নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন বঙ্গবন্ধু সেদিন অঝোরে কেঁদেছিলেন!

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:৫৮

কাহিনিটি আমি পড়েছিলাম বহু বছর আগে। আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের আইন বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। থাকি স্যার এএফ রহমান হলে। প্রয়াত সাংবাদিক এমআর আখতার মুকুলের ‘মুজিবের রক্তলাল’ বইটি আমি কতবার যে পড়েছি, এর ইয়াত্তা নেই। ওই বইয়ের এক জায়গায় বঙ্গবন্ধুর অঝোরে কান্নার একটি কাহিনি বর্ণনা করেছেন লেখক। সময়টা ছিল ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। লাতিন আমেরিকার গণমানুষের অবিসংবাদিত নেতা ও গণপ্রজাতন্ত্রী চিলির ২৯তম প্রেসিডেন্ট স্যালভাদর আলেন্দে সেদিন এক সামরিক অভ্যুত্থানে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিলেন। চিলির প্রেসিডেন্টের নির্মম হত্যাকা-ে প্রচ-ভাবে বেদনাহত হয়ে নিজ বাসভবনের শোয়ারঘরের বিছানায় উপুড় হয়ে ফুঁফিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছিলেন বঙ্গবন্ধু। ঘটনার সময় এমআর আখতার মুকুল হঠাৎ করেই বঙ্গবন্ধুর বেডরুমে ঢুকে পড়েন এবং তাকে কান্নারত অবস্থায় দেখে ভীষণ হতভম্ব হয়ে পড়েন। আগন্তুকের আগমন টের পেয়ে বঙ্গবন্ধু শোয়া অবস্থায় বলতে থাকেন, ‘ওরা আলেন্দেকে মেরেছে! এবার আমার পালা।’
মুজিবের রক্তলাল বইটি যখন পড়ছিলাম, তখন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এক ধরনের আবেগ কাজ করত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন, তার ধীশক্তি এবং নেতৃত্বের অনুপম গুণাবলি অনুধাবন করার মতো বয়স ও শিক্ষা তখন আমার ছিল না। অন্যদিকে সুদূর লাতিন আমেরিকার দেশ চিলির কমিউনিস্টপন্থী প্রেসিডেন্ট আলেন্দের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কী এমন সম্পর্ক থাকতে পারেÑ যার জন্য তিনি অঝোরে কাঁদতে পারেন, সেই মানবিক ও আদর্শিক সেতুবন্ধনের খোঁজ করার মতো প্রজ্ঞাও আমার ছিল না। এর বাইরে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, বিশেষ করে ইন্দো-মার্কিননীতি সম্পর্কে ধারণা ছিল একেবারেই অল্প। ফলে বঙ্গবন্ধুর সেই আর্তি ‘এবার আমার পালা’ কথামালার গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারিনি।
আজ এত বছর পর ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের শোকাবহ পরিবেশে পুনরায় মনে পড়ে গেল বঙ্গবন্ধুর অঝোরে কান্নার দৃশ্য। সময়ের পথপরিক্রমায় চলতে চলতে আজ আমি বুঝতে পারি বঙ্গবন্ধুর ধীশক্তির ব্যাপ্তি সম্পর্কে। ১৯৭৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বরেই বুঝতে পেরেছিলেন, তিনি একটি দেশীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক চক্রের কবলে পড়ে গেছেন। তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন, চক্রটি তাকে ছাড়বে না। আশঙ্কা করেছিলেন, ওরা হয়তো তাকে মেরে ফেলবে। তবে সম্ভবত এ কথা কল্পনাও করতে পারেননি, পাষ-দের নির্মমতা তার পরিবারের সব নারী-পুরুষ-শিশুকে মৃত্যুমুখে ঠেলে দেবে।
১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর পরই বঙ্গবন্ধু টের পেয়েছিলেন, সবকিছু তার ইচ্ছামতো হচ্ছে না। সরকারের বড় বড় কর্তা, রাষ্ট্রীয় বড় বড় পদ-পদবী ও তার দীর্ঘদিনের অন্তরঙ্গ সঙ্গী-সাথীরা স্বাধীন বাংলাদেশের শিশুলগ্নে কেমন যেন অসংলগ্ন আচরণ শুরু করল। ছাত্রলীগ দুই ভাগ হয়ে গেল। জাসদের জন্ম হলো। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করল। মেজর জলিলের নেতৃত্বে খুলনার সুন্দরবন অঞ্চলে আরেকটি গ্রুপ অস্ত্র হাতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে নেমে পড়ল। শেখ মনি ও তাজউদ্দীনের বিরোধে পুরো আওয়ামী লীগ সারা দেশে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়ল। ওই সময়ে শেখ মনির নেতৃত্বে যুবলীগ এতটাই শক্তিশালী হয়ে পড়লÑ রাষ্ট্রের কোনো সংস্থার সাহস, শক্তি কিংবা এখতিয়ার ছিল না তাদের কর্মকা- চ্যালেঞ্জ করার। শেখ মনির সঙ্গে ক্যাপ্টেন মনসুর আলীর তিক্ত সম্পর্ক! অন্যদিকে ক্যাপ্টেন মনসুর অর্থাৎ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে নাসিমের সঙ্গে শেখ কামালের দা-কুমড়া সম্পর্ক বঙ্গবন্ধুকে খুব পীড়িত ও বেদনার্ত করে তুলল। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র-চিন-সৌদি আরব ও ভারতের উত্তরপন্থী লোকজন একত্র হয়ে গোপনে-প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর সরকারের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগল।
ষাট ও সত্তরের দশক দুটিতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোয় বিশ্বের দুটি পরাশক্তি যথা যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন তাদের প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠিত করার জন্য করেনি এমন কর্ম নেই। খুন, হত্যা, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি, ক্ষমতার পালাবদল, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-এমপিদের হত্যা, গ্রেপ্তার, গুম করার মতো অসংখ্য নজির পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিম এবং উত্তর থেকে দক্ষিণপ্রান্তের দরিদ্র দেশগুলোয় ঘটত অহরহ। মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ এবং সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির পারস্পরিক দ্বন্দ্ব কিংবা সংস্থা দুটির সার্বিক কর্মকা-ে তাবৎ দুনিয়া ছিল আতঙ্কিত। ওই সময়ে তৃতীয় বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধান নিজেদের তার দেশে নিযুক্ত মার্কিন বা সোভিয়েত রাষ্ট্রদূতের সেবাদাস কিংবা অধীনস্ত কর্মচারী বিবেচনা করতে বাধ্য হতেন। বঙ্গবন্ধু সমসাময়িক তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কদের এমন মনোবৃত্তির বৃত্ত ভাঙতে চেয়েছিলেন। এই কাজে লাতিন আমেরিকার দুই অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রো ও সালভাদর আলেন্দে ছিলেন তার প্রেরণার উৎসব এবং মন-মননশীলতা ও বিশ্বাসের রাজ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগী বন্ধু। কাজেই সাম্রাজ্যবাদী শক্তির চক্রান্তে আলেন্দে যখন তার সেনাবাহিনীর প্রধান পিনোশে কর্তৃক নিহত হলেন, তখন বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারলেন চক্রান্তকারীদের ক্ষমতার বলয়ের বিশালতা ও নির্মমতা সম্পর্কে।
সিআইএ এবং কেজিবির গোয়েন্দাগিরির কাহিনি তৎকালীন রূপকথার কাহিনিকেও হার মানাতো। বলা হতো, ওই দুটি শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা যদি কাউকে টার্গেট করতÑ তাহলে টার্গেট করা ব্যক্তির রান্নাঘর, বেডরুম, এমনকি বাথরুমের হালনাগাদ খবরও তাদের কাছে থাকত। বঙ্গবন্ধুর সারা জীবনের রাজনৈতিক আদর্শ, বিশ্বাস ও কূটনৈতিক পরিম-লের পরিচিতি এবং সংযোগ সম্পর্ক স্বাধীন বাংলাদেশে এসে প্রচ- হোঁচট খায়। তার রাজনৈতিক গুরু আল্লামা আবুল হাশিম (নিখিলবঙ্গ মুসলিম লীগের তৎকালীন সভাপতি এবং লেখক, সাহিত্যিক ও বাম রাজনৈতিক নেতা বদরুদ্দীন ওমরের পিতা) ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছ থেকে প্রাপ্ত রাজনৈতিক দর্শনের কারণেই ১৯৫৪ সালের পর থেকে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে তার বিরোধ বেধে যায়। ফলে আওয়ামী লীগে শুরু হয় ভাঙন। ঠিক তখন থেকেই চীনপন্থী ও মস্কোপন্থী এদেশীয় কমিউনিস্ট নেতারা বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করতে থাকেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী রাষ্ট্রীয়ভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত মিত্রতা থাকলেও সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির হর্তাকর্তারা বঙ্গবন্ধুকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেননি তাদের বাংলাদেশীয় এজেন্ট মতিয়া-মেনন ও মণি সিংহ-ফরহাদ গংয়ের কারণে। তাই প্রবল মার্কিন লবির ক্রমাগত চাপের বিপরীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু প্রয়োজনীয় আর্থিক, কারিগরি, নৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা পাননি। ভারত ও স্বাধীন বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু সরকারের পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেনি। এ জন্য বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রশাসনÑ সর্বস্তরে আন্তর্জাতিক রাজনীতির কূটকৌশলের কবলে পড়ে অস্থির হয়ে যায়।
সার্বিক পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সাল থেকেই বিকল্প মিত্রের সন্ধানে প্রাণন্তে চেষ্টা করতে লাগলেন। আলজিয়ার্সে অনুষ্ঠিত জোট নিরপেক্ষ শীর্ষ সম্মেলনে তিনি বলতে গেলে ভারতকে নাখোশ করেই লিবিয়ার গাদ্দাফি, সৌদি বাদশা ফয়সাল প্রমুখের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এরপর ভারতকে রীতিমতো ক্ষেপিয়ে তুলে ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই আশানুরূপ ফল এলো না। অন্যদিকে চক্রান্তকারীদের নৈরাজ্য দিনকে দিন বাড়তেই থাকাল। এ অবস্থায় ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে সালভাদর আলেন্দের হত্যাকা- তাকে ভাবিয়ে তুলল। তিনি বুঝতে পারলেন, হয়তো নিয়তি তার দিকে দ্রুত এগিয়ে আসছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে যা ঘটবে, তা কি বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন? আমার মনে হয় পেরেছিলেন। কারণ তা না হলে তিনি অমন করে নিজেকে প্রকৃতির কাছে সমর্পণ করে দিয়ে অশ্রুপাতের মধ্যে আশ্রয় লাভের চেষ্টা করেছিলেন কেন? - See more at: Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪

নিজাম বলেছেন: ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য। এমন নির্মম হত্যাকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ ও সমগ্র বিশ্ব।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:২১

মোহাম্মদ মজিবর রহমান বলেছেন: ভাবতে কষ্ট হয় বংগবন্ধুর বিরোধীরাই আজ বংগবন্ধুর তনয়ার সহযোগী ।বংগবন্ধুর স্বপ্ন ছিল জাতীয়ঐক্য।সে স্বপ্ন থেকে আজ আওয়ামী লীগ যোজন যোজন দূরে ।

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৩৪

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: সুন্দর লেখা। +++

৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ , অনেক কিছু জানলাম । জয় বাংলা , জয় বঙ্গবন্ধু । বংগবন্ধুর স্বপ্নের জয় হোক ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.