![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
টেকসই উন্নয়নের জন্য নতুন লক্ষ্যমাত্রার দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নতুন এই লক্ষ্যমাত্রার নাম সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি)। ২০১৫ সাল থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে। আগামী সেপ্টেম্বরে শেষ হচ্ছে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) মেয়াদ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টেকসই অর্থনীতি, টেকসই সমাজ ও টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা এর মূল উদ্দেশ্য। এসডিজির আওতায় ১৭টি গোল ও ১৬৯টি লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। নির্ধারিত এসব লক্ষ্যমাত্রা সদস্য দেশগুলোকে সময়মতো বাস্তবায়নও করতে হবে। এসডিজি অর্জনের জন্য অংশীদারত্ব খুবই জরুরি। তাই নিজেদের সমৃদ্ধ তথ্যভাণ্ডার তৈরি করতে হবে। এর ভিত্তিতে উন্নত ও অনুন্নত দেশগুলো এ সংক্রান্ত বৈঠকে স্ব স্ব দাবি উত্থাপন করতে পারবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, এসডিজির লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে বেশকিছু লক্ষ্য উচ্চাভিলাষী। এর একটি হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে কোনো অতি দরিদ্রগোষ্ঠী থাকবে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থায়ী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) অর্জনে দেশি-বিদেশি অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মতে, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশসহ এশিয়ার দেশগুলো বৈদেশিক সাহায্যের নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপর নির্ভরশীল হচ্ছে। ফলে দেশগুলোয় ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগসহ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অভ্যন্তরীণ উৎস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগের মধ্য বিদেশি বিনিয়োগ আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই জায়গায় এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশ বাংলাদেশসহ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে বলেও তারা মনে করেন।
একটি সূত্র জানিয়েছে, দরিদ্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মানবসম্পদ উন্নয়নকেই মূল লক্ষ্য হিসেবে ধরে এ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
সূত্রটি আরো জানায়, উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের প্রতিশ্র“তি পূরণে যে আন্তরিক তা প্রমাণ করতে হবে। প্রতিটি দেশকে সমানভাবে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তুত করতে হবে। নতুবা এসডিজিও অপূর্ণ থেকে যাবে।
এ বিষয়ে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আসছে জুলাই মাসে ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় এসডিজি নিয়ে যে সম্মেলন হবে, সেখানে বাংলাদেশের দাবিগুলো ভালোভাবে উপস্থাপন করতে হবে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, যেটাকে এমডিজিতে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ও প্রবাসী-আয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, এসডিজিতে স্বচ্ছতা, নজরদারি ও নাগরিকদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়াতে হবে, যা এমডিজিতে তুলনামূলকভাবে কম ছিল। এসডিজিতে অর্থায়নই বড় সমস্যা। এ জন্য শুধু দাতাগোষ্ঠী বা সংগঠনের ওপর নির্ভরশীল হলে হবে না। বিভিন্ন ধরনের আর্থিক উৎসের মিশ্রণ ঘটাতে হবে। স্থানীয় ও বিশ্ব সম্প্রদায় একসঙ্গে কাজ করলে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও জানান, এসডিজি অর্জনে উন্নত দেশের শ্রমবাজার উš§ুক্ত করার সুপারিশও থাকতে হবে।
২০১২ সালের জুনে ব্রাজিলের রিওডি জেনিরোতে জাতিসংঘ আয়োজিত টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে এমডিজির ওপর ভিত্তি করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস (এসডিজি) গ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালের পর থেকে এসডিজির বাস্তবায়ন শুরু হবে।
নব্বইয়ের দশকে সবচেয়ে বড় আলোড়ন সৃষ্টি হয় সামাজিক খাতে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তা জাতিসংঘ। আন্তর্জাতিক এ সংস্থাটি সত্তরের দশক থেকেই দারিদ্র্য হ্রাসের করণীয় নিয়ে কাজ শুরু করে। নব্বইয়ের দশকে তা পূর্ণতা লাভ করে। জাতিসংঘ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সম্মেলন আয়োজন করে। সমস্যার গভীরে প্রবেশের চেষ্টা করে। একই সাথে সমাধানের পথ খুঁজে। অঞ্চলভিত্তিক সমস্যাগুলোর একটা আন্তর্জাতিক রূপ দেয়। পাশাপাশি সমাধানের সাধারণ উপায়ও চিহ্নিত করা হয়। এমনি প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘের সহস্রাব্দ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০০০ সালের সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে। সেই সম্মেলনেই ১৯৩টি দেশের সম্মতিতে আটটি সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য গৃহীত হয়েছিল।
২০১৫ সালের মধ্যে লক্ষ্যগুলো পূরণের টার্গেট নির্ধারণ করা হয়, যাতে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মর্যাদা, স্বাধীনতা ও সমঅধিকার নিশ্চিত হয়। প্রতিটি মানুষ একটা ন্যূনতম জীবনমান বজায় রাখতে পারে, যাতে মানুষ ক্ষুধা ও নির্যাতনের শিকার না হয়। বিশ্বব্যাপী সহনশীলতা ও পারস্পরিক সহানুভূতি বৃদ্ধি পায়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ই এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এ লক্ষ্য পূরণে কার কি দায়িত্ব তাও এ সম্মেলনে নির্ধারণ করা হয়।
আটটি এমডিজি হচ্ছে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল করা, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা, লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া, শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন, এইডস, ম্যালেরিয়া ও অন্যান্য মারাÍক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করা, টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি বিশ্ব অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা। প্রতিটি লক্ষ্যের সময়ভিত্তিক অর্জনের স্তর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। লক্ষ্য অর্জনের অগ্রগতি ২০০৫ সালে প্রথম পর্যবেক্ষণ করা হয়। তারপর প্রতি দুবছর পর পর অর্জনের অগ্রগতি বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
©somewhere in net ltd.