নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নাশকতা ঢাকায় ঢুকেছে...

০৩ রা মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:৩৫

২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধের পাশাপাশি হরতাল চলাকালে গতকাল রাজধানীর হাতিরঝিলে আকস্মিকভাবে বেশ কিছু গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ছবি : কালের কণ্ঠ
বিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধ ও হরতালের মাঝে গত প্রায় দুই মাস ধরে সারা দেশে যে হারে পেট্রলবোমা হামলা হয়েছে তার তুলনায় রাজধানী অনেকটাই নিরাপদ ছিল। তবে গত তিন দিনে ঢাকায় যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলা ও নাশকতার ঘটনা বেড়েছে। এতে দগ্ধ হয়েছে নিরীহ মানুষ। ঢাকায় এর আগেও পেট্রলবোমা হামলার ঘটনা ঘটলেও ইদানীং এর মাত্রা বেড়ে গেছে বলেই ঘটনাপ্রবাহ সাক্ষ্য দেয়। পেট্রলবোমার পাশাপাশি বোমা, ককটেল ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও বেড়ে গেছে।
দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত শতাধিক মানুষ পুড়ে মারা যাওয়ার পর গত কয়েক দিন সারা দেশে এ বর্বর হামলার মাত্রা কিছুটা কমে এসেছিল। কিন্তু গত দু-চার দিনে তা হঠাৎ করে আবার বেড়ে যাওয়ায় মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন খোদ মন্ত্রীরাও। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে কয়েকজন মন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পেট্রলবোমা হামলা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আবার কী কারণে বাড়ল তা খুঁজে বের করা দরকার। একই সঙ্গে নাশকতাকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।
নাশকতার বিস্তার রাজধানীতে : বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতালের মধ্যে গত তিন দিনে রাজধানীতে বেশ কিছু নাশকতার ঘটনা ঘটিয়েছে অবরোধ সমর্থকরা। অবরোধের ৫৬তম দিনে গতকাল রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় জাতীয় পার্টির অফিসের সামনের রাস্তায় হাতবোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় অবরোধ সমর্থকরা। পরে তারা দুটি প্রাইভেট কারে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর আগে গত রবিবার ধানমণ্ডি, গুলশান ও আরামবাগসহ ছয়টি এলাকায় সাতটি গাড়িতে আগুন দেয় অবরোধকারীরা। এতে এক সাংবাদিকসহ চারজন দগ্ধ হয়। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
রবিবার রাতে বনশ্রী থেকে মিরপুরগামী আলিফ পরিবহনের বাসে পেট্রলবোমা হামলায় দগ্ধ হন দুই বোন- টুম্পা ও কন্তলা। টুম্পা মহাখালীর টিঅ্যান্ডটি মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিষয়ের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর কুন্তলা অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে অনার্স চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন। নাশকতার আগুনে দুই ছাত্রী দগ্ধ হওয়ার ঘটনায় মুষড়ে পড়েছেন তাঁদের স্বজনরাও। রবিবার বিকেলে বনশ্রীতে কুন্তলার বড় বোন নিপার বাসা থেকে দক্ষিণ বাড্ডার বাসায় ফেরার পথে তাঁরা আক্রান্ত হন।
একই ঘটনায় দগ্ধ হয়েছেন একাত্তর টেলিভিশনের প্রতিবেদক আরিফিন শাকিল (২৫) এবং এক রাজমিস্ত্রির সহকারী নাজিম (১৭)। শাকিলের শরীরের ৩ শতাংশ এবং নাজিমের শরীরের ৪ শতাংশ পুড়ে গেছে। তারাও বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
গতকাল বিকেল ৪টার দিকে রাজধানীর বিজয় নগরের একাত্তর হোটেলের কাছেই নাইটিংগেল মোড়ে পর পর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ১০-১২ জন যুবক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, তাদের চার-পাঁচজনের মুখোশ পরা ছিল। রাস্তায় একের পর এক বিস্ফোরণের ফলে আতঙ্কে দুটি প্রাইভেট কারের চালক ও যাত্রীরা ভয়ে গাড়ি দাঁড় করিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। ওই সময় ওই যুবকরা গাড়ি দুটিতে পেট্রলবোমা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। গাড়িতে আগুন দেখে পথচারীরা দৌড়াতে শুরু করে। পরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান।
প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক জানান, ‘দুটি গাড়ি গুলিস্তানের দিকে যাচ্ছিল। ওই সময় পাশের গলি থেকে ১০-১২ জন যুবক হঠাৎ বেরিয়ে এসে প্রথমে প্রাইভেট কার দুটির সামনে হাতবোমা মারে। এই সময় ভয়ে গাড়ি দুটির চালক ও আরোহীরা নেমে গেলে গাড়িগুলো ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।’
গতকাল সকালে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে হরতাল সমর্থনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরকর্মীরা মিছিল শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। সেখানে শিবির-কর্মীরা পাঁচটি গাড়ি ভাঙচুর করে ও দুটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে ৮-১০টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। সূত্রাপুর থানা পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ছাড়া সকাল ১০টার দিকে নিকেতনসংলগ্ন হাতিরঝিলে হরতাল সমর্থনকারীরা ছয়টি যানবাহন ভাঙচুর করে এবং চারটি প্রাইভেট কারে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ তাণ্ডবে জড়িত কাউকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আগুন ধরিয়ে দেওয়া প্রাইভেট কারগুলোয় কেউ হতাহত হয়নি বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে।
সকাল ৯টার দিকে পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজের সামনে পার্কিং করা একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেওয়া হয়। প্রায় একই সময়ে বারিধারা-নদ্দা এলাকার ট্রাফিক পুলিশ চেকপোস্টের সামনে আটটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এতে পুলিশ চেকপোস্ট ও একটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরই যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে একটি মিছিল থেকে ৮-১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সকাল ১০টার দিকে যাত্রাবাড়ীর ডেমরা রোডে দুটি গাড়িতে আগুন ও বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ সময় যাত্রাবাড়ী এলাকা অতিক্রমকালে জনতা ব্যাংকের একটি স্টাফ বাসে ককটেল হামলা চালালে আহত হয় ছয়জন। তাদের মধ্যে তিনজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গত শনিবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে মৌচাক মোড়ে দেশ টিভি-ভোরের কাগজ কার্যালয়ের সামনে ককটেল হামলা ও তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় একের পর এক বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় দুর্বৃত্তরা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং আরেকটি বাসে হামলা চালায়। ঘটনার সময় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় রেকর্ড হওয়া ফুটেজে দেখা যায়, ১৫-২০ জন দেশ টিভির সামনের রাস্তায় হামলার প্রস্তুতি নেয়। একজন টেলিফোনে নির্দেশনার মাধ্যমে তাদের কাজের সমন্বয় করে। এরপর পরিকল্পিতভাবে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। আগুন লাগার সময় পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তবে কেউ হতাহত হয়নি। মোট তিনটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। মৌচাক ওভারব্রিজ পয়েন্টে যে পুলিশ দল প্রহরায় থাকে, সন্ধ্যায় তাদের ডিউটি বদলের সময়েই এই হামলা চালানো হয় বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
একই সময় যাত্রাবাড়ীতে দুটি কাভার্ড ভ্যান ও একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেওয়া হয়। এই সময় সুমি আক্তার নামে এক যাত্রী বাস থেকে দ্রুত নামতে গিয়ে নিচে পড়ে যায়। এতে তার মাথা ও পায়ে আঘাত লাগে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সুমির বাবার নাম সবুজ মিয়া, বাসা সাভারে। সবুজ মিয়া জানান, সুমি নারায়ণগঞ্জে মামার বাড়ি যাচ্ছিল। দুর্বৃত্তরা বাস লক্ষ্য করে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। এ ছাড়া রাত সাড়ে ৯টার দিকে বনানী এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়। তবে কেউ হতাহত হয়নি।
প্রসঙ্গত, রাজধানীতে সর্বশেষ বড় ধরনের হামলা হয়েছিল গত ২৩ জানুয়ারি। সেদিন রাতে যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা হামলায় একজন নিহত হয়। দগ্ধ হয়েছিল ২৯ জন।
মন্ত্রিসভায় উদ্বেগ : গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, তিনি রাষ্ট্রীয় সফরে অষ্ট্রেলিয়ায় ছিলেন। এ কারণে সর্বশেষ অবস্থা তাঁর জানা নেই। তিনি পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি জানবেন বলে মন্ত্রীদের জানান।
মন্ত্রিসভা বৈঠকের পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পুলিশের আইজি এ কে এম শহিদুল হককে ডেকে পাঠান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। তাঁরা দীর্ঘ সময় বৈঠক করেন। এ সময় দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
তবে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মন্ত্রিসভা বৈঠকে নাশকতা বেড়ে যাওয়া নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরই ভিন্ন একটি ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে। সেটি হচ্ছে আনসারদের বিদ্রোহের শাস্তিসংক্রান্ত।’ পুলিশের আইজির সঙ্গে বৈঠক করেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আইজির সঙ্গে বৈঠকটি একেবারেই রুটিন কাজ।’
মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে একজন মন্ত্রী কালের কণ্ঠকে জানান, নাশকতার বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে পেট্রলবোমা হামলা কমে এসেছিল। কিন্তু গত রবিবার হঠাৎ করেই তা বেড়ে গেছে। এই বেড়ে যাওয়ার কারণটাই খুঁজে বের করার কথা বলেছেন কয়েকজন মন্ত্রী। গতকালের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড নিয়েও কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন হুমায়ুন আজাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এর মিল রয়েছে। তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে বিপুলসংখ্যক গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। এ বিষয়েও মন্ত্রিসভা বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ওই এলাকায় সমন্বিত অভিযানের কথা বলেছেন। দেশব্যাপী সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে গতকালের নিয়মিত মন্ত্রিসভা বৈঠকে।
মন্ত্রিসভার একজন সদস্য জানান, আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি মোটরসাইকেলে দুজন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার নির্দেশ দেয়। কমিটির এ নির্দেশনাও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ফল দিয়েছে। কারণ মোটরসাইকেলে করে ঘটনাস্থলে এসে পেট্রলবোমা ছুড়ে দ্রুত সরে যেত সন্ত্রাসীরা। (তথ্যসূত্র: কালেরকণ্ঠ)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.