নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেকায়দায় বিএনপি জামাত পরিবহন মালিক

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৪৪

সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল বাড়াতে চলছে জোর তৎপরতা। হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করে পরিবহন মালিকদের গাড়ি নামাতে নানাভাবে চাপ দেয়া হচ্ছে। এতে বেকায়দায় পড়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত গাড়ির মালিকরা। একদিকে অবরোধকারীদের হামলা, অপরদিকে সরকারের চাপে উভয় সংকটে পড়েছেন তারা। বড় কোম্পানি ও সাধারণ গাড়ির মালিকদের অবস্থা আরও খারাপ। দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত গাড়ির মালিকরা ক্ষমতা পালাবদলের সঙ্গে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারলেও তাদের দেখার কেউ নেই। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির যে ক্ষতিপূরণ তা সাধারণ মালিকরা পান না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে সড়কে গাড়ি চলাচল বাড়াতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের পাশাপাশি সরকার সমর্থক মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। উদ্দেশ্য বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচি ব্যর্থ করে দেয়া। তাদের যুক্তি- হরতাল-অবরোধে নৌ ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক আছে। শুধু সড়কপথে গাড়ি চলাচল বাড়াতে পারলেই বিএনপি কর্মসূচি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হবে। এলক্ষ্যে পৌঁছতে একাধিক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এবং সরকারদলীয় পরিবহন নেতারা জেলা-উপজেলা পর্যায়ে সফর শুরু করেছেন। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের মনোবল বাড়ানো এবং কোথায় কী ধরনের সমস্যা তা চিহ্নিত করছেন তারা।
জানা গেছে, পেট্রলবোমা, ককটেল হামলা উপেক্ষা করে সড়ক-মহাসড়কগুলোতে গাড়ি চলাচল বাড়াতে প্রতিটি জেলার পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়েছে নানা নির্দেশনা। গাড়ি চলাচলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং হামলাকারীদের ধরতে পরিবহন শ্রমিকদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এসব শ্রমিককে হরতাল-অবরোধবিরোধী কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি হামলায় আহতদের ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও প্রণোদনা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। এরপরও নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে যেসব কোম্পানির মালিক গাড়ি চলাচল বন্ধ রেখেছেন, তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে গাড়ি নামাতে এক প্রকার বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে সারা দেশে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা ২৫-৩০ শতাংশ। পেট্রলবোমার মতো ভয়াবহ হামলায় প্রচুরসংখ্যক হতাহতের পরিপ্রেক্ষিতে যাত্রী নিরাপত্তা বিবেচনায় রেখে অবরোধের ৩৫ দিনের মাথায় রাত ৯টার পর মহাসড়কে যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই সিদ্ধান্ত এখনও বহাল রয়েছে।
পরিবহন খাতের সরকার সমর্থক নেতাদের মতে, সড়ক ব্যবস্থা সচল করতে পারলে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ কর্মসূচি ব্যর্থ হয়ে যাবে। হামলা আতংকে যাত্রী উপস্থিতি কম হলেও রেল ও নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। সমস্যা শুধু সড়কপথে। নিরাপত্তা নিশ্চিত ও গাড়ি নামাতে পারলেই সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের মনোবল ভেঙে পড়বে। এক পর্যায়ে আন্দোলনও বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের মতে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির ২০১৩ সালের শেষদিকে শুরু করা আন্দোলন ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে নিজ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এবারও একইভাবে আন্দোলন বন্ধ হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
জানতে চাইলে নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান বলেন, বিএনপি জোটের অবরোধ-হরতালের নামে গাড়ি ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও এবং মানুষ হত্যার বিরুদ্ধে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে কাজ করছি। মালিক ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে রংপুর, বগুড়া, গাইবান্ধাসহ কয়েকটি এলাকায় গিয়েছি। পরিবহন নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। জঙ্গিরা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলছি। গাড়ি চলাচল অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে বলেও দাবি করে তিনি বলেন, আগে ৪০-৫০টা গাড়ি হামলার শিকার হতো। এখন ৪-৫টি হচ্ছে। প্রতিরোধের মুখে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে কোনো চাপ দেয়া হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের রুটে চলাচলকারী সাকুরা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা ও প্রশাসন থেকে প্রতিনিয়ত গাড়ি চালাতে চাপ দেয়া হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও বলা হয়েছে, দিনে গাড়ি চালাতে হবে। তিনি বলেন, আমরা গাড়ি চালাতে চাই। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে গাড়ি চালানো যায় না। এনিয়ে আমরা খুব কষ্টে আছি।
কক্সবাজার ট্রাক-মিনিট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল আমিন বলেন, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও ওসমান আলী মৌখিকভাবে আমাদের গাড়ি চালাতে বলেছেন। কোনো বোমাবাজ দেখলে আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতায় ধরিয়ে দেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা গেছে, কেন্দ্রীয়ভাবে মূলত পরিবহন মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতি এবং শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা গাড়ি চলাচল বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির প্রধানত নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংগঠনের সভাপতি ও এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সহসভাপতি হাজী আবুল কালাম ও মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের নেতৃত্বে রয়েছেন সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীসহ কয়েকজন। মূলত এসব নেতারা সারা দেশে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন থেকে পরিবহন মালিকদের গাড়ি চালাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, দিনে এবং রাতে গাড়ি চলাচল নিশ্চিত করতে কাজ করছেন সড়ক পরিবহন সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা। তাদের সহযোগিতায় সরকার সমর্থক আরও কয়েকটি পরিবহন সংগঠনের নেতারা মাঠে নেমেছেন। যেসব জেলায় পরিবহনে হামলা বেশি হয়েছে, সেসব এলাকায় শাজাহান খান, মশিউর রহমান রাঙ্গা, এনায়েত উল্লাহসহ কয়েকজন নেতা সফর করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। ইতিমধ্যে তারা হেলিকপ্টারযোগে রংপুর, বগুড়া ও গাইবান্ধায় গেছেন। সেখানকার পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এছাড়া কেন্দ্র থেকে জেলা পর্যায়ের মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোকে গাড়ি চলাচল বাড়াতে মৌখিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কারা কারা গাড়ি চালাচ্ছে না বা বাধার সৃষ্টি করছে- তা চিহ্নিত করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে এনায়েত উল্লাহ বলেন, গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক করতে আমরা কাজ করছি। ঢাকায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে কয়েকটি সমাবেশ করেছি। রংপুর, পীরগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী গিয়ে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেছি।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা সারা দেশে সব মালিক সংগঠনগুলোকে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে বলেছি, যেভাবে হোক গাড়ি চালাও। তিনি বলেন, কয়েকটি জেলায় নিরাপত্তাজনিত সমস্যা হচ্ছে। বাকি জেলাগুলোতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। আমরা সবাইকে গাড়ি চালাতে বলেছি। গাড়ি চলাচলের বিষয়ে ঢাকা শহরে শতভাগ, আন্তঃজেলায় শতকরা ৩০ ভাগ এবং জেলা শহরে স্বাভাবিক গাড়ি চলাচল করছে বলেও দাবি করেন তিনি।
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এমন পরিবহন কোম্পানির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বড় কোম্পানিরগুলোর মালিকদের গাড়ি চালাতে বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে। গাড়ি না চালালে ভদ্র ভাষায় দেখে নেয়ার কথাও বলা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে মালিকদের গাড়ি নামাতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সূত্র জানায়, সারা দেশে পরিবহন শ্রমিকদের চাঙ্গা করার পরই রাতে আবারও গাড়ি চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এবার আইনশৃংখলা বাহিনীর পাশাপাশি সড়ক-মহাসড়কে পরিবহন শ্রমিকরা যাতে পাহারা দেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পাহারা দেয়া শ্রমিকদের কি সুবিধা দেয়া যায় তা নিয়েও আলোচনা চলছে। শিগগিরই এসব চূড়ান্ত করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে রাতে গাড়ি চালানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। - See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.