![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অবশেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের শিবনগর এলাকার জঙ্গি আস্তানায় পরিচালিত অপারেশন ‘ঈগল হান্ট’-এর সফল পরিসমাপ্তি ঘটিয়াছে। পুলিশের সোয়াত টিমের দুইদিনব্যাপী এই অভিযানের বিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ বিষয়টি এই যে, অভিযানকারীরা নিহত চার জঙ্গির একজনের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও এক কন্যাশিশুকে উদ্ধার করিতে সক্ষম হইয়াছে। সাধারণত এ জাতীয় অভিযানকালে আস্তানার অভ্যন্তরস্থ জঙ্গি বা তাহাদের সঙ্গী-সাথীরা আত্মঘাতী হয় অথবা পুলিশি অভিযানে নিহত হয়। এই জঙ্গিরা যেহেতু আত্মঘাতী ভূমিকা গ্রহণে পিছপা নহে এবং অবিশ্বাস্য রকমের বেপরোয়া, সেহেতু ইহাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হইয়া থাকে। ফলে ইহাদেরকে কাবু করিতে কালক্ষেপণের সুযোগ থাকে অত্যন্ত কম। কেননা, সামান্য কালক্ষেপণই অভিযানকারী দলের সদস্যদের জন্য মৃত্যু পরোয়ানা হইয়া দেখা দিতে পারে বৈকি। সাম্প্রতিককালে দেশের বেশ কিছু জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালাইতে গিয়া আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যদের কেহ কেহ এইরূপ দুর্ভাগ্যের শিকার হইয়াছেনও। হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে হামলাকারী জঙ্গিদের দমনের পর দেশে বেশ কিছুকাল জঙ্গি তত্পরতা থমকাইয়া ছিল; কিন্তু বিগত কয়েক মাসে ইহাদেরকে আবারও মাথাচাড়া দিয়া উঠিতে দেখা যাইতেছে। আর উহারই পরিণতিতে ইতোমধ্যেই দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়ার পর পুলিশ ও র্যাবের বিশেষ বাহিনী তাহাদেরকে উত্খাতের জন্য অভিযান চালায় এবং সাফল্যও লাভ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আস্তানার জঙ্গিরা পুলিশি অভিযানে টিকিতে না পারিয়া আত্মহননের পথ বাছিয়া লয়। এইভাবে বিগত কয়েক মাসে বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু সংখ্যক জঙ্গি আত্মঘাতী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
সাম্প্রতিককালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় শিববাড়ী এলাকার এক জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকারীরা অভিযানের পূর্বে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করে সেখানকার নিরীহ ও সাধারণ ভাড়াটিয়াদের জীবন বাঁচাইবার উদ্দেশ্যে এবং এই কৌশলে তাহারা সাফল্যও লাভ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই জঙ্গি আস্তানায় অভিযানকালেও সোয়াত টিম অনুরূপ ধীরে চলার কৌশল অবলম্বন করায় একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও এক শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব হইয়াছে। ফলে পুরা ঘটনাটির মধ্য দিয়া ইহার একটি মানবিক দিক ফুটিয়া উঠিয়াছে। যুদ্ধবিগ্রহ কিংবা এই জাতীয় সন্ত্রাসী বা জঙ্গি নির্মূল অভিযানে মানবিক দিক বিবেচনার কোনো সুযোগই থাকে না। নারী ও শিশুদের রক্ষার আগ্রহ থাকিলেও ঘটনার আকস্মিকতা ও গভীরতা তেমন সুযোগ সৃষ্টির প্রধান অন্তরায় হইয়াই দেখা দেয়। ফলে ইচ্ছা থাকিলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপায় থাকে না। যুদ্ধে নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের ওপর আঘাত হানা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হইয়াছে। কিন্তু জঙ্গি তত্পরতার চরিত্রটিই এমন বেপরোয়া যে সেখানে নারী-শিশু-বৃদ্ধদের দিকে সহানুভূতির দৃষ্টি রাখাটাও দুষ্কর হইয়া পড়ে।
কিন্তু এতদসত্ত্বেও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সিলেট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে শত ঝুঁকি ও প্রতিকূলতার মধ্যেও যে বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করিতে ভোলেন নাই, ইহাতে তাহারা সাধুবাদ পাইতে পারেন নিশ্চয়ই। ঘটনার এই মানবিক দিকটিকে প্রকট করিয়া মেলিয়া ধরিয়া তাহারা সন্দেহাতীতভাবে সকলের নিকট প্রশংসার দাবিদার হইয়া থাকিবেন।
©somewhere in net ltd.