নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির ঘুরে দাঁড়ানো

১২ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:০১

সিটি করপোরেশন নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি এ-ই প্রথম গণবিরোধী ও আত্মঘাতী কর্মসূচি দেয়নি। বলা যায়, কঠিন বাস্তবতা বিএনপি নেতৃত্বকে পথ চিনিয়েছে। পত্রিকান্তরে জানা গেল, খালেদা জিয়া এরই মধ্যে জেলা পর্যায়ের নেতাদের আদেশ দিয়েছেন প্রস্তুতি নিতে। তিনি জেলা সফরে বেরোবেন। বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার আগে দলকে সুসংগঠিত করার যে পরামর্শ আমরা ২০০৮ থেকে দিয়ে আসছিলাম, অনেক কিছু হারিয়ে সাঁঝবেলায় এসে সেদিকেই দৃষ্টি দিলেন। বিএনপির পজিটিভ রাজনীতির আরেকটি পদক্ষেপের কথা ৮ মের পত্রিকায় দেখলাম। ছাত্রদল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি খুবই প্রয়োজনীয় দায়িত্ব ছিল বিএনপির জন্য। তবে এসব ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে হলে বিএনপিকে গণতন্ত্র চর্চার পথে হাঁটতে হবে। অবশ্য এই জায়গাটিতে আসা বিএনপির জন্য সহজ হবে না। গণশক্তির ওপর শ্রদ্ধা দেখাতে না পারলে গণতন্ত্রের পথে হাঁটা কঠিন। যেখানে ঐতিহাসিকভাবে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা আওয়ামী লীগের এ যুগের নেতা-নেত্রীরা দলীয় বৃত্তে আটকে গিয়ে জনগণের দল হতে পারছেন না, সেখানে বিএনপির পক্ষে গণতন্ত্র চর্চা করা কঠিন। কারণ গণতান্ত্রিক চেতনাবিরোধী অবস্থান থেকে এই দলের জন্ম হয়েছিল। দীর্ঘ সময় বিএনপি সরকারে থেকেছে। কিন্তু সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোনো চেষ্টা করেনি। দুর্নীতি আর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকেছে।

বিএনপির গণতান্ত্রিক হওয়ার পেছনে বড় বাধা জামায়াত বন্ধুত্ব। জঙ্গিবাদের সঙ্গেও বিএনপির পরোক্ষ যোগাযোগ আছে বলে জনরব রয়েছে। বলা যায়, জামায়াত এখন সিন্দবাদের বুড়োর মতো ভালোই চেপে বসেছে বিএনপির ঘাড়ে। এসব অশুভ যোগাযোগ ও অসৎ বন্ধুত্ব ঝেড়ে বিদায় করতে না পারলে বিএনপির পক্ষে গণতন্ত্রের পথে হাঁটা সম্ভব হবে না। ৯ মে একটি জাতীয় দৈনিকের খবর থেকে জানা গেল, বিএনপি জামায়াত বন্ধুত্ব ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে বড় বাধা তারেক রহমানের সবুজ সংকেতও নাকি পাওয়া গেছে। খবরটি সত্য হলে বিএনপির জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু হতে পারে না।

সাঁঝের বেলায় ঘুরে দাঁড়ানোর ইচ্ছাকে স্বাগত

আমরা আশা করব, বিএনপি নেতারা নিকট অতীতে নিজেদের ভুল পথে হাঁটা নিয়ে আত্মসমালোচনা করেছেন। না হলেও বলব, অনন্যোপায় হয়ে অগত্যা চিন্তা করছেন নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথে হাঁটার। কিন্তু আমরা মনে করি, এ পথ ধরে মোক্ষে পৌঁছার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে, বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দুটি ভিন্ন ভাবনার পক্ষ রয়েছে। লন্ডন থেকে তারেক রহমান একটি পক্ষ পরিচালনা করেন। এই পক্ষে আংশিকভাবে খালেদা জিয়ার অবস্থান রয়েছে। বিএনপির কিছু তরুণ ও মাঝারি তুর্কি আছেন এই দলে। বিএনপিপ্রধানের অফিস কর্মকর্তাদের অনেকেরই আশ্রয় তারেক রহমান। এই পক্ষের সবচেয়ে বড় মদদদাদা জামায়াত। এই গ্রুপের লক্ষ্য দ্রুত শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটিয়ে বিএনপির রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী হওয়া। মদদদাতা জামায়াতের লক্ষ্য এদের উসকে দিয়ে রাজনীতির জল ঘোলা করা। আর সেই ঘোলা জলে নিজেদের সুবিধার মাছ ধরা।

বিএনপির প্রাজ্ঞ রাজনীতিকদের উল্লেখযোগ্য অংশ অনিয়মতান্ত্রিক সন্ত্রাসী রাজনীতির সমর্থক নয়। কিন্তু তাঁরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে এবং বিএনপি নেত্রীর ক্ষমতাবলয়ের বাস্তবতায় এতটা শক্তিশালী নন যে প্রকাশ্যে ভূমিকা রাখবেন। তাই সাম্প্রতিক বিএনপির কট্টরপন্থীদের হঠকারী রাজনীতি চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া তাঁদের করার তেমন কিছু ছিল না।

বিএনপি নেতা-নেত্রীরা মুখে না মানলেও ইতিহাস সাক্ষ্য দেবে, ২০১৪-এর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে না যাওয়া বিএনপির বড় ভুল ছিল। বিএনপি নেতৃত্বের আশঙ্কামতো নির্বাচন গড়াপেটা করে আওয়ামী লীগ বিজয় ছিনিয়ে নিলেও রাজনৈতিক লাভ হতো বিএনপির। তেমন নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রচুর বিতর্ক হতো। সাধারণ মানুষের এক ধরনের সমর্থন চলে আসত বিএনপির পক্ষে, যা রাজনীতির মাঠে বিএনপিকে শক্তিশালী অবস্থানে এনে দিত।

কিন্তু কট্টরপন্থীদের ক্ষমতায় যাওয়ার অস্থিরতা বিএনপির বড় ক্ষতি করে দিল। নির্বাচন ঠেকানোর জন্য বিএনপির নাম ভাঙিয়ে জামায়াত-শিবির সাধারণ নিরপরাধ মানুষকে বোমায় ঝলসে দিয়ে, জীবন ছিনিয়ে নিয়ে, নানা নাশকতা করে দলটিকে গণ-আস্থা থেকে অনেক দূরে ঠেলে দিল। অরাজকতা করে সরকারের পতন ঘটাতে যে ধরনের সাংগঠনিক শক্তি দরকার ছিল, তার প্রচণ্ড অভাব ছিল বিএনপির মধ্যে। অন্যদিকে সরকার সমঝোতায় না গিয়ে তার সব শক্তি নিয়ে বিএনপির আন্দোলন দমনে সক্রিয় থাকে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য ছিল অনেক বেশি। যেহেতু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এ দেশের রাজনীতির ক্ষমতাধর কোনো পক্ষের ভেতর গণতন্ত্র চর্চার প্রতি নিষ্ঠা নেই, তাই মানুষের সহজাত রিপু প্রতিশোধপরায়ণতা জায়গা করে নেয়। নিয়মতান্ত্রিক পথে হাঁটার পক্ষে মনোবল এসব পক্ষের থাকে না। তা ছাড়া জামায়াত ও বিএনপির প্রতি আওয়ামী লীগের এবং দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগ তো রয়েছেই। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ না হয় ছেড়েই দিলাম। গ্রেনেড হামলার কথা বাদ দেব কেমন করে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, দেশবাসীর বড় অংশই, আমার ধারণা মতে বিশ্বাস করে, শেখ হাসিনাকে হত্যার একটি বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। সব শেষে ৫ জানুয়ারি ২০১৪-এর নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াতের বীভৎস নাশকতা প্রভৃতির পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপিকে দলীয়ভাবে দুর্বল করে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারপক্ষের থাকতেই পারে। আর এই সত্যটি সামান্য দূরদর্শিতা প্রয়োগ করে বিএনপি নেতৃত্বের বিবেচনায় রাখা উচিত ছিল।

কিন্তু জামায়াতের প্ররোচনায় ও প্রবাসী নেতার বিশেষ তাড়নায় আন্দোলনের নামে অবিবেচনাপ্রসূত হঠকারী সিদ্ধান্ত আরেকবার চাপিয়ে দিল বিএনপি। আওয়ামী লীগ সরকারপক্ষ এত দিনে বিএনপির ক্ষমতার উৎস শনাক্ত করে ফেলেছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং সরকারি দমননীতির মধ্য দিয়ে জামায়াতকে অনেকটা কবজা করে ফেলে। অন্য শক্তি বিএনপির বিপুল কর্মী, সমর্থক ও নেতা। অরাজকতার রাজনীতি করে বিএনপি বল এরই মধ্যে সরকারের কোর্টে দিয়ে দিয়েছিল। তাই সরকারি শক্তির কবলে পড়ে ছত্রখান হয়ে গেল বিএনপির মাঠপর্যায়ের শক্তি। এর মধ্যে বিএনপি স্থান-কাল-পাত্র বিবেচনা না করেই লাগাতার অবরোধ-হরতাল কর্মসূচির মতো অত্যন্ত স্পর্শকাতর কর্মসূচি দিয়ে ফেলল। এই ধারার কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য তুমুল অরাজকতা সৃষ্টি করে সরকারের সব শক্তির উৎস অকার্যকর করে দেওয়া। আর এভাবেই সরকারের পতন ঘটানো। এ জন্য চাই বিপুল কর্মী-সমর্থকের মাঠ দখল করে ফেলা। চোরাগোপ্তা হামলা করে মানুষ পুড়িয়ে, সম্পদ ধ্বংস করে এর থেকে লক্ষ্য অর্জিত হয় না; বরং সাধারণ মানুষের সহানুভূতির জায়গা থেকে সরে আসা হয়। তা ছাড়া দীর্ঘ কালক্ষেপণে এ ধরনের হিংসাত্মক আন্দোলন থেকে ফল পাওয়া যায় না। ফল পেতে হলে অল্প কদিনেই দেশ অচল করে দিতে হয়। সরকারযন্ত্রকে অকার্যকর ও অসহায় করে ফেলতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, মাঠে কর্মী-সমর্থক ও নেতাদের অভাবে বিএনপি একা হয়ে গেল। ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার হয়েও বিএনপি গণবিরোধী কর্মসূচি চালিয়েই যেতে লাগল। এভাবে দিন দিন বিএনপির আন্দোলন পরিণত হয়ে গেল আত্মঘাতী আন্দোলনে।

বিএনপি নেতৃত্ব একসময় বাস্তবতার উঠোনে ঠিকই দাঁড়াল; কিন্তু তখন খুব অসহায় অবস্থা। নিজের তৈরি অচলায়তন থেকে বেরোনোর পথ পাচ্ছিল না। এমন প্রেক্ষাপটেই সরকারপক্ষ নিজেদের ইচ্ছাপূরণের পথ পেয়ে দ্বিতীয় লভ্যাংশ আদায়ের জন্য সিটি করপোরেশনের নির্বাচন দিয়ে দিল। তবু ভালো, খালেদা জিয়া কট্টরপন্থীদের বলয় ভেঙে নির্বাচনে দলকে যুক্ত করলেন।

শেষ বেলায় এসে তো এই বাস্তবতা আড়াল করার কারণ নেই যে দল পুনর্গঠন ছাড়া বিএনপির এখন আর এক পা-ও এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই জয়-পরাজয়ের কথা না ভেবে নিয়মতান্ত্রিকতায় ফিরে আসার জন্য নির্বাচনে থাকা উচিত ছিল। অতি অসময়ে নির্বাচন থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে বিএনপি আরেকবার ভুল করল। হতাশ করল কর্মী-সমর্থকদের। অতি অপব্যবহারে এরই মধ্যে হরতাল অকার্যকর করে দিয়ে বিএনপি জাতির জন্য একটি মহৎ কাজ করে দিয়েছে। যখন খোদ খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার প্রতিবাদে হরতাল ডেকেও মাঠে-ময়দানে বিএনপির কোনো কর্মী, সমর্থক, নেতা খুঁজে পাওয়া গেল না, তখনই সম্ভবত কঠিন বাস্তবতা বিএনপি নেত্রীর সামনে দাঁড়িয়েছিল।

সাঁঝবেলায় এসে হলেও এই বাস্তবতায় বিএনপি নেতৃত্ব মাটির উঠোনে নামতে পেরেছে। দল পুনর্গঠনের কর্মসূচি নিয়ে পথে নামতে চাচ্ছেন খালেদা জিয়া। এ দেশের রাজনীতির জন্য এটা বড় সুসংবাদ। অগণতান্ত্রিক অসুস্থ পরিবেশে বিএনপির মতো দলের দুর্বল অবস্থান দেশের জন্য অশনিসংকেত। দেশ, জনগণ ও গণতন্ত্রের স্বার্থেই আমরা বিএনপির সাফল্য কামনা করি। কামনা করি, আর কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত বিএনপিকে বিভ্রান্ত করবে না। এ কে এম শাহনাওয়াজ স্যারের লেখা থেকে, দৈনিক কালেরকণ্ঠ ১২ মে ২০১৫

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৫২

চাঁদগাজী বলেছেন:



ম্যাডাম লাল ঘরের ফ্রি ভাত খাবে শীঘ্রই।

২| ১২ ই মে, ২০১৫ সকাল ১০:২৫

তাপদহন বলেছেন: বিএনপির 'কঠোর আন্দোলন' কেবল খালেদা জিয়ার মুখেই। বাস্তবে এর কন অস্তিত্ব নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.