতোই দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লঞ্চ চলাচল করছে। তবে যাত্রীর সংখ্যা কিছুটা কম।
অফিস-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সবই খোলা, আছে আতঙ্ক: রাজধানীর অফিসপাড়া হিসেবে পরিচিত মতিঝিল এবং এর আশপাশে গতকাল সকাল থেকে মানুষের চাপ ছিল। কয়েকটি ব্যাংকে গিয়ে গ্রাহকদের ভিড় দেখা যায়। কর্মকর্তারা জানালেন, লেনদেন হচ্ছে।
বেলা পৌনে একটার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের উল্টো দিকের সড়কে একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটলে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয়। পর মুহূর্তে সবকিছুই যেন স্বাভাবিক হয়ে ওঠে। তবে আতঙ্কের কথা জানালেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তবিবুর রহমান। তিনি দুপুরের খাবার খেতে অফিস থেকে রাস্তায় বের হয়েছিলেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, কখন গায়ে পেট্রলবোমা বা ককটেল এসে পড়ে ঠিক নেই। প্রতিদিনই জীবনটা হাতে নিয়ে অফিস করতে হয়। পরিবারের সদস্যরাও দুশ্চিন্তায় থাকে।
ঘটনাস্থলে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাবেরা সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতাদের কেউ বলছেন, রাজনৈতিক সংকট আছে। আবার কেউ বলছেন, কোনো সংকটই নেই। কিন্তু বাস্তবে সংকটে রয়েছি আমরাই, সাধারণ জনগণ।’ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া নাসিমুল করিম বলেন, ‘বিবৃতিনির্ভর হরতালের’ কারণে তাঁদের শিক্ষাজীবন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কে চারটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও পরক্ষণেই সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
রায়েরবাগ এলাকায় রয়েছে পাসপোর্ট বিভাগের আঞ্চলিক কার্যালয়। সেখানে মানুষের ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই, ৭২ ঘণ্টার টানা হরতাল চলছে। একই অবস্থা দেখা গেছে আগারগাঁওয়ের আঞ্চলিক পাসপোর্ট কার্যালয়েও।
যাত্রাবাড়ী থানার কাছে পান-সিগারেট বিক্রেতা রাশেদ বলেন, এখনকার সবই ঠিক আছে। তবে গত শনিবার সন্ধ্যায় মোড়ের কাছে বোমা ফাটায় দুর্বৃত্তরা। এর পর থেকে কিছুটা আতঙ্ক আছে।
বিপণিবিতান আধা খোলা, ক্রেতা নেই: মিরপুর ১ ও মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় অধিকাংশ বিপণিবিতান খোলা ছিল। তবে সামনের ঝাঁপ নামিয়ে শুধু ঢোকার পথটুকু খোলা। পান্থপথ, গ্রিন রোড ও হাতিরপুলেও অনেকেই ঝাঁপের একাংশ নামিয়ে রেখে দোকান চালু রেখেছেন।
মিরপুরে ক্যাপিটাল শপিং কমপ্লেক্সের সামনে ছোট শামিয়ানা টানিয়ে চারজন পুলিশ সদস্যকে পাহারা দিতে দেখা যায়। প্রসাধনসামগ্রীর দোকানি মো. রাহাত বলেন, ‘আর কত দিন এমন চলবে। প্রতিদিন দোকান খুলি, কাস্টমার নাই। এমনে চললে পেটে ভাত জুটবো না।’
পুরান ঢাকার ইসলামপুরে অধিকাংশ দোকান খোলা পাওয়া যায়। তবে ক্রেতা খুবই কম। সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক এমদাদুল আলম বলেন, আগে দিনে কাপড় বিক্রি হতো প্রায় দেড় লাখ টাকা, এখন মাত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
বাদামতলীর ফ্রেশ ফল বিতানের ব্যবস্থাপক মো. রাসেল বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা আসত। হরতালে দূরের ক্রেতা নেই বললেই চলে।
সকাল নয়টার মধ্যেই যাত্রাবাড়ী শহীদ ফারুক সড়কের দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে। বিকেল চারটার দিকে মনিহারি দোকানের মালিক আকবর হোসেন জানান, বিক্রি হয়েছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। স্বাভাবিক সময়ে এই দোকানে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি হতো।
শহীদ ফারুক সড়কে ৩০ বছর ধরে চশমার ব্যবসা করছেন খায়রুল ইসলাম। তিনি বলেন, আগে হরতালে যাত্রাবাড়ীতে মিছিল-সমাবেশ এবং প্রকাশ্যে বোমাবাজি হতো। এখন হয় চোরাগোপ্তা হামলা।
হরতালেও যানজট: সকাল সাড়ে নয়টায় পল্টন মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকেই গাড়ির লম্বা লাইন। বাসগুলোতে বাদুড়ঝোলা হয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন মানুষ। ঘণ্টা খানেক পর গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজার মোড়ের সিগন্যালের যানবাহনের সারি পীর ইয়ামেনী মার্কেট পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। বেলা ১১টায় শাপলা চত্বরেও একই দৃশ্য দেখা গেছে।
সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কল্যাণপুর থেকে শ্যামলী শিশুমেলা পর্যন্ত প্রকট না হলেও যানবাহনের সারি দেখা যায়। কল্যাণপুর থেকে কাকরাইলে নিজের কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য গণপরিবহনের অপেক্ষায় থাকা আসলাম খন্দকার বলেন, জীবন তো আর থেমে থাকে না। দিনে ভয় কম লাগলেও সন্ধ্যা হলেই আতঙ্ক শুরু হয়। সারাক্ষণ মনে হয়, এই বুঝি বোমা মারল! অবশ্য বেলা একটার দিকে ওই পথে যানবাহন কমে যেতে দেখা যায়।
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরের চারদিকেই যানবাহনের সারি ছিল। তবে বেশির ভাগ বাসই এলোমেলো দাঁড় করিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় জটলা তৈরি করেছে। বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার, ধোলাইখাল, তাঁতীবাজার, বংশাল ও ফুলবাড়িয়া এলাকায় যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। স্থানে স্থানে ছিল যানজটও।
গতকাল তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক বার্তায় বলা হয়, হরতালে ‘যানজট এড়াতে পারেননি’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নিরাপত্তাকর্মীদের চেষ্টার পরও একাধিক জায়গায় তাঁর গাড়িবহরের গতি কমাতে হয়। সকালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অংশ নিতে সচিবালয়ে যাওয়ার পথে এই অবস্থা হয়।
ফুটপাতের ব্যবসায় মন্দা: দুপুর ১২টা। পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী। ফুটপাতে ঝুড়িতে সাজিয়ে রাখা সবুজ কুলের (বরই) রং হয়ে গেছে লাল। দোকানি আজিজুল ইসলাম বলেন, সময়মতো বিক্রি না হওয়ায় এই অবস্থা। পাশেই শিশুদের খেলনার বিভিন্ন ধরনের গাড়ি, পুতুল ও পাখি নিয়ে বসে রয়েছেন আবদুল কাদের। তাঁর দোকানেও ক্রেতা আসছে না বলে জানান।
গাবতলী বাস টার্মিনালের প্রবেশমুখে ফলের দোকানের মালিক বাতেন মিয়া বলেন, ‘মাল আনি, কিন্তু ব্যাচা হয় না। আগে দুই দিন পরে পরে আনতাম। এহন কম আনলেও সাত দিনে শেষ হয় না। পইচ্চা যায়।’
২| ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৪৪
বিদগ্ধ বলেছেন: হরতালও কার্যকর হচ্ছে না, আবার মানুষও পুরোপুরি চলাচল করছে না বলে ব্যবসায় মন্দা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৪২
আমি বন্দি বলেছেন:
হরতাল অবরধ কিছু চাইনা