![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কথা ছিল তারা শুধু দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। কিন্তু সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি বেসামরিক সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার দায়িত্বও নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। দেশজুড়ে তারা ক্যাডেট কলেজ, ক্যান্টনমেন্ট স্কুল, পাবলিক স্কুল পরিচালনার পাশাপাশি এখন যুক্ত হয়েছে চিকিৎসা শিক্ষাদান এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পাঠদানে। শিক্ষার উন্নয়নেও অনন্য ভূমিকা রাখছে সেনাবাহিনী। চর্তুদিকে বেড়ে চলেছে সুনাম।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘আর্মি মেডিকেল কলেজ’। সারাদেশের ৫টি সেনানিবাসে চিকিৎসা শিক্ষা দেয়ার জন্য মেডিকেল কলেজগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাশাপাশি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্যও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘প্রয়াস’ চালু করেছে সেনাবাহিনী। সব মিলিয়ে অন্তত অর্ধকোটি লোক সেনাবাহিনী পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা’ অর্জন করে দেশসেবায় আত্মনিয়োগ করছে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সেনাসদস্যদের পেশাগত জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের প্রায় প্রতিটি সেনানিবাসে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ছেলে-মেয়েদের (প্রতিবন্ধী) জন্য ‘প্রয়াস’ স্কুল পরিচালনা শুরু করেছে সংস্থাটি। আর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের ৫টি সেনানিবাসে ‘আর্মি মেডিকেল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করে। আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ এবং আর্মি মেডিকেল কলেজ সশস্ত্র বাহিনীর আলাদা দুটি প্রতিষ্ঠান। দুটি প্রতিষ্ঠান থেকেই সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তির সন্তানদের চিকিৎসা শিক্ষা দেয়া হয়।
২০১৩ সালে যশোর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রংপুর সেনানিবাসে ‘আর্মি মেডিকেল কলেজ’ যাত্রা শুরু করে। ২০১৫ সালে কলেজগুলোর শিক্ষা কার্যক্রম এবং ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ৫টি মেডিকেল কলেজে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০১৯ সালে এ ৫টি মেডিকেল কলেজ থেকে প্রথমবারের মতো চিকিৎসা শাস্ত্রে স্নাতক ডিগ্রি দেয়া হবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে এ ৫টি মেডিকেল কলেজে ৫০ জন করে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। কিন্তু শিগগিরই এসব মেডিকেল কলেজে আরো আসন বাড়ানো হবে।
প্রতিষ্ঠার মাত্র ২ বছরের মধ্যেই আর্মি মেডিকেল কলেজে পাঠদান এবং অন্যান্য বিষয়ে তার ‘স্বকীয়তা’ দেখাতে শুরু করেছে। কেন আর্মি মেডিকেল কলেজ অন্যদের চেয়ে আলাদা- এমন প্রশ্নের জবাবে যশোর সেনানিবাসের ভেতরে অবস্থিত যশোর আর্মি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী অদ্রিতা ভোরের কাগজকে বলেন, হরতাল-অবরোধ হলেও এখানে এসবের প্রভাব নেই। এ মেডিকেল কলেজে পাঠদান যেমন চমৎকার তেমনি অন্যান্য বিষয়ও গর্ব করার মতো। তার মতে, আর্মি মেডিকেল কলেজের স্যানিটেশন, খাওয়া এবং টি ব্রেক অনেক ভালো। একই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী সুদীপ্ত জানান, মেডিকেল কলেজ হলেও পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড এবং খেলাধুলায় সমান গুরুত্ব দেয়া হয়। তার মতে, আর্মি মেডিকেল কলেজে ওই শিক্ষাই দেয়া হচ্ছে যে শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে মানবিক গুণাবলি ফুটে ওঠে।
কলেজটির এনাটমি বিষয়ের প্রভাষক ডা. নাদিয়া আক্তার বলেন, শ্রেণিকক্ষে যেসব বিষয় পাঠদান করানো হচ্ছে তা যদি শিক্ষার্থীরা ধারণ করে তাহলে একাডেমিক ক্যারিয়ার অত্যন্ত ভালো হবে। এমনকি ওই শিক্ষার্থী তার চিকিৎসক জীবনেও ভালো পারফর্ম্যান্স দেখাতে পারবে।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কর্নেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, আর্মি মেডিকেল কলেজ একটি আবাসিক মেডিকেল কলেজ। এর বেশকিছু বিশেষত্ব এটিকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে রেখেছে। তিনি বলেন, আদর্শ ডাক্তার তৈরি করতে যে শিক্ষা দরকার আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি।
প্রয়াস : বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (প্রতিবন্ধী) জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নানাবিধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সমাজে তাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করার আদর্শকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে ‘প্রয়াস’। ‘বিশেষ শিশু বিশেষ অধিকার’ এই ¯েøাগানকে ধারণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের মানসিক বিকলতা, অটিজম, বুদ্ধি, বাক, শ্রবণ, দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সম্বলিত বিশেষ শিশুদের সেবা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে স্বাভাবিক শিশুদের ন্যায় উপযোগী করে গড়ে তোলা।
যশোর সেনানিবাসের ‘প্রয়াস’ স্কুলের একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা গেছে, ১৭ বছরের কিশোরীটির নাম জান্নাতুল ফেরদৌস। সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। প্রয়াসে ভর্তি হওয়ার পর গত ৭/৮ মাসে ‘অ’ লিখতে শিখেছে। তার নাম জিজ্ঞেস করতেই লজ্জায় মাথা নিচু করে অস্পষ্টভাবে বলল ‘জান্নাতুল’। এ সময় তার শিক্ষক জানালেন, জান্নাতুল ছড়া বলতে পারে। কিন্তু শত অনুরোধেও জান্নাতুল ছড়াটি শোনায়নি, লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী ২০ বছরের মাহিউজ্জামান। তার সমস্যাটি হচ্ছে স্মরণশক্তি কম, ঘন ঘন ভুলে যাওয়া। যশোরের লিচুবাগান এলাকার বাসিন্দা মাহিউজ্জামান খুব একটা কথা বলতে আগ্রহী না। একইভাবে অন্য শ্রেণিতে গিয়েও প্রায় একই চিত্র দেখা গেল। প্রতিটি শ্রেণিকক্ষেই ১০/১২ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিটি শিশুর সঙ্গেই তাদের মা কিংবা বাবা সঙ্গে থাকছেন। আর প্রয়াস স্কুলের শিক্ষিকারা মনপ্রাণ ঢেলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। যশোর সেনানিবাসের ‘প্রয়াস’ স্কুলে বর্তমানে ১০৮ জন বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু রয়েছে। এর বিপরীতে ২৬ জন শিক্ষক এবং ২০ জন শ্রেণি সহকারী রয়েছেন।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সোহেলী সুলতানা লাভলী বলেন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুকে ফেলে না রেখে বড় পরিবেশে পাঠাতে হবে। বিশেষ বাচ্চা মানেই বিশেষ পরিবেশ। এখানে ‘মা’ ও ‘প্রতিবন্ধী শিশু’ দুজনকেই শেখানো হয়। আর এই পরিবেশ একমাত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত ‘প্রয়াস’ স্কুলই করতে পেরেছে। ‘প্রয়াস’ স্কুল শুধু এখানেই থেমে নেই, বিশেষ বাচ্চাদের পরিচর্যা করে সেরে তোলা হচ্ছে। এবং এরপর এদের কারিগরি (ভোকেশনাল) প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ : দক্ষিণবঙ্গের একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। ১৯৬৯ সালে যশোর সেনানিবাসে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ২৩টি, ¯œাতক ডিগ্রিতে ১৮টি, সম্মান ১০টি এবং ¯œাতকোত্তর শ্রেণিতে ৫টি বিষয়ে পাঠদান করানো হচ্ছে। কলেজটিতে সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিদের সন্তানরা পড়াশোনা করছে। বর্তমানে ৫ হাজারের কিছু বেশি শিক্ষার্থী কলেজটিতে রয়েছে। ২০০০ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে এ কলেজটি জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কলেজ নির্বাচিত হয়। আর ২০০২, ’০৩, ’০৪ এবং ২০১০ সালে ক্যান্টনমেন্ট কলেজগুলোর মধ্যে এটি শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায়ও কলেজটি বিরাট ভূমিকা রাখছে। ইতিমধ্যে কলেজটিতে সাংবাদিক ক্লাব, ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কোর্স, কম্পিউটার ক্লাব চালু করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ড্রাইভিং, নার্সিংসহ বিভিন্ন ধরনের ডিপ্লোমা কোর্স চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
জানতে চাইলে কলেজটির অধ্যক্ষ লে. কর্নেল রাব্বী আহসান ভোরের কাগজকে বলেন, দক্ষিণবঙ্গের সেরা কলেজ হচ্ছে ক্যান্টনমেন্ট কলেজ। এখানে পরীক্ষার ফলাফল ছাড়াও নৈতিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয়া হয়। শৃঙ্খলা, সময়ানুবর্তিতা, মানুষকে ভালবাসতে শেখা, নিজকে ভালোবাসা এবং গুরুজনদের সেবা করার শিক্ষাও দেয়া হয় ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামীর পৃথিবীতে যে ড্রাইভিং, কম্পিউটার এবং ইংরেজি জানবে সে কোনোদিন বিপদে পড়বে না এবং তার চাকরির অভাব হবে না। এ বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এখানে ড্রাইভিং কোর্সে ডিপ্লোমা চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর কম্পিউটার এবং ইংরেজি বিষয়টিও বর্তমানে বিশেষ পাঠদান করানো হয়।
©somewhere in net ltd.