![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকা শহর প্রতিদিনের মতো ব্যস্ত দিন শুরু করেছে মাত্র। তখনই হঠাৎ করে প্রকম্পিত হলো বিকট শব্দে। প্রথমে তেমন বিচলিত না হলেও যখন একের পর এক ফুটতে থাকল বোমা_ এ কোন অপশক্তির কাজ, গোয়েন্দা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক মহল এবং সাধারণ মানুষ সবার মনের মধ্যেই এ প্রশ্ন দেখা দেয়। কিন্তু এ নিয়ে গভীর ভাবনার জন্য বিন্দুমাত্র সময় তাদের মেলেনি। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা থেকে আসতে শুরু করল বোমা ফাটার খবর। দেশবাসী বিচলিত হয়ে পড়ল। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল নিমিষেই। বাংলাদেশের ৬৩টি জেলার তিনশ' স্থানে প্রায় একসঙ্গে ফুটেছে ৫০০ বোমা। প্রায় ১১৫ জন আহত হলেও কারও তেমন গুরুতর ক্ষতি হয়নি বলে কিছুটা স্বস্তি পেলেও ভীতবিহ্বল মানুষ উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়েছিল আক্রমণের ব্যাপ্তি দেখে। জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) নামের একটি ইসলামী জঙ্গি দল স্বীকার করে নিল হামলার দায়। ইসলামী আইন কায়েমের উদ্দেশ্যে তাদের আক্রমণ। গণতন্ত্র ও মানুষের তৈরি আইন উচ্ছেদের জন্য তাদের সশস্ত্র লড়াই। তারা প্রতিটি স্থানে বোমা বিস্ফোরণের সময় প্রচারপত্রের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব প্রচারপত্র ছিল বোমার প্যাকেটের সঙ্গে বাঁধা। গণতন্ত্র, আদালত, প্রচলিত আইনকানুন_ সবকিছু তাদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। ধর্মান্ধতার হিংস্র যুগে বাংলাদেশকে নিয়ে যাওয়ার ঔদ্ধত্য ছিল তাদের প্রচারপত্রে। ২০০৪ সালের ২৩ মে রাজশাহী শহরে নিষিদ্ধ জেএমবি সশস্ত্র মিছিল করে সরকারের নাকের ডগায়। স্থানীয় বিএনপি নেতা, মন্ত্রী এবং প্রশাসনের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দ্রুতই উন্মোচিত হয়ে পড়ে। তখন বিএনপি-জামায়াত জোট শাসন করছে দেশ। তাদের সামনেই জঙ্গি হুঙ্কার সচকিত করে তুলল দেশের মানুষকে। জেএমবি বলতে থাকে ১৭ আগস্টের হামলা তেমন গুরুতর নয়, এ কেবল তাদের শক্তি প্রদর্শনের অতি প্রাথমিক স্তর। পরবর্তীকালে আমরা দেখি একের পর এক আত্মঘাতী হামলা হলো জেলা আদালতে। বিচারকরা হয়ে উঠলেন তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু। ঝালকাঠি, গাজীপুর, চট্টগ্রামের আদালত রক্তাক্ত হলো। ঝালকাঠির দুই বিজ্ঞ বিচারক খুন হলেন অফিস থেকে আদালতের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার সময়। বোমা-গ্রেনেড হামলায় বিভিন্ন স্থানে আইনজীবী, পুলিশসহ নিহত হলেন প্রায় ৩৮ জন। ইসলামী জিহাদের নামে সাধারণ ও নিরীহ মানুষ খুনের সহিংস রাজনীতি যেন গতি পেল। বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করল বর্বর পাশবিকতা দিয়ে মানুষকে বশ্যতা স্বীকার করতে বাধ্য করার সহিংস রাজনৈতিক কৌশল। এখন যা ফুটে উঠেছে ইসলামিক স্টেট নামের আবু বকর আল বাগদাদির ইরাক ও সিরিয়ায়। পাকিস্তানেও আমরা প্রতিনিয়ত এটাই দেখছি। জনগণের সচেতনতার কারণে বাংলাদেশ বেঁচে গিয়েছে। তারা সরকারকে বাধ্য করেছে পৈশাচিক শক্তির উত্থান বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণে। রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে সর্বহারা নিধনের নামে অন্তত ২২ জনকে হত্যা করেছে বাংলাভাইয়ের দল জেএমবি। শাসক দলের মন্ত্রী, এমপি ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এগিয়ে চলছিল ঘাতক জঙ্গিদের অগ্রযাত্রা।
জামায়াত ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কোলে বেড়ে ওঠা ব্যক্তিরাই তৈরি করেছে জেএমবি। দেখা গেছে, জেএমবির জঙ্গি বাহিনীর প্রায় সবাই এ দল এবং তাদের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিল। আল্লাহর আইন কায়েমের স্লোগান তুলে ১৯৯৮ সালে শায়খ আবদুর রহমান গঠন করে জেএমবি। গোপনে গোপনে কাজ করলেও শুরুতে তেমন কোনো শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি। কিন্তু ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর অঢেল দেশি-বিদেশি টাকা পেতে শুরু করে তারা। তৈরি করে অসংখ্য মাদ্রাসা ও মসজিদ। সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেগুলো। ২০০১-০২ সাল পর্যন্ত উত্তর বাংলায় অনেক ছোট ছোট হামলা হয়েছে, যেগুলো প্রশাসন ধামাচাপা দিয়ে তাদের দানবীয় অস্তিত্বকে ঢেকে রাখতে সচেষ্ট ছিল। ২০০২ সালে বাগেরহাটে বাংলাভাই হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গ্রেফতার হয়েও ছাড়া পেয়ে যায়। ২০০৩ সালে তাদের উগ্রবাদী কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকে এবং ২০০৪-০৫ সালে তা চরম পর্যায়ে চলে যায়। ২০০৩ সালের মার্চ মাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ জন ও সেপ্টেম্বরে ১৮ জঙ্গি জয়পুরহাটে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ২০০৪ সালের মে মাসে নওগাঁর রানীনগরে আবদুল কাইয়ুম বাদশা নামে একজনকে হত্যা করে গাছের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে বিরোধিতার শাস্তির নমুনা প্রদর্শন করে। তখন প্রায় ২২ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ওই এলাকায়। টাঙ্গাইল ও নারায়ণগঞ্জে এনজিও কার্যালয় লুট করে; যাত্রা, সিনেমা হলসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। ২০০৪ সালে জেএমবি ছাড়াও জঙ্গিদের অবাধ বিচরণের ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশ ঝুঁকিতে অবস্থান করতে থাকে। এ বছরের ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা হয়। এই হামলাসহ ৮টি জঙ্গি হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ এবং আহত হয় আটশ'র মতো। ২০০৫ সালে জঙ্গি অপশক্তি আরও ভয়াবহ হয়। ৩১ আক্রমণে ৩৬ জন নিহত এবং ৯৫২ জন আহত হয়। ২০০৭ সালের পর থেকে বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা কমতে থাকে সরকারের জঙ্গিবিরোধী শক্ত অবস্থানের কারণে।
১৯৯৮ সালে শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাইয়ের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা অপশক্তির সৃষ্টি হলেও কাদের মদদে এবং কীভাবে সবার অলক্ষ্যে বেড়ে উঠল? ২০০২ সালে ৩০ মে দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে ৮ জঙ্গি ২৫টি বোমা ও জিহাদি পুস্তকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়লে জেএমবির অস্তিত্ব নজরে পড়ে। থানা থেকে নথিপত্র গায়েব হয়ে যাওয়ায় বিচার সম্ভব করতে পারেনি তৎকালীন সরকার। ২০০৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারিতে দিনাজপুর শহরে ৭টি বোমা বিস্টেম্ফারিত হয়ে তিনজন আহত হয়।
শক্তি প্রদর্শন করে তারা বাঙালিদের তালেবান হয়ে গড়ে তোলার চেষ্টায় মাদ্রাসাকে ভিত্তি করে বাড়তে চেয়েছিল। নতুন নতুন মাদ্রাসা তৈরি করে ছাত্রদের জঙ্গি ধারায় বড় করে তোলার কৌশল নিয়েছিল। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করার জন্য জঙ্গিদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অপকৌশল থেকে বাড়তে দেওয়া হয়েছে ইসলামের নামে জিহাদি দলগুলোকে। নব্বইয়ের দশকে আফগানফেরত মুজাহিদরা হরকাতুল জিহাদ নাম দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও তাদের লক্ষ্য সব সময় আবর্তিত থেকেছে মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে ঘায়েল করতে। বাংলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সামাজিক ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতাকে ইসলামের বৈরিতায় ফেলে হামলা করেছে বারে বারে।
হরকাতুল জিহাদ বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে রমনা বটমূলে, উদীচীর অনুষ্ঠানে, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সমাবেশে। মুক্ত চিন্তা ও প্রগতিশীল মানুষদের হত্যা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার তাদের লক্ষ্যস্থল হয়েছেন। তারপর একই আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে আবির্ভূত হয় জেএমবি। এখন দেখা যাচ্ছে হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমসহ আরও অনেক জঙ্গি দল। এদের সবার পেছনেই দেখা যায় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে। বিএনপির রাজনৈতিক জোটে তারা শামিল এবং এভাবে এ দলটিও তাদের অপরাধের ভাগীদার হয়ে পড়েছে। জঙ্গি দলের উত্থান ও প্রসারের গতি-প্রকৃতি থেকে পরিষ্কার হয়ে ওঠে বাংলাদেশে তালেবান প্রেতাত্মার জন্মে হাত রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোটের।
ইসলামী জিহাদের নামে রাজশাহী অঞ্চলে চালানো জেএমবির পৈশাচিকতা গণমাধ্যমের দৃষ্টি কাড়তে শুরুতে বাংলাভাই মিডিয়ার সৃষ্টি বলে পাশ কাটাতে চাইলেও ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার জেএমবিকে নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তাদের কর্মকাণ্ডে গোপন পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকে। ফলে নিষিদ্ধ করার পরও জঙ্গি দলগুলোর বিরুদ্ধে কোনো আইনি অপারেশন চালাতে দেখা যায়নি। তাদের গতিতে কোনো ভাটা পড়তে দেখা যায়নি, তেমনি অবয়বে কোনো প্রতিফলন ঘটেনি। জোট সরকারের মেয়াদ যত শেষের দিকে গেছে জঙ্গি তীব্রতা ততই বেড়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গি অপশক্তির রাজনৈতিক ব্যবহারের ইঙ্গিতগুলো যেন স্পষ্ট হতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির মোকাবেলায় জঙ্গি অপশক্তিকে মাঠে নামানো এখন রীতিতে পরিণত হয়েছে। গণতান্ত্রিক শক্তিকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েল করার অক্ষমতা থেকে জন্ম নিচ্ছে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ও অপশক্তিকে ব্যবহারের প্রবণতা। শাসক পরিবর্তনের বিকল্প হিসেবে ধর্মের নামে বিভ্রান্ত মানুষ দিয়ে প্রগতিশীল ও গণতন্ত্রমনাদের হটাতে পারলে জিহাদি মতাদর্শ এগোতে পারবে_ সেই প্রত্যাশার তালিবানি দানবকে রুখতে আরও সচেতন হতে হবে দেশের মানুষকে।
অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ; স্ট্র্যাটেজি ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক; ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (আই ক্লডস) নির্বাহী পরিচালক
২| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:১৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এইসব শঅক দিয়া মাছ ঢেকে আর কত!!!!
জেএমবির প্রধার শায়খ সাব জানি কার দুলাভাই!!!!! আওয়ামীলীগের কী পার্সনদের একজনের!!!
আচ্ছা এই লোক আবার শালার প্ররোচনায় এইসব করেনিতো! দোষ যাবে্বিএনপির ঘাড়ে! আর সেই ঘোলা জলে মাছ শিকার করেছে আওয়ামীলীগ!!
প্রবীর শিকদারকে এরেষ্ট করল কেন ভাই। প্রবীর সিকদারও কি বিএনপি জামাতের রাজনীতি করতেন? না জঙ্গি ছিলেন? নাকি জামাতের কানেকশন আছে!!!
অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না। দয়া করে চোখ দুটো মেলূন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:১১
সাবু ছেেল বলেছেন: বিম্পি ক্ষমতায় আসলে এই জিহাদিদের আবার পুনর্বাসন হপে।