নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গণহত্যা দিবস

১৯ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৪১

বিশ্বের নানা দেশে বেদনা ও গৌরবের বিভিন্ন ঘটনা রয়েছে। বাঙালিরও রয়েছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ। ভাষা আন্দোলন, ১৯৫২ সালে যার বিপুল স্ফূরণ ও আত্মত্যাগ হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১ সালে বিপুল আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম। মূলত একাত্তরের সূচনাই হয়েছিল বায়ান্নতে। একাত্তরের ২৫ মার্চ 'অপারেশন সার্চলাইট'র নামে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র ঘুমন্ত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নিরীহ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পাক-হানাদার বাহিনীর ওই বর্বর হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে দিনটিকে 'গণহত্যা দিবস' পালনের প্রস্তাব জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়েছে। শনিবার জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর পর কার্যপ্রণালি-বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় এই প্রস্তাব আনেন জাসদের সংসদ সদস্য শিরীন আখতার। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ ৫৬ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন এবং কণ্ঠভোটেই প্রস্তাবটি পাস হয়। ফলে এখন থেকে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে। এটা বাঙালির জন্য অত্যন্ত গৌরবের। তবে পাকিস্তানকে সমুচিত জবাব দেয়ার জন্য গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দরকার। সে জন্য বর্তমান সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।
বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ইতিহাসে ২৫ মার্চ একটি বেদনাবিধুর অধ্যায়। পূর্ববাংলার নিয়ন্ত্রণকারী তৎকালীন পাকিস্তানি সামরিক জান্তার লক্ষ্য ছিল যতদিন বাঙালিকে তারা পূর্ণ বশীভূত করতে না পারছে, ততদিন একের পর এক 'গণহত্যা'র মধ্য দিয়ে পুরো বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করে যাওয়া। তাই কসাইখ্যাত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান অত্যন্ত দম্ভভরে উচ্চারণ করেছিলেন, 'সব মানুষের মৃত্যু হলেও, বাংলার মাটি চাই।' অপারেশন সার্চলাইট পরিচালনার রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজারবাগে অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে বাঙালির রক্তে রঞ্জিত করা হয় বাংলার মাটি। এটা পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্য হত্যাযজ্ঞ। তবে গ্রেপ্তারের আগেই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর সারাদেশে শুরু হয় প্রতিরোধযুদ্ধ। পাকিস্তানের শোষণ-শাসন আর বৈষম্যে অতিষ্ঠ বাঙালি জাতি এ প্রতিরোধের জন্যই উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছিল। স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে ২৩ বছর নিরবচ্ছিন্ন প্রতিরোধ সংগ্রাম পরিচালিত করতে হয়েছিল। আগরতলা মামলার এক নাম্বার আসামি না হলে এবং '৬৬-তে ছয় দফা ঘোষণা না করলে '৬৯-এ গণঅভ্যুত্থান ও '৭০-এ নির্বাচন সম্ভব হতো না। '৭০-এর নির্বাচনে একচ্ছত্র বিজয়ী হয়ে তিনি বাংলাদেশের একমাত্র মুখপাত্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাই '৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর পাকিস্তান সরকার জাতীয় অধিবেশন ডেকেও তা বাতিল করে এবং ২৫ মার্চের কালরাতে বাঙালির বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। পাকবাহিনীর এ গণহত্যার হিংস্র উৎসবের মধ্যেই পরিষ্কার, তারা বাংলাকে বন্দুকের নলের জোরেই নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিল। 'জনগণের দ্বারা জনগণের সরকার পরিচালিত হবে' এ তত্ত্বে তারা মোটেও বিশ্বাসী ও শ্রদ্ধাশীল ছিল না। কিন্তু পৃথিবীর কোনো ইতিহাসেই আজ পর্যন্ত এ রকম ভয়ঙ্কর হত্যালীলার মধ্য দিয়ে কারো কোনো একক আধিপত্য যে কায়েম করা যায় না, তা তারা বুঝেছিল বীর বাঙালির সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে। প্রকৃত প্রস্তাবে মার্চ মাসের সূচনায়ই শুরু হয়েছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চূড়ান্ত ফয়সালা। ২৫ মার্চের ওই কালরাতের ঘটনার আগেই টানা কয়েকটি তারিখ তার যুগ চিহ্নায়ক সাক্ষী হয়ে আছে।
বাঙালির সংঘবদ্ধতা রুখে দিতেই ২৫ মার্চের লোমহর্ষক ও মর্মান্তিক ঘটনা ঘটায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। আর এ বেদনাবিধুর ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি আরো দ্বিগুণ শক্তি অর্জন করে। কালরাতের শোক ও ক্রোধ থেকেই বাঙালি একযোগে জেগে ওঠার প্রেরণা পায়। ফলে তৎক্ষণাৎ দেশের জনগণের মধ্যে অখ- পাকিস্তানের প্রতি পূর্ণ অনাস্থার প্রকাশ ঘটায়। কালরাতের পরদিন ২৬ মার্চ থেকেই স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলার যুবা-তরুণ এবং আবালবৃদ্ধবনিতা। শাপেবর হওয়া ২৫ মার্চের একটি কালরাতের অধ্যায়ই মোড় ঘুরিয়ে দিল বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের। শোককে শক্তিতে পরিণত করে বাংলার আপামর জনগণই সূচনা করল যুদ্ধজয়ের এক ইতিহাসের। যে ইতিহাস বাঙালি জাতির ত্যাগ সংগ্রাম আর গৌরবের ইতিহাস। যে ইতিহাস একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নেয়ার ইতিহাস।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ছিল অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক ভাষণ। ঐতিহাসিক সেই ভাষণে তিনি আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে স্বাধীনতার সংগ্রামের যে ডাক দিয়েছিলেন, সেই ডাকে সাড়া দিয়ে প্রাণ বাজি রেখে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাংলার সাধারণ কিন্তু ভীষণ সাহসী সন্তানরা। তাঁর নির্দেশে পাল্টে গিয়েছিল পুরো দেশের চিত্র। বিদ্রোহ-সংগ্রামের তরঙ্গ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মাঝে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে উঠেছিল। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে বলেন, 'আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।' বাংলার ইতিহাস-এদেশের মানুষের রক্ত দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস। এর মাধ্যেমে তিনি পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি বাঙালির দুর্বিষহ জীবনচিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না, এদেশের মানুষের অধিকার চাই।' এর মাধ্যেমে নিজের ক্ষমতালাভের চেয়েও যে তাঁর কাছে বাঙালির অধিকার আদায় মুখ্য, তিনি সেটারই প্রমাণ দিলেন। তিনি আরও বলেন, 'তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু_ আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।' এর মাধ্যেমে তিনি বাঙালির মাঝে জাগ্রত মুক্তি চেতনাকে তুলে ধরেছেন। ঐতিহাসিক সেই ভাষণের কারণেই নিউজউইক সাময়িকীর একাত্তরের ৫ এপ্রিল সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুকে 'পোয়েট অব পলিটিকস্' হিসেবে অ্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল। কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছেন, '৭ মার্চে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুধুই ভাষণ নয়, এটি একটি অনন্য রণকৌশলের দলিল।' ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে বিশ্বের অনেক নেতাই ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।
সুদীর্ঘ ২৪ বছর পাকিস্তান বাঙালি জাতির ওপর শোষণ-বঞ্চনা চালিয়েছে। এরপর বাঙালিদের স্বায়ত্ত শাসন ও স্বাধিকারের ন্যায্য দাবিকে দমন করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ নির্বিচার হত্যাকা- শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তখন প্রতিরোধ ?যুদ্ধে নামে বাঙালিরা। নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামের পর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। একাত্তরে বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি বাহিনী এদেশেরই কিছু দোসর পেয়েছিল। জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে তাতে সমর্থন দেয়; গঠন করে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা আলবদর আলশামস বাহিনী গঠন করে নারীর সম্ভ্রমহানি, লুটপাট ও গণহত্যার যে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত এদেশে স্থাপন করেছিল তা বাঙালি জাতির হৃদয়ে আজো গভীর ক্ষত হয়ে আছে।
দীর্ঘ সাড়ে ছয় দশকে পাকিস্তানের দুর্ভাগ্য, সেখানে গণতন্ত্র স্থায়ী হতে পারেনি। পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই আমরা দেখে আসছি, সেখানে একের পর এক স্বৈরশাসকের আবির্ভাব ঘটেছে এবং বছরের পর বছর সামরিক হস্তক্ষেপ ও আধিপত্যের কারণে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক হত্যা তো সেখানকার প্রায় নৈমিত্তিক ব্যাপার। যার কারণে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান আজো দাঁড়াতে তো পারেনি। সারা বিশ্ব যখন গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থার প্রচলন শুরু করেছে তখন পাকিস্তান ছিল এর বাইরে। যদিও সম্প্রতি পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী যুদ্ধের নামে আমেরিকা একের পর এক ড্রোন হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানে। এর ফলে অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। ফলে জনগণের মধ্যে মার্কিনবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে উঠেছে। রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল ও সন্ত্রাসকবলিত পাকিস্তান নিজের দিকে না তাকিয়ে বাংলাদেশের দিকে একাত্তরের দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে।
এ কথাও মনে রাখতে হবে, পাকিস্তান কোনোভাবেই আমাদের বন্ধু রাষ্ট্র হতে পারে না। কারণ তারা একদিকে যেমন একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য ক্ষমা চায়নি, অন্য দিকে মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা দন্ডিত, তাদের পক্ষেও সাফাই গাইছে অবস্থান নিয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে মন্তব্য সহ একাত্তরের ভয়াবহ নির্যাতন ও গণহত্যাকে অস্বীকার করছে। এটা পাকিস্তানের ধৃষ্টতা এবং এই ধরনের কার্যকলাপ অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের 'ক্ষমতা'র মূলশক্তি সামরিক বাহিনী এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতির অনুসারীরা বাংলাদেশের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে উঠেছে এর উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা দেখে। আর এই ঈর্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে। আইএসআইয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জুনাইদ আহমদ কর্তৃক লিখিত বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভুল ও বিকৃত তথ্যে পূর্ণ বই প্রকাশ এবং পাকিস্তানস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনে বইটির কপি দেয়া বাংলাদেশ বিরোধী এইসব বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারেরই অংশ। পাকিস্তানের মাটিতে বসে লেখা এই বই বাংলাদেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হলেও বাংলাদেশের ভিতরে অবস্থানকারীদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারটি খুবই উদ্বেগজনক।
পাকিস্তান এখন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে। এর বিপরীতে, পাকিস্তান থেকে মুক্ত হওয়ার চার দশক পরে, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ আজ 'আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে' পরিচিতি ও মর্যাদা পেয়েছে। বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে আপন গতিতে স্বমহিমায়। পাকিস্তান নয়, বাংলাদেশই হবে পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশ। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.