নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন

মানুষের মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে বেড়নো আমার শখ। মানবতা আমার ধর্ম। কোন অভৌত সম্পর্কে আমি অনুগামী ভক্ত নই। আমার ভালো লাগা রক্ত-মাংসের মানুষের সম্পর্কায়নে। আমি সার্বজনীনতায় বিশ্বাসী।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙ্গালীর মননে সাংস্কৃতিক আড়ম্বরতা

০৫ ই মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৪:০৬


(সুত্রঃ সম্পাদকীয়, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ, ৮ মার্চ ২০১৭, রবিবার, চট্টগ্রাম।)
( অনলাইন পত্রিকায় সংস্করণ- জাগোনিউজ২৪ডটকমঃ Click This Link )

বাংলাদেশের সংস্কৃতি বলতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশের গণমানুষের সাহিত্য, সংগীত, নৃত্য, ভোজনরীতি, পোষাক, উৎসব ইত্যাদির মিথষ্ক্রীয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রেই এই সংস্কৃতি ভারতীয় সংস্কৃতির থেকে ধার করা কিংবা প্রভাবান্বিত। তবুও বাংলাদেশের স্বকীয় কিছু বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে আলাদা করার প্রয়াস পাওয়া যায়। বাংলাভাষা যখন ঠিকমতো গড়ে উঠেনি তখনো এখানকার মানুষের নির্দিষ্ট কিছু বিশ্বাস, আচার, ধর্ম, ধর্মকে কেন্দ্র করে উৎসব, পার্বণ সব কিছুই ছিল। এটাতো ঠিক যে, সংস্কৃতি কখনো এক জায়গায় স্থির থাকে না। সংস্কৃতি চলমান প্রক্রিয়া। জানায় বা অজানায়, চেতনে বা অবচেতনে প্রতি মুহূর্তে সংস্কৃতি বদলায়। কিন্তু এই বদলে যাওয়ার ধরন কখনো এতো নীরবে, নিঃশব্দে ঘটে যে টের পাওয়া মুশকিল আবার প্রকাশ্য রূপ লজ্জাকর যা নিজ সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক।

যে কোন দেশের সকল প্রচলিত প্রথাই হচ্ছে সংস্কৃতির অন্যতম পরিচায়ক। বিবর্তন একটা প্রমাণিত সত্য। সময়ের বিবর্তনে বর্তমানে আমরা Z বা I প্রজন্মে বাস করছি। আর এই প্রজন্মের সন্তানাদিকে চিন্হিত করা হয় Z বা I প্রজন্ম নামে। এরা (Y, Z বা I প্রজন্ম) সর্বদিক দিয়ে এগিয়ে। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় এরা সেরা। তথ্যের আদান ও প্রদানে এদের জুড়ি মেলা ভার। বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির মিশ্রণ এদের মধ্যে প্রচন্ড। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সম্মান তৃতীয় সেমীস্টারের ছাত্রী ইরা তাদেরই একজন। আমাদের ঐতিহ্য-সংস্কৃতির আগামীর ধারক। কথাবার্তায় আজকাল তার ইংরেজী সংমিশ্রণে অশুদ্ধ বাংলায় কথা বলা স্বভাবে রূপান্তরিত হয়েছে। মোবাইল ফোনে দুলাভাইয়ের ফোন নাম্বার তার সেইভ করা আছে হিন্দিতে “Jiju” দিয়ে। টিভি দেখতে বসলেই তার প্রথম পছন্দ হিন্দি সিরিয়াল বা মুভি (যার বেশীর ভাগই পরিকীয়া কেন্দ্রীক)। পাঠ্যপুস্তক ছাড়া অন্য বইতো পড়াই হয়ে উঠেনা, তার মধ্যে মাঝে-সাঝে পত্রিকা বা ম্যাগাজিন হাতের কাছে এলেই সরাসরি চলে যাওয়া চাই বিনোদন বা সাজ-সজ্জ্বার পাতায়। আর সার্বক্ষণিক সঙ্গী ফেইসবুক তো থাকছেই। শতশত বন্ধু তার ধাক্কাধাক্কি করে ফেইসবুকের ভার্চুয়াল জগতে।
অন্যদিকে গৃহিণী লিরা ফেয়ার এন্ড লাভলী’র পাঁচ অনুষ্ঠানের স্বার্থকতায় সবর্দা ব্যস্ত। বিয়ের পাঁচ অনুষ্ঠান- ‘‘আখদ, মেহেদী, ফিরানী, রিসেপশন ও বিদায়” প্রত্যেকটাতে ভিন্ন ভিন্ন পোশাক ও সাজ তার বাধ্যতামূলক। দু’বোন মিলে সারক্ষণ কে কি রঙ্গের, কোন ডিজাইনের পোশাক পরেছে তা নিয়ে চলে আলাপচারিতা। কখনও কোন শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ বা বইমেলায় নয়; ইদানিংকালের টাকা হাতানো নতুন হুজোগ Food Fair এ তাদের যাওয়া চাই। প্রত্যেক অনুষ্ঠানের হাজারটা selfie সম্বলিত ফেইজবুক হালনাগাদ তো একটা বদঅভ্যাসে রূপান্তরিত হয়েছে। একেক ছবিতে মুখের একেক ধরণের ভঙ্গিমা। কখনো ঠোঁট সুচোর মতো, কখনো বাঁ দিকে আবার কখনো ডান দিকে বাঁকানো।
ডুবাই থেকে ইংরেজী মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশুনা করে আসা মীরা চকবাজার উচ্চারণ করতে গিয়ে বারবার কক্সবাজার বলে ফেলে। নিজের দেশের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের প্রতি কোন আসক্তি নেই তার। অধিকন্তু বিদেশ ঘুরে বেড়াতেই তার শখ। সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, থাইল্যান্ড, মালোয়শিয়া প্রভৃতি দেশ। বিভিন্ন যাত্রা পথে পাশে বসা সহযাত্রীর সাথে কৌশল বিনিময় করে কালক্ষেপণে সময় হয় না তার। সারাক্ষণ কানে mp3 আর হাতে ফেইসবুকিংয়ে ব্যাস্ত থেকে গন্তব্যে পৌঁছাটাই জরুরী।

বলা বাহুল্য যে রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক কোন দায়-দায়ীত্ব এদের মধ্যে নেই। জীবন যে একটা দর্শন, জীবনের যে একটা দর্শন আছে সেই বোধ এদের মধ্যে নেই। এরা কখনো আত্মীয়-স্বজন বা সমাজের কোন অস্বাভাবিকতা, অভাব, রাজনৈতিক বিচ্যুতি বা গণদূর্ভোগ নিয়ে কথা বলেনা। কাজিনরা বা বন্ধু-বান্ধব একত্রিত হলে শুধু পরিকল্পনা করে পার্টি করার, কথা বলে পোশাক-আশাকের, খাবার দাবারের। গর্ব করে ফ্ল্যাট বা জায়গা জমি কেনার, গাড়ি কেনার, কাবিন নামা কার কতো বেশী, কার বিয়েতে কতো বেশী খরচ করা হয়েছে প্রভৃতি বিষয়ের। এরা মানবতার কথা বলে না, দেশপ্রেমের কথা বলে না, বলে না মুল্যবোধের কথা, করে না কোন সাহিত্যালোচনা। এরা কোন সামাজিক বা স্বেচ্চাসেবী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততার কথা ভাবে না, বলেনা এবং সম্পৃক্ত নয়। পারস্পপরিক পারিবারিক সম্পর্কও কেমন যেন অপ্রকৃতিস্থ, ছাড়াছাড়া ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ধরনের। এরা সবাই কেমন যেন আত্মকেন্দ্রিক, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় পরগাছা।
আমাদের সময় আমরা বিদ্যালয়গুলোতে স্কাউট করতাম। পাড়ায় পাড়ায় ক্লাব করতাম। সেইসব ক্লাব বা সংগঠন থেকে প্রতিবেশি ও সমাজের জন্য নেওয়া হতো নানা উদ্যোগ। গরীব শিক্ষার্থীদের পড়ানো হতো বিনে পয়সায়। বিভিন্ন দূর্যোগকালীন পরিস্থিতে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সহায়ক সহযোগিতা করা হতো সকলের। হতো নানা ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা। এখন আর এইসব দেখা যায় না। আমরা দেখেছি স্কুলগুলোতে বিভিন্ন বেসরকারি বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দল গিয়ে ছাত্র-ছাত্রীকে শিক্ষাতো কিভাবে ঘরে খাবার স্যালাইন বানানো যায় এবং সেই শিক্ষা পরিবার, গ্রাম বা সমাজের সবাইকে শিক্ষানোর কথা বলা হতো। অন্য প্রতিনিধি দল আসতো নিরাপদ স্যানিটাইজেশনের পদ্ধতি শিক্ষাতে। আমরাও সেভাবে সমাজের সকল স্তরে সে শিক্ষা সেবায় নিয়োজিত থাকতাম। আমাদের সময়ে সকলের সামাজিক অন্তর্ভূক্তি ছিল অনেক বেশী। বিভিন্ন সামাজিক, রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে যুবসমাজের সম্পৃক্ততা ছিল প্রয়োজন মতো। আমাদের সময়ে একই পরিবারের, একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের, একই সমাজের বড়তে-ছোটতে ছিল পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বশুলভ, সম্মান ও সহমর্মিতার সম্পর্ক।

অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে পারস্পরিক সহাবস্থানের ফলে এখন জাতিগত বিদ্বেষ (হিন্দু-মুসমাল ব্যবধান) কমেছে বটে। তবে বেড়েছে পেটি বর্জুয়া সমাজের আধিপত্য। ফলে বেড়েছে বড়লোক-ছোটলোকের অপসংস্কৃতি। সবাই এখন শহুরে বিলাসী জীবনযাপনে আর ধার করা বিদেশী সংস্কৃতিতে আসক্ত। ইংরেজী মাধ্যমের শিক্ষার আগ্রাসন আর সাংস্কৃতিক পরিগ্রহণে সবাই এখন বুদ হয়ে আছে খেই হারিয়ে। আজকালকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাবু সেজে দল বেঁধে ঘরের বাইরে খাবারের প্রবণতা বেড়েছে ব্যাপক। রাস্তাঘাটে তাই যত্রতত্র গড়ে উঠেছে টংয়ের দোকানের মতো মানহীন শতশত রেস্তোরাঁ। কতো লোক গৃহহীন, কতো শিশু অনাহারে ভোগে তা এখন আর কাউকে ভাবিত করে না। শহরে এখন মেজবানের ধরনে এসেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। এখন করপোরেট মোড়কে মেজবানের দাওয়াত পায় পেটি বর্জুয়ার দোসর করপোরেট সাঙ্গপাঙ্গ মাত্র। মিডিয়ার দৌরাত্তে বিকিকিনি হতে শুরু করেছে বাঙ্গালী ঐতিহ্যের সার্বজনীন অনুষ্ঠান পহেলা বৈশাখ ও হালখাতা। বাঙ্গালীয়ানার আসল রূপ হারিয়ে তা আজ বেশভুষ ধরেছে আধুনিকতা আর করপোরেট মোড়কের পান্তা-ইলিশে। বাঙ্গালীর অস্তিত্বের নির্দেশক ২১শে ফেব্রুয়ারির মতো শহীদ দিবস আজ আমরা উদযাপন করা শুরু করেছি ২১শে'র প্রথম প্রহরে বোমা ফাটিয়ে উৎসবের মধ্যে দিয়ে। অধিকন্তু ২৬শে মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর ও ২১শে ফেব্রুয়ারির মধ্যকার তাৎপর্যগত পার্থক্য না বুঝে ২১শে'র চেতনাকে গুলিয়ে ফেলে মিলিয়ে ফেলছি ৭১’র মুক্তি ইতিহাসের সাথে।

সবগাছ সব মাটিতে হয়না, সব মাছ থাকে না সব নদীতে। উপযুক্ত পরিবেশ লাগে। জলবায়ু, তাপ ইত্যাদি ঠিকমতো হতে হয়। একটা জাতির চিন্তার জগতটিও অনেকটা সেরকম। ওটা কিভাবে বিকশিত হবে তা নির্ভর করে সে জাতির ধ্যানধারণা ও রীতিনীতি, সংস্কৃতি, এবং প্রাণশক্তি (সু)শিক্ষার উপর। অনুকূল পরিবেশ পেলেই একটা জাতির মেধা প্রস্ফুটিত হতে পারে শতমূখী সৃজনশীলতায়।

লেখকঃ কলামিষ্ট

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:২৩

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর সময় সাময়ীক পোষ্ট। অামার ভাল লেগেছে।

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৩৮

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: আপনার ভাল লাগা আমার বন্ধুর চলার পথের সঙ্গী। ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই মার্চ, ২০১৭ ভোর ৪:১৯

পথে-ঘাটে বলেছেন: একটা সময় ছিল যখন শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলো দুর্বল রাজ্যগুলোকে গ্রাস করে উপনিবেশ তৈরি করত। সময়ের সাথে সাথে পাল্টেছে উপনিবেশবাদী ধারনাও। এখন আর আগের মত সৈন্য সামন্ত দিয়ে দেশ দখল করে না। আসলে দেশ দখল করার প্রয়োজনই মনে করে না। উপনিবেশবাদীরা এখন কৌশলে একটি দেশ কে কন্ট্রোল করে। আর তাদের অস্ত্র হচ্ছে, সংস্কৃতি। বর্তমান দেশের সামগ্রিক রূপ অনেকটা সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ভয়ংকর দিক হল, তরুণ প্রজন্মের বড় একটি অংশকে নিস্ক্রিয় করে দিচ্ছে। কারণ তরুণ প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে তেমন ইন্টারেস্টেড না, বিদেশী সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হলেও সংগত কারনেই বিদেশী সংস্কৃতিকে নিজের সংস্কৃতি বলে পরিচয় দিতে পারছে না। এর অনিবার্য ফল, দেশ ও দশ মঙ্গল-অমঙ্গল থেকে বেখবর একটি দেউলিয়া ও নিস্ক্রিয় প্রজন্মের উত্থান।

ধন্যবাদ সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তুলে ধরার জন্য।

০৭ ই মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৩৯

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: আপনার প্রাসঙ্গীক মন্তব্যের জন্য কৃতার্থ। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই আপনাকে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.