নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

উই নিড মোর বার্ন ইউনিট!

২৪ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ৮:৩৫

ট্রাকে বালু নিয়ে যাচ্ছিলেন চালক ও হেলপার। সেই বালু নামানোর জন্য ছিলেন আরো ছয় শ্রমিক। মাগুরার আড়পাড়া এলাকায় বালু নামিয়ে দ্রুত বাড়ি ফেরার তাগিদ থাকায় গত শনিবার দুপুরের খাবারের কথা একরকম ভুলেই গিয়েছিলেন তাঁরা। সকালে তাঁদের সঙ্গে ছিল চারজনের খাবার, তা-ই ভাগ করে খেয়েছিলেন ৯ জন। বিকেলে বাড়ি ফিরে পেট ভরে ভাত খাওয়া যাবে- এমন চিন্তা নিয়েই ফিরছিলেন বাড়ি; কিন্তু আর ফেরা হয়নি। হাড়ভাঙা খাটুনির পর ক্ষুধার্ত সেই শ্রমিকদের খাবার খাওয়ার সুযোগ দেয়নি দুর্বৃত্তরা। অবরোধে পেট্রলবোমার আগুনে পুড়ে এরই মধ্যে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনজন। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন বাকি ছয়জন। তাঁদের মধ্যে ইয়াদুল মোল্লার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে গেছে। বার্ন ইউনিটে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি।
ইয়াদুল শেষবার কথা বলেছিলেন রবিবার সকালে। জ্ঞান ফিরতেই কাতরকণ্ঠে স্বজনদের কাছে খাবার চেয়েছেন তিনি। গত শনিবার রাতে দগ্ধ হওয়ার পরও একবার জ্ঞান ফিরেছিল ইয়াদুলের। তখনো স্বজনদের কাছে খাবার চেয়ে আকুতি জানান তিনি। স্বজনরা শেষবারের মতো তাঁর মুখে খাবার তুলে দিতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছে। ইয়াদুলের বোন জাকিয়া বেগম ও চাচাতো ভাই মাজেদুল মোল্লা গতকাল সোমবার এ শঙ্কার কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জাকিয়া বেগম বিলাপ করে বলেন, 'হুঁশ ফিরছিল দুইবার। সারাডা শরীর পোড়া। ঠিকমতো কথা কইতে পারে নাই। হুঁশ ফিরা কয় খাইতে দেও। আমার ভাইডা দুইডা ভাতও খাইতে পারল না।'
মাজেদুল মোল্লা বলেন, 'আমার ভাই শাকিল ভুক (ক্ষুধা) নিয়াই মইরা গেল।
সারা দিন কাম করলে কী পরিমাণ খিদা লাগে কন? ইয়াদুলেরও শরীরডা নাই! ডাক্তাররা আশা ছাইরা দিছে। হেই মানুষটা হুঁশ ফিরা খাওন চায়। শাকিলরে পারলাম না একটু খাওয়াইতে, ভাই ইয়াদুল আর বোনজামাই (ভগ্নিপতি) ইমরানরেও পারমু না হয়তো।' এসব কথা বলতে বলতেই ডুকরে কেঁদে ওঠেন মাজেদুল।
জানা যায়, গত শনিবার রাতে মাগুরার মঘীরঢাল এলাকায় ট্রাকে পেট্রলবোমার আগুনে দগ্ধ ৯ জনের মধ্যে তিনজনই মাজেদুল ও জাকিয়ার স্বজন। ট্রাকটির হেলপার ইয়াদুল ও নিহত শ্রমিক শাকিল মোল্লা চাচাতো ভাই। চালক ইমরানের স্ত্রী লাবলী হলেন ইয়াদুলের বোন। ইমরান ট্রাকের চালক হওয়ার সুবাদে ইয়াদুল সহকারী হিসেবে কাজ নেন। চালক হওয়ার জন্য প্রশিক্ষণও তাঁর শেষ হয়েছিল। শিগগিরই অন্য ট্রাকে চালকের কাজ নেওয়ার কথা ছিল ইয়াদুলের। ইমরান আর ইয়াদুলের সূত্রেই ওই ট্রাকে কাজ করতে যান মাগুরার মালিগ্রাম এলাকার আরো ছয় শ্রমিক। তাঁদের মধ্যেও চারজন একে অপরের আত্মীয়।
স্বজনরা জানায়, দগ্ধ চালক ইমরানের বাড়ি ফরিদপুরের কামারখালী এলাকায়। তাঁর শরীরের ৬০ শতাংশই পুড়ে গেছে। গতকাল বার্ন ইউনিটের এইচডিইউতে গোঙানি ছাড়া তাঁর কোনো কথা শোনা যায়নি। স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে ইমরানকে। অল্প কথা বলতে পারছেন তিনি। এর মধ্যে দুইবার স্বজনদের কাছে না খেয়ে থাকার কথা বলেছেন ইমরান।
ইয়াদুলের বোন জাকিয়া জানান, মাগুরার মালিগ্রামের মৃত জহুর মোল্লার ছয় মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে ষষ্ঠ ইয়াদুল। বাবার মৃত্যুর সময় ইয়াদুলের বয়স ছিল পাঁচ বছর। এরপর কৈশোরেই সংসারের হাল ধরেন তিনি। দিনমজুরি করে চার বোনের বিয়ে দিয়েছেন ইয়াদুলই। বৃদ্ধ মা আয়েশা বেগমকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। ভগ্নিপতির সঙ্গে থেকে গাড়ি চালনা শিখেছিলেন। স্বপ্ন ছিল চালক হয়েই বিয়ে করবেন। সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। 'ভাইডা মইরা গেলে মারে ক্যামনে বাঁচামু, এই চিন্তায় আছি। আমাগো দিকে কে চাইবো? একটাই ভাই আমাগো...।'
আরব আলীর চোখে বিভীষিকা : বার্ন ইউনিটে শয্যায় কাতরাচ্ছেন বালু শ্রমিক আরব আলী। তাঁর গোঙানির শব্দের সঙ্গে যেন যোগ হয়েছে আর্তনাদ। ব্যান্ডেজে মোড়ানো এ যুবকের চোখে এখন শঙ্কার রেখা। ভয়ে কেঁপে উঠছেন বারবার। কাঁপাকণ্ঠে বললেন, 'আমার চোখের সামনে শেষ হইয়া গেল। কাউরে বাঁচাইতে পারলাম না। নিজেও বাঁচলাম না। চোখে যেন কেয়ামত দেখলাম।'
'হঠাৎ শব্দ, আগুনের গোলা' : আরব আলীর পাশের শয্যায় কাতরাচ্ছেন তাঁরই চাচা ইলিয়াস বিশ্বাস। একই সঙ্গে পুড়েছিলেন আরেক চাচা রওশন ও চাচাতো ভাই মতিন। শনিবার রাতে রওশন এবং রবিবার মতিন মারা গেছেন আরবের সামনেই। আরবের শরীরের ২৯ শতাংশ পুড়েছে। ঘটনার ব্যাপারে তিনি বলেন, 'হঠাৎ শব্দ, আগুনের গোলা। এরপর গাড়ি ক্যামনে পড়ল আর আমি কিভাবে পড়লাম মনে করতে পারছি না। খালি আগুন আর আগুন। বাঁচার জন্য চিৎকার দিতে দিতে অজ্ঞান হইয়া যাই। পরে দেখি হাসপাতালে।' ইলিয়াসের শরীরের ৫০ শতাংশই পুড়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ইয়াদুল, ইমরানের মতোই বেশি সংকটে আছেন ইলিয়াস। শ্বাসনালি পোড়ার কারণে মাগুরায় দগ্ধ সব রোগীই আশঙ্কাজনক। অপর দুই শ্রমজীবী ফারুকের শরীরের ২৮ শতাংশ এবং নাজমুলের শরীরের ২০ শতাংশ পুড়েছে।
বার্ন ইউনিটে এখনো ২৮ জন : ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল গতকাল বলেন, 'মাগুরার রোগীসহ এখন আমাদের কাছে ২৮ জন রোগী আছে। তাদের মধ্যে মাগুরায় দগ্ধ ইয়াদুল ও চাঁদপুরে দগ্ধ খোরশেদকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছে। সংকটাপন্ন সব রোগীকে পর্যবেক্ষণে রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।'
প্রকাশিত: দৈনিক কালের কণ্ঠ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:০২

বিলোয় বলেছেন: এসব হাউকাউ তো কবে থেকেই শুরু। পঙ্গু হাস্পাতালে যান, পুলিশের গুলিতে আহত রোগীর সংখ্যা এর চেয়ে বহু গুনে বেশি। সে সব খবর মিডিয়ায় আসে না, আপনারা সরকার পন্থী ব্লগাররা চেপে যান। দুঃখজনক।

২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

বিদগ্ধ বলেছেন: দুঃখজনক!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.