নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Moonmoon

মুনমুন

আমি একজন অতি সাধারণ মেয়ে। সাদা চোখে যা দেখি তাই বলার বা লেখার চেষ্টা করি। ভালোবাসি কবিতা, গান আর আমার দেশ বাংলাদেশকে। ভালোবাসি বাংলাদেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের। আজন্ম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা আছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু আর এদেশের বীর সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের। মাদার তেরেসা আমার অনুপ্রেরণা।

মুনমুন › বিস্তারিত পোস্টঃ

'অর্ধেক তার করিয়াছে নারী' নজরুল কাব্যে নারী

৩১ শে মে, ২০০৮ দুপুর ১:৫৯

'অর্ধেক তার করিয়াছে নারী' নজরুল কাব্যে নারী



তারুণ্য দীপ্ত যৌবনে উজ্জল কবি নজরুল। বাংলার নারী সমাজকে জাগাতে এবং অনুপ্রাণিত করতে তিনি তাদের আন্তরিকতার সাথে আহ্বান জানিয়েছিলেন।



তাই তো কবি কবিতায় লিখেছেন,

'জাগো নারী জাগো বহ্নি শিখা'



কবি আরও লিখেছেন



'সাম্যের গান গাই

আমার চক্ষে পুরুষ রমণী

কোন ভেদাভেদ নাই'



'নারীরে প্রথমে দিয়েছি মুক্তি

নয় সম অধিকার

মানুষ গড়া প্রাচীর ভঙ্গিয়া

করিয়াছি একাকার



কবি ভাবতেন নারীর জন্য পুরুষ তন্ত্রের বিভেদ ও অসাম্য সৃষ্টির কথা।



নারীর স্বাতন্ত্রবোধ কেড়ে নিয়ে তার জন্য পুরুষ তৈরি করেছে অসংখ্য শক্ত শেকল। সাংসারিক জীবনে পুরুষের মনোরঞ্জনের সুবিধার্থে নারীকে করেছে ভিন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত। নামিয়ে এনেছে দাসীর পর্যায়ে। কবি চেয়েছেন এ অবস্থা থেকে নারীর মুক্তি। নারীর মানুষ হিসেবে গণ্য করার অধিকার।



কবি বলেছেন,

হাতে রুলি, পায়ে মল

মাথার ঘোমটা ছিড়ে ফেল নারী;

ভেঙ্গে ফেল ও শিকল



যে ঘোমটা তোমায় করিয়াছে ভীরু



ওড়াও সে আবরণ,



দূর করে দাও দাসীর চিহ্ন



যত আভরণ”।



কবি সব সময় গেয়েছেন সাম্যের গান। সে হোক মানুষে মানুষে। হোক নারী ও পুরুষে। তাই তিনি বলেছেন,

'বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।'



সমাজে নারীর কর্ম, ত্যাগ স্বীকৃতি পায়নি। তাই তিনি লিখেছেন,



'কত রনে কত খুন দিল নর

লেখা আছে ইতিহাসে

কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর

লেখা নাই তার পাশে।



কবি নারীকে নামিয়ে মাথার ঘোমটা ছিঁড়ে, নিজের অধিকার নিজেকেই আদায় করে নিতে বলেছেন,

'ধ্বংসের বুকে জাগুক

মা তোর সৃষ্টির নব পূর্ণিমা'

নারীর অনুপ্রেরণা পুরুষের জীবনে যে কতটা সে কথা বুঝতে বলেছেন



'নারীর বিরহে নারীর মিলনে

নর পেল কবি প্রাণ

যত কথা হইল কবিতা

শব্দ হইল গান'।



কবি নারীকে শুধু প্রেয়সী হিসেবেই নয়, কবি মাতা, বধূ, কন্যা, ভগিনী সব রূপে সমানভাবে নারীকে শ্রদ্ধা, সমীহ করতেন। কবি 'প্রিয়া' ডাকের বিভোর ভাবমূর্তি তুলে ধরেছেন সুন্দরভাবে,



প্রিয়! সামলে ফেলে চলো

এবার চপল তোমার চরণ,

তোমার ঐ চলাতে জড়িয়ে গেছে

আমার জীবন মরণ'।



আবার মাকে কবি মনে করেন সন্তানের জন্য অসীম স্নেহ ভান্ডার, চিরকালের আশ্রয় স্থল। যা হলো এক অপরাজয় শক্তি। কবির লেখায় আমরা সে শাশ্বত মাকে পাই ধ্যানে, জ্ঞানে ধৈর্য সহনে অতুলনীয় হিসেবে। কবি লিখেছেন,

এরি মাঝে কোথা হতে এলো মুক্ত

ধরে মা আমার সে ঝড়ের রাতে

কত জন্ম পরে আমি প্রাণ ভরে

ঘুমাইনু মুখ থুয়ে জননীর বুকে'



মাতৃস্নেহ বুভুক্ষ কবি কত জনকেই না মা বলে ডেকেছেন। গর্ভধারণ না করলেও মা হওয়া যায় তাই কবি লিখিছেন



'পেটে ধরা নাই বা হলি

চোখে ধরার মায়াও কম নহে

মা, তোকে পেতেই জন্ম

জন্ম এমন করে

বিশ্ব মায়ের ফাঁদ

পেতেছি যে'



পূজারিণী কবিতার ও মৃত্যু ক্ষুধার মেজবৌ অসামান্য এক সংগ্রামী নারী।



নার্গিস তার অন্তরকে কতখানি আলোকিত করেছিলেন তার প্রমাণ হিংসাতুব কবিতাটিতে, কাজী নজরুল শুধু কথা দিয়েই নারীকে সম্মানিত করেননি। কবির লেখা বহু বিখ্যাত বই কবি নারীর নামে উৎসর্গ করে গেছেন। নারী তার কাব্যে কত রূপে এসেছেন তা কবি পাঠকরাই জানেন।



কবি কবিতায় স্বীকার করেছেন

'তুমি আমার ভালবাসা

তাইতো আমি কবি,

আমার এরূপ সে যে

তোমার ভালবাসার ছবি'।

যে বিশ্ব বিদ্রোহী কারো কাছে “নত হননি। একমাত্র প্রিয়ার কাছে নত হয়েছেন।



'হে মোর নারী

তোমার কাছেঝ হারমানি

আজ শেস আমার বিজয় কেতন

লুটাই তোমার চরণ তলে এসে'।



কবি গানের ভাষায় নিত্য প্রিয়াকেই পেতে চেয়েছেন। তাইতো প্রিয়াকে স্বর্গের দেবী বলেছেন। কবি নারীকে পূজার আসনে রেখে পূজা করেছেন। মা বলে ডেকেছেন।



'কে তোমায় বলে বীরঙ্গনা মা

কে দেয় থুথু ও গায়ে?

নাই বা হলে সতী তবুও

তোমরা মাতা ভগিনীরই জাতি'।



নার্গিসকে লেখা নজরুলের একটি গান ও শেষ চিঠির অংশ বিশেষে বলেছেন

যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই

কেন মনে রাখ তারে?

ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে!



'আমার অন্তর্যামী জানেন, তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কি গভীর ক্ষত, কি অসীম বেদনা। কিন্তু সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি, তা দিয়ে তোমায় কোনদিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এ আগুনের পরশমনি না দিলে আমি অগ্নিবীণা বাজাতে পারতাম না, - আমি ধুমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না। তোমার যে কল্যাণরূপ আমি আমার কিশোর বয়সে প্রথমে দেখেছিলাম, যে রূপকে আমার জীবনের সর্বপ্রথম ভালোবাসার অঞ্জলি দিয়েছিলাম, সে রূপ আজও স্বর্গের পারিজাত-মন্দারের মত চিরঅম্লান হয়েই আছে আমার বক্ষে। অন্তরের আগুন বাইরের সে ফুলহারকে স্পর্শ করতে পারেনি।



তুমি ভুলে যেও না, আমি কবি, - আমি আঘাত করলেও ফুল দিয়ে আঘাত করি। অসুন্দর কুৎসিতের সাধনা আমার নয়। আমার আঘাত বর্বরের, কাপুরুষের আঘাতের মত নিষ্ঠুর নয়। আমার অন্তর্যামী জানেন (তুমি কি জান বা শুনেছ, জানি না। তোমার বিরুদ্ধে আজ আমার কোন অনুযোগ নেই, অভিযোগ নেই, দাবীও নেই।



তোমাকে লেখা এই আমার প্রথম ও শেষ চিঠি হোক। যেখানেই থাকি, বিশ্বাস করো আমার অক্ষয় আশীর্বাদকবচ তোমায় ঘিরে থাকবে। তুমি সুখী হও, শান্তি পাও-এই প্রার্থনা। আমার যত মন্দ বলে বিশ্বাস কর আমি তত মন্দ নয়-এই আমার শেষ কৈফিয়ৎ”।



(চিঠির অংশটুকু কুমিল্লায় জাতীয় পর্যায়ে কবির ৯৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে চেতনায় নজরুল স্মরণিকা থেকে সংবলিত)





নারী



সাম্যের গান গাই-

আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।

বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণ-কর,

অর্দ্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্দ্ধেক তার নর।

বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ তাপ বেদনা অশ্রুবারি,

অর্দ্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্দ্ধেক তার নারী।

নরককুণ্ড বলিয়া কে তোমা করে নারী হেয়জ্ঞান?

তারে বলো, আদি-পাপনারী নহে, সে যে নর-শয়তান।

অথবা পাপ যে - শয়তান যে - নর নহে নারী নহে

ক্লীব সে, তাই সে নর ও নারীতে সমান মিশিয়া রহে

এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,

নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।

তাজমহলের পাথর দেখেছ দেখিয়াছ তার প্রাণ?

অন্তরে তার মোমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।

জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য লক্ষ্মী নারী,

সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি।

পুরুষ এনেছে দিবসের জ্বালা তপ্ত রৌদ্রদাহ,

কামিনী এনেছে যামিনী-শান্তি, সমীরণ, বারিবাহ।

দিবসে দিয়াছে শক্তি-সাহস, নিশীথে হয়েছে বধূ,

পুরুষ এসেছে মরুতৃষ্ণা ল’য়ে - নারী যোগায়েছে মধু।

শস্যক্ষেত্র উর্বর হ’ল, পুরুষ চালাল হাল,

নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া, করিল সুশ্যামল।

নর বহে জল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে

ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে।

স্বর্ণ-রৌপ্যভার,

নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া হয়েছে-অলঙ্কার।

নারী বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ,

যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান।

নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে।

জন্ম লভিছে মাহমানবের মহাশিশু তিলে তিলে।

জগতের যত বড় বড় জয়, বড় বড় অভিযান,

মাতা ভগ্নী ও বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান।

কোন্ রণে কত খুন দিল নর লেখা আছে ইতিহাস,

কত নারী দিল সিঁথির সিন্দুর লেখা নাই তার পাশে।

কত মাতা দিল হৃদয় উপাড়ি, কত বোন দিল সেবা,

বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?

কোন কালে একা হয়নি ক’জয়ী পুরুষের তরবারী,

প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষ্মী-নারী।

রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে রাণী।

রাণীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজার যত গ্লানি।





কাজী নজরুল ইসলামের 'নারী' কবিতার অংশবিশেষ পাঠকদের জন্য উপহার দেয়া হলো

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মে, ২০০৮ দুপুর ২:০৯

সোনারমানুষ বলেছেন: শুভেচ্ছা নজরুলকে এবং শুভেচ্ছা আপনাকে।

২| ৩১ শে মে, ২০০৮ দুপুর ২:২৫

রাজামশাই বলেছেন: ওহে নারী আছো কেমন?

৩| ৩১ শে মে, ২০০৮ দুপুর ২:২৮

শফিকুল বলেছেন: বিরল একটি ছবি পেলাম তোমার নিকট।

৪| ৩১ শে মে, ২০০৮ দুপুর ২:৪১

খালিদ মাহমুদ বলেছেন: আমার প্রিয় কবি নজরুল।

৫| ৩১ শে মে, ২০০৮ দুপুর ২:৪২

মুনমুন বলেছেন: ধন্যবাদ সব বন্ধুদের।

৬| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৩৭

আফসানা মারিয়া বলেছেন: লেখাটি সুন্দর হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.