![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের তিন দিন আগেই বলেছিলেন, তিনি স্বাধীনতার সমতুল্য ঘোষণা দেবেন।
১৯৭১ সালের ৪ মার্চ মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া ও নিকট প্রাচ্য বিভাগের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জোসেফ জে সিসকো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম পি রজার্সকে যে তথ্য স্মারক পাঠান, তাতে এ কথার উল্লেখ পাওয়া গেছে।
এই দলিলটি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছে, প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের প্রশাসনের কাছে নির্দিষ্ট খবর ছিল যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া যখন বিশ্বকে মুজিবের সঙ্গে আলোচনার কথা বলছিলেন, তখন আসলে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করছিলেন।
এ বিষয়ে ৪ মার্চের ওই তথ্য স্মারকে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘ক্রমাগতভাবে রিপোর্ট আসছে যে, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী বাঙালি পুলিশকে নিরস্ত্র করছে। বিমানবাহিনী সীমিতভাবে হলেও শক্তি বৃদ্ধি করছে বলেও প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। যদিও এই খবর সমর্থিত নয়, তবে তা অনেক বাঙালির কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন নীতিনির্ধারণ নিয়ে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম পি রজার্সের সঙ্গে হেনরি কিসিঞ্জারের মতভিন্নতা দেখা দিয়েছিল। কিসিঞ্জার ২৫ মার্চের বর্বর হামলার নিন্দা জানাতে রজার্সের সহানুভূতিশীল মনোভাব অগ্রাহ্য করেছিলেন।
মার্কিন জাতীয় মহাফেজখানা থেকে প্রথম আলোর সংগ্রহ করা এই নথিতে (সরকারিভাবে অবমুক্ত কিন্তু অনলাইনে অপ্রকাশিত) বলা হয়েছে, পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে একটি নাটকীয় মোড় নিতে যাচ্ছে। ২০১২ সালে প্রথম আলো এই নথি সংগ্রহ করে। স্মারকে বলা হয়েছে, ‘শেখ মুজিবুর রহমান আজ ৩ মার্চে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া কর্তৃক ১০ মার্চ ঢাকায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণ নির্দিষ্টভাবে নাকচ করে দিয়েছেন। ৩ মার্চে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন এবং ৭ মার্চে তাঁর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ঘোষণা করতে পারেন।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রজার্সকে আরও জানানো হয়, এটা অনুমেয় যে, মুজিবুর রহমান পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে তা যতই ক্ষীণ হোক না কেন, এখনো পর্যন্ত কিছুটা যোগাযোগ বজায় রাখতে আগ্রহী রয়েছেন। কিন্তু তিনি পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতা ঘোষণায়ও চালিত হতে পারেন। আবার তিনি একটি মাঝামাঝি রাস্তাও খুঁজে বের করতে পারেন। ৩ মার্চ মুজিবুর রহমান বিদেশি সংবাদদাতাদের ‘অব দ্য রেকর্ড’ বলেছেন, তিনি রোববারে যে ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন, তা হবে স্বাধীনতার সমার্থক।
রজার্সকে দেওয়া স্মারকে বলা হয়েছে, ইয়াহিয়ার আমন্ত্রণ মুজিবুর রহমান কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি ওই আমন্ত্রণকে ‘নিষ্ঠুর কৌতুক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। কারণ, ইয়াহিয়ার ওই আমন্ত্রণের পরে ‘নিরস্ত্র বেসামরিক ব্যক্তিদের ব্যাপকভিত্তিতে হত্যা করা হয়েছে’।
তিনি তাঁর ৩ মার্চের ভাষণে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি না হওয়ার কারণে সরকারকে ট্যাক্স পরিশোধ না করতে বাঙালিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সামরিক বাহিনীর চলাচলে বাধা সৃষ্টি করতে তিনি সাধারণ ধর্মঘট পালিত হওয়ার সময় রাস্তার ওপরে ব্যারিকেড এবং গর্ত খননেরও আহ্বান জানান। মুজিব লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ বন্ধেরও আবেদন জানান। এর একটা সুফল মিলেছে বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। ৪ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট চলাকালে ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতিশীল পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে হ্রাস’ অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে ঢাকার কনস্যুলেট জেনারেল রিপোর্ট করেছেন।
মুজিব বিদেশি সংবাদদাতাদের কাছে আরও উল্লেখ করেন, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের উচিত হবে পৃথক সংবিধান তৈরি করা এবং তারপর কী ধরনের যোগসূত্র রক্ষা করা যায়, তা বিবেচনা করা।
মুজিবের ওই অবস্থান সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়া ও নিকট প্রাচ্য বিভাগের মূল্যায়নে বলা হয়, ‘পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক কর্তৃপক্ষ মুজিবের ওই অবস্থানের বিরোধিতা করতে পারে। কারণ, এ ধরনের প্রস্তাব রাখা হবে মুজিবের বর্ণিত স্বায়ত্তশাসনবাদী পদ্ধতির বাইরের বিষয়, আর পশ্চিম পাকিস্তান তো মুজিবের আগের প্রস্তাবই ইতিমধ্যে নাকচ করেছে। দুই সংবিধানের ওই ধারণা হবে স্বাধীনতার শামিল। যদিও এটা ভুট্টোর কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে, কারণ “কমনওয়েলথের” পশ্চিম অংশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর অভিলাষ পূরণ হওয়ার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেন।’ দৈনিক প্রথম আলো, ২৫ মার্চ ২০১৫
©somewhere in net ltd.