![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রধানমন্ত্রী মাঝে মাঝে এমন সব সত্য বলেন, যা অনেকে নিতে পারেন না। নিতে পারার কথাও নয়। কারণ তিনি সোজাসাপ্টা বলতে ভালবাসেন। একুশে পদক দেওয়ার সময় তিনি যে কথাগুলো বলেছেন, তার তাৎপর্য বোঝা জরুরি। পাকিস্তান পরাজিত হলেও তার ক্রোধ ও হতাশা পরাজয় মানতে নারাজ। এখনো তারা নানাভাবে আমাদের অপমান করতে সচেষ্ট। পাকিস্তান এখন নতুন তর্ক চাপাতে চাইছে। গণহত্যার দায় নাকি আমাদের। তাদের ভাষায়, একাত্তরে এ দেশে বসবাসরত বিহারিদের নাকি গণহারে হত্যা করেছিল মুক্তিযোদ্ধারা। এই তর্ক বা কূটবিতর্ককে আপাতত আপনি চাইলে উড়িয়ে দিতে পারেন, কিন্তু এখনই এর সমুচিত জবাব দিতে না পারলে এ-ও ভোগাবে অনেক দিন।
কী হয়েছিল একাত্তরে? আমরা যারা কিশোরবেলায় যা দেখেছি, তাতে কি আর ইতিহাস রচনা করা যায়? অথচ ইতিহাসের পাতায় পাতায় আছে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র আর নির্মমতা। প্রথমেই স্মরণ করব বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের কথা। ৭ মার্চের সে অসাধারণ কালজয়ী ভাষণে জাতির জনক স্পষ্ট বলে দিয়েছিলেন, এই বাংলায় বাঙালি, নন-বাঙালি বিহারি সবাই ভাই ভাই। তার এই সতর্কবাণী ও সাবধানতা আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতি পদে পদে পালন করেছিলেন। বাধ্য না হলে কোথাও বিহারিদের গায়ে হাত তোলেনি কেউ। উল্টো তারাই পাকসেনাদের মদদে সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সৈয়দপুরের মতো বিহারিপ্রধান জায়গায় বাঙালিরা নিজেদের পাহারা দিয়ে বাঁচাত। কে না জানে জাতিগতভাবে আমরা চেতনা ও ভালবাসায় অসীম হলেও আমাদের শারীরিক যোগ্যতা তত প্রবল নয়। আবহাওয়া প্রকৃতি আর মনোগত দিক থকে আমরা সব সময় আর্দ্র আর ভালবাসার মানুষ। আপাতত দেশে যত হাঙ্গামা-বিরোধ বা মারামারি তার পেছনে আছে রাজনীতি। আছে পাকিস্তান ও প্রতিবেশী দেশগুলোর ইন্ধন। আছে মানুষের লোভ-লালসা। অথচ সাধারণ বাঙালি এখনো ভীতু আর ঘরকুনো। ভালো করে ভাবলে অবাক লাগে, কীভাবে এই জাতি একটি প্রাণঘাতী যুদ্ধে অংশ নিতে পেরেছিল। সন্দেহ নেই এর পেছনে ছিলেন অকুতোভয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মোহনী ক্ষমতা। ছিল তাজউদ্দীন আহমদের অসাধারণ নেতৃত্ব।
সে বাঙালিকে এমন দোষে দুষ্ট ভাবার পেছনে আছে গভীর চক্রান্ত। যারা এ দেশের ইতিহাস পাল্টে দিতে চেয়েছিলেন, যারা ভেবেছিলেন বাংলাদেশ চলবে পাকি-ভাবধারায় তারা আজ হীনবল। তাদের রাজনীতি ধুঁকছে। এ দেশে বহু বছর ধরে পাকি-রাজনীতি, পাকি-ক্রিকেট, পাকি-পোশাক আর জামায়াতি আদর্শ চালিয়েও তারা পার পায়নি। সময়ের হাত ধরে ইতিহাস আওয়ামী লীগকে আবারও দেশ শাসনে নিয়ে আসার পর যা কিছু দুর্ভোগ, দুর্যোগ আর নোংরামিতা বাদ দিলে শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় দেশ পৌঁছে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। এই উচ্চতা কেবল দেশের আর্থিক উন্নয়ন বা অর্থনৈতিক প্রগতিতেই নয়, তিনি পাপমোচনের বেলায় এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন। জামায়াতের যুদ্ধাপরাধী নেতারা ঝুলে যাওয়ার রাগ ও বেদনা পাকিস্তান সহজভাবে নিতে পারেনি। পারেনি বলেই তাদের সংসদে তারা এ নিয়ে বাজে কথা বলেছিল। ইমরান খানের মতো পপুলার ক্রিকেটারও পিছিয়ে থাকেননি। তাদের এক কথা, এগুলো নাকি পাকিস্তানিপ্রেমীদের ওপর প্রতিশোধ। আমাদের দেশে কার বিচার হবে, আইন কাকে শাস্তি দেবে, কাকে ঝোলাবে তাতে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়া থাকার কারণ কোথায়? দুনিয়ার বহু দেশে স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছে। যারা পরাজিত হয়েছিল, তারা বিজয়ীদের মেনে নিয়ে সরে গেছে। এই সেদিন আমি ভিয়েতনাম ঘুরে এসেছি। আমাদের চেয়েও দীর্ঘ আর ভয়াবহ যুদ্ধে তারা মার্কিনিদের মতো দুশমনকে পরাজিত করে স্বাধীন হওয়া এক জাতি। উত্তর ও সাউথ ভিয়েতনামের সেই মরণপণ যুদ্ধের ইতিহাস আজ কেবলই অতীত। সায়গন তার নাম পাল্টে কবেই হয়ে গেছে হো চি মিন সিটি। কোথাও দেখলাম না কোনো ষড়যন্ত্র বা দেশ ও জাতিকে অপমান করার অপপ্রয়াস। বিজিতরা বিজয়ীর গৌরবকে নিজের মতো করে মেনে নিয়ে গড়ে তুলছে আরেক ভিয়েতনাম। আমাদের দেশে সে সুযোগ থাকার পরও দালালরা তা নেয়নি। বরং তারা দেশ ও জাতিকে ক্রমাগত দুর্বল করে আবারও পাকিস্তানের ছায়ারাষ্ট্র করতে চেয়েছিল। শেখ হাসিনা সে খায়েশ চিরতরে ঘুচিয়ে দেওয়ার পথ ধরায় এরা এখন আবারও পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে আঘাত হানতে চাইছে।
আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও এই বিহারি নামের দালালরা আঘাত হানতে ভুল করেনি। এ দেশের মেধাবী সন্তান জহির রায়হানের তিরোধান এবং আর কোনোদিন ফিরে না আসা কাদের কাজ সবাই জানে। দিবালোকের মতো স্পষ্ট, এসব ঘটনার পরও আমরা বিহারিদের আমাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে দিইনি। তাদের প্রভু পাকিস্তানও ফেরত নেয়নি তাদের। এত যে দরদ, কই একজন বিহারিকেও তো ফেরত নেয়নি পাকিরা। তারা তাদের দালাল রাজা ত্রিদিব রায়কে জায়গা দিলেও বিহারিদের নেয়নি। অথচ এই ত্রিদিব রায় মরণের আগে জন্মভূমিতে ফিরতে চেয়েছিলেন একবারের জন্য। বাংলার মাটি সেই ঘৃণিত মানুষটির মরদেহ বুকে নিয়ে কলঙ্কিত হয়নি। এই ইতিহাস পাকিদের অজানা নয়। তাদের এ-ও জানা, আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমানের কবরে তারা গাদ্দার ফলক ঝুলিয়ে রেখেছিল। চিরকাল ঔদ্ধত্য আর নিয়ম না-মানা এক দেশ পাকিস্তান। এর প্রতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে আছে বিশ্বাসঘাতকতার ছাপ। এদের ভাগ্য এখন সর্বনাশের দড়িতে ঝুলছে।
নিজেরা তো গেছেই, এখন আমাদের উন্নয়ন আর অগ্রগতিকেও তারা ভালো চোখে দেখে না। তাদের জন্মের শত্রু আমরা। সাম্প্রদায়িকতা সেনাশাসন আর অগণতান্ত্রিকতার দেশটি থেকে যুদ্ধ করে বেরিয়ে এসেছি আমরা। আমাদের চোখ রাঙানোর কোনো সুযোগ নেই। নেই সেই স্পর্ধাও। বাংলাদেশ তার আপন মহিমায় গৌরবের পথ ধরে ধাবমান এক দেশ। থাক হাজারো সমস্যা। থাক হাজারো ভুল বোঝাবুঝি। এর পরও বাংলা-বাঙালি ঐক্যবদ্ধ। তার দেশ চেতনা আর দেশের প্রতি টান চোখের পানিতে শুদ্ধ। আমি জাতীয় সংগীত শুনে কোনোদিন কোনো পাকিস্তানি বা ভারতীয়কে কাঁদতে দেখিনি। তাদের জাতীয় সংগীতের ভাবও উদ্দীপনার শুধু। আমাদের আছে বেদনা, ভালবাসা আর শক্তির প্রেরণা। এই দেশ, এই মাটি, এই জাতি ভালবাসায় যেমন মোমের মতো নরম, প্রতিবাদেও তেমনি লোহার মতো দৃঢ়।
পাকিস্তান বোঝে না। যখন বোঝে, যখন মার খায়, যখন অপমানিত হয় তখন টের পায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমরাও কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই, গণহত্যার ব্যাপারে এখনো মাফ চাননি, সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে। এমন সময় আসবে তখন কূলও পাবেন না। বাংলাদেশের শক্তি বুঝতে না পারলে কী হয়, সে তো একাত্তরেই টের পেয়েছেন। এবার আমরা আরও অনেক শক্তিশালী। আন্তর্জাতিকভাবেও আজ আমরা উজ্জ্বল। গণহত্যার দায় নিয়ে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য মাফ চেয়ে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ভালো রাখুন। আমাদের নিজেদের মতো থাকতে দিন।
সাবধান পাকিস্তানি ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি এখনো। আছে দেশীয় রাজনৈতিক দালালরা। বাঙালি এই একুশের মাসে আরও একবার বাংলা-বাঙালির নামে ঐক্যবদ্ধ হও। জবাব দেওয়ার সময় এখন।
অজয় দাশগুপ্ত, কলাম লেখক, সিডনি থেকে
২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: হুম-
৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০৩
কালীদাস বলেছেন: একটা ব্যর্থ দেশ। হেরা লাফাইলেই বা কি করতে পারব? আইজকা দেখলাম প্লেনে সাতজন খাড়ায়া ফ্লাই করছে
আর আপনে যেই উদাহরণগুলো লেখছেন এগুলো বেশিরভাগই হাস্যকর। মতিউর রহমানের কবরে হেরা গাদ্দার লেখব এইটাই কি স্বাভাবিক না? আমরা যেমন কয়েকটা শুয়ররে রাজাকার কই বাংলাদেশের এগেইনস্টে গেছিল বইলা, সেমন মতিউরও হেগর দেশ ফাকিস্টানের বিরুদ্ধেই তো গেছিল। আপনে নিশ্চয়ই আশা করতে পারেননা যে মতিউর রহমানের কবরে হেরা ফুলচন্দন দিব।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৫০
চাঁদগাজী বলেছেন:
পাকিস্তান এই মহুর্তে আমাদের কোন ক্ষতি করছে না; অকারণে ম্যাও প্যাও করে লাভ নেই।
প্রধানমন্ত্রী ভালো কি করছেন, সেটা শুনতে চাই।