নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এসডিজি ও বাংলাদেশ

১৬ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:৫৮

এখন মুহূর্তের মধ্যে মোবাইল বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সরাসরি যোগাযোগ এবং খবর স্থানান্তরিত হয়। গ্রামীণ একজন কৃষক মোবাইলের কল্যাণে শহরে ফোন করে জানতে পারেন কী দরে তার উত্পাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে সামাজিক দক্ষতা, প্রণোদনা ও উত্কর্ষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারিগরি কলাকৌশল এক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা পালন করে।
সরকারকে অবশ্যই কমিউনিটি ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে বিনিয়োগে আনতে হবে। যদিও বৈশ্বিক সমস্যার কারণে বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতিতে আগের রমরমা অবস্থা নেই। ফলে বিদেশ থেকে প্রবাসীদের অর্থ প্রেরণ কিছুটা কমা স্বাভাবিক। অন্যদিকে গত শতাব্দীর শেষ দশকে এবং একবিংশ শতকের প্রথম দশকে যেখানে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি লব্ধ আয় ছিল গড়ে ৭৫%-এর মতো তা বর্তমানে বেড়ে ৮২% হয়েছে। অবশ্য হিসাব করে দেখেছি, রপ্তানিলব্ধ আয়ের ক্ষেত্রে বিশেষত পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে ভ্যালু এডিশন বা মূল্য সংযোজন হচ্ছে মাত্র ২০%।
ব্যাংকিং সেক্টরকে আরো দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের ক্ষেত্রে আগের মতো জোর দিচ্ছে না। এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং সেক্টরকে অবশ্যই দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে হবে। বর্তমান যুগের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বতন ভূমিকা কেবল মুদ্রানীতি পরিচালনা, বিনিময় হার নির্ধারণ এবং মার্জিন রিকোয়ারমেন্টের ওপর নির্ভর করে কর্ম পরিচালনা করা উচিত নয়।
আধুনিক কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা পরিচালনার ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের পাশাপাশি ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন-এর কাজ করে থাকে। দীর্ঘকাল ধরে পুঞ্জীভূত দুর্নীতি সরকারের প্রয়াস সত্ত্বেও কমছে না। তবে বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বা এমডিজি অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি বেশ ভালো ছিল। তবে এক্সপোর্ট প্রমোশন ব্যুরো রপ্তানি বহুমুখিকরণে তেমন কৃতকার্য হয়নি।
এসডিজির যে ১৭টি মূল লক্ষ্য রয়েছে সেগুলো হচ্ছে— দারিদ্র্যের সকল ধরনের পরিসমাপ্তি, ক্ষুধার পরিসমাপ্তি, খাদ্যনিরাপত্তা অর্জন, খাদ্য উপাদানের মান উন্নয়ন এবং স্থায়িত্বপূর্ণ কৃষির প্রসারমানতা, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন এবং সব বয়সের মানুষের কল্যাণ সাধন, অন্তর্ভূক্তিমূলক এবং সকলের জন্য জীবনব্যাপী শিক্ষার ব্যবস্থা করা, নারী-পুরুষ সমঅধিকার এবং নারীর ক্ষমতায়ন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার প্রাপ্যতা এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা, সহজলভ্যতা এবং টেকসই পদ্ধতির বাস্তবায়ন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, অর্থনৈতিক অগ্রগতির উপযোগী টেকসই, বাস্তবসম্মত কর্মসংস্থান পদ্ধতি এবং উপযুক্ত কর্মসংস্থান, অবকাঠামো তৈরি করা, শিল্পায়নকে প্রসারিত ও টেকসই করা এবং অভিনবত্ব ও বৈচিত্র্য আনয়ন করা, দেশের অভ্যন্তরে অসাম্য দূর করা, টেকসই ভোগ প্রবণতা এবং উত্পাদন ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, আবহাওয়াজনিত পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা, সমুদ্র, নদ-নদী এবং জলজ সম্পদের সঠিক ব্যবহার করা। টেকসই উন্নয়নের জন্যে ইকো ব্যবস্থা যাতে ঠিক থাকে, বনায়নের ব্যবস্থাপনা করা এবং বন সংরক্ষণ করা, ভূমি সংরক্ষণ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা, শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের ব্যবস্থা করা, সকলের জন্য ন্যায়বিচার ও সমতা বিধান করা এবং সর্বক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা করা, সঠিকভাবে নিয়ম পদ্ধতি অনুসরণ করে কল্যাণমুখী কার্যক্রমসমূহের বাস্তবায়ন করা এবং বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত আর শর্তমুক্ত বৈদেশিক সাহায্য-সহযোগিতার সমন্বিত ভূমিকা দেশের উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বেসরকারি খাত সচরাচর সেখানেই বিনিয়োগ করে যেখানে তাদের বিনিয়োগ ধনাত্মক হয় এবং অনেকখানি মুনাফা অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো সচরাচর শর্তযুক্ত সাহায্য অনুদান এবং ঋণ প্রদান করে থাকে— যা অনেক সময়ে গ্রহীতা রাষ্ট্রের জন্য মঙ্গল বয়ে আনে না। এসডিজি বাস্তবায়নের কলাকৌশল অবশ্যই আমাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে নির্ধারিত হতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়নে প্রচুর পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হতে পেরেছে। খুব বেশি হলে পরবর্তী পাঁচ বছরের মধ্যেই উচ্চ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্যও অর্জন করা যাবে যদি বর্তমান ধারায় অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সুষমবণ্টন ব্যবস্থা, জীবন মান উন্নয়ন ধারা এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উদ্যোগ বহাল থাকে। ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ সম্প্রতি এলডিসির ক্রাইটেরিয়া থেকে বেরিয়ে আসার জন্য যে আহ্বান জানিয়েছেন তা যথাযথ।
সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের ব্যবস্থা বাস্তবসম্মতভাবে গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারিগরি কলাকৌশল উদ্ভাবনে আধুনিকতা ও বৈশ্বিকতার পাশাপাশি এদেশের উপযোগী নানামুখী প্রযুক্তি তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। এসব প্রযুক্তির ব্যবহারে দেশীয় জনবল তৈরি করতে হবে। আঞ্চলিক সহযোগিতা সব সময়ে দেশের জন্য যাতে ইতিবাচক হয় সে জন্য দরকষাকষি ও শর্তাবলি নির্ধারণের ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ, বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল ও জনকল্যাণের বিষয়টি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করতে হবে।
এসডিজি বাস্তবায়নে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে একক কমিটির নেতৃত্বে সকল লক্ষ্য বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এদেশের সিংহভাগ জনসংখ্যা বর্তমানে ৩০-এর নিচে। এদের প্রতি লক্ষ্য রেখে কেবল সরকার নয়, বেসরকারি খাতকেও তাদের কর্মসংস্থানের কৌশল তৈরি করতে হবে।
দেশের পরিবেশগত মান উন্নয়নে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে কিছু অসাধু উদ্যোক্তাও আছেন যারা অপরের সম্পদ কিংবা নদ-নদী খাল-বিলকে নিজের মনে করে আত্মসাত্ করে থাকে।
দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করতে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতায় ৫১ লাখ ২০ হাজার প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর মাঝে বিভিন্ন ধরনের ভাতা প্রদান করছে। পল্লী সমাজ সেবা কার্যক্রমের আওতায় সুফল ভোগীর সংখ্যা ২৪ লাখ ১৫ হাজার । দরিদ্র নারীদের ক্ষমতায়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য পল্লী মাতৃকেন্দ্র কার্যক্রমের আওতায় বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৩১৮টি কর্মসূচির আওতায় সুফল ভোগীর সংখ্যা ৮ লক্ষাধিক । তবে মাদ্রাসায় শিক্ষা গ্রহণকারীদের কর্ম উপযোগী শিক্ষার উদ্যোগ নেই।
বর্তমানে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা ক্ষুদ্র কৃষিভিত্তিক খামার সংখ্যা ১৮ দশমিক ৭২ লাখ। ডিজিটাল বাংলাদেশের অবদানে সুবিধাভোগীরা অনলাইনের মাধ্যমে ২৫৭ কোটি টাকা লেনদেন করেছে। ইতোমধ্যে ৬৪ জেলার ৪৮৫টি উপজেলায় এ অনলাইন কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। তবে অভিযোগ রয়েছে ইন্টারনেটে সেবা প্রদানকারীরা চার্জ বাড়িয়েছেন কিন্তু সেবার মান হ্রাস করেছেন। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিআরডিবির আওতায় এ পর্যন্ত ১,৯৯,৬৮৮টি সমিতি ও দল গঠন করা হয়েছে।
১,১৮,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে যে, এ প্রকল্পটি সমাপ্ত হলে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদিত হবে। তবে সস্তায় বিদ্যুত্ উত্পাদনের ওপর জোর দেওয়া দরকার।
ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বিশেষ অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার ২শ ৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার স্থাপিত হয়েছে। সাইবার ক্রাইম ঠেকানোর জন্য সাইবার পুলিশের প্রয়োজন রয়েছে।
বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সার্বিক কর্মকাণ্ড ঢেলে সাজানো দরকার। আশা করা যাচ্ছে, এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে এ পর্যন্ত ১০টির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে কোরিয়ান একটি ইপিজেড কোনো কিছু না করে বিপুল পরিমাণ জমি দীর্ঘকাল ধরে ফেলে রেখেছে।
বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং পয়ঃসেবার মতো মৌলিক বিষয়ে অনেক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব উত্স থেকে বেশি পরিমাণে সম্পদের সরবরাহ প্রয়োজন। গণতন্ত্রের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসডিজি বাস্তবায়নে জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ অচিরেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত সাড়ে সাত বছর ধরে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের ওপর ছিল। বর্তমান সরকার দেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। অবশ্য এ ব্যবস্থা কার্যকর ও স্থিতিশীল করতে হলে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সংসদ সদস্যদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে হবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৭ সকাল ১১:৩৯

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: সুন্দর হয়েছে।






ভালো থাকুন নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.