নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেহেদী হাসান সাকিব ৪৭

এজেন্ট ৪৭

মেহেদী হাসান সাকিব ৪৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি প্রায় নিখুত অপরাধ {পর্ব-১}

১০ ই জুলাই, ২০২০ রাত ১১:২৫

১৯৬৭ সালের ১১ অক্টোবর
স্থান: নিউইয়র্ক, আমেরিকা।
রোজকারের মতো ভোর সাড়ে ৫ টায় ঘুম থেকে উঠেছেন এমা ওয়াটসন। তিনি স্থানীয় একটি ব্যাংকের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। বোর্ড মিটিং থাকার কারণে অফিসে পৌছানোর তাড়া রয়েছে এমার। মেয়ে সারাহকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে অফিসের জন্য তৈরি হতে লাগলেন এমা। সারাহ বাথরুমে ঢোকার আগে দেখল তার মা বাথরুমের পাশে আয়নার সামনে চোখে আই লাইনার লাগাচ্ছেন। শাওয়ারের নিচে দাঁড়ানোর পর বাইরে একটি ধপ করে শব্দ পেল সারাহ। তাড়াহুড়া করে বের হয়ে সে দেখতে পেল তার মা এমা ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছ। দুচোখে খোলা। মণি স্থির। সঙ্গে সঙ্গে নিকটবর্তী মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ফোন করলো সে। ফোন করলো তার বাবা পলকে। এমাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কিন্তু মৃত্যুর কারণ কী??? ……… হ্যার্ট অ্যাটাক??? ……… স্টোক??? ………
মাএ ৪০ বছর বয়সী এমার মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ে ব্যর্থ হলেন চিকিৎসকরা। এমার দেহ পাঠানো হল ময়না তদন্তের জন্য। লাশ কাটা ঘরে মৃত দেহের ময়না তদন্ত শুরু হল। এমার পেট চেরার পর একটি অদ্ভুদ গন্ধ পেলেন ফরেনসিক চিকিৎসক। মাস্ক নামিয়ে গন্ধটা ভালো করে বুঝার চেষ্টা করলেন। সহকারীকে জিজ্ঞাস করলেন “তুমিও কী গন্ধটা পেয়েছ?” সহকারী উওর দিলেন “হ্যাঁ স্যার…… বাদামের গন্ধ……… মানে পটাশিয়াম সায়োনাইড???.......
পটাশিয়াম সায়োনাইড তীব্র বিষ। যার প্রভাবে মৃত্যু আসে মুহূর্তের মধ্যে। কিন্তু যে মহিলা অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছছিলেন তার শরীরে সায়োনাইড আসল কোথা থেকে???......
এমার পাকস্থলি থেকে চিকিৎসকরা উদ্ধার করলেন একটি আধ গলা ক্যাপসুল। সেই ক্যাপসুলটিকে এবং এমার বিভিন্ন সিভেরাকে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হল। পরদিন রিপোর্ট এলো। এমার বিভিন্ন ভিসেরার মধ্যে রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে পটাশিয়াম সায়োনাইড এবং পাকস্থলিতে পাওয়া ক্যাপসুলটিই সায়োনাইডের সম্ভাব্য সোর্স। তদন্তে নামল এফ বি আই। প্রথমেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো এমার স্বামী পলকে ও মেয়ে সারাহকে। স্বামী পল জানালেন সেদিন ঘুম থেকে উঠার পরই এমা তাকে বলেছিল তার মাথা ধরেছে এবং পল এটাও জানালেন যে এমার মর্নিং হ্যাডএক্ মানে সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মাথা যন্ত্রনার সমস্যা ছিল। এ সমস্যার জন্য প্রায়শই অ্যাকসোডিন খেতেন এমা। এই ক্যাপসুলের কৌট যে আয়নার সামনে রাখা থাকত এমা প্রসেধন করছিলেন সেইখানেই। সঙ্গে সঙ্গে এফ বি আই সেই কৌট বাজেয়াপ্ত করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠায়। পরীক্ষার রিপোর্টে জানা যায় এ কৌটর বেশ কটি অ্যাকসোডিন ক্যাপসুলের সাথে মিশে রয়েছে ৩টি সায়োনাইড ক্যাপসুল। অর্থাৎ কৌটতে যদি ১০টি অ্যাকসোডিন ক্যাপসুল থাকে তাহলে তার মধ্যে রয়েছে ৭টি অ্যাকসোডিন ঔষধ আর বাকি ৩টিতে রয়েছে অ্যাকসোঢিনের পরিবর্তে পটাশিয়াম সায়োনাইড। মারক বা লেথাল ডোজের চেয়ে অনেক বেশি পরিমানে। সারাহ যখন বাথরুমে ছিল তখন এমা প্রসেধন শেষ করে ঐ কৌট থেকে একটি ক্যাপসুল খান এবং সেই ক্যাপসুলে অ্যাকসোডিনের জায়গায় ছিল সায়োনাইড এবং মুহূর্তের মধ্যে মৃত্যু হয় এমার। কে এনেছিল এ অ্যাকসোডিনের কৌট???......
পরমুহূর্তে গ্রেপ্তার হন এমার স্বামী কারণ ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে তিনিই কিনে এনেছিলেন এ অ্যাকসোডিনের কৌট। কিন্তু মোটিভ???........ পল এমার দ্বিতীয় স্বামী হলেও বেশ সুখের পরিবার ছিল তাদের। এমার মৃত্যুতে পল বা সারাহর কোনো লাভ হয়নি। উপরোক্ত পল নিজের আর্থ্রাসাইসের ব্যার্থার জন্য ঐদিন সকালে ঐ কৌট থেকে একটি ক্যাপসুল খেয়েছিলেন।…… তার কিছু হয়নি।
পল কোর্টে দাড়িয়ে নিজের নির্দোষীতা প্রমানের জন্য লাই ডিটেক্টর টেস্টের ও নার্কো অ্যানালাইসিসের দাবী জানান। তার উপর এদুটি টেস্ট করা হয় এবং তিনি সসম্মানে উওীর্ণ হন। এফ বি আই পলকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এদিকে অ্যাকসোডিন ক্যাপসুলের মধ্যে সায়োনাইড পাওয়া যাচ্ছে এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গোটা আমেরিকায়। লোকে অ্যাকসোডিন কেনা বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে আমেরিকার সকল দোকান ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে অ্যাকসোডিন নিজ হেফাজতে নেয় অ্যাকসোডিন নির্মাতা ব্রিস্টালমেয়র ঔষধ কোম্পানি এবং প্রত্যেক ক্যাপসুলকে পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। পরীক্ষার ফলে আরো কয়েকটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের অ্যাকসোডিনের কৌটর মধ্যে সায়োনাইডের অস্তিত্ব মেলে। বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয় ব্রিস্টালমেয়ার ঔষধ কোম্পানি। যে বা যারা এ অপরাধের জন্য দায়ী তাদের নাগাল পাবার জন্য নগদ ৩লাখ ডলার পুরুষ্কার ঘোষণা করে ব্রিস্টলমেয়ার। অপর দিকে এফ বি আই ব্রিস্টালমেয়ারর ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টে হানা দেয় এবং সেখানকার কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ আরম্ভ করে। কিন্তু অনেক চেস্টার পরেও তারা সেখানকার কোনো কর্মীকে দোষী সাব্যস্ত করতে অক্ষম হয়। সেই প্লানটেও অ্যাকসোডিন ডাইরেক্টির মধ্যে সায়োনাইডের অস্তিত্বের কোনো প্রমাণ মিলে না। এরপরে খবরের কাগজ, রেডিও এবং টিভিতে বিজ্ঞাপন দেয় যে অ্যাকসোডিন খেতেন এমন কোনো ব্যক্তির গত ৩ মাসের মধ্যে আকস্মৃক মৃত্যু ঘটেছে তাদের আত্মীয়দের এফ বি আইয়ের আধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়। এই ঘটনার ৩ দিন পর অলিভা নিকেল নামক এক মহিলা যোগাযোগ করে জানান তার স্বামী লগান নিকেল অ্যাকসোডিন ক্যাপসুল খেতেন। যেদিন এমা মারা যান তার ঠিক ৭ দিন আগে এক সন্ধ্যায় অ্যাকসোডিন ক্যাপসুল খাবার পর পরই তার স্বামী লগান মারা যান। লগান অ্যামফাইসিমায় ভুগছিলেন। তাই করোনার লগানের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ হিসেবে লেখেন অ্যামফাইসিমার কথা যা একটি স্বাভাবিক মৃত্যু। লগানের মৃতদেহের কোন ময়নাতদন্ত হয়নি। এফ বি আই মৃত লগানের দেহ কবর থেকে তুলে পাঠায় ময়নাতদন্তের জন্য এবং অলিভার কাছ থেকে বাকি ক্যাপসুল নিয়ে পাঠায় ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার জন্য। পরদিন ময়নাতদন্তের এবং অ্যাকসোডিনের ফরেনসিক রিপোর্ট আসে। দেখা যায় লগান যে কৌট থেকে ক্যাপসুল খেতেন তার বাকি ক্যাপসুল গুলোর মধ্যের দুটোতে রয়েছে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে সায়োনাইড। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে এমা ও লগানের মৃত্যুর কারণ একই। অ্যাকসোডিন ক্যাপসুলের মধ্যে সায়োনাইড। রহস্য আরো ঘনীভূত হয় ২ দিন পর।
.......................................................................চলবে.....................................................................................................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.