![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর ঘাতক সংগঠন আলবদরের প্রধান ও বর্তমানে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিমকোর্ট। এর ফলে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতেই হচ্ছে বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী মুজাহিদকে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সাবেক কোনো মন্ত্রীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালত থেকে এটাই প্রথম ফাঁসির রায়। জনাকীর্ণ বিচারকক্ষে আপিল বিভাগের চার সদস্যের একটি নির্দিষ্ট বেঞ্চের পক্ষে গতকাল মুজাহিদের ফাঁসির দণ্ড বহাল রেখে এ রায় ঘোষণা করেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় এই প্রথমবারের মতো ঐকমত্যের ভিত্তিতে আপিলের রায় ঘোষণা করেন সর্বোচ্চ আদালত। আসামির আপিল আংশিক মঞ্জুর করে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যার ষষ্ঠ অভিযোগে মুজাহিদকে দেওয়া বিচারিক আদালতের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত পাঁচটির মধ্যে প্রথম অভিযোগে খালাস পেয়েছেন মুজাহিদ। তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে বিচারিক এই আদালতের দেওয়া দণ্ড বহাল রেখেছেন সর্বোচ্চ আদালত। আর ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ড হলেও দণ্ড কমিয়ে সপ্তম অভিযোগে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে আসামিকে। মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় এটি চতুর্থ আপিলের রায়।
এর আগে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই অপহরণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ ১৯৭১ সালে ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের প্রাদেশিক সভাপতি।প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নির্দিষ্ট বেঞ্চের চার সদস্য এজলাসে আসন গ্রহণ করেন সকাল ৯টার দিকে। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এবং আসামিপক্ষে খন্দকার মাহবুব হোসেন, এস এম শাহজাহান ও শিশির মুহাম্মদ মুনির উপস্থিত ছিলেন আদালতে। ৯টা ৬ মিনিটে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন আদালত।
মুজাহিদের উসকানিতেই বুদ্ধিজীবী হত্যা : অ্যাটর্নি জেনারেল : রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, ‘আলবদর সদস্যরা যেসব বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছেন, সেসব বুদ্ধিজীবীকে আর কখনই ফিরে পাব না, এক শতাব্দীতে এ রকম বুদ্ধিজীবী তৈরি হবে না। তবে এটুকু সান্ত্বনা যে বিচার পাওয়া গেল।’ গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। মাহবুবে আলম বলেন, বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ড পরিকল্পনা ও নীলনকশার ফলে হয়েছে। মুজাহিদের উসকানিমূলক বক্তব্যের ফলেই এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আর নেই যেখানে নিজেরা নিজ দেশের বুদ্ধিজীবীদের নিধন করেছেন। হিটলারের হিংস তা এবং আলবদরের হিংস তার মধ্যে আমি কোনো তফাত দেখি না।’
রিভিউ আবেদন করব : খন্দকার মাহবুব : আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এ মামলায় মুজাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ছিল না। রায়ের বিরুদ্ধে আমরা রিভিউ আবেদন করব।’ রায়ের পর সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, যে অভিযোগে তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে, সে অভিযোগের পক্ষে ট্রাইব্যুনালে যে সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুর্বল এবং বিশ্বাসযোগ্য নয়।’ মুজাহিদের ছেলে আলী আহমদ মাবরুর বলেন, ‘এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। যেহেতু আমরা ট্রাইব্যুনালে জাস্টিস পাইনি, তাই আপিল বিভাগে এসেছিলাম। আশা করেছিলাম ন্যায়বিচার পাব। এখানে যে রায় হলো, তাতে আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি।’
ঐকমত্যের রায় : বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মুজাহিদ। আপিল নম্বর-১০৩/২০১৩। আপিল বিভাগে মামলাটি পরিচালিত হয় আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ বনাম দ্য চিফ প্রসিকিউটর : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, ঢাকা, বাংলাদেশ নামে। সংক্ষিপ্ত রায়ে দেখা যায়, এ মামলার রায় হয়েছে ঐকমত্যের ভিত্তিতে। এর আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর আপিলের রায় ঘোষণা করেছেন আপিল বিভাগ।
প্রমাণিত চার অভিযোগ : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের বিচার হয় সাত অভিযোগে। এর মধ্যে বিচারিক আদালতে প্রমাণিত প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড, তৃতীয় অভিযোগে পাঁচ বছর ও পঞ্চম অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে। প্রমাণিত না হওয়ায় দ্বিতীয় ও চতুর্থ অভিযোগ থেকে খালাস পান মুজাহিদ। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন তিনি। আপিলে প্রথম অভিযোগে খালাস পেয়েছেন তিনি। তবে প্রমাণিত হয়েছে তৃতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম অভিযোগ। অন্য দুই অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে খালাস পাওয়ায় এর বিরুদ্ধে আপিল করেননি মুজাহিদ।
তৃতীয় অভিযোগ : একাত্তরের জুনের প্রথম সপ্তাহে ফরিদপুরের রথখোলা গ্রামের রণজিৎ নাথ ওরফে বাবুনাথকে খাবাসপুর মসজিদের কাছ থেকে ধরে পুরাতন সার্কিট হাউসে নিয়ে যায় রাজাকাররা। সেখানে উপস্থিত মুজাহিদের ইঙ্গিতে রাজাকার ও অবাঙালিরা হত্যার উদ্দেশ্যে বিহারি ক্যাম্পের পুব দিকে জনৈক আবদুর রশিদের বাড়িতে নিয়ে নির্যাতন করে তাকে। পরে পালিয়ে যান বাবুনাথ।
পঞ্চম অভিযোগ : ৩০ আগস্ট রাতে মতিউর রহমান নিজামীকে সঙ্গে নিয়ে নাখালপাড়ার পুরাতন এমপি হোস্টেলে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে যান মুজাহিদ। সেখানে আটক সুরকার আলতাফ মাহমুদ, জহির উদ্দিন জালাল, বদি, রুমি, জুয়েল ও আজাদকে গালাগাল করেন তারা। পরে সেখানে অমানবিক নির্যাতনের পর মুজাহিদ একজন ছাড়া বাকিদের হত্যা করেন তার সহযোগীদের সহযোগিতায়।
ষষ্ঠ অভিযোগ : মোহাম্মদপুরের ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (বর্তমানে শারীরিক শিক্ষা কলেজ) পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে দলীয় নেতাদের নিয়ে বাঙালি নিধনের পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করতেন মুজাহিদ। এরই ধারাবাহিকতায় ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড।
সপ্তম অভিযোগ : ১৩ মে বেলা ২ট থেকে আড়াইটার মধ্যে রাজাকার কালু বিহারি, ওহাব, জালাল ও অন্যান্যের সঙ্গে গাড়িতে করে ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার খলিলপুর বাজারে শান্তি কমিটির কার্যালয়ে যান মুজাহিদ। সেখানে সভার পর সহযোগীদের নিয়ে হিন্দু-অধ্যুষিত বাকচর গ্রামে হামলা চালান তিনি। বীরেন্দ্র সাহা, নৃপেন সিকদার, সানু সাহাসহ কয়েকজনকে হত্যা করা হয় মুজাহিদের নির্দেশে। রাজাকাররা এ সময় ধর্ষণ করে এক হিন্দু নারীকে।
এবার পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা : মুজাহিদের আপিলের সংক্ষিপ্ত রায় পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২১ দিন। এবার আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষা। পূর্ণাঙ্গ রায়ের পর আসামিপক্ষের রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি শেষে আসবে দণ্ড কার্যকরের প্রসঙ্গ। তবে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশে প্রচলিত আইনে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। কাদের মোল্লার মামলায় আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশে সময় লেগেছে ৮০ দিন। ২০১০ সালের ২৯ জুন গ্রেফতার হন মুজাহিদ। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতারের পর একই বছর ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয় তাকে।
গণজাগরণ মঞ্চ ও আওয়ামী লীগের আনন্দ মিছিল : যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল থাকায় গতকাল পৃথক আনন্দ মিছিল করেছে গণজাগরণ মঞ্চ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। রায় ঘোষণার পর সন্তোষ প্রকাশ করে শাহবাগ থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের করে গণজাগরণ মঞ্চ। মিছিলটি জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার শাহবাগ গিয়ে শেষ হয়। মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে মিছিলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। ইমরান সরকার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ফাঁসির রায় বহাল থাকায় আমরা আনন্দিত। সকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে থেকে আলাদা আলাদা মিছিল বের করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ। মিছিলকারীরা জিরো পয়েন্টের সামনে দিয়ে ঘুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে মিষ্টি বিতরণ করা হয়। বাংলাদেশ প্রতিদিন
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৩৮
সরদার হারুন বলেছেন: বিচার কার্য এখনও শেষ হয়নি ।রিভিউর পরে মতামত দেয় যেতে পােরে ।