নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন ইসি- স্বাগতম

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩

নবগঠিত নির্বাচন কমিশন ছিল বহুল প্রতীক্ষিত ও ব্যাপক প্রত্যাশিত। এর আগেও নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। কিন্তু সেই গঠন প্রক্রিয়া এবারের মতো জনআগ্রহের কেন্দ্রে থাকতে পেরেছে বলে আমার মনে হয় না। বিদায়ী নির্বাচন কমিশন গঠনেও মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটি 'সার্চ কমিটি' করেছিলেন; কিন্তু সেবারের সঙ্গে এবারের একটি বড় পার্থক্য হচ্ছে, সার্চ কমিটি বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছে। আরেকটি বিষয়ও লক্ষণীয়, রাজনৈতিক দলগুলো এ প্রক্রিয়ায় উৎসাহের সঙ্গেই অংশগ্রহণ করেছে।

সবমিলিয়ে সোমবার রাতে আমরা পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি নির্বাচন কমিশন পেয়েছি। একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চারজন কমিশনার। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নির্বাচন কমিশনে একজন নারী সদস্যও প্রযুক্ত হয়েছেন। আমরা প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে নারীদের পেয়েছি। সেই তালিকায় যুক্ত হলেন একজন নির্বাচন কমিশনার। নতুন নির্বাচন কমিশন দেখে ব্যক্তিগতভাবে আমি এক ধরনের স্বস্তিবোধ করছি এবং আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করছি যে, তারা একটি অংশগ্রহণমূলক, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সমর্থ হবেন।

প্রসঙ্গক্রমে আমি সার্চ কমিটিকেও সাধুবাদ জানাতে চাই। তারা খুবই দক্ষতা ও দ্রুততার সঙ্গে কাজ করেছেন। দশ কর্মদিবসের মধ্যে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিতে পেরেছেন। বঙ্গভবনের দিক থেকেও বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমরা দেখেছি, সর্বমোট ৩১টি রাজনৈতিক দলকে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বঙ্গভবন। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সব রাজনৈতিক দলের বক্তব্যই শুনেছেন এবং তাদের পাঁচজন করে নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্য ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করতে বলেছিলেন। আমার জানামতে, চারটি রাজনৈতিক দল বাদে অন্য সব দলই সে অনুসারে নাম প্রস্তাব করে জমা দিয়েছিল।

এটাও স্বীকার করতে হবে, সার্চ কমিটি যাতে সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পাদন করতে পারে, সে জন্য সরকারের দিক থেকেও সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। কমিটির কাজের সুবিধার জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব স্বয়ং সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেছেন। সার্চ কমিটি প্রথম দিন থেকেই, যদিও সেটা সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল, কাজে নেমে পড়েছিল। তারা দুই দফায় ১৬ বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং তাদের সুপারিশ গ্রহণ করেছেন। তারপর সার্চ কমিটি দফায় দফায় বসে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত শতাধিক ব্যক্তির তালিকা থেকে ২০ জনের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রণয়ন করেছে। লক্ষণীয়, সার্চ কমিটি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামের বাইরে যায়নি। এ নিয়ে নানা মত থাকতে পারে; কিন্তু আমার মত হচ্ছে, এতে করে বিতর্ক কমানো গেছে।

সার্চ কমিটি মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সোমবার সন্ধ্যায় যে ১০ জনের প্যানেল জমা দিয়েছিলেন, আমার মতে তারা সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততার স্বাক্ষর রেখেছেন। ব্যক্তিগতভাবে সেখানে আমার নামও ছিল। আমি মনে করি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্বীয় বিবেচনায় তাদের মধ্য থেকে সবদিক থেকে উপযুক্তদেরই নির্বাচন করেছেন। সার্চ কমিটি কেবল প্যানেল তালিকা জমা দেওয়া নয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমতিক্রমে সেটা সংবাদমাধ্যমের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশও করেছে। তার মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আমরা দেখেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশক্রমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নতুন কমিশন গঠন ও ঘোষণা করেছেন। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে।

আমরা জানি, বিদায়ী কমিশনের বৃহৎ অংশ ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ, যেদিন আমার এ লেখা পাঠকের কাছে, দায়িত্বের মেয়াদ শেষ করবেন। অবশ্য একজন থেকে যাবেন ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। ফলে নতুন কমিশনের শপথ গ্রহণে আরও কয়েকদিন লাগতে পারে।

আমি মনে করি, নতুন কমিশনের কাজ হবে এর মধ্যে নিজেদের মধ্যে জানাশোনা বাড়ানো। কারণ প্রথম থেকেই তাদের 'জাম্প স্ট্যার্ট' কাজ শুরু করতে হতে পারে। তাদের জন্য অচিরেই অপেক্ষা করছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন, রয়েছে জাতীয় সংসদের একাধিক আসনের উপনির্বাচন। পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার কাঠামোর কিছু নির্বাচনও সম্পন্ন করতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশনকে। আমি মনে করি, এসব নির্বাচনের মাধ্যমে আসলে জাতীয় নির্বাচনের জন্য গ্রুমিংয়ের কাজ সম্পন্ন হবে, অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হবেন।

সবমিলিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমি আশাবাদী। এই কমিশন একজন অভিজ্ঞ কমিশনার পেয়েছে। তিনি এক-এগারো পরবর্তী নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করেছেন। পরবর্তী সময়ে আফগানিস্তানের মতো ঝঞ্ঝামুখর একটি দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে কাজ করেছেন। তার অভিজ্ঞতা ও মুনশিয়ানা নতুন কমিশনের জন্য ভালো হবে। নির্বাচন কমিশনে নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির দাবিও আমরা দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছিলাম। আমরা দেখেছি, রাজনৈতিক দলগুলোও সেই দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনার সময়। এসব দাবির প্রতি সাড়া হিসেবে নতুন কমিশনে যুক্ত হওয়া নারী সদস্যকে আমি অভিনন্দন জানাই। তিনি ইতিহসের অংশে পরিণত হলেন। নতুন নির্বাচন কমিশনের অন্যদেরও মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতা নির্বাচন কমিশনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
শুধু একটি পর্যবেক্ষণ_ নতুন নির্বাচন কমিশনে একাডেমিশিয়ানদের কাউকে যুক্ত করলে আরও ভালো হতো। আমরা বিভিন্ন সময়ে বিচারপতি, আমলা, সামরিক কর্মকর্তাদের দেখেছি; তাদের সঙ্গে অধ্যাপকদের অভিজ্ঞতা যুক্ত হলে নতুন মাত্রা যুক্ত হতো। নাগরিক সমাজের সদস্যদেরও যুক্ত করা উচিত বলে আমি মনে করি। নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য এটা একটি 'গ্রে এরিয়া' হিসেবে থাকবে। ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা এই প্রস্তাব ভেবে দেখতে পারেন।

ইতিমধ্যে নতুন কমিশনকে শাসক দলের পক্ষে স্বাগত জানানো হয়েছে। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি এ ব্যাপারে প্রথমে প্রতিক্রিয়া জানাতে চেয়েও মঙ্গলবার পর্যন্ত সেটা পিছিয়ে দিয়েছে। আমার ধারণা, বিএনপি এক ধরনের চাপ বজায় রাখার কৌশল নিতে পারে। কিন্তু বাস্তবে এই নির্বাচন কমিশনকে মেনে নিয়ে তাদের অধীনেই নির্বাচনে যেতে হবে। কারণ বিএনপি মুখে যা-ই বলুক না কেন, নির্বাচনমুখী দল হিসেবে তাদের নির্বাচনে আসতেই হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তারা যে ভুল করেছে, এ ব্যাপারে খোদ হাইকমান্ডের দ্বিধা নেই বলে আমি মনে করি। এ ছাড়া এখন তো দলটির দেয়ালে পিঠ ঠেকানো অবস্থা; এখান থেকে বের হতে হলে নির্বাচনে অংশগ্রহণই একমাত্র পথ।

নতুন নির্বাচন কমিশনকে বলব, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া যা-ই হোক, হতচকিত হলে চলবে না। বরং ঠাণ্ডা মাথায় নিজেদের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। কেবল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নয়; ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন মহল থেকেও নির্বাচন কমিশন নিয়ে নানা কথাবার্তা হতেই পারে। যেমন ইতিমধ্যে আমি কাউকে কাউকে নতুন নির্বাচন কমিশনের সাবেক আমলাদের 'তোফায়েল ক্যাডার' হিসেবে আখ্যায়িত করতে শুনেছি। একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তার উপস্থিতি নিয়েও নানা জল্পনা-কল্পনা হতে পারে।

আশঙ্কা, জল্পনা-কল্পনা যা-ই থাকুক; আমি দেখতে চাই নতুন নির্বাচন কমিশন শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেছে। সবাইকে আস্থার মধ্যে নিয়ে, সংবেদনশীলতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক সংস্থার জন্য সেরা নীতি হতে পারে সমালোচনার জবাব মুখে না দিয়ে কাজের মাধ্যমে দেওয়া।

নতুন নির্বাচন কমিশনের অন্তত দু'জনকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তাদের মধ্যে একজন জনপ্রশাসনে আমার মায়ের সহকর্মী ছিলেন। আমি বিশ্বাস করি, নতুন নির্বাচন কমিশনে যুক্ত ব্যক্তিদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা জাতিকে একটি সুন্দর সাধারণ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে। নির্বাচন কমিশনের মর্যাদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। দেশের ভাবমূর্তি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে উজ্জ্বল হবে। ইতিমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আমি গত আড়াই দশক ধরে নির্বাচন নিয়ে কাজ করছি। ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজের ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার দুয়ার খোলা থাকবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭

আমি মিয়াবাড়ির ছেলে বলেছেন: নতুন নির্বাচন-কমিশনারদের সাধুবাদ। তারা দেশের জন্য কাজ করবেন এটাই সবার আশাবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.