![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একাত্তরের ২৫ মার্চ 'অপারেশন সার্চলাইট'র নামে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র ঘুমন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পাক-হানাদার বাহিনীর ওই বর্বর হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে দিনটিকে 'গণহত্যা দিবস' পালনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। শনিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর পর কার্যপ্রণালি-বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় এই প্রস্তাব আনেন জাসদের সংসদ সদস্য শিরীন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ ৫৬ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন এবং কণ্ঠভোটেই প্রস্তাবটি পাস হয়। ফলে এখন থেকে ২৫ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে। ২৩ বছরের পাকিস্তানি শোষণ থেকে বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতেই 'অপারেশন সার্চলাইট' চালানো হয়েছিল, যা নানাভাবেই প্রতীয়মান হয়েছে। আর ওই কালরাতের গণহত্যা বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতেও সহযোগিতা করে। এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে দিবসটি পালনের স্বীকৃতি পাওয়ায় একদিকে তা যেমন ওই রাতে নিহত শহীদদের প্রতি বাঙালি জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের একটি ক্ষেত্র তৈরি হলো, অন্যদিকে শহীদদের প্রতি বাঙালি জাতি ঋণমুক্তির পথেও এগিয়ে গেল।
অনস্বীকার্য যে, বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসে ২৫ মার্চ একটি বেদনাবিধুর অধ্যায়। পূর্ববাংলার নিয়ন্ত্রণকারী তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার লক্ষ্য ছিল যতদিন বাঙালিকে তারা পূর্ণ বশীভূত করতে না পারছে, ততদিন একের পর এক 'গণহত্যা'র মধ্য দিয়ে পুরো বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করে যাওয়া। তাই কসাইখ্যাত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অত্যন্ত দম্ভভরে উচ্চারণ করেছিলেন, সব মানুষের মৃত্যু হলেও, বাংলার মাটি চাই। অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজারবাগে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে বাঙালির রক্তে রঞ্জিত করা হয় বাংলার মাটি। তবে গ্রেপ্তারের আগেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধযুদ্ধ। পাকিস্তানের শোষণ-শাসন আর বৈষম্যে অতিষ্ঠ বাঙালি জাতি এ প্রতিরোধের জন্যই উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছিল।
বিশ্বের নানা দেশে বেদনা ও গৌরবের বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে। বাঙালিরও রয়েছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। ভাষা আন্দোলন, ১৯৫২ সালে যার বিপুল স্ফুরণ ও আত্মত্যাগ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১ সালে বিপুল আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম। মূলত একাত্তরের সূচনাই হয়েছিল বায়ান্নতে। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ। তিনি স্পষ্টই বলেছিলেন_ 'শহীদের রক্তের ওপর দিয়ে, পাড়া দিয়ে, আরটিসিতে মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। অ্যাসেম্বলি কল করেছেন, আমার দাবি মানতে হবে প্রথম। সামরিক আইন মার্শাল ল উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে। যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তার পরে বিবেচনা করে দেখব আমরা অ্যাসেম্বলিতে বসতে পারব কি পারব না। এর আগে অ্যাসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না।' মূলত বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাঙালির ঐক্যবদ্ধ হওয়া এবং বাঙালির দৃঢ় মনোভাব বুঝতে পেরেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে সময় ক্ষেপণ করে এবং অপকৌশলের আশ্রয় নেয়। যার একটি অপারেশন সার্চলাইট_ বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি ও বর্বর ঘটনা।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ২৫ মার্চের কালরাতের শোক ও ক্রোধ থেকেই বাঙালি একযোগে জেগে ওঠার প্রেরণা পায়। বেদনাজর্জর এ ঘটনায় দেশের জনগণ অখ- পাকিস্তানের প্রতি পূর্ণ অনাস্থার প্রকাশ করে। পরদিন ২৬ মার্চ থেকেই স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার যুবা-তরুণ এবং আবালবৃদ্ধবনিতা। ২৫ মার্চের শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলার আপামর জনগণই সূচনা করে যুদ্ধজয়ের এক ইতিহাসের। দিবসটি জাতীয়ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিহতদের শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ সৃষ্টি হলো। যা আমাদের জন্য গৌরবের। পাশাপাশি বলতে চাই যে, ২৫ মার্চের মতো ভয়াবহ ঘটনা পৃথিবীর বুকেও বিরল। ফলে দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারেও চেষ্টা অব্যাহত রাখা যেতে পারে। তা ছাড়া কালরাতে নিহতদের স্বজনদের রাষ্ট্রীয় সুবিধার আওতায় আনা যায় কিনা সে বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় নেয়া সমীচীন। বর্তমান স্বাধীনতার পক্ষের সরকার এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নেবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:২৫
বাঁকখালির বাঁকে বলেছেন: ++++++++++++++++