![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মা" ! যিনি আমার মা' আবার তিনি আমার বাবাও । কারন আমার যখন এক বছর বয়স তখন আমার বাবা মারা যান। আমার মা'য়ের বয়স তখন ৩০ বছর । হয়ত এই যুগে তার বিবাহও হতোনা। আমার দেখা মতে এই ৩০ বছর বয়সে অনেকেই বিবাহ করেনি। কিন্ত তখন মা' নয় সন্তানের জননী । তার মধ্যে আমরা এখন পাঁচ ভাই-বোন বেঁচে আছি।
আমি বিদেশে পড়ছি, ছোট ভাই থাকে ওমান, একমাত্র বোন নিজ সংসার নিয়ে ঢাকা থাকে, মেঝ ভাই মা'র সাথে ছিলো আমি বিদেশ আসার পর থেকে এ পর্যন্ত , বড় ভাই বাড়িতেই যান না এবং আমাদের খোঁজ খবর নেন না। ফলে মা’র একাই থাকতে হয় বাড়িতে। আমার দাদা ছিলেন একমাত্র সন্তান তার ছেলে আমার বাবাও একমাত্র সন্তান। তার মানে বুঝতে পারছেন আমাদের বাড়িটা একা একটা বাড়ি ।
মা' এই একা একটা বাড়িতে আমাদের নিয়ে বসবাস করেছেন। আমরা সবাই মোটামুটি শিক্ষিত। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো বাবার রেখে যাওয়া কোন সম্পত্তিই মা’ নষ্ট করেননি। আগে বলে নেই যে, আমার মা' মোটেই পড়ালেখা করেননি। আর করার সুযোগও ছিলো না। কারন তার বিবাহ হয়েছে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে। যদিও তের বছর বয়সে আমাদের বাড়িতে আসেন।
মা’ অসুস্থ দুদিন হল । ডাক্তার দেখিয়েছেন। গত কাল মেঝ ভাই এই অসুস্থ মা’কে একা বাড়িতে রেখে তার পরিবার নিয়ে ঢাকা চলে আসে। ২০০৩ সাল থেকে মেজ ভাই একটা টাকা খরচ করেনি। বরং মাকে দেখা শুনা করারা জন্য সব খরচ আমরা দু’ভাই দিতাম। এমনকি মেঝ ভাইর যাতায়াতের টাকাও। ছোট ভাই মাঝে মাঝে বলতে চাইলেও আমি নিষেধ করতাম। আমার স্কলারশিপের টাকা পাওয়ার সাথে সাথে মেঝ ভাইর নিকট পাঠিয়ে দেই। মোটেও চাইনি যে মা’র কষ্ট হউক।
মাঝে মাঝে মনে পড়ে মা’র না খেয়ে থাকার কথা। আমি যখন একটু বড় হই তখন চার ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই সমান খেতে পারতাম। আমি ছোট হলেও বড় ভাইদের মতো খেতে পারতাম। মা’ আমাদের খেতে দিয়ে বসে থাকত। আমরা বলতাম মা’ খাবা না । মা’ বলতেন তোরা খা আমি পড়ে খাবো। আমরা খাবার শেষ করে দেখতাম মা’ পাতিল ধুয়ে আনতেন। মা’ আর কিছু খেতেন না। মানে আমরা সব খেয়ে ফেলছি।
বিদেশের ভার্সিটির হলে একা যখন থাকি আর এই কথা যখন মনে পড়ে শুধু কান্না করি । কি এক মহিলা তুমি হে । আর নিজেকে ধিক্কার দেই কত বলদ ছিলাম আমি।
কেন ভাত মাকে ভাগ করে দেইনি?
কত যে না খেয়ে ছিলো আমার মা’।
এই ঋন কি শোধ করা যায়?
আমার মামা খালারা ধনি ছিলেন এখনও আছেন। মা’ এক টাকা তাদের নিকট থেকে নেননি । এমন কি আমার মামা একবার এক ঈদে আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে শার্ট দিয়েছিলেন। মা সেই টাকা গাছ বিক্রয় করে দিয়ে দিয়েছেন। মামাকে এই কারনে কান্না করতে দেখছি। কিন্তু মা মনে করতেন বা ভয় পেতেন যে আমাদের যাকাতের টাকা থেকে দেয় কি না ?
মা বলতেন আমরা যাকাত খেতে পারি না।
আমি ধারাবাহিক যদি লেখি তাহলে বড় উপন্যাস লেখা যাবে মা’কে নিয়ে ।
কত কষ্ট করেছেন যে মা’ তার ইয়াত্তা নেই।
আমাদের বড় করেছেন আবার সবাইকে পড়ালেখা করিয়েছেন। আমাদের এলাকার আনেক শিক্ষিত লোক যা পারেনি তা মা’ করে দেখিয়েছেন । ফলে অনেকে মাকে নিয়ে হিংসা করে। কিন্তু মেঝ ভাই আজ সেটা কেন বুঝতে পারে না?
মা' কে আমি অনেক অনেক ভালোবাসি। আমার বেষ্ট বন্ধু হলো মা’ । আমার প্রথম শিক্ষক হলো আমার মা’। জাতিয় সংগীত, শতকিয়া, নামতা, স্কুলে যাওয়ার আগেই পড়েছি মার নিকট। মা’ লেখতে পারতেন না কিন্তু মুখস্ত পড়াতে পারতেন। আমি সব কথা তার সাথে সেয়ার করছি। একবার মা'র নিকট জানতে চেয়েছি বাবা কি তোমাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতেন ?
মা'র সহজ সরল উত্তর ছিলো যে, তখন এই ঘোরাঘুরি ছিলো না বাবা। তখন মনে মনে ভাবছিলাম মা'কে বিদেশ দেখাব। মা' বলেন আমাদের থানা সদরে কতবার গেছিলেন গুনে বলতে পারবেন। আমি অনেক বার ঢাকা নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু থাকতে পারতেন না। দু' তিন দিন থেকেই বলতেন আমাকে বাড়ি দিয়ে আয়। আমার বাড়িই ভালো।
আমার নিকট ( বিদেশ) মা'কে গত মে মাসের তিন তারিখ নিয়ে আসি । মা'র জীবনে প্লেনে ওঠা, পাহাড় দেখা, সমুদ্র দেখা, সব প্রথম । ছয় হাজার ফিট পাহারের উপরে নিয়ে গেলাম মা'কে । মেঘেরও উপরে মা' অনেক খুশি। রোজার ছয় তারিখ মা' দেশে চলে যায়।
২০০০ সালের পর থেকে মা'র সাথে এক মাস কখনও থাকা হয়নি। ছিলাম একদিন দুদিন । বেশি থাকলে পাচ/সাত দিন ছিলাম। কিন্তু এবার এক মাসের বেশি একই সাথে থাকার আনন্দটা ভাষায় বলতে পারবো না।। আঘেই নিয়ত করে রাখছিলাম সব বেলা খাবার মা'র সাথে খাবো। যদিও তখন পড়ালেখার অনেক চাপ এবং পরীক্ষা ছিলো । প্রতিদিনি লাইব্রারিতে যেতে হতো। কিন্তু খবারের সময় মা'র সাথে খেয়েছি। আমার পাঁচ কেজি ওজন বেরে গেছে। মা' বলতেন নে বাবা খা..... । আর কে আছে.........
মা’র নিকট আমি এখনও কত ছোট ।বিদেশে এসে চুপে চুপে আমার জামাকাপড় ধুয়ে দিয়েছেন। রাগ করেছি কে শুনে কার কথা। আরে আমার সর্টপ্যান্টও। কি যে লজ্জা লাগছিলো। এতো করে বললাম মা জামাকাপড় ধোয়ার মেশিন আছে? এক সাথে ধুয়ে নিবো। না শুনে না আমার মা'।
বিদায়ের বেলা নিয়ত করেছি যে আমি কান্না করবো না । আমি জানি মা’ আমার জন্য কান্না করবে। অনেক ফ্রেন্ড আসছে মা’কে বিদায় দিতে। সবাই বুঝিয়েছে মা’কে । বলেছে আমরাও আপনার ছেলে। আমরা ভাই ভাই। মা’ শুনে না, সারাদিন কিছুই খায়নি। যখন মাকে ইয়ারপোর্টে শেষ বিদায় দেই মা’ বলে ওঠলেন মারা গেলে মাটি দিতে যাবি না বাবা..................
আর থাকতে পারেনি।!!!!
মাকে ঝরিয়ে ধরে বললাম কি বল মা’ আবার তোমাকে নিয়ে আসবো।
তুমি আমার নিকট থেকেই মারা যাবা। ইনশা আল্লাহ।
আজ মা’ দু'দিন থেকে অসুস্থ্য। এই অবস্থায় মা’কে রেখে মেঝ ভাই তার স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলে গেছে। একা একটা বাড়িতে মা’ আমার । মা’ বলে গেছেন আমার জন্য মেয়ে দেখবেন। কিন্তু বিবাহ আর স্ত্রী আমাকে ঘৃন্না এনে দিয়েছে মেঝ ভাই। ভাবনায় মনে মনে বলি যে, আমারও কমনসেন্স ডিলেট হয়ে যায় কি না। ভাই যখন টাকা দিতেন পচিশ পয়সার হিসাবও মা’র নিকট থেকে নিতেন। মাঝে মাঝে খোটাও দিতেন।
আল্লাহর সৃষ্টির রহস্য বুঝি না।
কেন সে মা’কে ভালোবাসে না?
কেন সে মাকে খাওয়ায় না?
কিভাবে অসুস্থ্য মা’কে রেখে বাড়ি থেকে চলে যায়?
আমরা তো একই মা’র পেটে জন্ম নিয়েছি তাহলে এতো পার্থক্য কেন?
আমার মনে হয় , কোন মা’ই চায় না এরকম এক সন্তান হউক। তাই মানুষকে জানিয়ে রাখলাম যে, কোন মা’ই যেন তার সন্তান থেকে কোন কষ্ট না পায়। কুরআনে বলছে উফ শব্দ যেন না বের হয়। রাসুল সঃ বলেছেন তোমাদের কেউ মা অথবা বাবা দু’জনকেই পেয়েছে বা একজনকে পেয়েছে অথচ তাদের খেদমত করেনি তার জন্য ধ্বংস।
আমি আমার মা’কে আরও দেখতে চাই।
আরও দেশে দেশে ঘুরাতে চাই ।
দেখাতে চাই বিশ্বকে ।
মা’র ইচ্ছে হজ্জ করবে আমি নিয়ে যেতে চাই হজ্জে।
তাই দোয়া চাই আমার মা’য়ের জন্য। আমি দোয়া করবো আপনাদের মা’ ও পরিবারের জন্য। সুস্থ হউক আমার মা’ ও সুস্থ থাকুক সবার মা’। সালাম মা’।
০৫ ই জুলাই, ২০১৭ ভোর ৫:৩৩
প্রাইমারি স্কুল বলেছেন: আমিন। আল্লাহ কবুল করুন
২| ০৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৩:১০
ওমেরা বলেছেন: আল্লাহ আপনার মাকে সুস্থ্যতা দান করুন ও নেক হায়াত দান করুন ও আপনাদের নেক আশা গুলো পূর্ন করুন । আমীন ।
০৫ ই জুলাই, ২০১৭ ভোর ৫:৩২
প্রাইমারি স্কুল বলেছেন: আপনার মা'সহ পৃথিবীর সব মা' সুস্থ্য থাকুন
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:২২
বিষাদ সময় বলেছেন: অাপনার মােয়র প্রতি শ্রদ্ধা। আল্লাহ যেন তােক দ্রুত সুস্থ করে দেন..........