নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আতঙ্কে উধাও বিএনপি!

১৫ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ৯:১০

কারাগার ও আত্মগোপনে পতিত বিএনপি। চলমান আন্দোলনে সরকারের খ গ নেমে আসার পর থেকেই অনেক নেতাকর্মী কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে হয় কারাবন্দি না-হয় আত্মগোপনে। পলাতক। গ্রেফতার আতঙ্ক গোটা বিএনপিকে গ্রাস করায় যেসব নেতাকর্মী বাইরে তারাও উধাও। তাদের ক্রিকেট দলের বিজয় উৎসব থেকে জাতীয় বিভিন্ন দিবসের দলীয় কর্মসূচি থেকে মাঠের কর্মসূচিতেও মিলছে না। গণমিছিল ডেকেও সেøাগান তোলা বা তা করার নেতাকর্মী জোটেনি গ্রেফতারের ভয়ে।
গ্রেফতারের বাইরেও রয়েছে গুম, বন্দুকযুদ্ধ আতঙ্ক। এর মধ্যে একে একে নিভেছে দেউটির মতো মুখপাত্রের উইকেটও পড়ছে। মির্জা ফখরুলের পর দলের মুখপাত্র ছিলেন রিজভি আহমেদ। একে এক দুজন জেলে যাওয়ার পর মুখপাত্র হয়ে আসা সালাউদ্দিন আহমেদ উধাও। এখন আত্মগোপনে কর্মসূচি দিচ্ছেন বরকত উল্লাহ বুলু।
নেতাকর্মীরা জানান, দলের নির্বাহী কমিটি ৩৮৬ সদস্যবিশিষ্ট, এর মধ্যে ১২১ জন কর্মকর্তা ও ২৬৫ জন সদস্য রয়েছেন। এছাড়া সারাদেশে ৭৬টি সাংগঠনিক কমিটি এবং অঙ্গ সংগঠন মিলে কয়েক হাজার নেতা রয়েছেন বিএনপিতে। কিন্তু গত ৫ জানুয়ারি থেকে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন শুরু করার পর হাতেগোনা কয়েক নেতা আন্দোলনকে গতিশীল করতে কাজ করছেন। আর অন্যদের বিষয়ে কর্মীরা কিছুই জানেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
তাদের মতে, এসব কমিটির অনেক সদস্য মৃত্যুবরণ, গুম ও দল পরিবর্তন করায় অনেক পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া কমিটির এ বিশাল বহরের অনেক সদস্যই রয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালে। রাজনীতি কিংবা দলে তাদের ভূমিকা কি তা যেমন নেতাকর্মীরা জানেন না, তেমনি তাদের জনগণও চেনে না। সরকারবিরোধী আন্দোলন কিংবা দেশ-বিদেশে জনমত সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন অথবা কোনো বিশেষ দায়িত্ব কোথাও নেই তারা। দলের হাইকমান্ড থেকে বারবার এসব নেতাকে সতর্ক করা হলেও এবারো কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে পুরো সময় নিয়মিত অনুপস্থিত রয়েছেন রাজপথ থেকে।
এর মধ্যে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির ১৯ সদস্যের মধ্যে সাবেক মহাসচিব অ্যাডভোকেট খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মৃত্যুবরণ করেছেন। ড. আর এ গনি বয়সের ভারে ন্যুব্জ। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুর্নীতির মামলায় কারান্তরীণ, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কারাগার থেকে বের হয়ে আসার পর রাজনীতি থেকে অনেকটা দূরে
রয়েছেন। তবে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সৌজন্যে এক অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তরিকুল ইসলাম ও এমকে আনোয়ার বিভিন্ন মামলার কারণে অনেকটা আত্মগোপনে রয়েছেন। তবে এ অবস্থায়ও কাজ করছেন তারা। তরিকুল ইসলাম যশোর জেলাসহ বৃহত্তর খুলনা জেলায় আন্দোলনের জন্য ওই এলাকায় অবস্থান করছেন। লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান তার নিজ বাসায় অবস্থান করলেও সংবাদমাধ্যমে নিয়মিত নিজেকে উপস্থাপন করছেন। অনেক সময় দলের ভোকাল হিসেবেও কাজ করতে হচ্ছে তাকে। আবদুল মঈন খান আন্তর্জাতিক মহল নিয়েই ব্যস্ত সময় পার করছেন। এম শামছুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ, সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধের মামলায় কারান্তরীণ, বেগম সারওয়ারী রহমানও দলের জন্য সময় দিতে পারছেন না শারীরিক অসুস্থতার কারণে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্ সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, নজরুল ইসলাম খান আন্দোলনের শুরুতে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকের আগে গুলশান কার্যালয়ে আসেন। কিন্তু গ্রেফতারের আশঙ্কায় তিনি আর কার্যালয় থেকে বের হননি। স্থায়ী কমিটির সর্বকনিষ্ঠ সদস্য তারেক রহমান চিকিৎসার জন্য লন্ডন রয়েছেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস রয়েছেন লোকচক্ষুর আড়ালে। এবারো মহানগর বিএনপি কার্যত কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বলে তাকে নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ রয়েছে।
১৬ জন ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে একজন মৃত, একজন বহিষ্কার, আরেকজন দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে। এছাড়া আবদুল্লাহ আল নোমান আত্মগোপনে থেকেও চট্টগ্রামভিত্তিক কাজ করছেন, সেলিমা রহমান গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন ৩ জানুয়ারি থেকে, শমশের মবিন চৌধুরী (আটক), মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ দলের হয়ে মাঝে মাঝেই সরব ভূমিকা পালন করছেন, সাদেক হোসেন খোকা যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন থাকার পরও বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে চেষ্টা করছেন। এছাড়া বাকিদের সবাই প্রায় নিষ্ক্রিয় রয়েছেন।
৭ যুগ্ম মহাসচিবের মধ্যে দু’জনই কারাগারে আটক রয়েছেন। বাকিদের মধ্যে আমানউল্লাহ আমান ব্যতীত সবাই যে যার অবস্থানে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। গত ৩ জানুয়ারি থেকে খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করার পর প্রকাশ্যে তার ছেলের বিয়ের ধুমধাম অনুষ্ঠান করেন। এরপর তিনি আর জনসমক্ষে আসেননি।
এছাড়া ২৬৫ নির্বাহী কমিটির সদস্যের মধ্যে বেশিরভাগই নিষ্ক্রিয়। তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, কাজী রফিকুল ইসলাম, এম আকবর আলী, মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের, সিরাজুল ইসলাম সরদার, এন আই খান, অ্যাডভোকেট খন্দকার আহসান হাবিব, ইঞ্জিনিয়ার মো. শামসুদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন, ডা. মাহবুবুর রহমান লিটন, ফখরুদ্দীন আহমেদ বাচ্চু, খুরশীদ আলী মোল্লা, শেখ আলী আশরাফ, বেলাল আহমেদ, গোলাম হায়দার, সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, ড. মো. জালাল উদ্দিন, গোলাম হায়দার বিএসসি, কাজী মো. মফিজুর রহমান, হেলালুজ্জামান লালু, আনোয়ার হোসাইন, আলমগীর মাহফুজুল্লাহ ফরিদ, ডা. রফিকুল ইসলাম, মুহাঃ অহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, ডা. মিজানুর রহমান, অ্যাডঃ আবদুর রহিম, কাজী মো. মফিজুর রহমান, এম.ডি.এম.কামাল উদ্দিন চৌধুরী, আলহাজ দস্তগীর চৌধুরী, সা’দৎ আহমেদ, সমিরণ দেওয়ান, রবীন্দ্র লাল চাকমা, নাসির চৌধুরী, আলহাজ মজিবুর রহমান চৌধুরী (হাজী মুজিব), কাজী মনিরুল হুদা, শাহানা রহমান রানী, কাজী সলিমুল হক, আলী আজগর লবী, মতিয়ার রহমান তালুকদার, হাফিজ ইব্রাহিম, রাবেয়া সিরাজ, খালেদা পান্না, এনএন তাপস পাঠান, রেজা আহমেদ বাচ্চু মোল্লা, খোন্দকার আবদুল হামিদ ডাবলু, মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, আসিফ আকবর, বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, গাজী নুরুজ্জামান বাবুল (বাবুল গাজী), বাগেরহাট জেলার আবদুস সালাম, বরিশাল জেলার আবুল হোসেনসহ বড় একটি অংশকে দেখাই যায় না। উপরন্তু অনেক নেতা সরকার-দল ও নেতাকর্মীদের কাছে নিরাপদ থাকতে এবং বিতর্ক এড়াতে স্বেচ্ছায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ধরা দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদের প্রত্যেকে নিজ নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার হওয়ায় এ সন্দেহ কাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে।
এসব বিষয়ে নেতাকর্মীরা জানান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির এক-তৃতীয়াংশ নেতা আন্দোলন ও রাজপথে সরব ভূমিকা পালন করলে এর গতি-প্রকৃতি অনেক আগেই পরিবর্তন সম্ভব হতো। তারা আরো অভিযোগ করে বলেন, এসব নেতার মধ্যে অনেকে সরকারের সঙ্গে আপসরফার মাধ্যমে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য ঠিকমতো চালিয়ে যাচ্ছেন। এজন্য তারা একদিকে যেমন রাজপথে নামেন না, তেমনি কর্মীদেরও নামতে নিরুৎসাহিত করছেন, এমনকি হুমকিও দিয়ে আসছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলার নেতারা অন্যতম।
তবে বিষয়টির সঙ্গে একমত পোষণ করছেন না দলের নীতিনির্ধারকরা। তাদের মতে, এবারের আন্দোলনে কম-বেশি সবাই অংশগ্রহণ করছেন। যে যার অবস্থান থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলেই বিগত আন্দোলনের পারফরম্যান্স নিয়ে দলের হাইকমান্ড সন্তুষ্ট রয়েছে। এছাড়া দলের নীতিনির্ধারণীর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আন্দোলন কন্টিনিউ করার জন্য যত সম্ভব গ্রেফতার এড়িয়ে কৌশলের আশ্রয় নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। আর এ কারণেই দুই মাসের বেশি আন্দোলনে সরকার গণগ্রেফতার অভিযান চালিয়েও আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি।
এদিকে দলের অপর একটি সূত্র জানায়, দলের একটি দায়িত্বশীল অংশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে হাইকমান্ড অবগত রয়েছেন। ইতিমধ্যে তাদের একটি তালিকাও তৈরি করে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান কাছে দেয়া হয়েছে। এর পর পরই তাদের বিভিন্ন উপায়ে সতর্ক করে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে দলীয় সূত্র জানায়, আন্দোলন শুরু করার পর থেকে সরকারের গ্রেফতার অভিযানে ইতিমধ্যে দলের অনেক সিনিয়র নেতা গ্রেফতার হয়েছেন। এর মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম এ মান্নান, উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী ফালু, ভাইস চেয়ারম্যান শমশের মবিন চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব শাহজাহান, রুহুল কবির রিজভী, বিশেষ সম্পাদক নাদিম মোস্তফা, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব প্রমুখ রয়েছেন। এর আগে থেকেই স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অর্ধশতাধিক নেতা বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন। এছাড়া দলের সব পর্যায়ের নেতাদের নামে একাধিক মামলার রয়েছে এবং নিত্যনতুন মামলা দেয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, দলের বেশিরভাগ নেতা নিষ্ক্রিয় এ কথা সঠিক নয়। তবে একটি অংশ রাজপথে না থেকে দলের জন্য কাজ করছেন। আর এসব বিষয়ে দলের হাইকমান্ড ওয়াকিবহাল আছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। - See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.