![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতা ভবিষ্যরৎ প্রজন্মও যেন জেনে বড় হয়, সে লক্ষ্যেে ২৫ মার্চ গণহত্যা্ দিবস হিসেবে পালনের উদ্যো গ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন।
তিনি সংসদে বলেছেন, “২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস, এতে কোনো সন্দেহ নাই। দেশবাসীকে আজকে সোচ্চার হতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানা উচিৎ আমাদের ইতিহাস।”
বুধবার সংসদ অধিবেশনে বাণিজ্য্মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ একাত্তরের ইতিহাস বিকৃত করে পাকিস্তানে প্রকাশিত একটি বই সেদেশে বাংলাদেশের হাই কমিশনে পাঠানোর বিষয়টি তুলে ধরে তার নিন্দা জানিয়ে এই আলোচনার সূত্রপাত করেন।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যিতম সংগঠক তোফায়েল বলেন, বুধবার রাজধানীতে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির একটি অনুষ্ঠানে তিনি করাচি থেকে প্রকাশিত জুনায়েদ আহমেদের ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ, মিথস এক্সপ্লোডেড’ বইটি দেখেন।
“আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, ৩০ লাখ শহীদ সব কিছুর বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে মিথ্য তথ্য উত্থাপন করে এই বইটি ওদের আইএসআই এর ডিরেক্টর জেনারেল আমাদের হাইকমিশনে পাঠিয়েছে।”
“আমি এর নিন্দা জানানোর জন্য দাঁড়িয়েছি। ৩০ লক্ষ লোক শহীদ। সমস্ত ঘটনাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে...” ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলার পর একাত্তরে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার বিভিন্ন ছবি দেখান তোফায়েল।
তিনি বলেন, “রিকশাওয়ালার মৃতদেহ পড়ে আছে। একই ছবিটাকে তারা (বইটিতে) ক্যাপশন করেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিবাহিনীর ম্যাসাকার। হাজার হাজার ডেডবডি পড়ে আছে। লিখেছে, মুক্তিবাহিনী হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছে।”
এরপর তোফায়েল ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব করেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী তার বক্তব্য শেষে বসে পড়তেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উঠে দাঁড়ান।
তিনি বলেন, “২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে যে গণহত্যা তারা (পাকিস্তানি বাহিনী) শুরু করেছিলো। সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার, চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে...তাদের কে হত্যা করে পুলিশ বাহিনীকে হত্যা করল। পিলখানায় ইপিআর, আনসার বাহিনী, সাধারণ জনগণকে যেভাবে হত্যা করেছে। আমি মনে করি আমাদেরকে উদ্যোগ নিতে হবে।
“২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আমাদের যথাযথভাবে পার্লামেন্টে প্রস্তাব আনতে পারি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাকে প্রমাণসহ দিয়ে প্রচার করব, যাতে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন হয়।”
নিয়মিত নিজের প্রশ্নের জবাব দিলেও বুধবার প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। অনির্ধারিত এই আলোচনায় শেখ হাসিনা দাঁড়ালে সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়ে তা সমর্থন জানান।
২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার নজির তুলে ধরে এরকম অনেক ছবি
বঙ্গবন্ধুকন্যাপ শেখ হাসিনা একাত্তরের ২৫ মার্চের স্মৃতি তুলে ধরে বলেন, “বাবাকে গ্রেপ্তার করা হল। এর কিছুদিন পরে আমার মা, আমি আমার ভাই জামাল, রাসেল, রেহানা সবাইকে গ্রেপ্তার করা হলে। বন্দিখানায় থেকে অনেক কিছুই দেখেছি। স্যাঁতসেঁতে বাড়িতে রেখেছে। সারা বাংলাদেশ জুড়ে শুধু গণহত্যা না। রাজাকার, আল বদর বাহিনী তাদের হাতে আমাদের মেয়েদের তুলে দিয়েছে।
“যেভাবে গণহত্য করেছে। তাদের কথা ছিল- এদেশের সবাই হিন্দু হয়ে গেছে তাদের মারো। আওয়ামী লীগ খুঁজে বের করে শেষ কর। তাদের কথা ছিল- মানুষ চাই না মাটি চাই।”
“ঢাকা শহরে বিভিন্ন রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে দেখেছি। নিজের চোখে দেখেছি। এগুলো নিজের চোখে দেখা। যে বাড়িতে আমাদের বন্দি করে রেখেছিল, ঠিক তার সামনের বাড়িটা, সেখানে মেয়েদের নিয়ে এসে রেপ করে। তাদের চিৎকার কান পাতলে শোনা যেত। বাচ্চা বাচ্চা মেয়ে। ১৩-১৪ বছরের মেয়ে।”
ওই সময়ে স্মৃতি থেকে শেখ হাসিনা আরও বলেন, “একেকটা পরিবার শেষ করে দিয়েছে। একেকটা গ্রাম শেষ করে দিয়েছে। প্রত্যেক মানুষ দেখেছে। এখন পাকিস্তান বই লিখে তাদের কৃতকর্ম, তারা যে গণহত্যা চালিয়েছে, সেগুলোকে উল্টো মুক্তিবাহিনীর ওপর দোষ দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করছে। পাকিস্তানের জন্য লজ্জার বিষয়। এই লেখার সাহস তারা কোথা থেকে পেল? এতবড় দুঃসাহস কোথা থেকে আসল?
“বই ছাপিয়ে আবার পাঠায়! আজকে তারা গণহত্যাকে চাপাতে চায় মুক্তিবাহিনীর ওপর এটা কোনোদিনই গ্রহণযোগ্য না। তারা যে গণহত্যা করে অপরাধ করেছে তাদের মাফ চাইতে বলা হয়েছে। মাফ তো চায়নি, উল্টো দোষ চাপায়। তাদেরকে ধিক্কার জানাই।”
“বই প্রকাশ করে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে। এর নিন্দা জানাই। আনুষ্ঠানিকভাবে জানাব,” বলেন সংসদ নেতা।
তার বক্তব্যের পর স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, “২৫ মার্চে গণহত্যা দিবস পালনের দাবি সম্বলিত একটি প্রস্তাব আমি ইতোমধ্যেই পেয়েছি। আমাদের একজন মাননীয় সংসদ সদস্য বিষয়টি দিয়েছেন। আমরা অগ্নিঝরা মার্চের যে কোনো একদিন সংসদের বৈঠকে আলোচনা করব।”
এসময় প্রধানমন্ত্রীসহ সব সংসদ সদস্য টেবিলে চাপড়ে উল্লাস প্রকাশ করেন।
স্পিকার বলেন, “মাননীয় মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ যে প্রস্তাবটি দিয়েছেন, আপনার প্রস্তাব এবং সেই আনীত প্রস্তাব একই বিষয়ে। কাজেই এটার ওপর আলোচনা করব।”
©somewhere in net ltd.