![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দীর্ঘ তিন মাসের আন্দোলনে ফল ঘরে না আসায় ভীষণ ক্ষুব্ধ বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। হঠাৎ করেই সিটি নির্বাচনের নাম করে আন্দোলন কর্মসূচি থেকে কার্যত সরে আসায় বিস্ময় মাঠের নেতা-কর্মীদের। কেন্দ্রের প্রতি তাদের প্রশ্ন, দেড় শতাধিক নেতা-কর্মীসহ সারা দেশে প্রাণহানির শিকার সাধারণ মানুষ এবং দলের নিখোঁজ যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের পরিবারের আহাজারি শুনবে কে? হামলা-মামলায় জর্জরিত তৃণমূলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এখন কী করবেন? আর কতদিন তারা আত্মগোপনে থাকবেন? বিজয় না আসা পর্যন্ত ঘরে ফেরা নয়- স্লোগান নিয়ে যাত্রা করা আন্দোলনে ভাটা পড়ল কেন, সেই রহস্যও জানতে চান মাঠের ক্লান্ত-শ্রান্ত নেতা-কর্মীরা। তা ছাড়া জামিন নিয়ে আকস্মিকভাবে কার্যালয় থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত কোথা থেকে কীভাবে এলো, তা নিয়েও হাজারো প্রশ্ন তাদের।
তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘমেয়াদি এ আন্দোলনের কৌশল গ্রহণেই বড় ধরনের ত্রুটি ছিল। মাঠের বাস্তবতা অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সঠিক চিত্র তুলে ধরেনি একটি মহল। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের থেকে তাকে কৌশলে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়। একইভাবে আন্দোলনে থাকা নেতাদের থেকেও বিএনপি-প্রধানকে আলাদা করে ফেলা হয়। পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন ঢাকার কেন্দ্রীয় নেতারা। এ কারণেই হয়তো বেগম জিয়াকে ব্যাকফুটে চলে যেতে হয়েছে।এ প্রসঙ্গে বিএনপির ঢাকা মহানগর আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আবু সাঈদ খান খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আন্দোলনের কৌশলগত প্রক্রিয়ায় আমরা একটু পিছু হটেছি। এটা সাময়িক। তা ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদে সারা দেশে আন্দোলন কম-বেশি চলছে। এর গতিও হয়তো বাড়ানো হতে পারে। যারা রাজনীতি বোঝেন না, তারাই এ আন্দোলনে বিএনপির ওপর ব্যর্থতার দায়ভার চাপানোর চেষ্টা করছেন।’অবশ্য ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলা বিএনপির সদস্য আনোয়ার হোসেনের প্রশ্ন, ‘আন্দোলন থেকে হুট করে সরে যাওয়ার এই আত্মঘাতী সিদ্ধান্তে কী পেল বিএনপি কিংবা দেশ? শীর্ষ নেতারা হয়তো ব্যক্তিগতভাবে কিছু পেতে পারেন। কিন্তু আমরা তৃণমূল নেতারা এখন জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে? কেন্দ্রীয় নেতারা এভাবেই যদি পিছু হটবেন, তাহলে কী দরকার ছিল এই প্রাণঘাতী আন্দোলনের?’ জানা গেছে, সারা দেশে লক্ষাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে প্রায় ২০ হাজার মামলার খড়গ ঝুলছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ বহু নেতা-কর্মী কারাগারে। এ পরিস্থিতিতে ইতিমধ্যে হরতাল কর্মসূচি থেকে সরে এসেছে দলটি। তবে নামকাওয়াস্তে চলছে অবরোধ কর্মসূচি। জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক। রাজধানীসহ সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। তাই এ ধরনের ‘হাস্যকর’ অবরোধ কর্মসূচি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন অনেকে।বিএনপির নীতিনির্ধাকদের মতে, আন্দোলনে জোয়ার-ভাটা থাকবেই। এখন হয়তো তা-ই হয়েছে। তিন সিটি নির্বাচনে যাওয়ার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় ত্যাগ করাও আন্দোলনেরই অংশ। বিএনপি গণতন্ত্র ও ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। তাই আগের মতোই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট। একে ব্যর্থতা বলা ঠিক হবে না। তবে আন্দোলনে কিছুটা ভাটা পড়েছে বলে স্বীকার করেন নেতাদের অনেকেই। মাঠ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দীর্ঘ এ আন্দোলনে অনেক শক্তি ক্ষয় করতে হয়েছে। নিহত হয়েছেন নেতা-কর্মী। কিন্তু অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ। মামলার পাহাড়ে থাকা তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়েছে। হতাশা নেমে এসেছে সর্বত্র। কারণ, এতদিন হরতাল-অবরোধ থাকার কারণে পুলিশ ছিল রাজপথে। এখন তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের ধরতে তারা নতুন করে বাড়িঘরে হানা দেবে। অনেকেই গুম-খুন বা অপহরণের শিকার হতে পারেন। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ (ভিপি) সোহেল বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতাদের মতো জেলা পর্যায়ের অধিকাংশ নেতা আত্মগোপনে। এও ঠিক, কোনো আন্দোলনেই সব নেতা-কর্মী একই মাত্রায় সক্রিয় থাকেন না। নেতৃত্ব দু-চার জনকেই দিতে হয় চড়াই-উতরাই পার হয়ে। তাই এভাবে আর কতদিন, তার কোনো জবাব নেই।’ হোসেনপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মবিন বলেন, ‘আমরা এখন একটা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। তিন মাসের আন্দোলনে ব্যবসা-বাণিজ্য সব খুইয়েছি। সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনাও পাচ্ছি না কেন্দ্র থেকে। মামলা মাথায় নিয়ে ফেরারি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আর এই ধড়পাকড়, দমন-পীড়নের মধ্যে আন্দোলন বন্ধ করে এ সরকারের অধীনে সিটি নির্বাচনে যাওয়ার কারণটাও আমাদের বোধগম্য নয়। তবে এ ব্যাপারে নেত্রীই (বেগম খালেদা জিয়া) হয়তো ভালো বুঝবেন।’ জহিরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দীর্ঘ এ আন্দোলনে হাতে গোনা তিন-চার জন ছাড়া জেলা পর্যায়ের কোনো নেতাকে আমরা মাঠে পাইনি।’বিএনপি চেয়ারপারসনের ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আন্দোলন বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল’ এ বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে তৃণমূল নেতারা বলেন, তাহলে কি চেয়ারপারসন এবারও ভুল সিদ্ধান্ত নিলেন? স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে সারা দেশের অসংখ্য ফেরারি নেতা-কর্মীকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে কার পরামর্শে আন্দোলনে পিছু হটল বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ যেসব নেতা-কর্মী কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে আছেন তাদের কী হবে? অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার না করে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতেই বা গেলেন কীভাবে! কোনোরকমের কথাবার্তা বা দিকনির্দেশনা ছাড়াই আদালত থেকে জামিন নিয়ে সরাসরি বাড়ি চলে গেলেন কার কথায়? একসময়ের আপসহীন বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তো এমন ছিলেন না!সম্প্রতি আবির্ভাব ঘটা ‘শত নাগরিক কমিটি’র ভূমিকায়ও প্রশ্ন রয়েছে বিএনপিতে। এ কমিটির তৎপরতা ও সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং চলমান আন্দোলন স্তব্ধ করে দেওয়ার পদক্ষেপে রীতিমতো হতবাক দেশব্যাপী দল-অঙ্গ সংগঠনের অধিকাংশ নেতা-কর্মী। স্থায়ী কমিটিসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এ ক্ষেত্রে উপেক্ষারও অভিযোগ উঠেছে। নেতা-কর্মীদের ধারণা, এসব ব্যাপারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিন মাস গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করা কয়েকজন নেতা ও কর্মকর্তার ভূমিকা রয়েছে। যারা শুধু নিজেদের স্বার্থে কোনোরকমের ঘোষণা ছাড়াই আন্দোলন থেকে পিছু হটার সিদ্ধান্ত গ্রহণে খালেদা জিয়াকে বাধ্য করেছেন। এর মধ্যে স্থায়ী কমিটির এক সদস্যও ওতপ্রোতভাবে জড়িত বলে সন্দেহ তাদের। যাদের সঙ্গে নিয়ে খালেদা জিয়া সব সময় চলেন, আত্মঘাতী এই সিদ্ধান্তের পেছনে তাদের প্রচেষ্টা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।এদিকে আন্দোলনের সূতিকাগার রাজধানী ঢাকায় গত তিন মাসে বিএনপির কোনো উল্লেখযোগ্য নেতা মাঠে নামেননি। কিন্তু সিটি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকেই সক্রিয় হয়ে উঠেছেন ‘বড় বড়’ অনেক নেতা। এ নিয়েও মাঠের নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে নানা প্রশ্ন। ধানমন্ডি থানা বিএনপির সভাপতি শেখ রবিউল আলম বলেন, ‘সারা দেশে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে হঠাৎ আন্দোলনে স্থবিরতা আনা এবং সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত আÍঘাতী। বিশেষ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে সিটি নির্বাচন এবং চলমান আন্দোলন দুটোই ভেস্তে যেতে পারে।’ বাংলাদেশ প্রতিদিন
©somewhere in net ltd.