নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন

মানুষের মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে বেড়নো আমার শখ। মানবতা আমার ধর্ম। কোন অভৌত সম্পর্কে আমি অনুগামী ভক্ত নই। আমার ভালো লাগা রক্ত-মাংসের মানুষের সম্পর্কায়নে। আমি সার্বজনীনতায় বিশ্বাসী।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

চরম বিঘ্নিত ভোক্তা অধিকার

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০


(সুত্রঃ সম্পাদকীয়। দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম। সোমবার । ০৩ অক্টোবর ২০১৬। )

কথা হচ্ছিল চট্টগ্রামের ভোক্তা অধিকার জাগরণ আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় সংগঠক কে.জি.এম সবুজের সাথে। তার প্রথম কথা- ‘‘ভোক্তা অধিকার কক্সবাজারে চরমভাবে অবহেলিত। কিন্তু প্রতিকারের বা কথা বলার কেউ নেই। প্রসাশনের চোখের সামনেই হচ্ছে সব অবলীলায়। অধিকন্তু কাজ করতে ইচ্ছুক স্বেচ্ছাসেবীর অভাবে ভোক্তা অধিকার সেখানে কার্যক্রম করতে পারছে না।” গত কোরবানির ছুটিতে শ্বশুর বাড়ি কক্সবাজার বেড়াতে এসে আত্মীয়-স্বজন নিয়ে খেতে গিয়েছিলাম লাবণী পয়েন্টে অবস্থিত ডমিনাস পিৎজা লিমিটেড নামক রেস্তোরাঁয়। সে কী কান্ড! মেন্যুতে পণ্যের দাম দেখে কপালে উঠে গেল সবার চোখ। দেড় লিটার মাম পানির বোতলের দাম ওরা নিচ্ছে ৫৫ টাকা যার কোম্পানি মূল্য ২৫ টাকা এবং এক লিটার কোকাকোলার দাম ১৫৫ টাকা যার বর্তমান মোড়ক মূল্য ৬০ টাকা। এ যেন দিনে দুপুরে পুকুর চুরি। তাৎক্ষণিক ফোন দিলাম সবুজ ভাইকে প্রতিকারের আশায়।

আমরা যখন খাদ্যদ্রব্যের নিরাপত্তা আর সহনশীল দামের কথা ভাবছি, উন্নত বিশ্ব তখন নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা খুঁজছে। সুস্থ্য ভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন পরিমাণ মতো খাদ্য গ্রহণ আবশ্যক। প্রতিনিয়ত আমরা যে খাদ্য গ্রহণ করছি তা কতুটুকু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ তা কিছুটা ভেবে দেখা প্রয়োজন। বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটা খাদ্যদ্রব্যই ভেজাল যুক্ত ও দামে চড়া এবং স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।
ভোক্তা অধিকার তথ্য মতে, প্রতিদিন প্রায় ৮০-৯০ হাজার কেজি মাছ টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মায়ানমার ও ভারত থেকে বাংলাদেশে আসে। আমদানীকৃত এ সকল মাছ সম্পূর্ণ ভাবে ফরমালিন মিশ্রিত। আবার ট্যানারী বর্জ্য ব্যবহার করা হচ্ছে পোল্ট্রি ও মৎস্য খাদ্য তৈরীতে। ফলস্রুতিতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক হেভীমেটাল যেমন ক্যাডমিয়াম, সীসা ঢুকে যাচ্ছে মাছ ও মাংসে। এই সকল হেভী মেটাল মানব দেহের কিডনী নষ্ট করে দিচ্ছে।
ইদানিং সরিষার তেলকে অধিকতর উজ্জ্বলতর দেখানোর জন্য সরিষার তেলে দেদারছে ব্যবহার করা হচ্ছে ভয়ংকর সায়ানাইড। সুরেশ সরিষার তেল কোম্পানি থেকে চট্টগ্রামের অন্যতম বড় এক গ্রুপ অব কোম্পানিতে নিয়োগপ্রাপ্ত এক সহকর্মীর স্বাক্ষ্য মতে, যতই খাঁটি তেলের দাবী সুরেশ কোম্পানি করে থাকুক না কেন, আসলে ভেজালটাই ওদের খাঁটি।
শুধু খাদ্যসামগ্রীতেই নয়, আজকাল নকল প্রসাধনী পন্যে ভরপুর বাজার। অনুমোদনহীন ওষুধ ও বিকল্প শিশুখাদ্য বা ফুড সাপ্লিমেন্ট বিক্রির দায়ে চট্টগ্রামের তিনটি ওষুধের দোকানকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমান আদালত অক্টোবর ২০১৫ এর ২৬ তারিখ। অভিযানে অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রির দায়ে নগরীর চট্টেশ্বরী সড়কে জান্নাত ফার্মেসিকে ২০ হাজার টাকা, রাজু মেডিসিনকে ৫ হাজার টাকা ও লিন্নাস ফার্মেসিকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ, আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে ২০০৭ ও ২০০৮ সালের কথা। চীনে শিশুদের জন্য উৎপাদিত বেশ কিছু খাদ্য উপাদানে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য গুঁড়োদুধে মেলামাইনের উপস্থিতি অনেক শিশুর মৃত্যর কারণ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তখন। এবং পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানীকৃত সেসব গুঁড়ো দুধে মেলামাইনের উপস্থিতি ও শিশু মৃত্যুতে শরব হয়ে উঠেছিল গোটা বিশ্ব। ফলস্রুতিতে বুশ সরকার ১৪ আগষ্ট ২০০৮ সালে আমেরিকাতে শিশুদের জন্য আমাদনিকৃত সকল দেশের সকল পণ্যে শর্ত হিসেবে CPSIA (Consumer Product Safety Improvement Act) বিল পাশ করেন। এই শর্ত মতে ১২ বছরের নীচে শিশুদের জন্য আমদানিকৃত সকল পন্যের মান নিদির্ষ্টকরণ পরিক্ষা ও কাগজপত্রের বাধ্যবাধকতা আনোয়ণ করা হয়।
বাচ্চার জন্য চকোলেটবার কিনতে গিয়ে মনে পড়ল দেশীয় কোম্পানীর প্রস্তুত প্রাণালীর ইতিবৃত্ত। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল ঢাকা কেন্দ্রীক কমপ্লাইয়্যান্স অডিট ফার্মে কর্মরত বন্ধুবর জনাব শাহজানের কথা। ‘‘আমি চট্টগ্রামের যে চকলেট ক্যান্ডি ও চীফ্স প্রস্তুত প্রাণলীর কথা বলছি, বিশ্বাস করেন আপনি স্বচক্ষ্যে দেখলে তা জীবনে কখনও বাচ্চাকে আপনি খেতে দিবেন না। ওদের মোলড্ করার প্রক্রিয়া আর মরচে পড়া ছাঁচ দেখলে আপনি বুঝবেন- কেনার পর বোধ হয় সেইসব যন্ত্রাংশ আর পরিস্কার করা হয়নি।”
আমার স্বচক্ষ্যে দেখা সনামধণ্য এক বেসরকারী কোম্পানির লিচু জ্যুস প্রস্তুত প্রণালীতে আমি লিচুর কোন অস্তিত্বই খুঁজে পাইনি। কোয়ালিটি বিভাগে পরিক্ষীত যে, উপাদান হিসেবে সেখানে রয়েছে শুধু পানি, চিনি ও লিচুর ফ্লেভার বা গন্ধ।
আপনাদের নিশ্চয় আরও মনে আছে বছর খানেক আগে দেশীয় এক বড় কোম্পানির তৈরী আমের জ্যুস পানে পার্বত্য রাঙ্গামাটিতে মারা গিয়েছিল কয়েকজন শিশু। কয়েকদিন পর আর কোন খবর পাইনি আমরা মিড়িয়াতে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে এখনও বাজারে সেই কোম্পানির সেই জ্যুস দেদারচে বিক্রি হচ্ছে। প্রশাসনের মুখে টাকার কলূপ এঁটে দিয়েছে কতৃপক্ষ।

কে না জানে বাটা মসলা, বাটা মরিচের তরকারীর স্বাদের কথা। গ্রামে-গঞ্জে মা-খালাদের বাটা মসলায় রান্না করা খাবারের স্বাদ এখনও যেন অমৃতের মতো। কিন্তু পিলে চমকে যায় যখন বাংলাদেশে কোন প্রতিষ্ঠান টিভি চ্যানেলগুলোতে কোটি কোটি দর্শককে গাঁজা খোর ভেবে গাঁজাখোরি গল্প শুনায় গুঁড়া মসলার মিথ্যে স্থুতি গেয়ে। বলুনতো আমাদের দেশের ভোক্তাদের কি কোন ইগো নেই? কিসের সাথে কি তুলনা করে ওরা! এসব এ্যাড দেওয়া বন্ধ হয় না কেন? আমাদের দেশে কি Advertising Standards Authority (ASA) বলে কিছু নাই? প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখযোগ্য- বিবিসির যুক্তরাজ্য শাখা ২১ অক্টোবর ২০০৮ এবং দৈনিক টেলিগ্রাফ ১৬ মার্চ ২০১২ সালের এক প্রতিবেদনের বরাতে জানা যায়, সে দেশের Advertising Standards Authority (ASA) প্রচারকৃত হরলিক্স ও ম্যাগী নুডলস এর বিজ্ঞাপন সম্প্রচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অপপ্রচারের কারণে। হরলিক্সের বিজ্ঞাপনে অপপ্রচার করা হয় যে, হরলিক্স বাচ্চাদের ‘লম্বা, শক্তিশালী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ করে গড়ে তুলতে পারে। অপর এক বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়েছে, মা তার বাচ্চাকে বলছে- ম্যাগীতে রয়েছে মাংসপেশী ও হাড়কে শক্তিশালী করতে পারা প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম।

তাহলে ভাবুন কোন গোলক ধাঁধায় আমরা আটকা পড়ে আছি। উপরোক্ত ঘটনাবলী কিছু নমুনামাত্র। এভাবে ভোক্তা অধিকার বিঘ্নিত হচ্ছে দেশের সবত্রই সর্বক্ষেত্রেই। ব্যক্তি উদ্যোগে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে সকলকেই।

লেখকঃ কলামিষ্ট্

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.