![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গত পরশু সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে এককাপ চা শেষ করে একটা সিগারেট ধরিয়ে মাত্র টান দিয়েছি... পাশে বসা দুজন মধ্য বয়সী লোকের আলোচনা কানে বাজলো - "দেশর কিতা অবস্থা অইলো, মানুষ চল্লিশগু মারিয়া হারসে"! প্রতি উত্তরে দ্বিতীয়জন বলল "এ চল্লিশগুর মাঝে দশগুয়েও যদি চল্লিশ জন লইয়া মরতো অইলে ঠিক আসিল"! আমি থ...!
আলোচনা চলতে থাকলো, আমি আর বসে থাকতে পারলাম না! সিগারেট ফুকে ফুকে বের হয়ে আসলাম। সেদিনের মত খবর গিলে গিলে ঘুম পারলাম; ঘুম থেকে ওঠেই অফিসে যেতে হবে, পেন্ডিং কাজগুলো না সারলে, আগামী তিন-চারদিন দেশের এ অস্থিরতার মাঝে কাজ করা যাবে না। এক সপ্তাহের জন্য শুক্র-শনি নাই জলাঞ্জুলী দিলাম।
পরদিন শুক্রবার গেলাম ফিল্ড এ, ক্লায়েন্টদের সাথে দেখা করে বিভিন্ন আলোচনার মাঝে চলে আসলো দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কথাও। "সাঈদীরে বা, বড় বালা মানুষ আসিল, হে বুলে ৭১'র মানু মারছিল। এমন একজন আমীর মানুষ, তার ওয়াজ হুনলেও চুকুর পানি আইতো। বেচারা ৭১'র ১২ বছর বয়সঅ ইলা করছিল কইলেও অইবো না কিতা!"
না আর চুপ থাকা গেলো না, জিগ্যেস করলাম - চাচা তান বড় পুয়া যে কদিন আগে মরছিল জানইন নি।
- অয়
-- তাইন কতবছর বয়স মরছিল কইতা পারবা নি?
- উ... ৪০-৪৫ অইবো।
-- না, ৫৪ বছরর লাখান। অখন আপনে হিবাস করিয়া দেখউকা, তান পুয়া যদি ৫৪ বছর বয়স যদি মরইন, দরলাম সাঈদী সাব ২০ বছরো বিয়া করছিলা, অইলে দুই বছর যোগ করিয়া তান ২২ বছরো রড়গুর জন্ম অইছিল। তা যদি অই ৫৪ বছরর লগে আরো ২২ বছর যোগ করলে অইলো কত... ৭৬। অখন আপনে ৭৬ বছর তাকি দেশ স্বাধীন অওয়ার ৪২ বছর বাদ দেইন, কত অইলো... ৩৪। অইলে হে সময় তান বয়স ৩০-৩৪ বছর আসিল। তে তাইনর বয়স হে সময় ১২ আছিল কেমনে কইলা।
- তান ছেলে বড়গু...
-- উবাইন, মনো করইন আপনার ছেলে বড়গু অখন মারামারি করিয়া, চুরি চুত্তামী করিয়া, পুরিন্তর অসম্মান করিয়া কেমনে কেমনে লুকাই উকাইয়া বড় অইলা। মনো করইন ১০ বছর পরে তাইন বিঢ়াত একজন মাওলানা সাজলা, অইলে তাইন দশ বছর আগে যিতা করিয়া গেসলা ইতার কুন বিচার নাই নি? তাইন মাওলানা অইলা দেখিয়া কিতা তান হাত খুন মাফ নি।
- না।
-- অইলে, ব্যপারতা অরকমউ অইছে। মানলাম সাঈদী সাব অখন বড় একজন আলেম, বড় বালা একজন মানুষ... ইতা আপনে অখন দেখরা। যদি দশ বছর বাদে আপনার পুয়ার বিচার অইতো পারে অইলে তান অইতোনা কেনে।
এটুকু আলাপচারীটার পর উনার চোখে শূন্যটা দেখেছি, যেন এমন বহু বছরের বিশ্বাসী কেউ বিশ্বাস ঘাতকটা করেছে, আর আজ সে ভুল বুঝতে পেড়ে হুদয়ের আলোড়ন তাকে বাকরুদ্ধ করেছে।
এ বাস্তব গল্পটা এ জন্যই বলা যে, দেশে এরকম হাজার হাজার মানুষ আজ ভুল পথে হাছেন, ভুল ব্যখ্যা আর ভুল সত্য নিয়ে আছেন বলে দেশের আজ এই অবস্থা। সাথে সুযোগ সন্ধানীরা তাদের এ অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের দিয়ে সৃষ্টি করছেন অরাজকতা।
তরুণ সমাজ বিশেষ করে যারা মাদ্রাসা শিক্ষা অথবা ধর্মভীরু তাদের মগজে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে যিহাদ নামের বিষের আগুন। তাদের অনেকেই জানেন না তারা কেন "যুদ্ধ" করছেন, ব্লগ কি, সেখানে কি লিখা হচ্ছে আর তাদের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের ইতিহাসই বা কি। তারা শুধু জানেন, ইসলামের অবমাননা হচ্ছে, মহানবী (সাঃ) কে কতাক্ষ করা হচ্ছে শাহবাগের প্রজন্ম চত্তর নামম নাস্তিকদের আস্তানায়। ধর্ম আর ঈমান রক্ষা করতে হবে, আর তা একমাত্র সম্ভব "জিহাদের" মাধ্যমে। এ যুদ্ধে "মরলে শহীদ বাচলে গাজী"। তবে মহান আল্লাহ তাওয়ালার সেবা করার এ মোক্ষম সুযোগ জীবনে আর দ্বিতীয়টি আসবে না!
আমরা তরুন শিক্ষিত সমাজ আজ শহবাগের চেতনার আগুন সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারলেও আমাদের কণ্ঠস্বর তাদের দোরগোড়ায় পৌছায় না। পৌছালেও তা বিকৃত রূপে। ব্যপারতা আগের সমাজের একটি অসুস্থ ব্যক্তির খবর তার দেশের বাড়িতে পৌছে দেওয়ার মত... মইনুল সাহেব অসুস্থ... মইনুল সাহেব অবস্থা অত্যন্ত খারাম... মইনুল সাহেব মৃত্যু শয্যায়... মইনুল সাহেব ইন্তেকাল করিয়াছেন!
আমাদের আজ জনসংযোগ করতে হবে, পথভ্রস্ত এ তরুন সমাজকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে হবে, ভেঙ্গে দিতে হবে সকলের ভ্রান্ত ধারনা। এ জন্য আমাদের আজ প্রতিটি মানুষের দোরগড়ায় যেতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলো আর আজকের এ আন্দোলনের উদ্দ্যেশ্য সবাইকে বুঝাতে হবে।
আমাদের সাথে অনেক আলেম সমাজ রয়েছেন তাদের অগ্রগামী করে আমরা মাদ্রাসা মাদ্রাসায় যায় না কেন, কলঙ্কিত মাদ্রাসা শিক্ষা আর সম্ভাবনাময় তরুনদের সঠিক ধারনা আর সঠিক পথে নিয়ে আসার এখনি সময়। এখনি সময় "বুদ্ধিবৃত্তির গেরিলা যুদ্ধের"...
দেশে আজ কিছু মসজিদের রাজনৈতিক ব্যবহার হচ্ছে, কিছু কিছু মাওলানা সাহেবের বয়ানের ভাষা আজ পাল্টে গেছে। তাদেরকে সেটা বুঝাতে হবে।
প্রিয় মাতৃভূমিকে বাঁচাতে আজ আমাদের জ্ঞানের সর্বোচ্চ ব্যবহার প্রয়োজন। প্রমথ চৌধুরী বলেছেন "অল্প কথায় কাজ হইলে বেশী কথার প্রয়োজন কি"? আমি বলব - মুখের ভাষায় কাজ হইলে, যুদ্ধ ঘোষনার প্রয়োজন কি।
আমরা সবাই শান্তি চাই, দেশের এ অস্থিরতা আমরা চাই না, চাই না রাজনীতির ভূল ব্যবহার...
আমরা সুন্দর এ দেশে শান্তিতে সবার সাথে সবার হাত ধরে বেচে থাকতে চাই।
বিঃদ্রঃ
১৮ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৩
মূর্ধন্য বলেছেন: "জামাতি ট্যাগিং" ব্যপারতা নিয়ে মন্তব্য মাথায় ঢুকছে না। তবে আপনার শেষ বাক্যটার সাথে সম্পূর্ণ একমত।
"ইসলামী দলগুলো যাচাই বাছাই না করে শাহবাগ ও ব্লগার সম্পর্কে ঢালাও ভাবে মন্তব্য করেছে। তখন দেশের প্রথম সারির মিডিয়ার কি উচিত ছিলনা তাদের ভুলটা ধরিয়ে দেওয়া? সেটা না করে তারাও ইসলামী দলগুলোকে জামাতি ট্যাগিং দিয়ে দিল! যেটা জামাত মনে প্রাণে চাচ্ছিল।"
মিডিয়াগুলোরে এইখানে ডিপ্লমেটিং রোল নেওয়া উচিৎ ছিল, তাহলে পজিটিভ দিকটাই হইতো। যেটা না করার কারনে একাত্তর মঞ্চ "আওয়ামিলীগের সাজানো মঞ্চ" ট্যাগ করা হয়েছে!
একাত্তর মঞ্চের ৯০% আম জনতা যারা সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়, এইটা কোন ভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। বাকি ১০% মেনে নিচ্ছি লীগ/বাম ঘেষা, হোক তাতে সমস্যা নেই, দাবী তো আমাদের সকলের।
২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:২২
ফাহীম দেওয়ান বলেছেন: @ নষ্ট ছেলে - আমি আপনার মন্তব্যের সাথে একমত।
তবে যারা জেনে শুনে ও বুঝে অপপ্রচার চালায় তাদের ব্যাপারে মনে হয় আক্রমনাত্মক (লেখায়) হওয়াটাকে মাঝে মাঝে খুব যৌক্তিক মনে হয়।
১৮ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯
মূর্ধন্য বলেছেন: "আক্রমনাত্মক (লেখায়) হওয়াটা"ই যৌক্তিক তবে সেটা সকলের বোধগম্য হইতে হবে। হেরা তো জামাত যা বলে তাই সত্য সত্য বলে, তবে বুঝতে হবে আমরা তাদের বুঝাতে পারি নাই, যদি না পারছি তবে তাদের কাছে যেতে হবে, আরো সুন্দর করে বুঝাতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:২২
নষ্ট ছেলে বলেছেন: কে কারে বুঝাইব? সবাই তো ট্যাগিং নিয়ে ব্যস্ত!
অবস্থা এমন হইছে কাউকে জামাতি ট্যাগিং করতে পারলেই নিজেকে দেশপ্রেমিক হিসাবে জাহির করা যায়।
আপনি একটা ঘটনা উল্লেখ করেছেন। সেখানে যদি আপনি তাকে যুক্তি দিয়ে না বুঝিয়ে জামাতি ট্যাগিং করতেন তাহলে লাভ কি হত? সে তার বিশ্বাস নিয়েই থাকত।
শাহবাগ নিয়ে জামাতি মিডিয়া দেশের অন্যান্য ইসলামী দলকে ভাল ভাবেই উস্কে দিয়েছে। ইসলামী দলগুলো যাচাই বাছাই না করে শাহবাগ ও ব্লগার সম্পর্কে ঢালাও ভাবে মন্তব্য করেছে। তখন দেশের প্রথম সারির মিডিয়ার কি উচিত ছিলনা তাদের ভুলটা ধরিয়ে দেওয়া? সেটা না করে তারাও ইসলামী দলগুলোকে জামাতি ট্যাগিং দিয়ে দিল! যেটা জামাত মনে প্রাণে চাচ্ছিল।