![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালে কোনো প্রভাব পড়েনি সাতক্ষীরা জেলায়। জীবনযাত্রা ছিল স্বাভাবিক। গতকাল শুক্রবার ছিল অবরোধের ৭৪তম দিন। এই ৭৪ দিনে জেলায় কোনো পেট্রলবোমা বা ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। হরতাল-অবরোধের সমর্থনে বিএনপি-জামায়াতের কোনো তৎপরতাও নেই। তার পরও জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিয়ে একধরনের অস্বস্তি রয়েছে সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিবিদদের।
পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, সাতক্ষীরায় অবস্থান করে জামায়াত-শিবিরের নেতারা কোনো পরিকল্পনা করছেন না। জেলায় তাঁদের পক্ষে সংঘবদ্ধ হয়ে কোনো নাশকতা বা সহিংসতা করা সম্ভব হবে না। পুলিশ ও প্রশাসন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দিকে কড়া নজর রাখছে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর প্রায় ১১ মাস সাতক্ষীরায় তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। এ সময় আওয়ামী লীগের ১৬ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। অনেক ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পর্যন্ত জামায়াত-শিবির কার্যত সাতক্ষীরাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু এবার জোটের অবরোধ-হরতালে তারা একেবারে নিশ্চুপ। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা এমনিতেই খারাপ। এলাকায় পুলিশি টহলের কারণে জামায়াত নেতাদের মতো বিএনপির নেতারাও আত্মগোপনে আছেন।
জেলার কলারোয়া উপজেলা সদরে কথা হয় সেখানকার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোসলেমউদ্দিনের সঙ্গে। তাঁরা বললেন, ২০১৩ সালে এ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় জামায়াত-শিবির ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। কিন্তু এবার ওরা ঘাপটি মেরে আছে। অবশ্য পুলিশ এবার খুবই তৎপর। তার পরও ভয়-অস্বস্তি কাটছে না।
জেলা সদরের নিউমার্কেটের সামনে কথা হয় স্থানীয় এনজিওর কর্মী শারমিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে সাতক্ষীরায় কিছু হচ্ছে না। বিএনপি-জামায়াতের তৎপরতা নেই। তবে মানুষের ধারণা, জামায়াত সুযোগ পেলে আবারও তাণ্ডব চালাবে। শহর বাসস্ট্যান্ডের কাছে চায়ের দোকানি অশোক কুমার বলেন, ‘কখন কী হয়, বোঝা যায় না। মানুষের মনে যে ভয় ডুকে গেছে, তা বের হওয়া কঠিন।’
জোটের চলমান কর্মসূচিতে জামায়াতের নিষ্ক্রিয়তা সম্পর্কে জানতে চাইলে জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, এটা তাঁদের কৌশল। কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তাঁরা এখন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন। জেলার নেতা-কর্মীরা পালিয়ে বা আত্মগোপনে আছেন। ওই অবস্থায় রাজনীতিতে যুক্ত থাকছেন।
জামায়াত-শিবির নিয়ে অস্বস্তি-ভয় থাকলেও বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের নিয়ে তা নেই সাধারণ মানুষের। কারণ, জেলায় বিএনপির তেমন তৎপরতা নেই। জেলা বিএনপির কমিটিতে আছেন কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সভাপতি রহমতউল্লাহ পলাশ ঢাকায় থাকেন। সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলীমের তেমন কার্যক্রম চোখে পড়ে না। দলের বাজে অবস্থার কথা স্বীকার করে সাধারণ সম্পাদক প্রথম আলোকে বলেন, এখানে বিএনপির কার্যক্রম সেভাবে নেই। দলের মূল ভরসা ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নিষ্ক্রিয়। তিনি বলেন, এই সময়ের মধ্যে সাতক্ষীরায় তাঁরা আরাফাত রহমান কোকোর গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি বড় আকারে পালন করেছেন। নিজেদের মধ্যে বৈঠক বন্ধ আছে।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও জামায়াত-শিবিরের এই ‘নীরবতা’ অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মনসুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াত-শিবির হয়তো আরও বড় পরিসরে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই আওয়ামী লীগও সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর কাজ করছে। প্রতিটি ইউনিয়ন-ওয়ার্ডে জামায়াতের কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখা হচ্ছে। এ আশঙ্কার কথা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।
পুলিশের ব্যাপক ধরপাকড়, যৌথ বাহিনীর অভিযানে নেতা-কর্মীদের মৃত্যু, আহত হওয়াকে বিরোধী দলের তৎপরতা না থাকার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন স্থানীয় রাজনীতিবিদেরা। তাঁরা জানান, জেলায় নতুন করে বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মাত্র ১৫-২০টি মামলা হয়েছে। তবে পুরোনো মামলা আছে ৩০০ শতাধিক। মামলার ভয়ে কেউ ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামছেন না।
পরিস্থিতি সম্পর্কে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ জন গ্রেপ্তার হচ্ছে। রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক সব সন্ত্রাসীর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা কেউ বাড়িতে থাকতে পারছে না বা বৈঠক করতে পারছে না। সাতক্ষীরায় বিএনপি-জামায়াত আর সংঘবদ্ধ নাশকতা চালাতে পারবে না।
অবরোধ-হরতালেও জেলার শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে। কয়েকটি বিদ্যালয় ও কলেজে গিয়ে স্বাভাবিক অবস্থা দেখা গেছে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, জেলার সব স্কুল-কলেজ খোলা। নিয়মিত ক্লাস, পরীক্ষা ও অন্যান্য শিক্ষা কার্যক্রম চলছে।
জেলার অভ্যন্তরীণ ও আন্তজেলা বাস চলাচলও স্বাভাবিক আছে। রাতেও বাস চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। দোকানপাটও খোলা থাকছে। লিঙ্ক: দৈনিক প্রথম আলো
©somewhere in net ltd.