![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্ষমতার সুবিধা যেমন আছে, অসুবিধাও কম নয়। এটি সর্বজনীন। সমাজতান্ত্রিক দুনিয়ায় কমিউনিস্ট পার্টিগুলো দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার পর নিজেদের জনপ্রিয়তা জনগণের মধ্যে ধরে রাখতে পারেনি। অথচ ক্ষমতায় থাকলেও কমিউনিস্ট পার্টিতে শৃঙ্খলা এবং আদর্শের চর্চা মোটেও হয়নি- এমনটি বলা যাবে না। ইসলামিক রিপাবলিক ইরানেও বাহ্যিকভাবে কোনো সমস্যা দেখা যায় না। তারপরও কোনো ব্যবস্থা (সমাজতান্ত্রিক বা ইসলামিক)-তেই পার্টি ক্ষমতায় থেকে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারার উদাহরণ খুব বেশি নেই। পশ্চিম বাংলায় সিপিএম তিন দশকের বেশি ক্ষমতায় থেকে বেশ অসম্মানজকভাবেই বিদায় নিয়েছে। অথচ কমিউনিস্ট পার্টিগুলোকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, দলীয় শৃঙ্খলার বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে যারপরনাই সচেতন থাকতে দেখা গেছে। তারপরও দলের নানা স্তরে নেতৃত্বের মধ্য, তৃণমূল পর্যায়ে বিচ্যুতি ঘটেছে, শৃঙ্খলার রাশ খুব দীর্ঘদিন ধরে রাখা যায়নি। সুতরাং সরকারে থাকার সমস্যাটি কত জটিল তা ইতিহাস থেকেই শিক্ষা নিতে হয়। আবার ক্ষমতায় না গেলে কোনো দলই তার আদর্শ বাস্তবায়ন করতে পারে না। সে কারণে দলের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য দলকে ক্ষমতায় যেতে হয়। যে দল ক্ষমতায় গিয়ে ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখতে পারে সেই দলের অবস্থান জাতীয় ইতিহাসে দীর্ঘস্থায়ী হয়। সেটি দলের জন্য গর্বের বিষয়। ক্ষমতায় যাওয়া বা যেতে পারার সুবিধা সেটিই। সে জন্যই কোনো কোনো দল দীর্ঘদিন আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে জনগণের মাঝে নিজের গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করে, তারপর জনগণ সেই দলকে ক্ষমতায় দেখতে চাওয়ার বিষয় হিসেবে হয় নির্বাচনের মাধ্যমে, নতুবা আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে বা বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে। এমনটি সেই রাজনৈতিক দলের জন্য একটি আশীর্বাদ। দল সেটি মনে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু যে দল সেভাবে ক্ষমতায় আসে না রাষ্ট্র, রাজনীতি ও জনগণের কথা ভাবে না, সে দল ক্ষমতায় গিয়ে তেমন কিছু করতে পারেনি, ইতিহাসে সেই দলের স্থান খুব একটা মহিমান্বিত হয় না। এ ধরনের নানা অভিজ্ঞতা আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জমা হচ্ছে। প্রয়োজন এসব নিয়ে গভীর গবেষণা করা, প্রবণতার ইতিবাচক-নেতিবাচক দিকগুলো উন্মোচিত করা, সেগুলো সম্পর্কে সচেতন থেকে নিজেদের করণীয় নির্ধারণের পথ বাতলিয়ে দেয়া।
এ ধরনের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আমরাও রয়েছি। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ভেতর দিয়ে রাজনীতিতে যে জায়গা করে নিয়েছে তার সঙ্গে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অভ্যুদয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। এটি সম্ভব হয়েছিল দলটির নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক বিকাশ, তার সঙ্গে এক ঝাঁক যোগ্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব তৈরি হওয়া- যারা প্রত্যেকেই বঙ্গবন্ধুকে তাদের প্রধান নেতা হিসেবে বরণ করে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু কেমন নেতা ও মানুষ ছিলেন তা নতুন করে বলার আর প্রয়োজন নেই। সংগঠক, দার্শনিক, দেশপ্রেমিক, নির্ভীক ও সাহসী নেতা হিসেবে তার তুলনা তিনি বোধ হয় একাই হতে পারেন।
সমসাময়িক বিশ্বে তিনি রাজনীতির বিরল নেতা হিসেবে স্বীকৃত হন। তবে তিনি বোধ হয় বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি প্রাগ্রসর নেতা ছিলেন। এমন প্রাগ্রসর নেতা না হলে স্বাধীনতার মতো বিষয় এমন একটি অনগ্রসর, দ্বিধাবিভক্ত জনগোষ্ঠীর ইতিহাসে এত তাড়াতাড়ি অর্জিত হয় না। এমন নেতার হাতে পড়ে আওয়ামী লীগ কতটা নীতি, আদর্শ ও শৃঙ্খলায় পরিচালিত হয়েছিল সেটি ষাটের দশক, সত্তর দশকের শুরুতে দেখা গেছে। সেই নীতি, আদর্শের ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলায় ছিল বলেই ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ শুরু করা ও নেতৃত্ব দেয়া আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব হয়েছিল। স্বাধীনতা-উত্তরকালে আওয়ামী লীগের ওপর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব পড়ে। যে ধরনের পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতার হাল ধরতে হয়েছিল সেটি কতটা প্রতিক‚লে ছিল তা বিবেচনায় নিয়েই কথা বলা উচিত। সে ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো একটি স্বাধীন রাষ্ট্র অনভিজ্ঞ জনগোষ্ঠীর পথ চলা কতটা কঠিন ছিল, জটিল ও সংকটময় ছিল তা সহজেই অনুমেয়। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর আন্তরিকতায় ঘাটতি ছিল- তেমনটি দাবি করা বা বলা সঙ্গত হবে না। প্রতিক‚লতা ছিল সীমাহীন সেগুলো মোকবেলা করা কোনো দলের পক্ষে কতটা সম্ভব হতো তা কেবল তারা দায়িত্ব নিলেই বোঝা যেত। তবে এ কথা নিঃসন্দেহেই বলা যায়, দলে তখন আদর্শ ও শৃঙ্খলার বিদ্যমান অবস্থাকে কাজে লাগাতে বঙ্গবন্ধু এবং নেতাদের অবস্থানের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব ছিল, সেই সুযোগগুলো গ্রহণ করেছে এক শ্রেণির স্বার্থপর গোষ্ঠী- যারা বঙ্গবন্ধু এবং তার কাছের নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব তৈরি মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে সচেষ্ট ছিল। তারপরও দলে শৃঙ্খলা যেমন কমবেশি ছিল, আদর্শের গুরুত্বের কথাও বেশ উচ্চারিত হতো। বঙ্গবন্ধু নিজেও দলের অভ্যন্তরে যারা নীতি-আদর্শহীন কাজে জড়িত ছিল, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তাদের অনেককেই দল থেকে বহিষ্কার করেছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য জনসভায় তিনি বলতেন। দলকে তিনি কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন তা দেখা যায় ১৯৭৫ সালে নতুন ধাঁচের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সমাজের সবচয়ে ভালো, মেধাবী, আদর্শবাদী, দেশপ্রেমিক সব নেতাকর্মী, সমর্থক ও মানুষ যারা দেশকে নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতেন, অবদান রাখার চিন্তা করতেন তাদের একত্রে নিয়ে একটি জাতীয় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেন। তার চিন্তায় ছিল আদর্শ, যোগ্য, মেধাবী ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের দলীয় রাজনীতির বাইরে নয়, ভেতরে এনে, রাষ্ট্র ব্যবস্থায় দায়িত্ব প্রদান করে দেশকে এগিয়ে নেয়া, শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। তিনি দল বলতে তেমন মানুষের সংগঠন ভাবতে শুরু করেন। স্বাধীনতা-পূর্বকালের আদর্শ ও শৃঙ্খলার রাজনীতি দিয়ে তিনি স্বাধীনতা-উত্তর দেশ গঠনে যথেষ্ট এক্সপেরিমেন্ট করেছিলেন, অপেক্ষা করেছিলেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির করণীয় নির্ধারণ করে সেভাবে ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট ছিলেন না। সে কারণেই তার হতাশা এবং নতুন উপলব্ধি থেকে দলকে নতুনভাবে আদর্শে ও শৃঙ্খলায় গড়ে তুলতে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারী শক্তি তাকে সেই সুযোগ দেয়নি।
১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট-উত্তরকালে আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন, নিপীড়ন নেমে আসে তা অবর্ণনীয়। তারপরও আওয়ামী লীগকে নিঃশেষিত করা যায়নি, ভাঙা হয়েছিল; কিন্তু ক্রমেই আওয়ামী লীগ একত্রিত হয়েছে। শেখ হাসিনা দলের পুনরুজ্জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভাঙা-গড়ার পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগ সংগ্রাম, লড়াই এবং আন্দোলনের মাধ্যমেই আবার ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করেছে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়। ১৯৯৬-২০০১ সালের শাসনকালে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা বেশকিছু সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তাত্তি¡ক সমস্যায় পড়েছিলেন। অনেক কিছুই দলটি অতিক্রম করতে সক্ষম হলেও দলের অভ্যন্তরে কিছু কিছু গোষ্ঠী সময়টিকে বিবেচনায় নেয়নি, দলকে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পথে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতায় যাতে পড়তে না হয় সে ব্যাপারে সচেতন ছিল না। কেউ কেউ নিজ নিজ এলাকায় শৃঙ্খলা ভেঙেছে, দলীয় আদর্শ বিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ে। কেন্দ্রীয়ভাবে এসব বিষয়কে কখনো হালকাভাবে, কখনো প্রতিপক্ষের মতো করে ভাবা হয়েছে। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, যে কাজ করে বিএনপির মতো প্লাটফর্ম হজম করতে পারে, যা জনগণের একটি বড় অংশের মধ্যে খুব বেশি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না- সেই একই কাজ আওয়ামী লীগের পক্ষে হজম করার এখনো সময় হয়নি। বিশেষত ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, ভারত ইস্যুসহ নানা কিছু নিয়ে আমাদের দেশে প্রচার-প্রচারণায় এমন সব বিষয় গেলানো হচ্ছে- যা আদর্শবাদী, আধুনিক রাজনীতির সঙ্গে একত্রে যায় না। কিন্তু না গেলেও ভোটের রাজনীতিতে এটি একটি বড় ফ্যাক্টর। ১৯৭৫-পরবর্তী রাজনীতির পশ্চাদপসারণের নজির হচ্ছে এটি। ১৯৯৬-২০০১ সালে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা রাজনীতির এমন বাস্তবতায় সচেতনভাবে রাজনীতি করার অবস্থানে ছিলেন না। অথচ প্রতিপক্ষ অপশক্তি তাদেরকে গডফাদার হিসেবে চিহ্নিত করে পুরো নির্বাচনের মাঠ, ব্যবস্থাপনাসহ অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছিল। ১ অক্টোবরের পরপরই পরিষ্কার হয়ে গেল কারা কিভাবে ছোঁ মেরে সবকিছু নিতে সক্ষম হলো। এরপর দলের ওপর, নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে চরম নির্যাতন, নিপীড়ন, উৎখাত, বিতাড়ন, দলন, নিষ্পেষণ, হত্যা ইত্যাদি। স্বয়ং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি পড়তে হয়েছিল। শাহ এ এম এস কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টারসহ অনেকে নিহত হলেন, গ্রেনেড হামলার শিকার হলো গোটা বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগকে আবার অগ্নিপরীক্ষার মুখে পড়তে হলো। ২০০৭ সালের ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ ছিল ক্ষমতায় ৪ দলীয় জোট সরকারের থেকে যাওয়া ‘নীল নকশা’। সেটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি, ১/১১ তা ব্যর্থ করে দেয়। নতুন বাস্তবতায় আওয়ামী লীগকে আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আবার দাঁড়াতে হলো। শেখ হাসিনা এবারো সফল হলেন ক্ষমতায় আসার মতো ব্যাপক সমর্থন লাভ করতে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা একটি রূপকল্প নিয়ে দেশ গড়ায় হাত দেন। প্রতিবন্ধকতা কেমন ছিল তা গত ছয় বছরের নানা অঘটনের রাজনৈতিক বিশ্লেষণেই ধরা পড়বে। তাকে হত্যা, ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্র বেশ কয়েকটি হয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার মাধ্যমে দেশে সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে পেট্রলবোমার সন্ত্রাস, দেশ বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা ইত্যাদি সবই ঘটেছে। এত সব প্রতিক‚লতার মধ্যেই আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে থাকতে হয়।
দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হলো, ২০০৯-১১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যতটা রাজনীতিতে ছিল তারপর থেকে দলের নিম্নস্তর, মাঝারি, এমনকি শহরগুলোতে নানা নামে এমন সব নেতাকর্মী ও সংগঠনের আবির্ভাব ঘটতে থাকে যারা আসলে রাজনীতির এলিমেন্ট কিনা তা নিয়েই সন্দেহ আছে। বিশেষত ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ভুঁইফোড় বিভিন্ন সংগঠনে হাজার হাজার তরুণ ও যুবক ভিড়তে থাকে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির আদর্শ সম্পর্কে কতটা জ্ঞাত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। দলের শৃঙ্খলা নামক বিষয়টি কোথাও আছে তা নিয়ে অনুসন্ধানের প্রয়োজন রয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদককে বলতে হয়েছে ‘খাই খাই’ করবেন না। প্রকৃতই কোনো উপজেলা, ইউনিয়ন, জেলায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না, সর্বত্র কিছু নেতা অনুগত ক্যাডারদের নিয়ে গমনাগমন, এলাকায় গিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত থাকার ভূরি ভূরি নজির রয়েছে। অথচ কোনো একটি অঙ্গসংগঠনের সাংগঠনিক কোনো সভা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, জনমত সৃষ্টি করতে প্রয়োজন এমন কোনো আলাপ-আলোচনাই নেই, কার্যক্রম তো দূরের বিষয়। যেভাবে স্থানীয় নেতাকর্মীর প্রভাব বিস্তারে সর্বত্র সচেষ্ট তাতে আওয়ামী লীগের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন বৃদ্ধির কোনো সুযোগই নেই। অথচ শেখ হাসিনা এই সময়ে দেশে যে উন্নয়ন ঘটিয়েছেন তা যথাযথভাবে মানুষের কাছে তুলে ধরার কাজটিই স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনগুলোর পবিত্র কাজ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটির ধারেকাছেও সংগঠন নেই, স্থানীয় নেতাকর্মীরা নেই। দলে এখন এমন সব ক্যাডারের অবস্থান ঘটেছে যারা আওয়ামী রাজনীতি অ আ ক খ গ ঘ ঙ বোঝে বলে মনে হয় না। এরা নিজ নিজ এলাকায় কী নিয়ে ব্যস্ত তা না বলাই বোধ হয় শ্রেয়। এদের হাতেই একে অপরে লাঞ্ছিত হচ্ছে, নিহত হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে যারা দলের আদর্শবান ও নীতিনিষ্ঠ নেতাকর্মী আছেন তাদের কোণঠাসা করে ফেলা হয়েছে। এসবই সম্ভব হয়েছে কারণ- স্থানীয় পর্যায়ে কোনো সংগঠনে কোনো দলীয় শৃঙ্খলা নেই, নেতাকর্মীদের মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা-পর্যালোচনা নেই, সাংগঠনিক কোনো কর্মসূচি নেই। তাহলে দলে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে কিভাবে, নেতা তৈরি হবে কিভাবে, দক্ষতা ও যোগ্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে কিভাবে? ব্যক্তিগত স্বার্থ, অর্থ, বিত্ত ইত্যাদি প্রতিষ্ঠায় যদি দলের পদ-পদবি, শক্তি ব্যবহৃত হয় তাহলে দল আখেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেটিই সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে ঘটছে।
এ অবস্থার দ্রুত অবসান জরুরি। এর জন্য দরকার সাংগঠনিক নিয়ম-শৃঙ্খলা কাজকর্মকে নিয়মিত করে দেয়া, আদর্শবিরোধী কারো কোনো কর্মকাণ্ডকে দলের বহন করার সুযোগ না রাখা। যারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করবে, আদর্শবিরোধী কাজে লিপ্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কোনো বিকল্প নেই। দলে কেউ যা খুশি করবে- তা চলতে দেয়া যায় না। আওয়ামী লীগ কেন যেন এ বিষয়টিকে সেভাবে সিরিয়াসলি নেয়নি। ফলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগের পাশাপশি নানা নামে গজিয়ে ওঠা সংগঠন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে, অনেক জায়গায়ই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ ধরনের অবস্থা দিয়ে আওয়ামী লীগের এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা নেতা হিসেবে যে সম্মান দেশে-বিদেশে তৈরি করেছেন তা ¤øান করে দিচ্ছে অনেকেই। এমনটি বোধ হয় মেনে নেয়ার আর সুযোগ নেই। এ মুহ‚র্তে বিএনপি সাংগঠনিকভাবে বেশ সংকটে আছে। সেই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সুশৃঙ্খল হলে জনগণের কাছে মধ্যম আয়ের অর্থনীতির অর্জনকে নিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। সেটি করা গেলে মানুষ আওয়ামী লীগকে আরো আপন করে নিতে মোটেও দেরি করত না। আওয়ামী লীগের যথেষ্ট সুযোগ ছিল জনগণের মধ্যে গিয়ে কাজ করার, জনমতকে পক্ষে আনার ক্ষেত্র সৃষ্টি করার। সেটি সম্ভব হয় দলে যখন উপরে-নিচের সর্বত্র শৃঙ্খলা অটুট থাকে, নেতাকর্মীরা আদর্শের রাজনীতি ও জীবন ব্যবস্থাকে সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে চেষ্টা করে। কিন্তু ঘটনা ঘটছে ঠিক বিপরীত ধারায়। এখানেই মস্ত বড় আশঙ্কা। এই আশঙ্কার পরিধি এতটাই ভয়াবহ যে, আগামীতে যদি আওয়ামী লীগ জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থনে ক্ষমতায় না আসতে পারে তাহলে বাংলাদেশে অসংখ্য অপশক্তি রয়েছে যারা এখন ভেজা বেড়ালের আচরণ করছে তারাই তখন বাঘের মতো হিংস্র থাবা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে, শুধু আওয়ামী লীগকেই নয়, শেখ হাসিনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ, উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা- এর কিছুই তাদের হাত থেকে রক্ষা পাবে না। সুতরাং সবাইকে সতর্ক হতে বলব। দ্রুত দলীয় শৃঙ্খলা ও আদর্শের রাজনীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণ খালি হাতে আওয়ামী লীগকে ফিরিয়ে দেবে না। কেননা, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা দিয়েছে, এখন মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বাস্তবতা দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের নেতা নন, তারা উভয়েই জাতীয় নেতা এবং সম্পদ। আওয়ামী লীগের উচিত বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার আদর্শকে সম্বল করে দলকে পুনর্গঠন করা। এখন শেখ হাসিনার অবস্থান আওয়ামী লীগকে ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বরং সেই অবস্থানেই রাজনৈতিকভাবে অনেক বেশি নিরাপদ ও সম্মানীয় থাকবেন, আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যক্রমে তার মর্যাদা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের উচিত তাদের করণীয় নির্ধারণ করা।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী : অধ্যাপক, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১০:২১
মোহাম্মদ মজিবর রহমান বলেছেন: এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে সামনের দিকে না এগিয়ে পেছন দিকে হাঁটতে শুরু করে। কথায় বলে, ‘ভুতের পা নাকি পেছন দিকে চলে’। এই সরকারের আমলেও ইতিহাসের পাঠ শুরু হয় ১ম পৃষ্ঠা থেকে। আবার সেই ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ, ঈমানদারদের কাঁধে ধর্ম নিরপেক্ষতার ভূত চাপানো,ভারতের সাথে নিজেদের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে ট্রানজিট/করিডোর সহ নানা ধরনের চুক্তি করা,মাটি ও মানুষের নির্যাস থেকে আহরিত সংস্কৃতিকে মহাভারতের সংস্কৃতিতে বিলীন করার প্রচেষ্টা জোর কদমে এগিয়ে চলে। শেখ মুজিবুরের ছয় দফার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ ছিলো নিখাদ গণতন্ত্র। কিন্তু তিনি শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রে থাকতে পারেননি। তার কন্যা সরাসরি বাকশাল কায়েম না করে নানান রঙের একনায়কত্বের যূপকাষ্ঠে গণতন্ত্রকে বলি দিচ্ছেন। দালাল আইনে আটক ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করে মরহুম শেখ মুজিবর রহমান বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের যে স্রোত সৃষ্টি করেছিলেন। বর্তমান সরকার সেটি বিনষ্ট করে সমাজের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে সুতীব্র বিভাজনের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে।