নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এ কী হরতাল এ কী অবরোধ!

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:৫২

যে কোনো দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। হউক সে ন্যায্য বা অন্যায্য। আন্দোলনের জন্য যৌক্তিক দাবি থাকে, সে দাবি হতে হবে জনগণের, কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। রাজনৈতিক দল জনগণের মুখপাত্র। দলকে বিবেচনা করতে হয়, দাবি সময়োপযোগী কিনা। ন্যায্য অধিকারের জন্য যৌক্তিক সময় বা জিরো আওয়ার কিনা। জিরো আওয়ারটা সবকাজে সবচেয়ে জরুরি। সম্প্রতি গিনেস বুক অব রেকর্ডে ওঠার মতো আন্দোলন হয়ে গেল বঙ্গবন্ধুর এই বাংলাদেশে। আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন বড় একটি রাজনৈতিক দল। একটা রাজনৈতিক দলের যে ভাবে গড়ে উঠতে হয় বা জন্ম নেয়, যেভাবে তার বিকাশ ঘটে, যে পর্যায়ে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে, দলীয় আদর্শ, গঠনতন্ত্র তার কোনো কিছুই বিবেচনায় নিলে, এটি একটি রাজনৈতিক দল নয় বরং একটি ক্লাব। এবং সেই ক্লাব কিন্তু সাধারণ মানুষের যেমন নয়, তেমনি একেবারে অভিজাতও নয়। বরং সন্দেহ আর অবিশ্বাসের বেড়াজালে আবদ্ধ তারা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আদর্শ, লক্ষ্য, ত্যাগী, সততার সঙ্গে একাগ্র চিত্তে সেবামূলক কাজে নিয়োজিত এমন একটি ক্লাবও নয়, আবার ঢাকা ক্লাব বা গুলশান ক্লাবও নয়। সুতরাং আন্দোলন চালানোর মতো ত্যাগী কর্মী তাদের নেই। আজও দেখলাম সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির অত্যন্ত জনপ্রিয়, তিনবারের হ্যাটট্রিক, শ্রদ্ধাভাজন সভাপতি, স্বনামধন্য আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন তার একটা বক্তব্যে বলেছেন, রাস্তায় নামলে গ্রেফতার হবেন, ঘরে বসে থাকলেও গ্রেফতার হবেন, দোকানে বসলেও গ্রেফতার হবেন, তাই আমি চাই একবার সর্বস্ব ত্যাগ করে আপনারা রাস্তায় নামুন, দেখবেন সরকার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। একজন সাধারণ রাজনৈতিক সচেতন নাগরিক হিসেবে আমার মনে প্রশ্ন, উনার ডাকে জনগণ তথা বিএনপি কর্মীরা রাস্তায় কেন যাবেন। সাধারণ জনগণ হলো রাজনীতির সবচেয়ে বড় শক্তি, দলের ত্যাগী কর্মীরা হলো আন্দোলনের পথ প্রদর্শক, জনগণের ও আন্দোলনের জন্য প্রভাবক। প্রশ্ন হলো ত্যাগী ও সৎ কর্মী আছে কি না অথবা সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির ডাকে কেন জনগণ সরকার উৎখাতের আন্দোলন করবেন? নেতারা যেখানে সৌখিন জীবন ত্যাগ করে বা ত্যাগের সুবিধা বঞ্চিত হয়ে রাস্তায় নামছেন না, সেখানে কর্মীরা কেন নামবেন?

আর স্যুট-কোট পরিহিত যিনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে চড়ে অফিসে এসে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সভা কক্ষে বসে আন্দোলনের ডাক দিলেন, তিনি কি বঙ্গবন্ধুর মতো বাংলার গ্রাম, পথ-প্রান্তর, শহর-বন্দর, পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জেল খানার স্বাদ গ্রহণ করেছেন? আমার মনে হয় উনি কেন, বঙ্গবন্ধুর পরে বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে একমাত্র শেখ হাসিনাই ঘুরেছেন, বারবার মৃত্যুর টার্গেট হয়েছেন। তবুও হাল ছাড়েননি। এবারের হরতাল বা অবরোধ অহিংস না সহিংস আন্দোলন তা জনগণ বুঝতেই পারেনি। তবে এক কথায় জনগণ বুঝতে পেরেছে এটা শুধু ক্ষমতার জন্য, ধ্বংসাত্মক এক খেলা। এটা বঙ্গবন্ধু বা মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন নয় অথবা কাস্ত্রো, চেগুয়েভরা, সূর্যসেন, প্রীতিলতার কোনো বিপ্লব বা সশস্ত্র আন্দোলনও নয়। এমন কি জনগণের মুক্তির আন্দোলনও নয়। সুতারং কিছু ধ্বংস, প্রাণহানি, মানুষের জন্য নরকযন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই আনেনি এ আন্দোলন। এসএসসি পরীক্ষার্থী আর তাদের অভিভাবকদের জন্যও এ এক কঠিন যন্ত্রণা, হতাশার মর্মস্পর্শী বেদনা।হিটলারের মতো একনায়ককে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে, অহিংসা অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান দিকপাল, বিশ্বনন্দিত নেতা মহাত্মা গান্ধী একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। চিঠিতে তাকে বন্ধু সম্মোধন করে বলা হয়- “Dear Friend, That I address you as a friend is no formality. I own no foes. My business in life has been for the past 33 years to enlist the friendship of the whole of humanity by befriending mankind, irrespective of race, colour or creed.I hope you will have the time and desire to know how a good portion of humanity who have view living under influence of that doctrine of universal friendship view your action. We have no doubt about your bravery or devotion to your fatherland, nor do we believe that you are the monster described by your opponents. But your own writings and pronouncements and those of your friends and admirers leave no room for doubt that many of your acts are monstrous and unbecoming of human dignity, especially in the estimation of men like me who believe in universal friendliness. Such are your humiliation of Czechoslovakia, the rape of Poland and the swallowing of Denmark. I am aware that your view of life regards such spoliations as virtuous acts. But we have been taught from childhood to regard them as acts degrading humanity. Hence we cannot possibly wish success to your arms.” তাতে কিন্তু হিটলারের মতের পরিবর্তন হয়নি বা মন টলেনি, একের পর এক ধ্বংসলীলায় মেতে উঠেছিলেন নতুন নতুন নাজি (ঘধুরংস) আইন তৈরি করে ধ্বংসযজ্ঞে মেতে উঠেছিলেন, পরিণাম ভয়াবহ। অনাবিষ্কৃৃত মৃত্যু বা আত্মহত্যা।সুতরাং রাজনৈতিক নেতাদের শুধুমাত্র রাজনীতির ইতিহাস থেকেই শিক্ষা নিলে হবে না। দর্শন, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কেও পাণ্ডিত্যের জ্ঞান থাকতে হবে। একজন রাজনীতিবিদ হবেন রাজনীতির দার্শনিক (Political Philosopher), রাজনীতির অর্থনীতিবিদ (Political Economist) সর্বোপরি জনগণের অধিকার ও মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন একজন দেশপ্রেমিক পণ্ডিত ব্যক্তি (Learned people’s Leader) যার প্রধান উপলক্ষ হবে জনগণের ভালোবাসা। বিএনপিকে বুঝতে হবে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে অবৈধ ভাবে অপসারণের জন্য যদি সে জামায়াত বা কোনো বিদেশি শক্তির সহায়তা নেয়, তাহলে তাদের কাছে নিঃশর্তভাবে সমর্পিত হতে হবে, যাতে করে তাদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হবে। যেমনটি গান্ধীজি হিটলারের জার্মান সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছিলেন ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে। তার লেখায় “We know, what the British heel means for us and the non-European race of the world. But we would never wish to end The British rule with German aid.” ব্রিটিশ শাসন অবসানের ক্রান্তিলগ্নে হিটলারের ও জার্মান সাহায্য ব্রিটিশদের পতন ত্বরান্বিত করলে জার্মানকে অপসারণের জন্য আবার কে আন্দোলন করার শক্তি জোগাবে? অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, সময়ে সহিংস আন্দোলনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এই উপমহাদেশেই তার দৃষ্টান্ত রয়ে গেছে। বরং অহিংস আন্দোলনে কোনো পরাজয় নেই। অহিংস আন্দোলন হলো “do or die without killing or hurting” সহিংস আন্দোলন মানবতার ধ্বংস বৈ কিছুই নয়। চিকিৎসক হিসেবে কান পেতে আমি শুনতে পাই পোড়া রোগীদের কাতর যন্ত্রণা ও চোখ মেলে দেখতে পাই তাদের বীভৎস চেহারা ও প্রতিবন্ধিতা। অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত লেখক : সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় - See more at: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.