![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হইয়াছে। নিস্তরঙ্গ সনাতনী-আদিম গ্রামে এখন আধুনিক নানান অনুষঙ্গ উপস্থিত। বাংলাদেশের গ্রাম বদলাইয়া যাইতেছে। এই পরিবর্তনের সকল কিছুই যথার্থ হইয়াছে, এমন বলা যাইবে না। শহরকেন্দ্রিক আধুনিকতার অনেক মন্দ উপাদান গ্রামে অনুপ্রবেশ করিতেছে। কিন্তু ইতিবাচক পরিবর্তনের পাল্লাই ভারী হইবে। সবচাইতে বড় বিষয় হইল, মানুষের দারিদ্র্য দূরীভূত হইতেছে। সত্তর-আশির দশকের তুলনায় গ্রামীণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্য এখন অধিক শক্ত। অনাহারে মানুষ দিনযাপন করিতেছে, এমন কথা বহু বছরই আর শোনা যায় না। বিদেশ হইতে পুরুষ শ্রমিক প্রেরিত রেমিট্যান্সের প্রবাহ গ্রামীণ সচ্ছলতাকে জোরদার করিয়াছে। রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের কারণে গ্রামীণ নারীরাও উপার্জনক্ষম হইয়া উঠিয়াছে। নানান উন্নয়ন প্রকল্প ও নগরায়ণের কারণে আবাদী জমির উপর চাপ পড়িলেও, কৃষি উত্পাদন হ্রাস না পাইয়া পূর্বের তুলনায় কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাইয়াছে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করিয়াছে। কৃষিমুখী নানান শিল্প বিকশিত হইতেছে। মোবাইল ব্যাংকিং গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনিতে কার্যকর হইয়াছে। সার্বিক কর্মকাণ্ডের ফলে নূতন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হইয়াছে এবং বেকারত্ব হ্রাস পাইতেছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার বৃহত্ অংশই তরুণ, তারুণ্যের এই শক্তি অর্থনীতিতে অবদান রাখিতেছে।
মানুষের উদ্যোগ ও উন্নয়নের আকাঙ্ক্ষা নিশ্চয়ই এই পরিবর্তনে অন্যতম অনুঘটক। কিন্তু সরকারের উন্নয়ননীতিকেও এইক্ষেত্রে সাধুবাদ প্রদান করিতে হইবে। বিশেষ করিয়া গ্রামভিত্তিক উন্নয়নে সরকারের সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্যোগ রহিয়াছে। ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি এইক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। ইহা ছাড়া দারিদ্র্যবিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচির মধ্যে রহিয়াছে ‘চরজীবিকায়ন কর্মসূচি-২’, ‘সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন কর্মসূচি’, ‘পল্লি জনপদ (উন্নত আবাসন) সৃজন’, ‘ইকোনমিক এমপাওয়ারমেন্ট অব দ্য পুওরেস্ট’ ইত্যাদি। বর্তমানে দেশব্যাপী গড়িয়া উঠা কৃষিভিত্তিক খামারের সংখ্যা প্রায় ১৯ লক্ষ। তাইতো স্বাদু পানির মত্স্য উত্পাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ। মাংস-দুধ-ডিম ইত্যাদি প্রাণিজ খাদ্য উত্পাদনের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্মুখবর্তী। ছাগলের মাংস উত্পাদনেও বাংলাদেশ বিশ্বে চতুর্থ এবং সার্বিকভাবে মাংস উত্পাদনে পঞ্চম। কৃষিঋণ সহজ হইবার কারণে কৃষিজ উত্পাদনের চাকা সম্মুখে ধাবমান রহিয়াছে। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারগুলির (ইউডিসি) মাধ্যমে গ্রামের সাধারণ মানুষ নানান সেবা গ্রহণ করিতেছে, যাহার মাধ্যমে তাহাদের জীবন যেমন সহজ হইয়াছে, তেমনি তাহাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাহা ফলপ্রসূ হইয়াছে। ‘জনগণের দোরগোড়ায় সেবা’ এই স্লোগানকে সামনে রাখিয়া ইউডিসিগুলি শুরু করা হইয়াছে। ইউডিসির মাধ্যমে যেইসকল সেবা গ্রামের মানুষ পাইতেছে তাহার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হইল: জমির পর্চা নির্ধারণ, জীবন বীমা পলিসি প্রণয়ন, পল্লী বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, সরকারি ফরম পূরণ, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল প্রাপ্তি, অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরম পূরণ, অনলাইন জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, ভিজিএফ-ভিজিডি তালিকা, নাগরিক সনদ প্রাপ্তি, কৃষি তথ্য ও স্বাস্থ্য পরামর্শ প্রাপ্তি প্রভৃতি। অন্যদিকে ইউডিসি হইতে প্রাপ্ত বেসরকারি সেবাসমূহ হইল: মোবাইল ব্যাংকিং, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, চাকুরির তথ্যপ্রাপ্তি, ভিসা আবেদন ও ট্র্যাকিং, ভিডিও কনফারেন্সিং প্রভৃতি। আধুনিক প্রযুক্তিকে এইরূপ প্রান্তিক পর্যায়ে লইয়া যাইবার ঘটনা খুব কম উন্নয়নশীল দেশেই দৃশ্যমান রহিয়াছে। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ স্লোগান বাস্তবায়ন হইবার পথে। গ্রামীণ উন্নয়নের এই ধারাকে অধিক বেগবান করিতে হইবে এবং উন্নয়নের আওতায় যাহাতে গ্রামের সকল মানুষই অন্তর্ভুক্ত হয় সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখিতে হইবে। বৈষম্যমুক্ত একটি গ্রামীণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করিতে পারিলে সত্যিকার অর্থে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে বাংলাদেশ বিশ্বে অধিষ্ঠিত হইবে।
২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৯
আহা রুবন বলেছেন: গ্রামের অভিজাত, ভদ্র, শিক্ষিতদের চেয়ে চাষি, মজুরদের হস্তে বর্তমানে অধিক পরিমাণ অর্থের (বিদেশি বা ব্যবসায়ের) সরবরাহ রহিয়াছে। মাথায় বিদ্যা নাই বলিয়া তাহারা ধরাকে সরা জ্ঞান করিতেছে। ইহাদের সন্তানেরা বাইক চালাইয়া, ইয়াবা খাইয়া, মেয়ে-ঘটিত কর্ম সাধন-উত্তর পরিবেশ তাতাইয়া রাখিতেছে। এই রূপ চলিতে থাকিলে গ্রামীণ সমাজ কাঠামো অচিরেই দূরীভূত হইবেক।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:১৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
"বিদেশ হইতে পুরুষ শ্রমিক প্রেরিত রেমিট্যান্সের প্রবাহ গ্রামীণ সচ্ছলতাকে জোরদার করিয়াছে। "
-বিদেশ থেকে টাকা তো পাঠাচ্ছে, ওদের বউরা কি আপনার সাথে জীবন কাটাচ্ছে?