নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপির মিথ্যাচার

১৪ ই মে, ২০১৫ সকাল ৮:৫৯

১২ মে(২০১৫) বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির মিথ্যাচারিতার চূড়ান্ত পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে সালাহউদ্দিন আহমেদের বেঁচে থাকার সন্ধান পাওয়ার মধ্য দিয়ে। সংবাদ সূত্র থেকে জানা গেছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি মানসিক হাসপাতালে আছেন দুই মাসের বেশি সময় ধরে নিখোঁজ থাকা বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ। এক সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ এই তথ্য জানিয়েছেন। সকালে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মেঘালয় ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে ফোন দিয়ে জানায়, সালাহউদ্দিন তাঁদের হাসপাতালে আছেন। পরে সালাহউদ্দিন টেলিফোনে স্ত্রীকে বলেন, আল্লাহর রহমতে তিনি বেঁচে আছেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ১১ মে মেঘালয়ের গলফ গ্রিন এলাকায় ঘোরাফেরার সময় সালাহউদ্দিনকে পুলিশ আটক করে। প্রথমে তাঁর কথা শুনে পুলিশের মনে হয়েছে, তিনি অপ্রকৃতিস্থ। এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ বলে চিকিৎসকরা জানান। সালাহউদ্দিন চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, তাঁর হার্টের সমস্যা আছে। তাঁকে হার্টের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনার পর পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক বলেছেন, সালাহউদ্দিনের সাথে তার স্ত্রী হাসিনা আহেমেদের কথপোকথনের মাধ্যমে এটা পরিস্কার যে বিএনপির এই নেতাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অপহরণ করেনি। নিখোঁজ হবার পর থেকেই তার সন্ধান করছিল পুলিশ। বিএনপির এই নেতার বিরুদ্ধে নাশকতার কয়েকটি মামলা আছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেছে আদালত। অন্যদিকে হরতাল-অবরোধ ডেকে বিএনপি নেতাদের পালিয়ে থেকে বিবৃতি পাঠানোর দিকে ইঙ্গিত করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ১২ মে বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের রাজনীতি প্রকাশ্য। অন্তর্ধানে থেকে রাজনীতি হয় না। অন্তরালের রাজনীতি করলে অন্তর্ধানে যেতে হয়। আর বিপদ তখনই আসে।’
এই ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত হলো গত ১০ মার্চ রাতে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩-বি নম্বর সড়কের একটি বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে ঢুকে সালাহউদ্দিন আহমদকে যারা ধরে নিয়ে যায় তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নয়। অথচ ঘটনার শুরু থেকে পরিবার সালাহউদ্দিনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেই দায়ী করে আসছে। এ সূত্রে এতো দিন সবাই বলেছিল সরকার গুম করেছে। এখন শোনা যাচ্ছে নতুন কথা। এটাকে অনেকেই বিএনপির রাজনৈতিক কৌতুক হিসেবে অভিহিত করেছে। দাবি উঠেছে এরকম নাটক করার জন্য এখন দেশে এনে তাঁর বিচার করতে হবে। বিএনপির সব অপকৌশল যে ব্যর্থ হয়েছে এটা পরিস্কার। আসলে এটা বিএনপি ও খালেদা জিয়ার আন্দোলনের নুতন কৌশল ছিল। সালাউদ্দিনকে গুম হয়ে যেতে উৎসাহ দেয়া হয়েছিল। গোয়েন্দা সূত্র থেকে জানা গেছে একারণে ১২ মে সালাহউদ্দিনের স্ত্রীর সঙ্গে শিমুল বিশ্বাসের ঝগড়া হয়েছে। মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলায় নাকি বিএনপির ক্ষতি হয়েছে। এভাবে কেউ অন্তর্ধানে থেকে সরকারকে দোষারোপ করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইলে সরকারের কি করার আছে? বরং এবার সালাউদ্দিন এবং তার পরিবারকে হরতাল, পেট্রোলবোমা আর মানুষ হত্যাসহ যাবতীয় সন্ত্রাসী কর্মকা-ের জবাবদিহিতায় আনা প্রয়োজন। আশ্চর্য হচ্ছে ১০ মে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, উনি নাকি র্যারবের কাছে আছেন। সেটাও দায়িত্বপূর্ণ বক্তব্য ছিল না। আর উনি নিজেই লুকিয়ে থেকে দেশের সবাইকে উদ্বিগ্নতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন সেটাও একটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিএনপি’র অন্য নেতা ইলিয়াস আলী, কাউন্সিলর আলম এরাও সম্ভবত একই ধরনের কাজ করেছেন। এখন কেবল সালাউদ্দিন মানসিক হাসপাতালে নন, গোটা বিএনপিই মানসিক হাসপাতালে। অর্থাৎ আস্তে আস্তে বিএনপির সব নেতাদেরই এরকম রাজনীতির মাঠ ছেড়ে মানসিক হাসপাতালে আশ্রয় নিতে হবে। কতটা মানসিক বিকৃতি ঘটলে তাদের নেত্রী নিজেই নিজেকে অবরুদ্ধ করে রাখেন! আর তাদের ডাকা অবরোধ-হরতালের মধ্যে রাস্তাঘাটে মানুষ আর যানবাহনের পুরোদস্তুর জ্যাম থাকে! সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে পোলিং এজেন্টের অভাবে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে মাঝপথে নির্বাচন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। এখন শোনা যাচ্ছে সাবেক ভিসি এমাজউদ্দিন নাকি আবার নতুন নির্বাচনের ফর্মুলা বানাচ্ছেন।
২.
সালাহউদ্দিন কিংবা ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধান প্রসঙ্গে কেবল নয় এর আগে অনেক ঘটনায় বিএনপির ভুরি ভুরি মিথ্যাচারের দৃষ্টান্ত রয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর ভারতের বিজেপি পার্টির সভাপতি অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে কোনো ফোন করেননি এবং কংগ্রেস ম্যানদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করেছে লন্ডনস্থ বিএনপির উপদেষ্টারা। এই দুটি ঘটনার মিথ্যাচারের সঙ্গে আরো যুক্ত হয়েছিল সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া এবং খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ। উল্লেখ্য, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে স্থান না দেওয়ার ভিত্তিহীন অভিযোগে অপপ্রচার এবং ২০ দলীয় জোট কর্তৃক লাগাতার নাশকতা চলেছে সারাদেশে। গত ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখ থেকে তিন মাস যাবৎ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। সেসময় ২০ দলীয় জোটের মূল অভিযোগ ছিল, সরকার ২০ দলীয় জোটকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর পুরো একবছর ২০ দলীয় জোট সভা-সমাবেশসহ সকল রাজনৈতিক কর্মকা- অবাধে পরিচালনা করেছে। কোন কর্মসূচিতেই সরকার বাঁধার সৃষ্টি করেনি। ২০ দলীয় জোটের বড় দল হিসেবে বছর জুড়ে শুধুমাত্র বিএনপি ও এর অঙ্গসংঠন এককভাবে শতাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি (গড়ে প্রতি মাসে ৯টি) পালন করেছে। জামায়াতসহ অন্যান্য শরিকদলও প্রচুর রাজনৈতিক কর্মকা- চালায়। রাজপথ ও মাঠে-ঘাটে এসব কর্মসূচির পাশাপাশি ছিল প্রায় প্রতিদিন এবং প্রতিনিয়ত সংবাদ সম্মেলন যা গণমাধ্যমের সহায়তায় সরাসরি সম্প্রচারসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা হয়েছে। কোনো ক্ষেত্রেই সরকার কর্তৃক কোন বাঁধা সৃষ্টি করা হয়নি। শুধুমাত্র জনগণের জান-মালের তথা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিবেচনায় অতিসম্প্রতি (২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ এবং ০৫ জানুয়ারি ২০১৫) ২টি ক্ষেত্রে সরকার আইনগতভাবে (১৪৪ ধারার মাধ্যমে) সকল দলের সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করে যা আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সকলের জন্য প্রযোজ্য হয়। তাই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে ংঢ়ধপব দেওয়া হচ্ছে না বলে মিথ্যা অজুহাত তুলে বিএনপি-জামায়াতের এহেন নাশকতা বা জঙ্গি স্টাইল কর্মকা- কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাদেরকে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না দেয়ার (ংঢ়ধপব) অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আর জনগণের বিরুদ্ধে নিজ ও দলীয় স্বার্থে পরিচালিত বেগম জিয়ার সেইসব নাশকতা ও জঙ্গি স্টাইলের অবরোধ কর্মসূচিতে সাধারণ জনগণের সমর্থন প্রতিফলিত হয়নি। তাই জনজীবনকে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য তারা বেপরোয়া হয়ে জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ পুড়িয়ে মারা, রেল লাইন উপড়ে ফেলা, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা ইত্যাদি নিমর্মতা চালিয়েছে।
৩.
জাতীয় সংসদের বাইরে থাকা বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁর দলের অন্যান্য মুখপাত্রদের শিক্ষা ও চিন্তায় নৈতিকতা বোধের যে চরম অভাব রয়েছে তার প্রমাণ আগেই পাওয়া গেছে। এর আগে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বর্তমান সরকার সম্পর্কে অবাধ মিথ্যাচারিতা করেছেন তাঁরা। মিথ্যা কথা বলা যে প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থে পাপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে সেই নৈতিক শিক্ষা তাঁরা ভুলে গেছেন। ১৬ মে(২০১৪) ভারতের লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ জোটের বিপুল বিজয়ে নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিনন্দন জানানোর আগেই খালেদা জিয়া তাঁকে অভিনন্দন জানান। বিজেপি’র নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর ব্যাপক উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে। বিএনপির নেতারা মনে করছেন সোনিয়া গান্ধীর কংগ্রেস যেভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগকে ঢালাওভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছিল বিজেপি সেভাবে সমর্থন দেবে না। বিএনপির একটা বাড়তি পাওনা হচ্ছে, বিজেপির নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অনেক ভাল। কিন্তু মোদিকে কেন্দ্র করে বিএনপির মধ্যে স্বস্তির ভাব লক্ষ্য করা গেলেও তা ছিল মিথ্যাচারিতায় পূর্ণ। হতে পারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগে তাঁরা অভিনন্দন জানিয়েছেন, তা থেকে বিএনপির কী করে মনে হলো ৫ জানুয়ারির(২০১৪) নির্বাচনে ভারতের কংগ্রেস যেভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে সেটি বিজেপি করবে না। এই বিশ্বাস থেকে বিএনপি কেন বলা শুরু করল মোদি’র সঙ্গে খালেদা জিয়ার ফোনালাপ হয়েছে। পরবর্তীতে ২৬ মে মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাঁকে নিমন্ত্রণ জানান হয়েছে ইত্যাদি মিথ্যাচার।
অন্যদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ বলেছিলেন, ‘গত ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে কংগ্রেস যেভাবে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েছে বিজেপি এমনটা করবে না। কারণ বিজেপি গণতান্ত্রিক ধারায় নির্বাচন করে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। তাই তারা বাংলাদেশেও যেন সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় সেটাই চাইবে। একারণে বিএনপি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে।’ তাঁরা আরো মনে করেছেন আওয়ামী লীগ বিজেপির কাছ থেকে গণতান্ত্রিক নিয়মের বাইরে ঢালাও কোনো সমর্থন আদায় করতে পারবে না। বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেছিলেন, ‘ভারত বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দল। সেখানে গণতন্ত্রের বিজয় হলে বিএনপি উচ্ছ্বসিত হতেই পারে। কারণ বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। আমাদের মতে, তথাকথিত ‘‘গণতান্ত্রিক দল বিএনপি’’ মিথ্যাচারে পটুতা দেখিয়েছে ভারতের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। গুম, খুনের অবান্তর তথ্য দিয়ে। উল্লেখ্য, ২৬ মে’র অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রধানমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদি এবং সেই অনুষ্ঠানে আমাদের মাননীয় স্পিকার উপস্থিত ছিলেন এবং বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সম্পর্কেও ইতিবাচক মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন মোদির পার্ষদরা। এমনকি ৬ মে(২০১৫) ভারতের রাজ্যসভা এবং ৮ মে লোকসভায় সীমান্ত চুক্তি পাস হওয়ায় শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বের অনিবার্যতা প্রতিপন্ন হয়েছে। যদিও খালেদা জিয়া সেই কৃতিত্ব মোদি সরকারকে দিয়েছেন। কিন্তু সকলেই জানেন শেখ হাসিনা সরকারের অবিরাম চেষ্টার ফল হলো ছিটমহল সমস্যার সমাধান।
বিএনপি’র মিথ্যাচার সম্পর্কে ২৮ মে(২০১৪) প্রকাশিত এক কলামে বিখ্যাত লেখক আবদুল গাফফার চৌধুরী লিখেছেন, ‘দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে নতজানু কুর্নিশ জানিয়ে তাঁর কৃপা দৃষ্টিলাভের জন্য বাংলাদেশের বিএনপির করুণ প্রচেষ্টা রীতিমতো মানুষের মনে হাস্যরসের সৃষ্টি করছে। বিএনপি নেতানেত্রীরা আহ্লাদে আটখানা হয়ে এমন ভাব দেখাতে শুরু করেছিলেন যেন মোদির এই জয় তাদেরই জয়। মোদি এখন সিংহাসনে বসেই বাংলাদেশে হাসিনা সরকারকে উৎখাত করে একেবারে বিএনপির হাতে ধরে ঢাকার মসনদে বসিয়ে দেবে। এই আশায় কথায় কথায় ভারতবিদ্বেষ প্রচার যে বিএনপির একমাত্র রাজনৈতিক মূলধন, সেই বিএনপি হঠাৎ ভারতপ্রেমে গদগদ হয়ে উঠেছে।’ আকস্মিক ভারতপ্রেমে উচ্ছ্বসিত বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা মোদির প্রধানমন্ত্রীত্বের সূত্রে শেখ হাসিনা বিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সচেষ্ট হয়েছেন। শুরুতেই প্রচারণা চালানো হলো, মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে বেগম খালেদা জিয়াকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সম্ভবত দলের এই প্রচারণায় বিশ্বাস করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু দিল্লির আমন্ত্রণ আর আসেনি। তারপর প্রচার করা হয়েছিল, তারেক রহমান লন্ডন থেকে দিল্লিতে মোদিকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠিয়েছে। মোদি তাতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে তাকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই খবরটিও বানানো, মিথ্যা খবর। এভাবে ভারতের বিজেপি সরকারের কাছে গলবস্ত্র হয়ে তাদের সমর্থনে বিএনপি বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন করতে চায় যা দলটির লজ্জাকর নৈতিক অধঃপতনেরই প্রমাণ। তবে বিশিষ্টজনরা বলছেন, ‘বিএনপির এই নতুন গজিয়ে ওঠা ভারত তথা মোদিপ্রেম বেশিদিন টিকবে তা মনে হয় না।’ ক্ষমতায় বসার সূচনাতেই মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা, টিপাইমুখ বাঁধ, স্থল-সীমান্ত সমস্যা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কারণ তাঁরা ঠিক জানেন, বাংলাদেশে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারতে ‘জেহাদিষ্টদের’ সন্ত্রাস বাড়বে এবং পূর্বাঞ্চলেও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহিংস তৎপরতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। এজন্য মোদি সরকারকে সহায়তা যোগাচ্ছে একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার। সীমান্তে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা দমনের স্বার্থে শেখ হাসিনা সরকারের যে সহযোগিতা তা নরেন্দ্র মোদি এড়িয়ে যেতে পারছেন না। মডারেট মুসলমানদের প্রতি নরেন্দ্র মোদি হয়েছেন বন্ধুবৎসল। উগ্রপন্থি মুসলমানদের প্রতি তার মনোভাব হয়েছে কঠোর। এছাড়া নরেন্দ্র মোদির কাছে তার গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টেই উঠে এসেছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা কাদের সময়ে বাংলাদেশের মাটিতে মাথাচাড়া দিয়েছিল। কাদের সময়ে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে কঠোর ভূমিকা নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বাবরি মসজিদের জায়গায় মোদি সরকার নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রামমন্দির নির্মাণ শুরু করলে তার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি ও তার অনুসারীদের কী করার থাকবে? পুশব্যাকের নামে বাংলাদেশে পুশইন শুরু হলে দুবারের ক্ষমতায় থাকা বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি’র ভূমিকা কী হবে? তবে এটা নিশ্চিত যে মোদির সরকার বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের জন্য নিরাপদ সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার দিকেই বন্ধুত্বের উষ্ণ হাত বাড়িয়েছেন। প্রতিবেশী দেশে তিনি গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক শাসন চাইতে পারেন কিন্তু কে ক্ষমতায় এলো, না এলো তা দেখতে যাচ্ছেন না। এজন্য বিএনপি’র মিথ্যাচার আর খালেদা জিয়ার অপলাপ ও হঠকারিতা মূল্যহীন।
৪.
২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদের অধিবেশনে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘জাতির দুর্ভাগ্য হচ্ছে সরকারের কোনো উন্নয়নই আমাদের বিরোধীদলীয় নেত্রী চোখে দেখতে পাচ্ছেন না। আবার জনসভায় গিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। উনি যদি কোনো উন্নয়নই দেখতে না পান তাহলে উনাকে বলবো চোখের ডাক্তারের কাছে যান।’ প্রধানমন্ত্রী সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরে বলেছেন, ‘বিএনপি ১৯৯১-৯৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে আমরা ক্ষমতায় এসে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ালাম বিএনপি ২০০১ সালে এসে তা কমালো। এবার এসে আবার আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছি উনি (বেগম জিয়া) কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। প্রতিনিয়তই উনি জনসভায় বক্তৃতা দেন সব সময়ই জনগণের কাছে অসত্য তথ্য তুলে ধরেন। কেউ যদি এ ধরনের অসত্য তথ্য তুলে ধরে তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। কিন্তু আমাদের উন্নয়নের বিষয়টি দেশের মানুষ জানে। কোথায় ৩ হাজার ২শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ছিল (বিএনপির আমলে) সেখানে এখন মানুষ ৬ হাজার ৬৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে, শিল্প কলকারাখানা গড়ে উঠছে, বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে অর্থনীতি এখন অত্যন্ত শক্তিশালী, বাজেট আমরা তিনগুণ বৃদ্ধি করতে পেরেছি। মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৪ ডলারে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের মানুষ অন্তত এইটুকু বলতে পারে যে, তারা দুই বেলা খেয়ে পরে ভালো আছে। গ্রাম শহর প্রত্যেক জায়গায় মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে। কাজেই উনি যদি কোনো কিছুই চোখে না দেখেন তাহলে আমার বলার কিছু নেই।’
অর্থাৎ খালেদা জিয়া সত্য নয় মিথ্যার বেসাতি করছেন। ধর্মীয় শিক্ষায় গীবতকে গর্হিত কাজ বলে মনে করা হয়। যদিও তিনি ও তার সহযোগী জোট জামায়াত ইসলাম মুখে কোরআনের কথা বলেন এবং কোরআনের শাসন কায়েমের জন্য লড়াইকে স্বীকৃতি দেন কিন্তু রাজনৈতিক চাতুরিপনায় তিনি নিজেকে সিদ্ধ করে তুলতে চান মিথ্যা কথা বলে। বিএনপি-জামায়াত মিথ্যাচার করে স্ববিরোধী চরিত্রের প্রকাশ ঘটায়। তারা গরিব জনগণের সন্তানদের গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহারের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য মায়া-কান্না করে। বাস্তবে তাদের সন্তানরা কেউ মাদ্রাসায় পড়েনি কিংবা পড়ে না। হেফাজত কিংবা জামায়াত-শিবির কোরআনের কথা বলে; তারা নারী শাসনের বিরোধিতা করে কিন্তু খালেদা জিয়ার পায়ের নিচে বসে থাকে। এরকম স্ববিরোধী মানুষের কাছে মিথ্যা ছাড়া আর কি-ই বা আশা করা যায়? মূলত খালেদা জিয়া মিথ্যার বেসাতি চালিয়েছেন অনেকদিন ধরেই। সাভারের রানা-প্লাজার ট্র্যাজেডির সমালোচনা করেছিলেন অসত্য কথা বলে। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, সময়মতো যদি উদ্ধার কাজ চালানো যেতো, অনেক মানুষকে বাঁচানো যেতো। সরকার নিজেরাও কাজ করেনি, অন্যদেরও কাজ করতে দেয়নি। এখনো অনেক মানুষ নিখোঁজ। সরকার সঠিক তথ্য পর্যন্ত দেয়নি। সে সময় সাভারে ভবন ধস নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের বক্তব্যের সমালোচনা করে তাকে ‘রাজাকার’ বলেও অভিহিত করেছিলেন খালেদা জিয়া। বলেছিলেন ‘প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন।’ আসলে দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের সেই আন্তরিক প্রচেষ্টা দেখে ঈর্ষান্বিত ছিলেন তিনি ও তাঁর দল। রানা-প্লাজা ধসে বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের প্রাণহানির কারণে দেশের তৈরি পোশাকশিল্প ধ্বংস হতে বসেছে বলে খালেদা জিয়ার মন্তব্যও মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। কারণ পোশাক শিল্প তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।
এনপি’র নেতা এর আগে বলেছিলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে আমরা মিছিল করতে পারি না, মিটিং করতে পারি না। এর নাম কি গণতন্ত্র?’ এটা মিথ্যা অভিযোগ ছিল। বিএনপি-জামায়াত রোড মার্চ করেছে, অকারণে মিছিল-মিটিং তো নিত্যদিনের কাজ ছিল তাদের। বর্তমানে ২০ দলীয় জোটকে ঝঢ়ধপব না দেয়ার অভিযোগও সর্বৈব মিথ্যা। গত এক বছরে(২০১৪) বেগম খালেদা জিয়া ঢাকাসহ সারাদেশে ১২টি মহাসমাবেশ এবং পেশাজীবী ও সহযোগী সংগঠনের ৪টি বৃহৎ সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের কঠোর সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যা ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া সরাসরি সম্প্রচার করেছে এবং সারাদেশবাসী তা অবলোকন করেছে। গত একবছরে বিএনপি ৪১টি বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে। এ সকল কর্মসূচিতে সরকারের কঠোর সমালোচনা করা হলেও, কোথাও কোন কর্মসূচিতে বাঁধা দেয়া হয়নি। বর্ণিত ৪১টি কর্মসূচির বাইরে বিএনপি দলীয় নেতৃবৃন্দ নামসর্বস্ব বিভিন্ন পার্টির ব্যানারে অনুষ্ঠিত সরকার বিরোধী কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে প্রতিদিনই বক্তব্য রেখেছেন। এ সকল কর্মসূচিতেও সরকারের পক্ষ হতে কোনরকম বাঁধার সৃষ্টি করা হয়নি। গত একবছরে বিএনপি’র সহযোগী সংগঠনগুলো প্রায় ৪০টি বিভিন্ন ধরণের সভা-সমাবেশ করেছে। এ সকল সভা-সমাবেশের বেশ কয়েকটিতে বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত থেকেছেন এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এ সকল কর্মসূচির অনেকগুলোই সরাসরি সম্প্রচার করেছে, যা সারাদেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। সহযোগী সংগঠনের এ সকল কর্মসূচির কোনটিতেই সরকার বাঁধার সৃষ্টি করেনি।
২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত জনগণের কোনো দাবি নিয়ে সংসদের ভেতর-বাইরে কোথাও কোনো কথা বলেন নি বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ ও খালেদা জিয়া। গত আমলে সংসদে অনুপস্থিত থেকে বিরোধী দলের সাংসদরা সরকারের বেতন ভাতা ভোগ করেছেন; বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন। সংসদে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না- অভিযোগ করলেও জনগণের কোনো ন্যায্য দাবি নিয়ে সংসদের বাইরে কথা বলতে দেখা যায়নি তাদের। সেই সময় অনলাইনের বিভিন্ন ব্লগে বিচিত্র মন্তব্যের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় মন্তব্য হচ্ছে- ‘বিএনপির ফালতু কথায় জনগণ বিরক্ত।’ এজন্য দেশের মধ্যে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে অর্থ ব্যয়ের মহোৎসব ও নাশকতার ষড়যন্ত্র এবং তাদের তৈরি ভয়াবহ দুর্ভোগ থেকে রক্ষা পেতে চায় সাধারণ মানুষ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি সম্প্রসারণের মাধ্যমে গত ছয় বছরে দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশ কমিয়ে আনা হয়েছে এবং ৮০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০২১ সালে এদেশবাসী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরমুক্ত মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন করবে। এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য বিএনপির মতো দলগুলোর রাজনৈতিক মিথ্যাচারিতা দূর করতে হবে দেশ থেকে। আর এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার প্রক্রিয়াকে পৃথিবীর সকলে গ্রহণ করেছে বলেই বিএনপি’কে সুস্থ ধারার রাজনীতি করার আহবান জানাচ্ছি আমরা। খালেদা জিয়ার অপলাপ তথা মিথ্যাচারিতা ও ভবিষ্যৎ শাসক হিসেবে তাঁর ব্যর্থতা সম্পর্কে একজন পাঠক অনলাইনে লিখেছেন-
‘‘খালেদা জিয়া যাহা বলে, দেখে দেখেও তা ভুলে পরেন?
যোগ্যতা খালেদার স্বশিক্ষিত, কথা-বার্তায় নয় উন্নত!
জন্ম তারিখ তার ঠিক নাই, যা বলে তা চালিয়ে যায়।
এমন নেতা দেশ শাসনে, ব্যর্থতা তার সবখানে।’’
সালাহউদ্দিন আহমেদের সন্ধান পাওয়ার ঘটনা ব্যর্থ বিএনপির রাজনৈতিক হঠকারিতার অন্যতম দৃষ্টান্ত; আর মিথ্যাবাদী বিএনপি’র করুণ পরিণতির ইঙ্গিত। মনে রাখতে হবে বিএনপি’র মিথ্যাচার ও জঙ্গিপনার পরও এদেশে নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ড. মিল্টন বিশ্বাসের লেখা থেকে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.