নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৃহত্তম বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন মানব সম্পদ উন্নয়ন প্রশিক্ষক আমি। একজন শৌখিন লেখকও বটে। শখের বশে কবিতাও লিখেছি এক সময়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় ও বিভাগীয় পত্রিকায় এবং ব্লগে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে অনিয়মিতভাবে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন

মানুষের মাঝে প্রকৃতিকে খুঁজে বেড়নো আমার শখ। মানবতা আমার ধর্ম। কোন অভৌত সম্পর্কে আমি অনুগামী ভক্ত নই। আমার ভালো লাগা রক্ত-মাংসের মানুষের সম্পর্কায়নে। আমি সার্বজনীনতায় বিশ্বাসী।

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানব সম্পদের অপচয় বনাম অপব্যবহার

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১১:২৩


(সুত্রঃ সম্পাদকীয়, দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯, বুধবার, চট্টগ্রাম।)

একঃ
১৩ মে, ২০১৯ ইং বোর্ড অব ইনভেষ্টমেন্ট - ঢাকা থেকে একটা চিঠি পাঠানো হলো। চিঠির বিষয় বস্তু ছিল একটা দেশীয় কোম্পানীতে একজন ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে পাঁচ বছর যাবৎ কর্মরত থাকার পর অনুমতি সাপেক্ষে আরো এক বছর কৌশুলী অবস্থান বর্ধিত হওয়ার সময় শেষ হলে এই মর্মে উক্ত প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করা হয় যাতে কোনক্রমে ঔ ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে আর অবস্থান না করে। নোটিশের উত্তরে প্রতিষ্ঠানটি পূর্বের মতো দক্ষ জনবলের অভাব ও প্রশিক্ষণের কথা উল্লেখপূর্বক পুনরায় অবস্থান অনুমতি প্রার্থণা করে।

দুইঃ
০৪ আগষ্ট ২০১৩ ইং থেকে ৪ আগষ্ট ২০১৮ ইং অর্থবছরে শ্রীলঙ্কাগত সুসান্তা প্রভাত (ছদ্মনাম) বাংলাদেশে এসেছেন ড্রাইভার ভিসায়। অথচ তিনি শ্রীলঙ্কান একটা কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন কোয়ালিটি ম্যানেজার হিসেবে। অধিকন্তু, বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্টকে দেখানো তার নিয়োগপত্র ছিল মুল বেতন কাঠামোর আসল তথ্যকে আড়াল করে আয়কর ফাঁকি দেওয়ার জন্য কম বেতন দেখানোর অসত্য উপাত্ত।

তিনঃ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাষ্টারস পাস করে চাকুরীর জন্য হন্যে হয়ে ঘুরে শেষ পর্যন্ত একটা ব্যাক্তিমালিকানাধীন তামাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ নিয়েছেন সিহাব উদ্দিন। যেটা সিহাব, তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠানের কর্ম চরিত্রের সাথে এক্কেবারেই যায় না।

নাম উল্লেখ না করার শর্তে এগুলো বাস্তব ঘটনা মাত্র।

বর্তমানে একদিকে দেশে কর্মসংস্থানের চরম অভাব। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় দক্ষকর্মীর ঘাটতি। দেশে কর্মসংস্থানের অভাব এবং বেকারত্বের কারণ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীলঃ প্রথমত, যথাযথ বিনিয়োগ বা উদ্যোক্তার অভাব; দ্বিতীয়ত, কর্মসংস্থান থাকলেও উপযুক্ত কর্মীর অপর্যাপ্ততা এবং তৃতীয়ত, দেশীয় জনশক্তির জায়গায় বিদেশী কর্মীর উপস্থিতি দ্বারা দেশীয় কর্মীর বা জনশক্তির স্থান দখল।

বিশ্বের ৪৪ টির বেশি দেশ থেকে আসা প্রায় আড়াই লাখ বিদেশি বাংলাদশেরে বভিন্নি খাতে কর্মরত রয়েছে বলে জানিয়েছে টিআইবি।২১টির বেশি খাত বা প্রতিষ্ঠানে এসব কর্মী কাজ করছেন। পর্যটন ভিসায় এসে কাজ করার ক্ষেত্রে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি করেছে টিআইবি। তারা বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কর অঞ্চল-১১তে কর জমা দিয়েছেনে সাড়ে ৯ হাজার বিদেশি, যাদের বার্ষিক আয় উল্লেখ করা হয়েছে ৬০৩ কোটি টাকা। তাদের এই আয়ে কর দেওয়া হয়েছে ১৮১ কোটি টাকা। তৈরি পোশাক খাতে বিভ্ন্নি পদে কর্মরত বিদেশিদের মাসকি বেতন সর্ম্পকে টিআইবি বলছে, তারা যে পরমিাণ বেতন পান তা আয়কর রিটার্নে কমিয়ে উল্লেখ করেন। একজন প্রধান নির্বাহী বেতন পান ১০-১২ হাজার ডলার, আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করনে ৩-৩.৬ হাজার ডলার। সিনিয়র ম্যানেজার হিসেবে একজন বিদেশি পান ৪-৬ হাজার ডলার, কিন্তু আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করেন ১.২৫-১.৭৫ হাজার ডলার। এ বিষয়ে ড. ইফতখোরুজ্জামান বলেন, যারা আয়কর রিটার্ন দিচ্ছেন তারাও মূল আয় গোপন করে অল্প পরমিাণ রিটার্ন ঘোষণা করছেন। এতে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান ও নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি উভয়ই লাভবান হচ্ছেন। তবে রাষ্ট্র রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এভাবে রাষ্ট্র প্রতিবছর ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে টিআইবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পরসিংখ্যান ব্যুরোর পরিচালিত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জরিপে দেখা, জাতীয় বেকারত্বের গড় হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ। উচ্চ শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেশি অর্থ্যাৎ মোট বেকারত্বের ১১ দশমিক ২ শতাংশ উচ্চ শিক্ষিত। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জরিপ অনুসারে এ দেশে ২৬ লাখ বেকার ছিল। আইএলও’র তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতকিকালে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেকারত্বের হার কম ছিল ২০১০ সালে। এরপর থেকে তা বেড়েই চলছে। ২০১২ সালে ছিল ২৪ লাখ। ২০১৬ সালে তা ২৮ লাখে উঠেছে। ২০১৯ সালের পর এ সংখ্যা ৩০ লাখে ওঠার আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রতি বছর কর্মবাজারে প্রবেশ করছে প্রায় ২৭ লাখ, আর চাকরি পাচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার। উপরোল্লিখিত বিদেশী নাগরিকের জায়গায় যদি দেশীয় কর্মশক্তিকে স্থানান্তর করা যেত, তাহলে এই কর্মজীবীর সংখ্যা আরো আড়াই লাখ বৃদ্ধি পেত এবং দেশে রাজস্বের পরিমাণ বাড়তো। এদিকে বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের তথ্য মতে, গত ছয় মাসে শিল্প খাত থেকেই প্রায় ১০ লাখ লোক কাজ হারিয়েছেন।

২০০১ সালে নোবেল বিজয়ী আমেরিকান অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিট্জ বলেছিলেন- ‘‘বর্তমান বিশ্বে কর্মের সাথে কর্মীর এবং কর্মীর সাথে কর্মের সঠিক সন্নিবেশ ঘটছে না যদিও সর্বত্রই কর্মীর সংখ্যা যথাযথ আছে, কর্মসংস্থানের সুযোগও যথাযথ বিদ্যমান।” বাস্তবে কর্মী ও কর্মের সামঞ্জস্যতা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। একটি প্রতিষ্ঠানে যতজন কর্মী কর্মরত আছেন তার কতজন দক্ষ তা একটি প্রশ্ন। প্রাতিষ্ঠানিক নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা, দক্ষতা ও উপযোগী কৌশলের উপর নির্ভর করে কর্মক্ষম কর্মী প্রাপ্তির নিশ্চয়তা। অন্যদিকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে হতে হবে পদ্বতিগতভাবে কর্মমুখী। এমন যদি হয় একজন ছাত্র খুব শখ করে দর্শন বিদ্যায় পড়াশুনা শেষ করলেন কিন্তু শিক্ষামুখী কর্মসংস্থান হলো না তাহলে হতাশা ছাড়া তার আর কোন সম্বল থাকবে না। ফলস্রুতিতে ব্যক্তিজীবনে, সমাজ ও রাষ্ট্রে তিনি হয়ে পড়বেন বোঝা। বাংলাদেশে কর্মের সাথে কর্মীর সন্নিবেশ পাওয়াটা এইজন্যই অনেকক্ষেত্রে অস্বাভাবিক। তাই শিক্ষামুখী কর্মসংস্থান এবং কর্মসংস্থানমুখী শিক্ষা দেশের সর্বত্র অপরিহার্য। একজন শিক্ষার্থী তার ৫ থেকে ৬ বছরের সর্বোচ্চ ডিগ্রি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করার পরও কোন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেলে তাকে ধরে নেওয়া হয় Raw hand হিসেবে যা হাসির উদ্রেক করে এবং ব্যক্তির জন্য এটি হতাশা বয়ে আনে। কর্ম ও কর্মীর অসমাঞ্জস্যতা আরো কয়েকটি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্তঃ কম বেতনে অধিক শ্রম, শ্রমের যথাযথ মূল্যায়নের অভাব এবং নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি বা আত্মীয়করণ।
একটি দেশের জন্য তার প্রধান সম্পদ জনগণ। এই সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, সংরক্ষণ, উৎকর্ষতা সাধন এবং ব্যবহার উপযোগী করে তোলার দায়িত্ব প্রতিষ্ঠান, সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর বর্তায়। অধিক মুনাফা লাভের আশায় আয়কর ফাঁকি দিচ্ছেন অনেকে। দেশীয় নাগরিকের স্থলে বিদেশী নাগরিকের অবৈধ অবস্থান প্রশ্রয় দিচ্ছেন অনেক প্রতিষ্ঠান। দেশীয় জনশক্তিকে দক্ষ করে গড়ে তোলায় ভুমিকা পালন করছেন খুব কম প্রতিষ্ঠানই। এভাবে নানাভাবে পুজিঁবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ আমাদের দেশের মানব সম্পদের অবমূল্যায়ন করে, কর্মসংস্থানের কৃত্রিম অপ্রতুলতা সৃষ্টি করে এবং দেশকে তার রাজস্ব আদায়ের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে হঠকারী আধিপত্য বিস্তার করে যাচ্ছে যার মাশুল দিতে হবে ভবিষ্যত প্রজন্মকে।

লেখকঃ কলামিষ্ট

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট টি খুব মন দিয়ে পড়লাম।
জনসংখ্যাকে আমি অভিশাপ মনে করি না। জনসংখ্যা হলো আশীর্বাদ। আমাদের সমস্যা হলো আমরা আমাদের বিপুল এই জনসংখ্যাকে কাজে লাগাতে পারছি না।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:৫৭

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: রাজীব ভাই
আপনার মন্তব্যের সাথে সহমত। ধন্যবাদ।

২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১৫

কনফুসিয়াস বলেছেন: আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্র যারা পরিচালনা করেন উনাদের কাছে এগুলো প্রতিবেদন গ্রহনযোগ্য নয়। যুব সমাজের জন্য উনারা নামেমাত্র কিছু র্কোস চালু করেছে কিন্তু তা থেকে যুবসমাজ খুব একটা উপকৃত হচ্ছেনা।

একটি দেশের যুব সমাজ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন সম্পদ, যা ব্যবহার করে দেশ অনেকদুর এগোতে পারে। যুবসমাজ শ্রম, বুদ্ধি, মেধা ও প্রতিযোগীতায় তেজীঘোড়া। কিন্তু এইদেশে যুব সমাজ অবমূল্যায়ন করা হয়, যা দেখে সত্যিই এই দেশের করুন অবস্থা অনুমান করা যায়।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:০১

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: চীনের প্রথম প্রিমিয়ার (রাষ্ট্র প্রধান) চৌ য়েনলাই তার শাসনামলে (১৯৪৯ – ১৯৭৬) আনুমানিক ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৬ সালের দিকে প্রায় ১২ বছর সেদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি প্রক্রিয়া বন্ধ রেখেছিলেন। কারণ গণচীনে তখনকার সময়ে এতো বেশী সংখ্যক উচ্চশিক্ষিত গ্রাজুয়েট বেড়ে গিয়েছিল যাদের জন্য কর্মসংস্থান করা সরকারের পক্ষে ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঐ সময়কালীন সরকার দেশে নানাবিধ কারিগরি শিক্ষা কোর্স চালু করে জনগণকে স্বল্পকালীন কর্মমূখী উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত করে প্রত্যেকের ঘরকে এক একটা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করে দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় চীনা অর্থনীতি ও চীনা পণ্য আজ বিশ্বদরবারে কোন অবস্থানে আছে তা এখন সবার কাছেই অনুমেয়। পৃথিবীর এমন কোন দেশ নেই, এমন কোন বাজার নেই, এমন কোন পণ্য বাকি নেই যা চীনারা আজ উৎপাদন করছে না। তাদের মেধা আর সৃষ্টিশীলতার কারণে বিশ্বের অনেক নামীদামি ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য চীনাদের দিয়ে বানিয়ে নিচ্ছেন।

মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.