![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাঙালি নারী ও বাঙালি সংস্কৃতি :
প্রাচীন বঙ্গের ধর্মীয় জীবনে দেবীদের মর্যাদা ছিল উঁচুতে। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, সে সমাজে নারীরা সমাজ এবং সংসারে প্রধান ভূমিকা রাখত। ঐতিহাসিক প্রমাণমতে তখন থেকে পরিবার ও সমাজে নারীর অবস্থান ও মর্যাদা পুরুষদের তুলনায় নীচু মর্যাদার বলে জানা যায়। ইতিহাস থেকে তখনকার রাজা, শাস্ত্রকার এবং পন্ডিতদের কথা জানা যায় কিন্তু কোন বিখ্যাত নারীর কথা জানা যায় না। সমাজ সংসারে তাদের অবদান কতটুকু তা ইতিহাসে লেখা নেই। বস্তুত নারীরা সমাজের অর্ধেক হলেও তারা ইতিহাস থেকে হারিয়ে গেছেন। তারা ইতিহাসের মিউটেড গ্রুপ। তাই তাদের দৃষ্টিতে বাঙালী সমাজ, সংস্কৃতি কেমন ছিলো তাও জানা যায়না। এর কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বাহুবল ও উপার্জনের ক্ষমতা দিয়ে পুরুষরা সর্বদা নারীদের শাসন করে এসেছেন। তাছাড়া ধর্মীয় অনুশাসন দিয়েও নারীদের হীনাবস্থাকে স্থায়ী করতে চেয়েছে।
১৩ শতকের গোড়ায় ইন্দো-মুসলিম শাসন প্রচলিত হয়, তখন এ অবস্থার তেমন কোন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটেনি। কারণ ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতিতে মহিলাদের অবস্থা বৈপ্লবিকভাবে উন্নত করার মতো কোন ব্যবস্থা ছিল না। মুসলমানরা লেখাপড়া, কর্মভূমিকা, সামাজিক মর্যাদা কোন ব্যাপারেই বাঙালি মহিলাদের মধ্যে নতুন ধারণা এবং রীতি প্রবর্তন করতে পারেনি। এর সঙ্গে কয়েক শতাব্দী পরে ইংরেজ আমলে যে পরিবর্তন এসেছিল তার তুলনা করলে বাঙালি মহিলাদের ইতিহাসে ইন্দো-মুসলিম আমলের প্রভাব কত সামান্য তা বোঝা যাবে। বরং আমরা এই আমলের প্রভাব কতো সামান্য তা বোঝা যাবে। বরং এ আমলে পুরানো ধারা অব্যাহত ছিল। মোটকথা, নারীদের যে প্রতিভা এবং সম্ভাবনা ছিল প্রাচীন এবং মধ্যযুগের পুরুষশাসিত সমাজে তা বিকশিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিলনা।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পরিবার ও সমাজে নারীদের যে ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল শিক্ষাবিস্তার, অবরোধপ্রথার পতন এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভূমিকা পালনের ফলে উনিশ শতকের শেষদিকে তা ভেঙ্গে যেতে শুরু করে। ১৮৪৯ সালে বেথুন কলেজ স্থাপনের পর ঈশ্বর গুপ্ত মেয়েদের ব্যঙ্গোক্তি করেন। তবে পরিবার ও সমাজে নারীদের ভূমিকা সম্পর্কে তাদের মতামত কি ছিল তা ইতিহাসে উল্লেখ পাওয়া যায় না ৭ (হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতি-মুরশিদ, গোলাম)।
এবার বাংলা সাহিত্যে নারীর অবদান ও অবস্থান নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলা সাহিত্যে নারী :
বাংলা সাহিত্যে বড় একটা সময়জুড়ে মেয়েবেলার আকাল। নিম্নোক্ত অংশে তা তুলে ধরা হয়েছে।
শুন হে অবুধ লক্ষপতি
বার বৎসরের সুতা তোর ঘরে অস্থিতা
কেমনে আছহ শুদ্ধমতি
-চন্ডীমঙ্গল
কন্যার শৈশবের খোঁজে তার শ্বশুরবাড়িতে হানা দিতে হয়। এ বেহাল অবস্থা ঘড়ি ধরে বয়ান করা সম্ভব হয়না। হঠাৎ হঠাৎ বয়ঃসন্ধিক্ষণ, পূর্বরাগ সাহিত্য থেকে উধাও হয়ে গেছে। ভারতচন্দ্র থেকে বঙ্কিমচন্দ্র পর্যন্ত শতাধিককাল মেয়েবেলা বিবর্জিত শতাধিককাল মেয়েবেলা বিবর্জিত এমনই এক বন্ধ্যা সময়। আর তা বদলাতে অগ্রণী ভূমিকা নেন উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ব্রাহ্ম মেয়েরা। অন্যদিকে চতুর্দশ শতাব্দীর কবি বিদ্যাপতি গাইছেন-
শৈশব যে․বন দুহু মিলি গেল।
শ্রবণক পদ দুহু লোচন লেল
বচনক চাতুরী লহু লহু হাস।
ধরণীয়ে চাঁদ করল পরগাস
এভাবে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন রচনায় নারীকে তুলে ধরা হয়েছে ৮ সতী ও স্বতন্তরা (বাংলা সাহিত্যে নারী)- সম্পাদনায় শাহীন আখতার।
বাংলা সাহিত্যে নারী নিম্নবর্গ হলেও ব্রিটিশ আমলে নারীকে পর্দার বাইরে এসে বিভিন্ন অবদান রাখতে দেখা যায়। তারা সাহিত্যে, আধুনিক জীবনধারায় অবদান রেখেছে যা পরবর্তীতে নারীর উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছে। যেমন- প্রথম আত্মজীবনী রচয়িতা রাসসুন্দরী দেবী। মাত্র বার বছর বয়সে বিয়ে হয়। শ্বশুরবাড়িতে কঠোর পর্দাপ্রথা মেনে চলা হতো। কিন্তু তিনি ভারতীয় নারীদের জন্য অগ্রপথিক। এছাড়া প্রথম আধুনিকা জ্ঞানদানন্দিনী দেবী যিনি সর্বপ্রথম ঠাকুরবাড়ির প্রথা ভেঙ্গে বাইরে বিভিন্ন ইংরেজদের পার্টিতে যান। যা সেময়ের
সমাজে অকল্পনীয় ছিল। তিনিই সর্বপ্রথম নারী যিনি একা বিলেতে যান। এছাড়া বেগম রোকেয়া বিভিন্ন নারী প্রগতিমূলক কাজ করেন যা নারীর উন্নয়নে ভূমিকা রাখে ৮ (নারী প্রগতির একশো বছর রাসসুন্দরী থেকে রোকেয়া- মুরশিদ, গোলাম)।
আজকে এখানেই শেষ করব। আগামীকাল ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে নারীর নিম্নবর্গীয় উপস্থাপন নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে এ বাংলা ভাষা, সাহিত্য, ইতিহাস ও রাজনীতিতে নিম্নবর্গ হিসেবে নারীর উপস্থাপন নিয়ে ধারাবাহিক সিরিজ শেষ করব।
©somewhere in net ltd.