![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার একটি হচ্ছে জঙ্গিবাদ। দুনিয়াজুড়ে এটি আজ মহামারি আকার ধারণ করেছে। বাংলাদেশও জঙ্গিবাদের দ্বারা আক্রান্ত। কিছুদিন পরপরই এদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচারা দিয়ে ওঠে। তবে ইদানীং জঙ্গিরা নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে এবং তারা আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে। এখন তারা আত্মঘাতী হয়ে চোরাগোপ্তা হামলা চালাচ্ছে, বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। এর ফলে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। যা দেশের জন্য নতুন এক বিপদ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি দেশব্যাপী জঙ্গিবাদ মাথাচারা দিয়ে ওঠার কারণে সরকারসহ দেশবাসী সঙ্কিত। সন্ত্রাস-জঙ্গি আতঙ্ক দিন দিন বেড়েই চলেছে। সিলেটের আতিয়া মহলে যা ঘটেছে, তা নজিরবিহীন। আতিয়া মহলের 'অপারেশন টোয়াইলাইটের' কয়েকটি ভিডিও চিত্র প্রকাশ করেছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার এ বাড়িটি গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে ঘিরে রাখা হয়েছে। শুক্রবার ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াত সিলেটে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ঘটনাস্থল ঘেরাও করে। এরপর শনিবার সকাল থেকে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো দল 'অপারেশন টোয়াইলাইট' নামে অভিযান শুরু করে। এ অভিযানের মধ্যেই শনিবার সন্ধ্যায় দুই দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত এবং আরও ৪৪ জন আহত হন। স্মরণকালের মধ্যে এটা সবচেয়ে দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী জঙ্গিবিরোধী অভিযান। টানা পাঁচ দিনের অভিযানে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনাবাহিনীর কমান্ডো দল। সেখানে চারটি লাশ পাওয়ার কথা জানিয়েছে তারা। সেনাবাহিনী অভিযান সমাপ্তির পর বাড়িটিকে পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। সিলেটের এই ঘটনা দ্বারা এটাই প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত হয় যে, দেশব্যাপী জঙ্গিরা এখনো বেশ তৎপর। পাশাপাশি বাংলাদেশে আইএসএর উপস্থিতির কথাও বলা হচ্ছে। উল্লেখ্য, আইএসের তৎপরতার কেন্দ্রস্থল মধ্যপ্রাচ্য। সেখান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক দূরে। তা ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় আইএসের কখনোই দৃঢ় উপস্থিতি দেখা যায়নি। সুতরাং বাংলাদেশে আইএস আছে এটা কোনোভাবেই প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। বাংলাদেশকে একটি বিশেষ মহল নানা ষড়যন্ত্র আর চক্রান্তের মাধ্যমে পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক বানাতে চায়। এটা যে দেশি-বিদেশি গভীর চক্রান্ত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের সূচনা হয় ২০০১ সালের একটি বিশেষ গোষ্ঠী জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই। সে এক ভয়ঙ্কর অধ্যায়ের সূচনা! বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা যেন হঠাৎ করেই পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে! সেই বিশেষ গোষ্ঠীর মদদে উত্থান হয় বাংলা ভাইয়ের। গঠিত হয় জেএমবি। তারপর একে একে চলে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, উদীচী হামলা, তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের ওপর জঙ্গি হামলাসহ প্রতিটি জেলায় এক সঙ্গে এবং প্রায় একই সময়ে ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণের মতো বীভৎস জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। শুধু হামলাই নয়, পুলিশি প্রোটেকশনে 'বাংলা বাহিনী'র শোডাউনের ছবিও এসেছিল তৎকালীন পত্রপত্রিকায় যেখানে সেই গোষ্ঠীর মদদে জঙ্গিবাদ উত্থানের বিষয়টি পরিষ্কারভাবেই উঠে আসে। অথচ যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-ে দ-িত জামায়াত নেতা তৎকালীন মন্ত্রী নিজামী বলেছিল_ 'বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি, বাস্তবে কোনো বাংলা ভাই বলে কিছু নাই!' বাস্তবে আমরা কত কিছুই না দেখলাম। জঙ্গিবাদ অনেকটা ক্যান্সারের মতো। সেই বিশেষ জোট তাদের পাঁচ বছরের শাসনামলে সমাজের প্রতিটি স্তরে স্তরে ছড়িয়ে দিয়েছিল এই ক্যান্সারের বীজ। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই জানান দিলেন সন্ত্রাস জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তার জিরো টলারেন্স।
বর্তমান সরকার যখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে এগোচ্ছে ঠিকই তখনই জঙ্গিরা বদলে নিয়েছে তাদের কৌশল। শুরু হয়েছে গুপ্ত হত্যা কিংবা টার্গেট কিলিং। শিক্ষক, পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ধর্মীয় সম্প্রদায় থেকে শুরু করে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব পেশার লোকজনের ওপর হামলা করেছে তারা। এদের এই টার্গেট কিলিং থেকে নিস্তার পায়নি নারীরাও। এখন তারা আত্মঘাতী হামলা শুরু করেছে, যা নতুন এক আপদ। মনে রাখতে হবে, সবাই আত্মঘাতী হওয়ার সাহস রাখে না। আত্মঘাতী হওয়া মানে জীবনের মায়া তুচ্ছ করা। পারলৌকিক টান ও অফুরন্ত শান্তির আশায় তরুণরা এবসব আত্মঘাতী পথ বেছে নিচ্ছে। সব চেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে, এর ফলে নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য যদি হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র কায়েম করা, তা হলে তাদের টার্গেট আসলে কারা। সরকারকে যেভাবেই হোক এর মূলোৎপাটন করতে হবে। সরকারের কার্যকর ও কঠোর উদ্যোগই কেবল পারে এই বিপদ থেকে দেশ ও জনগণকে রক্ষা করতে।
এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই যে জঙ্গি হামলার ধরন পাল্টেছে। আগে জঙ্গিরা এক বা একাধিক ব্যক্তির ওপর আক্রমণ চালাত। এখন তারা সামষ্ঠিক হামলা চালাচ্ছে। গুলশান এবং শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলা এর বড় প্রমাণ।
আগেও বলেছি এখনো বলছি, এর পেছনের শক্তি কারা, কারা এর অর্থের যোগানদাতা। কারা এদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জঙ্গি বানাচ্ছে সবার আগে তাদের খুঁজে বের করতে হবে। যতদিন এদের চিহ্নিত করা না যাবে, ততদিন এই বিষফোড়া বিষবৃক্ষ থেকেই যাবে। তাই সময় থাকতে এর মূলোৎপাটন করতে হবে। সরকার জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে ভালো কথা। এই অভিযানই এর প্রকৃত সমাধান নয়।
তবে আশার কথা, সরকার জঙ্গিবেিরাধী অভিযানে ও নির্মূলে বেশ তৎপর ও সফল। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জঙ্গি, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের কথা জানিয়ে এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আসলে দেশে এখন কে জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত আর কে না এটা চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিংবা একজন চিকিৎসক যদি জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে যেতে পারেন, তা হলে কাকে বিশ্বাস করা যায়। সুতরাং জঙ্গিবাদকে এখন আর হেলাফেলার চোখে দেখার অবকাশ নেই। জঙ্গি হামলায় নিখোঁজ তরুণদের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার পর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। স্বেচ্ছায় ঘর ছাড়ার কারণে এই তরুণদের খুঁজে বের করাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন তরুণদের অনেকেই দেশ ছেড়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়া চলে গেছে। এদের কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের মোবাইল ফোনে 'নেটওয়ার্কের বাইরে' চলে যাওয়ার বার্তাও দিয়েছে। এ ছাড়া কেউ কেউ 'পরকালে দেখা হবে' বলে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছে। জঙ্গিবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে তরুণদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি উদ্বেগ ও আতঙ্কের অন্যতম কারণ।
নিখোঁজ তরুণরা উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। ইংরেজি মাধ্যমে পড়া শেষ করে এরা দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অধ্যয়নরত। এদের পাশাপাশি গ্রামের মাদ্রাসাপড়ুয়া তরুণরাও রয়েছে। জঙ্গিবাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঘর পালিয়ে এরা বিভিন্ন উপায়ে সিরিয়া গিয়ে ইসলামিক স্টেটের হয়ে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অংশ নিয়েছে। বাকিরা দেশেই সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে আত্মগোপনে থেকে একের পর এক জঙ্গি হামলায় অংশ নিচ্ছে।
জঙ্গিবাদে জড়িয়েছে এমন তরুণদের বড় অংশের সঙ্গে তাদের বাবা-মায়ের বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক ছিল না। এই সুযোগে একটি চক্র তাদের কাজে লাগিয়ে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করছে। জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া শতাধিক তরুণকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম এই তথ্য পেয়েছে। এ ব্যাপারে পারিবারিক নজরদারির বিকল্প নেই।
শান্তির ধর্ম ইসলামের অপব্যাখ্যা করে একটি শ্রেণি যেমন তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছে, ঠিক তেমনি আমাদের মেধাবী তরুণদেরও অন্ধকার জগতে ঠেলে দিচ্ছে। ভারসাম্যহীন ও অস্থির করে তুলেছে দেশের পরিস্থিতি। এ জন্য জঙ্গি দমনের পাশাপাশি নেপথ্য কুশীলবদেরও আইনের আওতায় আনা জরুরি হয়ে পড়েছে। মনে রাখতে হবে আজকের তরুণরাই আগামী দিনে দেশের কর্ণধার, ভবিষ্যৎ কা-ারি। এরাই এক সময়ে দেশের নেতৃত্ব দেবে। অথচ তারা জঙ্গিবাদের টোপ গিলে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক নয় যে, কারা এদের প্রলোভনে ফেলে সন্ত্রাসী জঙ্গি বানাচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত মূল হোতাদের খুঁজে বের করা না যাবে ততদিন এর মূলোৎপাটন করা সম্ভব নয়।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় এমন সামাজিক অবক্ষয়গ্রস্ত তারুণ্যকে সুপথে আনতে হবে। আমাদের মেধাবী তরুণরা জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিয়ে বিপথগামী হয়ে মানুষ হত্যায় মেতে উঠবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তৈরি করতে হবে গণসচেতনতাও।
সব ধরনের নেতিবাচক ও অন্ধকার দিককে পায়ে ঠেলে, মাড়িয়ে-ডিঙিয়ে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে ঘুরে দাঁড়াতে হবেই। নিমূল করতে হবে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে। পাশাপাশি সুপথে ফিরিয়ে আনতে হবে মেধাবী তারুণ্যকে। তা না হলে বাঙালির সব আন্দোলন, সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, আত্মবিসর্জন বৃথা হয়ে যাবে। বৃথা হয়ে যাবে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাও। এসব ব্যাপারে জনসাধারণের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সরকার সচেতন ও উদ্যোগী না হলে বাংলাদেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা কঠিন। সরকার যদি এসব দমন ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং দেশ যদি স্থিতিশীল হয় তবে_ কেউ আর ব্যর্থ রাষ্ট্র, জঙ্গি রাষ্ট্র বলতে পারবে না। একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে তার লক্ষ্যে। আমরা আশাবাদী।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১২:২৩
শাহজালাল হাওলাদার বলেছেন: ভাই মন্ত্রক,
আপনি কাদেরকে জঙ্গি বলছেন? দয়া করে পড়ুন আমার লিখিত " জঙ্গি শব্দের গায়ে কলঙ্কের চাঁদর"।