নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন

মানুষের মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে বেড়নো আমার শখ। মানবতা আমার ধর্ম। কোন অভৌত সম্পর্কে আমি অনুগামী ভক্ত নই। আমার ভালো লাগা রক্ত-মাংসের মানুষের সম্পর্কায়নে। আমি সার্বজনীনতায় বিশ্বাসী।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মহত্যা উপাখ্যানঃ প্রতিরোধ ও প্রতিকার

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪৭


(সুত্রঃ সম্পাদকীয়, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭, শনিবার, চট্টগ্রাম।)

ডেল (ব্রাকনেরডিজ) কার্ণেগি ছিলেন একজন আমেরিকান লেখক, অধ্যাপক ও একাধারে বিখ্যাত আত্ম-উন্নয়নমূলক প্রশক্ষিণমালার উদ্ভাবক। তিনি দরিদ্র মজুর কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। প্রথম জীবনে তেমন সাফল্য না পেলেও এখন সারা বিশ্বে একজন সফল ব্যাক্তিত্ব হিসেবে অমর হয়ে আছেন তিনি। তাঁর প্রশক্ষিণ কর্মশালায় অংশ নিয়ে হাজার হাজার হতাশ মানুষ আশার আলো দেখেছেন। মানুষকে সফল হতে তিনি উদ্দীপনামূলক অনেক বই লিখেছেন। তার মধ্যে “How to Stop Worrying and Strat Living” এবং “How to Win Friends and Influence People” বেশ জনপ্রিয় বই। এ বইগুলো আজও অনেকের আগ্রহের বিষয়। তার লেখা পড়ে পাঠকরা উদ্বুদ্ধ হোন। তার কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে লাভ করেন সাফল্য। কিন্তু, জনশ্রুতি আছে শেষ জীবনে বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়ে জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন তিনি। ইতিহাসখ্যাত আরো অনেক কালজয়ী ব্যাক্তিবর্গের মধ্যে রানী ক্লিওপেট্রা, রোমান সম্রাট নিরো, চিত্রশিল্পী ভ্যান গগ্, প্রখ্যাত আমেরিকান লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো এবং সাম্প্রতিক সময়ে লিন্কিন পার্ক ব্যান্ডের সঙ্গীতশিল্পী চেষ্টার বেনিংটন ও বাংলাদেশী তারকা মডেল রিসিলা প্রমুখ আত্মহত্যা করে জীবনের অবসান ঘটিয়েছেন।
আত্মহত্যা বা আত্মহনন হচ্ছে একজন নর কিংবা নারী কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দেয়া বা স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণনাশের প্রক্রিয়া বিশেষ। ল্যাটিন ভাষায় সুই সেইডেয়ার থেকে আত্মহত্যা শব্দটি এসেছে, যার অর্থ হচ্ছে নিজেকে হত্যা করা। যখন কেউ আত্মহত্যা করেন, তখন জনগণ এ প্রক্রিয়াকে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে থাকেন। ডাক্তার বা চিকিৎসকগণ আত্মহত্যার চেষ্টা করাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ইতোমধ্যেই বিশ্বের অনেক দেশেই আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে এক ধরনের অপরাধরূপে ঘোষণা করা হয়েছে। অনেক ধর্মেই আত্মহত্যাকে পাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি বছর সারা বিশ্বে যে সব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষদের আত্মহত্যার করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞানুসারে, আত্মহত্যা হলো স্বজ্ঞানে এমন একটি ভয়ানক কাজ করা যা কোন ব্যাক্তির মৃত্যু ঘটায় এবং ব্যাক্তি ঐ কাজের প্রত্যাশতি ফলাফল সর্ম্পকে পূর্ব থকেইে পুরোপুরি অবগত থাকে। দার্শনিক প্লেটোর মতে, যদি কেউ নিস্কৃীয়তা বা কাপুরুষতার জন্য আত্মহত্যা করেন, তাবে সেটা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জি.কে. চেস্টারটন আত্মহত্যাকে অভিহিত করেছেন ‘‘চুড়ান্ত ও পরম শয়তান, অস্তিত্বের প্রতি আগ্রহ প্রত্যাখ্যান”হিসেবে। তাঁর মতে, যে লোকটি নিজেকে খুন করছে, সে আসলে পুরো একটি ব্রক্ষ্মান্ড ধ্বংস করছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে, আত্মহত্যা একটি অপ্রতিরোধ্য সামাজিক এবং মানসকি ব্যাধি। অনকেইে একে সমস্যার সমাধান মনে করলেও এটি কোন সমস্যার সমাধান নয় বরং সমস্যার কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি তিন সেকেন্ডে একজন আত্মহত্যার প্রচেষ্টা এবং প্রতি মিনিটে একজন আত্মহত্যা করে। সারা বিশ্বে বছরে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যাজনতি কারণে প্রাণ হারায়। গত ছয় বছরে আত্মহত্যা নিয়ে যে পরসিংখ্যান দাঁড় করানো হয়েছে তা থেকে দেখা যায় যে প্রতিবছর বাংলাদেশে গড়ে ১০ হাজার ৪শ’৮৪ জন আত্মহননরে পথ বেছে নিয়েছে। Golabal Health Observatory Data Repository এর তথ্য মতে, ২০১৫ সালে প্রতি ১ লক্ষ লোকের মধ্যে বাংলাদেশে আত্মহত্যার হার ৫.৫%। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে আত্মহত্যায় বর্তমানে দশম অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায় যে, মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে ৮৭% থেকে ৯৮% আত্মহত্যাকর্ম সংঘটিত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের গবেষণায় দেখা যায় যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে তাদের অধিকাংশই মানসিকরোগে আক্রান্ত থাকে। যখন একজন মানুষ তার সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে কোন পথ খোলা পায়না, তখন তা হতাশার তৈরী করে। আর এই হতাশা তার ভিতরের aggressive ভাবটাকে বাড়িয়ে দেয় তখন যদি কেউ যুক্তি দিয়ে তাকে না বোঝায় যে তার সমস্যার সমাধানের ভিন্ন ভিন্ন পথ আছে তখনই সে আত্মহননের পথ বেছে নেয়।
বিখ্যাত সমাজ মনোবিজ্ঞানী কার্ট লিউইন এর মতে, পরিবেশের সাথে মানুষের আচরণগত একটা ফাংশন আছে। অর্থ্যাৎ মানুষ সেসব আচরণ করে তা সে পরিবেশের প্রভাবের কারণে করে। আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেকারত্ব, দারিদ্রতা, গৃহহীনতা এবং বৈষম্যতাজনিত উপাদানগুলো আত্মহত্যায় উৎসাহিত করে থাকে। শৈশবকালীন শারীরিক ইতিহাস কিংবা যৌন অত্যাচার, অথবা, কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সময় অতিবাহিতজনিত কারণও ঝুঁকিগত উপাদান হিসেবে বিবেচিত। আত্মহত্যার অনেক কারণের মধ্যে পারিবারিক কলহ বিবাদ, বৈবাহিক সমস্যা, শারীরিক ও মানসিক রোগ, প্রেমে বিফলতা, যৌতুকের চাপ, পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, বেকারত্ব, অবৈধ যৌনকর্ম, অবৈধ সন্তান ধারণ, সঠিক শিক্ষা, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের অভাবই আমাদের দেশে আত্মহত্যার চিহ্নিত কারণ। যে সকল ব্যাক্তি দুঃচিন্তায় পড়েন তারা আত্মহত্যায় সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দলের অন্তর্ভূক্ত। উন্নত দেশে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চরম মুহুর্তজনিত হটলাইন রয়েছে যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তাদের চিন্তা-ভাবনা এবং আত্মহত্যার পরিকল্পনার কথা জানায়। হটলাইন ব্যবহারের মাধ্যমে ভুক্তভোগী তার সমস্যার সমাধানের পথ সম্পর্কে অবহিত হয়ে আত্মহত্যা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নিজেকে ভালোবাসাকে আত্মহত্যা থেকে বাঁচার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি আত্মহত্যাকে মানসিক অসুস্থতাসংক্রান্ত বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে। উপযুক্ত চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে এ ব্যাধি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভবপর। যখন একজন ব্যাক্তি আত্মহত্যার বিষয়ে ব্যাপক চিন্তা-ভাবনা করেন, তখনই তাকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। মনোবিদগণ বলেন যে, যখন ব্যাক্তি নিজেকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তা জানামাত্রই সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে কাউকে জানানো।
আত্মহত্যা প্রতিরোধে যেসব পদক্ষেপ বা কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে তা হচ্ছে: আত্মহত্যার মাধ্যমগুলোর প্রতি চোখ রাখা। যেহেতু আমাদের দেশে বিষপানে আত্মহত্যা করে বেশি লোক, তাই এসব উপকরণ দুষ্প্রাপ্য করতে হবে। বিনা প্রেসক্রিপসনে ঔষুধ বিক্রি বন্ধ করা। পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন ও নাটক সিনেমার মাধ্যমে আত্মহত্যার ব্যাপারে লোকদেরকে সচেতন করতে হবে। বিশেষ করে বিষন্নতা ও ড্রাগসেবীদের ব্যাপরে আলোকপাত করতে হবে। মানসিক ও শারীরিক রোগীদের সময়মতো পর্যাপ্ত চিকিৎসা হওয়া প্রয়োজন। আত্মহত্যা প্রতিকার ও প্রতিরোধের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সংস্থা গোষ্ঠী প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে পারে। পারিবারিক কলহ-বিবাদ মেটানো বা কমানোর জন্য সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বাড়াতে হবে। আত্মহত্যা কমানোর জন্য একটা জাতীয় নীতি প্রণয়ন করতে হবে। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, শিক্ষার হার বাড়ানো, বেকারত্ব কমানো, নেশার উপকরণ দুষ্প্রাপ্য করা, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধনকে অটুট রাখার জন্য সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকল্প নেই আত্মহত্যা প্রতিরোধে।

লেখকঃ কলামিষ্ট

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:২৫

করুণাধারা বলেছেন: পোস্টটি পড়ে ভাল লাগল। মানুষ কান আত্মহত্যা করে তা সুন্দরভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। আমার সবসময় মনে হয় সুস্থ, স্বাভাবিক বুদ্ধিসম্পন্ন কোন মানুষ আত্মহত্যা করতে পারে না। যারা আত্মহত্যাপ্রবন তাদের দিকে আমাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:২১

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: শুভ সকাল!
আপনি যথার্থই বলেছেন। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.