![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষের মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে বেড়নো আমার শখ। মানবতা আমার ধর্ম। কোন অভৌত সম্পর্কে আমি অনুগামী ভক্ত নই। আমার ভালো লাগা রক্ত-মাংসের মানুষের সম্পর্কায়নে। আমি সার্বজনীনতায় বিশ্বাসী।
(সুত্রঃ ২৮ ডিসেম্বর, ২০১২। সম্পাদকীয়। দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম।)
‘‘আমাকে তোমরা সমাহিত করবে, তবে কোন স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করবে না, আমার দু’হাত কফিনের বাহিরে ঝুলিয়ে রাখবে যাতে করে গোটা দুনিয়া বুঝতে পারে- যে মানুষটি একদিন প্রায় সমগ্র পৃথিবী জয় করেছিল, মৃত্যুকালে তিনি যাচ্ছেন শূন্য হাতে।” মহান সম্রাট আলেকজেন্ডার মৃত্যু শয্যায় সেনা প্রধানকে ডেকে তার তিনটি ইচ্ছার একটি ব্যক্ত করেন এভাবে। তার অপর দু’টি ইচ্ছাও উপরোক্ত বক্তব্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।
উঁই পোকার মতো আমরা সবাই উড়ছি, ছুটছি ক্যারিয়ার নামক অগ্নিকুন্ডের পিছে মরিবার তরে। করপোরেট দুনিয়ায় ক্যারিয়ার এক মরিচীকা। বহুজাতিক কোম্পানির বহুরকম আলেয়ায় আমরা জীবনভর ক্লান্ত প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্নে। এভাবে ছুটতে ছুটতে আমাদের তরুণ প্রজন্ম হাফিয়ে উঠছে। জীবনের শেষ গন্ডিতে এসে খুঁজে পায় তারা শূন্যতা ও হতাশা। হালের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর চোখ ধাঁধানো চাকরির বিজ্ঞাপনে রীতিমতো চমকিত হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প থাকে না। ভাষার বাহুল্যতায় ভরপুর থাকে তাদের বিজ্ঞাপন ‘‘we provide career and a drive to future” ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ক্যারিয়ারের ব্যানারে তারা আমাদের করে তুলছেন আত্মকেন্দ্রিক সামাজিক পরগাছা হিসেবে। আজকালতো Globalization বা বিশ্বায়নের বড্ড হাঁক-ডাক বিরাজমান সর্বত্র। বিশ্বায়ন চারাবালি সদৃশ। বিশ্বায়নের নামে বিদেশী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর স্বাগতীক দেশের এবং দেশীয় করপোরেশনগুলোর দেশীয় মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদের স্বেচ্ছাচারী ব্যবহার আমাদেরকে করে তুলেছে ভাবলেশহীন। আমরা গা ভাসিয়ে দিচ্ছি পরদেশীয় সংস্কৃতি আর কর্মের গড্ডালিকা প্রবাহে। ম্যানেজম্যান্টের একটা প্রচলিত পলিসি আছে যার নাম ‘‘Carrot and Stick Approach” । বুৎপত্তিগতভাবে এর অর্থ হচ্ছে- কোন গাধার সামনে একটি লাঠির একপ্রান্তে দড়ি দিয়ে গাজর ঝুলিয়ে অপর প্রান্ত আরোহীর হাতে ধরা থাকবে। আর গাজরের লোভে গাধাটি সামনে এগুতে থাকবে। ব্রিটিশ সামন্তবাদ কানাডার কুইবেক প্রদেশ দখলের সময়কালে সেখানকার অধিবাসীদের উপর এই পদ্ধতি অনুশীলন করেছিল। আমাদের সাথেও করপোরেশনগুলোর ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার খেলা এর ব্যতিক্রম নয়।
ক্যারিয়ার, জব বা চাকরীর আভিধানিক অর্থ - জীবনযাপনের জন্য নির্বাচিত পেশা। অথবা, অর্থ উপার্জনের জন্য একজন ব্যক্তি শর্তসাপেক্ষে শ্রমের বিনিময়ে যা করে তা-ই চাকুরী। প্রতিযোগীতামুলক জীবনযাপনে অর্থনৈতিক স্বাধীনতার জন্য তরুণ সমাজ হন্যে হয়ে ঘুরছে ক্যারিয়ারের পিছনে। ইউ.এস. ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকস থ্রু দ্যা ন্যাশনাল লঙ্গিচ্যুডিনাল সার্ভে অব ইয়থ ও টাইম ডট কম এর জরীপ মতে প্রতি তিনজনের একজন দৈনিক একঘন্টা করে সময় ব্যায় করে চাকুরীর সন্ধানে। ক্যারিয়ার একটি রঙ্গীন ফানুস। আমাদের দেশের শতকরা ২৮ ভাগ জনশক্তি বেকার যা সংখ্যার মাত্রায় ২০ লক্ষ্য ৭০ হাজার। এই বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী দৌড়াচ্ছে ইন্দ্রজালের পিছনে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে মিছে আশায়। বর্তমান বিশ্বের তৃতীয় ধনী ব্যক্তি ওয়ারেন বাফেট বলেছেন, ‘টাকা মানুষকে তৈরী করেনি, মানুষ-ই টাকা বানিয়েছে’। উপহাস সহকারে মনে পড়ে ছোটবেলায় স্কুলে থাকতে ‘জীবনের লক্ষ্য’ নামক রচনা লিখতে গিয়ে স্বদম্ভে লিখেছি- আমরা কেউ ডাক্তার হতে চাই মানব সেবার ব্রতে, কেউ কৃষক হতে চাই দারিদ্র বিমোচনে, আবার কেউবা চেয়েছি শিক্ষক হয়ে জাতির বাঁকা মেরুদন্ডকে সোজা করে দাঁড় করাতে। নীরেন্দ্রানাথ চক্রবর্তী তার অমলকান্তি কবিতায় বড্ড আক্ষেপ করে লিখেছেন- ‘‘আমারা কেউ মাষ্টার হতে চেয়েছিলাম, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল। অমলকান্তি সে সব কিছু হতে চায়নি। সে রোদ্দুর হতে চেয়েছিল! ক্ষান্তবর্ষণ কাক ডাকা বিকেলের সেই লাজুক রোদ্দুর..। আমরা কেউ মাষ্টার হয়েছি, কেউ ডাক্তার, কেউ উকিল। অমলকান্তি রোদ্দুর হতে পারে নি। সে এখন অন্ধকার ছাপাখানায় কাজ করে।” ক্যারিয়ারের নামে আত্মীয়-স্বজন, বাবা-মা ও বন্ধু-বান্ধব সবাইকে ছেড়ে উচ্চাভীলাষি তরুণ বেড়ে উঠে বর্ণহীন হয়ে। এই লড়াইয়ের দাম দিতে চালান হয়ে যাচ্ছে আমাদের মেধা। আমাদের গর্ব- মেধাবী সন্তান, ছাত্র, শিক্ষক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী পাচার হয়ে যাচ্ছেন পরবাসে ক্যারিয়ার দাবড়াতে, তথাকথিত প্রতষ্ঠিত হতে, ভূলে গিয়ে সব কর্তব্য। দেশের মাটিতে থাকলেও তারা বেঁচে থাকে কীট-পতঙ্গের মতো, দায়িত্ব জ্ঞানহীন হয়ে। দেশ প্রেম আর ভালোবাসা বাঁধাই করা থাকে অ্যালবামে। দায়িত্ব শুধু সীমাবদ্ব বাক্য গঠনে।
ওয়ান ইলেভেন সময়কার ‘‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফল রূপকার তরুণ তাজা প্রাণ সোহেল এখন একটা গ্রুপ অব কোম্পানির প্রোডাকশন ইন-চার্জ। হতাশাগ্রস্ত সোহেলের আবেগাপ্লুত মন্তব্য - ‘আচার-আচরণে আমি ভাই এখন পুরোদস্তুর প্রোডাকশন ম্যানাজর। নিজের প্রয়োজনে কাজ বুঝে নিতে মালিকের পক্ষ হয়ে শ্রমিকদের সাথে গালাগালি করা নিত্যদিনের অভ্যাস।’ এখন আর কেউ সাম্যবাদীতার গান ধরে না, গণতন্ত্রের সুর তুলে দামামা বাজায়না। ক্যারিয়ারের উন্মাদনায় এখন সবাই আত্মহারা। এই ক্যারিয়ার নামক বিষ বৃক্ষ কেড়ে নিচ্ছে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সম্পদ তরুণের সঞ্জীবিত প্রাণরস। পুঁজিবাদী দালাল দস্যু ক্যারিয়ার আর বহুজাতিক কোম্পানি বা করপোরেট সাম্রাজ্য মিইয়ে দিচ্ছে আমাদের উদ্যোম, দেশপ্রেম ও সততাকে। দারিদ্রের দুষ্ট চক্রের ফাঁদে এই পুজিঁবাদ বা করপোরেট দোসর ক্যারিয়ার আমাদের চিন্তার চেতনাকে ভোতা করে দিয়ে পুরো জাতিস্বত্তাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছে অপার সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজকে। আমাদের কেউ এখন আর মহান পেশা র্শিক্ষকতায় ক্যারিয়ার গড়তে চায় না, এখন কৃষিকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে লজ্জায় লাল হয়ে যায় আমাদের মুখ। অথচ যে তরুণ তার সমস্ত মেধা ও শ্রম দিয়ে ভেঙ্গে দিতে পারে দারিদ্রের কোমর, খুলে দিতে পারে সম্ভাবনার সকল দুয়ার, এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে দেশকে উন্নতির শিখরে, সেই তরুণরা মতিভ্রম ক্যারিয়ারের মোহে। ফলস্রুতিতে আমরা বাঙ্গালী জাতি হয়ে পড়েছি অন্তঃসার শূন্য।
জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সকলেরই কর্তব্য দেশ মাতৃকার ভালোবাসার টানে সাড়া দিয়ে আত্মহননের পথ থেকে সরে দাঁড়িয়ে আত্মপরিচয়ে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার, দেশ ও সমাজের জন্য কিছু করার এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছ থেকে দায়মুক্ত হবার।
লেখকঃ কলামিষ্ট
০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩২
মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: প্রয়াত বিজ্ঞানী ড. আবুল কালাম আজাদ তাঁর এক সাক্ষাতকারে বলছিলেন,‘‘আমরা সবাই পড়াশুনা করি চাকুরী করতে, কিন্তু কেউ চাকুরী দিতে পারার যোগ্যতা অর্জনের জন্য পড়াশুনা করি না”। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৬
প্রামানিক বলেছেন: চাকুরীর জন্যই সবাই পড়াশুনায় ব্যস্ত দেশ গঠনের জন্য পড়াশুনার সংখ্যা কম। চমৎকার লিখেছেন। ধন্যবাদ
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৩
মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: আপনার জ্ঞানগুরু মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। সাথে থাকবেন।
৩| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:২৪
আসাদ রকি বলেছেন: জানার জন্য আমরা কতজনই বা পড়ি? আমাদের মানসিকতা এবং শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন না করলে আমাদের অবস্থা সামনে আরো করুন হবে। আমার নিজের কথায় বলি, হইতে চাইছিলাম ফ্রিলান্সার কিন্তু কর্পোরেট এর বেড়াজালে আটকে গেছি।
০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৩৪
মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: এই কর্পোরেট আর ক্যারিয়ারের আগ্রাসন আমাদের মেরুদন্ড ক্ষয় করে দিচ্ছে। সোজা হয়ে দাঁড়াবার আর কোন জো নেই। ধন্যবাদ।
৪| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:১১
নয়ন বিন বাহার বলেছেন: Harverds undergraduates believe that, "Inventing a job is better then finding a job"
আর আমরা কি বিশ্বাস কি করি?
১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ১০:০৭
মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: বুঝতেই পারছেন আমরা কিসে বিশ্বাস করি। ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৭
নয়ন বিন বাহার বলেছেন: শুধুই দীর্ঘশ্বাস !!!
চাকরীর পেছনে দৌড়ানোই সবচেয়ে সহজ। সেই ছোটবেলা থেকেই তো আমাদেরকে শেখানো হয়েছে ভাল লেখাপড়া কর-- ভাল চাকরী পাবে। সেটাতো আর এমনিতে লঙ্গন করা যায় না। এটা আমাদের জিন গত সমস্যা।।