নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন

মানুষের মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে বেড়নো আমার শখ। মানবতা আমার ধর্ম। কোন অভৌত সম্পর্কে আমি অনুগামী ভক্ত নই। আমার ভালো লাগা রক্ত-মাংসের মানুষের সম্পর্কায়নে। আমি সার্বজনীনতায় বিশ্বাসী।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫’- ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন

১৯ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:২৬


সুত্রঃ
সম্পাদকীয়। দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম। বুধবার। ১৯ জুলাই ২০১৭।

পারিবারিক দাস-দাসীর ইতিকথা আর গৃহপরিচারীকার চারণভূমি এই ভারতমহাদেশ। স্থায়ী গৃহপরিচারীকার প্রচলিত ভাষা রূপান্তর চাকর বা চাকরানী। তাদের পাখির খাঁচার মতো পরাধীন জীবন বন্দনা মধ্যযুগীয় দাস প্রথারই প্রতিচ্ছবি। এখানে জীবন বড্ড বেরসিক। শারিরীক বন্ধিত্বের চেয়ে মানসিক বন্দ্বিত্ব চরম এখানে। এক অদৃশ্য বেড়ী বাঁধা থাকে মনের পায়ে। মনস্তাত্বিক দাসত্বের প্রভূত্ব মেনে নিয়ে এরা পৌঁছে যায় ত্যাগ, সেবা আর মহত্বের শিখরে। এ চিত্র সত্য শাশ্বত, এ চিত্র সর্বত্র।
আমাদের সমাজে উচ্চবত্তি থেকে শুরু করে মধ্যবত্তি সব পরিবারেই গৃহস্থালির কাজের জন্য গৃহপরিচারিকা রাখা হয়, যাদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর। এদের কাজের কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। গৃহপরিচারিকা নেই এমন একটি ঘর সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না শহরতলিতে। বাসা পাহারা দেয়া থেকে শুরু করে সংসারের অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজকর্ম তারা করে থাকে। অথচ তাদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয় না। আমাদের দেশে গৃহকর্মীদের অনেক ছোট করে দেখা হয়। বাংলাদেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী মূলত দরিদ্র। গ্রামীণ এ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কাছে অর্ধাহার আর অনাহার নিত্যদিনের ঘটনা। তাই ক্ষুধায় জর্জরিত বাবা-মা একটু ভালো খাবার, একটু ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশায় তাদের আদরের সন্তানকে তুলে দেন কোন এক ধনী পরবিারে। ছোট একটি অবুঝ শিশু তার মায়ের ভালোবাসার আচঁল ছেড়ে চলে আসে অচেনা-অজানা শহরে। সেখানে তার পরিচয় হয় গৃহকর্মী। শুরু হয় নতুন জীবন। ভোরের আগে ঘুম থেকে ওঠা তো চাইই চাই, সঙ্গে সকালের নাস্তা তৈরি, থালা বাসন ধোয়া, কাপড় ধোয়া, খাবার তৈরি, ঘর মোছা সব কাজের ভার পড়ে ওই (শিশু) গৃহপরিচারিকার ওপর। সারাদিনের হাড়ভাঙা কাজ শেষে কপালে জোটে দুই বেলা সামান্য খাবার, তা দিয়ে অনাহার কাটিয়ে কোনভাবে বেঁচে থাকা যায়। এত কাজের মধ্যে কোন ভুলক্রটি হলে তো কথাই নেই। গৃহকত্রী বসে যান বিচারকের আসনে। বকাঝকা, চড়-থাপ্পড় দিয়ে শুরু হয় বিচার। তারপর চলতে থাকে খাবার না দেয়া, লাঠি দিয়ে পেটানো, ফুটন্ত গরম পানি ঢেলে দেয়া, গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়ার মতো বর্বরতা। শুধু তাই নয়, এদের অনেকেইে আবার শিকার হয় যৌন নির্যাতনের। গৃহর্কতা বা বখাটে সন্তানদের যৌন নির্যাতনের হাত থেকে অনেক সময় রেহাই পায় না এসব গৃহপরিচারিকারা। এত অত্যাচারের পরও তারা মুখ বুজে কাজ করে একমুঠো ভাত আর একটুখানি আশ্রয়ের আশায়।

এসব নারী ও পুরুষ গৃহকর্মীদের শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫’ প্রণয়ন করেছে সরকার। এর মাধ্যমে দেশের গৃহশ্রমিকরা তাদের কাজের জন্য সরকারি স্বীকৃতি পাবেন। ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫’বাংলাদেশ সরকারের একটি আনুষ্ঠানিক নীতিমালা যা চাকর বা চাকরাণী অর্থ্যাৎ গৃহকর্মী বা গৃহভৃত্যের জন্য প্রযোজ্য। এই নীতিমালা ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ২১ ডিসেম্বর তারিখে অনুমোদিত ও গৃহীত হয়। ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি তারিখে একটি সরকারী গেজেটে এই নীতি প্রকাশ করা হয়। এ নীতির মাধ্যমে দেশের প্রায় ২৫ লাখেরও (তথ্যমতে) বেশি গৃহকর্মীর মানবাধিকার ও শ্রমাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়াও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা কর্তৃক গৃহীত গৃহকর্মী সর্ম্পকিত কনভেনশন-১৮৯ অনুসমর্থনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া এটি একটি পদক্ষেপ।
সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতিমালায় গৃহকর্মের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘গৃহকর্ম’বলতে বোঝাবে গৃহস্থালি বা ঘরের বিভিন্ন কাজ যেমন শিশু পরিচর্যা, ঘরে বসবাসরত শিশু, অসুস্থ প্রবীণ কিংবা প্রতিবন্ধী ব্যাক্তির যত্ন, রান্না ও রান্নাসংশ্লিষ্ট আনুষঙ্গকি কাজে সহায়তা, কাপড় ধোয়া, বাজার করা, ঘর বা ঘররে আঙ্গিনা বা চত্বর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পোশাক-পরিচ্ছদ ধোয়া ও ইস্ত্রি করা এবং ঘরের অন্যান্য কাজ যা সাধারণত গৃহস্থালি কাজ হিসেবে স্বীকৃত। এই নীতি অনুযায়ী নিয়োগকর্তা শোভন কাজ ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের পাশাপাশি বিশ্রাম, বিনোদন এবং ছুটির অধিকার সংরক্ষণ ও শ্রমিক হিসেবে প্রয়োজনীয় সব সুবিধাই গৃহকর্মীদের দেবেনে। নারী গৃহকর্মীরা মাতৃত্বকালীন সময়ে প্রসবের আগে চার এবং পরে ১২ সপ্তাহ মিলিয়ে মোট ১৬ সপ্তাহ স্ববেতন ছুটি কাটাতে পারবেন। গৃহকর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স সীমা শ্রম আইন ২০০৬ এর বিধান প্রযোজ্য হবে । অর্থ্যাৎ ১৪ বছরের কম বয়সী কোনো গৃহকর্মী রাখা যাবে না। তবে ১৮ বছরের আগ পর্যন্ত তাদের ভারী কাজের দায়িত্ব দেয়া যাবে না। এ নীতিমালার আলোকে প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধ, চাকরি থেকে অপসারণের ক্ষেত্রে এক মাস আগে না জানালে ৩০ দিনের মজুরি প্রদান, এবং কর্মক্ষেত্রে ক্ষতিপুরণসহ শ্রম আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীর সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে গৃহকর্মীদের কর্মঘণ্টা বিন্যাসে পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন এবং প্রয়োজনীয় ছুটির ব্যবস্থা রাখতে হবে । অসুস্থ গৃহকর্মীকে নিয়োগকর্তা নিজ দায়িত্বে চিকিৎসা করাবেন। গৃহকর্মীর ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকবে এবং কর্মক্ষেত্রে তার কোনো ক্ষতি হলে মালিক ক্ষতিপূরণ দেবেন।
গৃহকর্মীদের সাথে অশালীন আচরণ, দৈহিক বা মানসিক নির্যাতন করা যাবে না উল্লেখ করে নীতিমালায় বলা হয়েছে, গৃহকর্মীর উপর কোনো হয়রানি ও নির্যাতন হলে বিচারের দায়িত্ব সরকারের । নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহকর্মী নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানা যেন দ্রুত ও কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে পারে সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দাপ্তরিক নির্দেশনা জারি করতে বলা হয়েছে । কোনো গৃহকর্মী যৌন হয়রানি, যৌন নির্যাতন, শারীরিক ও মানসকি নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করলে সরকারি খরচে সেই মামলা পরিচালিত হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় কোনো গৃহকর্মীকে চাকরি থেকে অপসারণ করতে হলে এক মাস আগে জানাতে হবে। গৃহকর্মীও যদি চাকরি ছাড়তে চান তবে নিয়োগকারীকে তা এক মাস আগে জানাতে হবে । তবে তাৎক্ষণিকভাবে কেউ গৃহকর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দিলে এক মাসের মজুরি দিয়ে বিদায় করতে হবে । এই নীতিমালা বাস্তবায়নে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি তদারকি সেল থাকবে। এছাড়া সিটি করপোরেশন এলাকায় আঞ্চলিক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং জেলা-উপজেলায় যথাক্রমে জেলা প্রসাশক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মর্তাকে সভাপতি করে মনিটরিং সেল গঠনের কথা বলা হয়েছে।

একবিংশ শতাব্দীতে এসে মানবাধিকার ও শিশু অধিকারের কথা আমাদের আইন করে শিখাতে হচ্ছে যা অত্যন্ত লজ্জাকর ও হতাশাজনক । সাম্প্রতিক সময়ে গৃহকর্মীর উপর নির্যাতনের প্রকাশ্য যে চিত্র আমরা মিডিয়ার বদৌলতে দেখতে পাচ্ছি তা নাড়া দিয়েছে সচেতন মানবিক হৃদয়কে। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে মানুষের শিক্ষা, পারিবারিক মূল্যবোধ আর ব্যাক্তি বিবেক। মানবতা মুখ থুবড়ে পড়ছে আঁস্তাকুলে। এসকল অত্যাচার আর অমানবিক নীপিড়নের বিরুদ্ধে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণনীতি ২০১৫’ সম্পর্কে সাধারণ জনগণের সাম্যক জ্ঞান, ব্যাক্তি ও সরকারি উদ্যোগে সকল স্তরে এর সঠিক বাস্তবায়ন হতে পারে রক্ষা কবজ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ৯:৫২

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ভাল বলেছেন।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৪

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.