![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী আতিয়া মহলে শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুসা পরিচয় পাল্টে কাওসার নামে অবস্থান করছিলেন বলে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল। নিহত হওয়ার পর কাওসারের চেহারার সঙ্গে মুসার চেহারার ছবি মিলিয়ে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিসিসি) ইউনিটের সদস্যরা নিহত ৪ জনের একজন মুসা বলে ধারণা করছেন। এরপর নতুন করে আলোচনায় রয়েছে কে এই মুসা।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জঙ্গি মূসার পুরো নাম মাঈনুল ইসলাম মূসা। তার বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের বুজরাত কোলা গ্রামে। মুসার বাবা মৃত কামাল হোসেন। মুসা ২০০৪ সালে বাগমারার তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকাকালে জেএমবির শীর্ষ নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের অভিযানের সময় জেএমবিতে যোগ দেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি রাজশাহী কলেজে ভর্তি হন। পরে সেখান থেকে রেফার্ড নিয়ে ঢাকা কলেজে চলে আসেন। ঢাকা কলেজ থেকে অনার্সে উত্তীর্ণ হওয়ার পর উত্তরার লাইফ স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। এরই মধ্যে বাগমারার বাসুপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঁইপাড়া গ্রামের আবদুস সামাদের মেয়ে তৃষ্ণামনিকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি ৬ তলা বাড়িতে ওঠেন। এ বাড়িতেই সপরিবারে ভাড়া থাকতেন অন্যতম জঙ্গিনেতা মেজর জাহিদ। মুসা মেজর জাহিদের মেয়েকে এবং তানভীর কাদরির ছেলেদের পড়াতেন।
গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট রাজধানীর আজিমপুরের লালবাগ সড়কের ২০৯/৫ নম্বর পাঁচতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায়। সেই অভিযানে নিহত তানভীর কাদেরীর ছেলে তাহরীম কাদেরী ওরফে আবির ওরফে রাসেল ওরফে অনিক ওরফে মুয়াজ ওরফে ইসমাইলও তার জবানবন্দিতে এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।
জবানবন্দিতে তাহরীম কাদেরী (১৪) জানান, তারা উত্তরার বাসায় থাকতেন। মেজর জাহিদ (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) ও মাইনুল হাসান ওরফে মুসার (গুলশান হামলা মামলার অন্যতম পলাতক আসামি) সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই তার বাবার পরিচয় ছিল। তারা একত্রে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি মসজিদে নামাজ পড়তেন। এ ছাড়া তাহরীমের বাবা, মেজর জাহিদ ও মুসা উত্তরার লাইফ স্কুলের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তেন। এরপর হাঁটতেন। তানভীরের মাধ্যমে মেজর জাহিদ ও মুসার সঙ্গে তাদের পরিচয় হয়।
রাজধানীর পূর্ব আশকোনার ৫০ নম্বর বাসা সূর্য ভিলাও জঙ্গি আস্তানার জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন মুসা। তখন ছদ্মবেশে ইমতিয়াজ নামে পরিচয় দিয়ে সে বাসাটি ভাড়া নেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান ওই আস্তানা থেকে আত্মসমর্পণের পর গ্রেপ্তার দুই নারী জঙ্গি। তখন মামলার বাদী সিটিটিসি ইউনিটের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহীনুল ইসলামও এ তথ্য নিশ্চিত করেছিলেন। তখন রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী, যাত্রাবাড়ী এবং রাজধানীর বাইরে আশুলিয়া ও সাভার এলাকায় অভিযান চালানো হয়েছিল। কিন্তু ধূর্ত মুসাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পেছনে মূসার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ সংক্রান্ত দায়ের করা মামলায় মুসাকে আসামি হিসেবে দেখানো হয়েছে। ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনআইএ) তাকে খুঁজছে।
প্রসঙ্গত, সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার অবস্থিত আতিয়া মহল গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে ঘিরে রাখা হয়। শুক্রবার ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াট সিলেটে এসে পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘেরাও করে। এরপর শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো দল ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামে অভিযান শুরু করে। এ অভিযানের মধ্যেই শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটে পুলিশ চেকপোস্টে দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৬ জন নিহত এবং ৪৪ জন আহত হন।
©somewhere in net ltd.