![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগামী ৩০ ডিসেম্বরের পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে যথারীতি রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে উঠছে। ডিসেম্বরের ভরা শীতে এই রাজনৈতিক উত্তাপ-পৌরবাসীরা কতোখানি উপভোগ করবে তা নির্ভর করে একাধিক বিষয়ের ওপর। এবারের নির্বাচনের একটি ভালো দিক হলো মেয়র প্রার্থীদের রাজনৈতিক পরিচিতি নিয়ে কোনো ঢাক ঢাক গুড় গুড় নেই। একেবারে দলীয় প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করতে পারছেন সাড়ম্বরে। আগেও বস্তুত তাই হতো, তবে আইনি স্বীকৃতি না থাকায় তত্ত্ব ও বাস্তবতার মধ্যে অনেক টানাপড়েন হতো। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি হতো এবং তা নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশনের অসহায়ত্ব ‘নির্দলীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচন’ প্রক্রিয়াকে ভ্রুকুটি করতো। এখন অন্তত সেই সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। মেয়োরাল প্রার্থীরা আচরণবিধির ভিতরে থেকেও দলবল নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন। তবে যুগপত্ কাউন্সিলরদের জন্যে নির্দলীয় এবং মেয়রদের জন্যে দলীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং তার ফলাফল বাস্তবক্ষেত্রে কোনোরুপ সমন্বয়হীনতার জন্ম দেবে কিনা, তা দেখার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচিত মেয়র এবং কাউন্সিলরদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় দলীয় ভিন্নতা একেবারে ঘুচিয়ে দেয়া ঠিক, নাকি স্থানীয় সরকারে আংশিক নির্দলীয় ভাব বজায় রাখার জন্যে কাউন্সিলরদের দল নিরপেক্ষতার মুখোস পরিয়ে রাখাই ঠিক তা গবেষণার দায় স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞদের ওপরই না হয় থাকলো।
তবে হালের বাংলাদেশে বিদেশি হত্যা তাজিয়া মিছিল ও শিয়া মসজিদে হামলা, নিরাপত্তা রক্ষী খুনসহ অন্যান্য রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রশমনে রিল্যাকজ্যান্টের ভূমিকা রাখতে পারে এই নির্বাচন আয়োজন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোর অন্তত এই রাজনৈতিক স্বস্তিদায়ক ভূমিকাটুকু অস্বীকার করার জো নেই। বিদ্যমান স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রকৃত ক্ষমতায়ন কতোটুকু হলো, গণতন্ত্র কিংবা ক্ষমতার কতোটুকু বিকেন্দ্রীকরণ কিংবা প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হলো তার স্পষ্ট জবাব না পাওয়া গেলেও প্রবলভাবে মেরুকৃত রাজনৈতিক ভেদবুদ্ধি-পীড়িত এই দেশের বৈরী বাতাসে কিছুটা স্বস্তির পরশ বোলায় এই জাতীয় নির্বাচন। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনেও তেমনটি মনে হচ্ছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর প্রায় সবাই এই নির্বাচনে অংশ নিতে চাইছে। প্রবল পারস্পরিক অনাস্থা থাকা সত্ত্বেও দলীয় রাজনীতিকে চাঙ্গা করার জন্যে সবাই সংযুক্ত থাকতে চাইছে এই স্থানীয় সরকার নির্বাচনে। ১৪ দলীয় জোটের প্রধান অংশীদার সরকারি দল আওয়ামী লীগকে আপাতদৃষ্টিতে আলাদাভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দেখা যাচ্ছে। প্রায় অর্ধযুগ ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে পৌর নির্বাচনে ভালো ফলাফল করার ব্যাপারে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, অর্থনীতি, অবকাঠামো, এনার্জি প্রভৃতি ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে বেশি সাফল্য অর্জিত হওয়ায় এই দলের নেতাকর্মীরা জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। কিন্তু, সমস্যা হলো প্রার্থী নির্বাচন। দলের প্রার্থী নির্বাচনে তৃণমূল নেতারা হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এদিকে গত পৌর নির্বাচনে জোটবদ্ধতার ফলাফল কাঙ্ক্ষিত না হওয়ার জোটের ব্যাপারে তৃণমূল নেতাকর্মীদের তেমন আগ্রহ নেই। তবে দিনশেষে পুরো ব্যাপারটি নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর। তবে যতোই দলীয় ব্যানারে নির্বাচন হোক না কেনো, স্থানীয় সরকার নির্বাচন বলে কথা। মেধা, সততা ও যোগ্যতারভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রার্থী বাছাই হলে উন্নয়ন সাফল্যের ধারাবাহিকতার যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে ভালো করা আওয়ামী প্রার্থীদের জন্য অনেকটাই সহজ বলে ধরে নেয়া যায়।
ভগ্নস্বাস্থ্য বিএনপির জন্যে এই পৌর নির্বাচন টনিকের কাজ করতে পারে। সাম্প্রতিক রাজনীতির দাবা খেলায় বারবার ভুল চাল দেয়ার কারণে বিএনপি দাবার কোর্টের সৈন্য-সামন্ত, হাতি-ঘোড়া-কিস্তি, মন্ত্রী—সব হারিয়ে কেবল রাজা নিয়ে বাজিমাত করতে চাইছে। এ মুহূর্তে দেশের ২৩৬টি জনপদে মেয়োরাল প্রার্থী দিতে পারলে, জয়-পরাজয় যাই হোক না কেনো, রাজনৈতিক অভিযাত্রায় দলটি এগিয়েই যাবে। চাঙ্গা হবে নেতাকর্মীরা। ব্যাপারটি বিএনপি ভালোভাবেই উপলব্ধি করছে বলে আলামত পাওয়া যাচ্ছে। চেয়ারপারসন নিজেই নির্বাচন মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। দলীয় প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনার জন্যে রোডম্যাপ তৈরি করছেন। বৃহত্তর ১৯ জেলায় নির্বাচন পরিচালনার জন্যে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে ১৯টি টিম।
বিএনপির এই উপলব্ধি ও তত্পরতা প্রশংসার দাবি রাখে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টিতে এর মূল্য অনেক। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলটির এই রাজনৈতিক বোধোদয় হলে হয়তো অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হতো। যাই হোক শুভবুদ্ধির উদয়ের প্রশ্নে বেটার লেইট দ্যান নেভার। বিএনপি জঙ্গিবাদী দোসরদের আছর কেটে অসাম্প্রদায়িকতা ও গণতন্ত্রের পথে পা বাড়ালে দলটির লাভ বৈ লোকসান নেই। তবে আসন্ন পৌরনির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তাদের মহাজোট নাকি বিএনপি ও তাদের জোট বিজয়মাল্য ছিনিয়ে আনবে সেটি বড়ো কথা নয়। বড়ো কথা হলো যে, স্থানীয় সরকারের নামে নির্বাচনটি হলো তা কতোটুকু কার্যকর হয়েছে। কতোটুকু ক্ষমতায়িত হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়েও এরকম সাজ সাজ রব পড়েছিলো। বিপুল উত্সাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন হয়। অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়। তুলনামূলক বিচারে যোগ্য প্রার্থীরাই নির্বাচিত হন। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের বেহাল দশা কতোটুকু লাঘব হয়েছে তা ঠাহর করা মুশকিল। এইতো সেদিন উত্তরের মেয়র আনিসুল হক আক্ষেপ করে বললেন যে, তার কোনো ক্ষমতা নেই রাস্তাঘাট পরিষ্কার করা ও কিছু ফুলের গাছ লাগানো ছাড়া। বস্তুত যুগপ্রাচীন স্থানীয় সরকার প্রশাসন এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউকের ন্যায়) এর মধ্যকার দ্বন্দ্ব না হলেও সমন্বয়হীনতা দিন শেষে স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে কাগুজে বাঘের ক্ষমতা দিয়েছে। অথচ উন্নয়ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌঁছাতে হলে শক্তিশালী স্বাধীন সরকার প্রশাসনের কোনো বিকল্প নেই।
শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকারকে আরো বেশি আন্তরিক হতে হবে। লোক দেখানো নির্বাচন করে প্রতিনিধিদের সাক্ষী গোপাল বানিয়ে বসিয়ে রাখা ঠিক হবে না। স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে নির্বাচিত পরিষদগুলো স্থানীয় সাংসদ কিংবা ক্ষমতাসীন দলের নেতা কিংবা সরকারি আমলাদের হস্তক্ষেপের কারণে স্বাধীনভাবে needs based প্রক্রিয়ায় কাজ করতে পারে না। স্থানীয় সরকারে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আপেক্ষিত গুরুত্ব সর্বদাই জাতীয় সংসদে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের তুলনায় কম থাকে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়ার রাজনৈতিকীকরণ হওয়ায় সরকারি দলসমর্থক প্রতিনিধিদের গুরুত্ব কিছুটা বাড়লেও সরকার বহির্ভূত দল সমর্থক প্রতিনিধিদের ভাগ্যে কি জুটবে তা বলাই বাহুল্য। তারপরও চুন খেয়ে মুখ পুড়িয়ে দধি দেখে ভয় পেলে চলবে না। ইনোভেশন এবং ট্রান্সপারেন্সি টেকসই উন্নয়নের পূর্বশর্ত। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজনীতির জামা জড়ানো একটি ইনোভেটিভ উদ্যোগ। স্বচ্ছতার সাথে সম্পাদিত হলে নিশ্চয়ই ভালো ফলাফল আসবে। আর বিষয়টি তো ম্যাগনাকার্টা নয়। সংশোধনের চাবি তো উদ্ভাবকদের হাতেই রইলো।
৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনের সমকালীন গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যেখানে প্রায় সর্বদাই একটি প্রশ্নবিদ্ধ প্রসঙ্গ হিসেবেই ঠাঁই পেয়ে আসছে। সেখানে এবারের নির্বাচনেও তা বহাল থাকবে। পরাজিতেরা কারচুপির অভিযোগ আনবেন বিজয়ীদের বিরুদ্ধে। তবে সেটি তেমন আমলযোগ্য নয়। আমলযোগ্য হলো, পাছে লোকে কি বলছে। সাধারণ মানুষের স্বস্তির জন্যই নির্বাচন কমিশনকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হবে এবং সে ব্যাপারে সরকারকে সব ধরনের লজিস্টিকস দিতে হবে। একেকটি সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্রের সিঁড়িতে একেকটি ধাপ উত্তরণ। এটি সরকারের জন্যও তেমনি জরুরি। সবচাইতে জরুরি দেশের গণতন্ত্রায়নের জন্য, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য। সর্বোপরি উন্নয়নের জন্য। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন একটি সময়োচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এর আয়োজন প্রক্রিয়া, অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া এবং সম্পাদন প্রক্রিয়া অহিংস এবং বাধাহীন হলে তার ইতিবাচক ফল অবশ্যই জাতীয় রাজনীতিতে পড়বে। সরকারের এই রাজনৈতিক নিরীক্ষা বাস্তবায়নের দায় সরকারেরই বেশি। তবে তাতে অবদান রাখার সুযোগ সবারই আছে। মূললেখা: ড. রাশিদ আসকারী
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
"ভগ্নস্বাস্থ্য বিএনপির জন্যে এই পৌর নির্বাচন টনিকের কাজ করতে পারে। "
-টনিক মাথায় লাগাতে হতে পাারে,